বরাকের লজ্জা: বাঙালি সাংসদ সেলিমকে রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কবিপ্রণামের সুযোগ করে দিতে পারল না প্রশাসন
বাঙালির সঙ্গে যখন রবীন্দ্রনাথের আত্মার সম্পর্ক, পঁচিশে বৈশাখ যখন বাঙালি তথা রবীন্দ্র অনুরাগীদের ক্যালেন্ডারে একটি পবিত্র দিন তখন এমন দিনে কবিগুরুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান বা পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের ইচ্ছা খুবই স্বাভাবিক। অথচ এ ইচ্ছেটুকু পূরণ করা সম্ভব হল না এক বাঙালি তথা রবীন্দ্রপ্রেমীর। সেই বাঙালি আর কেউ নন পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ নির্বাচনকেন্দ্রের লোকসভা সদস্য মহম্মদ সেলিম। আমাদের সংবাদাতা সাংসদ সেলিমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার সময় তার গলায় আক্ষেপের সুর স্পষ্ট ছিল,”হ্যাঁ, সত্যি দুঃখ হয়েছে যে রবীন্দ্রজয়ন্তীতে কবিগুরুকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করতে পারলাম না”। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে সি পি এম সাংসদ সেলিম জেপিসি সদস্য হিসেবে ৯মে অপরাহ্ন পর্যন্ত নাগরিকত্ব বিলের শুনানির জন্য শিলচরে ছিলেন।
তিনি আরও জানান, যদিও খুব ঠাসা কর্মসূচি ছিল তবু সকালেই ডি সি এবং প্রশাসনের অন্য কর্তাব্যক্তিদের তিনি অনুরোধ করেন কোথাও রবীন্দ্র প্রতিকৃতিতে মাল্যদান বা পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের সুযোগ করে দিতে। তিনি এও অনুরোধ করেন কোথাও যদি প্রভাতফেরি হয় তাহলে তিনি যোগদান করতে পারেন বা সরকারি পর্যায়ে যদি রবীন্দ্রজয়ন্তী পালনের ব্যবস্থা থাকে কিংবা কোনও স্কুল কলেজেও যদি সম্ভব হয় তাহলেও তিনি যেতে রাজি আছেন। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সে সুযোগ করে দেওয়া হয়নি বরং বলা হয় যেহেতু ভীষন বৃষ্টি হচ্ছিল তাই সকালে কোথাও রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে না। তিনি বঙ্গভবনেও যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সদরঘাট সেতু নির্মাণের কাজের জন্য বঙ্গভবন অব্দি গাড়ি যাবে না বলে তাকে জানানো হয়। অথচ সদরঘাট পয়েন্ট থেকে বঙ্গভবন যেতে পায়ে হেঁটে এক মিনিট সময়েরও প্রয়োজন হয় না। এতে বঙ্গ সাংসদ মুষড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবাক হন, পুরো মে মাস জুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যেখানে রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করা হয় সেখানে কবিগুরুর জন্মদিনের প্রভাতে শিলচরে কোনও অনুষ্ঠান নেই!
পরে আমাদের সংবাদদাতা কাছাড়ের জেলা শাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এস লক্ষ্মণন জানান, যেহেতু ৯টা থেকে এন আই টি তে নাগরিকত্ব বিলের শুনানি শুরু হওয়ার কথা তাই একমাত্র ৮টার সময় শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ সম্ভব ছিল। তাই সাংসদের ইচ্ছে প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রটোকল অফিসার খবর নেন কোথাও এ সময় পুষ্পাঞ্জলি বা মাল্যদান সম্ভব কি না। জেলা শাসক আমাদের এও বলেন, তারা খবর নিয়ে জানতে পারেন যে ৮টার সময় কোথাও রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হচ্ছিল না। পরে বিমান ধরার জন্য সময়ের অভাবে সাংসদ সেলিমকে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের সুযোগ করে দেওয়া যায়নি।
এখানে উল্লেখ করা উচিত প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে শিলচরে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা হয়। সকাল ৭টায় তারাপুরের রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশে কবিপ্রণাম শুরু হয়।বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা, স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।যদিও প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য কবিপ্রণাম অনুষ্ঠানটি বিঘ্নিত হয়। মানুষও কম হয়। এমনকি বাধ্য হয়ে পুরসভার কবিপ্রণাম অনুষ্ঠানটি ইন্ডিয়া ক্লাবের ভেতরে অনুষ্ঠিত হয়। আবার তারাপুরের রবীন্দ্রমূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনের জন্য সকাল ৭ টায় গান্ধীবাগে সবাই সমবেত হয়েছিলেন।এছাড়াও পুরো শহর জুড়ে ছোট ছোট আরও অনেক কবিপ্রণামের আয়োজন ছিল। এতসব আয়োজনের ব্যাপারে প্রশাসন কেন ওয়াকিবহাল নন তা সত্যি বোঝা গেল না। পরেও বিভিন্ন জায়গায় যেখানে কবিপ্রণামের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে কেন প্রশাসন সাংসদের এ ইচ্ছে পূরণ করতে পারল না এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের উদাসীনতা না অজ্ঞতা বরাকবাসীকে এইভাবে লজ্জিত করল তা কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন । দুটো ক্ষেত্রেই প্রশাসনের দিকে আঙ্গুল উঠবে।
Comments are closed.