আমরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত, কিন্তু তা মোটেই গেটের সামনে কিংবা রাস্তার মধ্যে নয়: প্রদোষ কিরণ নাথ
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক মিলন দাসের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। অনশন ধর্মঘটের তৃতীয় দিনেও প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন আলোচনার পথ প্রসারিত হয়নি।এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, অনশন চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিন জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদোষ কিরণ নাথ বলেছেন, আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। তিনি এই আন্দোলন সম্পর্কে জানান যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের অনশন কর্মসূচির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেনি এবং সেই কারণেই কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি।তবে তিনি সেই সঙ্গে আরও যোগ করেন, শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাটা তার নজরে আসামাত্র তিনি মহিলা মেডিক্যাল অফিসার, এম্বুলেন্স, নার্স,এসবের ব্যবস্থা করার জন্য কল করেন। অ্যাম্বুলেন্স সহ একটি মেডিক্যাল দল গেটের কাছে উপস্থিত থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সারা আসাম ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য্য অভিযোগ করে বলেন, রেজিস্ট্রার (ইনচার্জ) ছাত্রদের কল্যাণের জন্য কোন চিন্তা করছেন না।আর তাই তিনি না চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা করেছেন, না এ বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি হয়েছেন। এদিকে প্রদোষ নাথ এই অভিযোগের জবাবে বলেন, “উভয় পক্ষ আচরণবিধি মেনে চলতে রাজি হলে আমি সর্বদাই যে কোন আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আমরা আলোচনার জন্য অবশ্যই রাজি, তবে সেই আলোচনা গেটের সামনে কিংবা রাস্তার মাঝখানে করা সম্ভব নয়। একদল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সামনে রাস্তার মধ্যে আলোচনা মোটেই আশা করা যায় না। আমরা আগেও আলোচনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অফিসাররা অত্যাচারিত এবং অপমানিত হয়ে ফিরে এসেছেন”।
এদিকে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সহ কয়েকজন সদস্য শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে একজন প্রবীণ সাংবাদিক শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ‘চুহা’ (ইঁদুর) বলা ঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে একজন শিক্ষার্থী জবাবে বলেন, তিনি সমস্যার মুখোমুখি না হয়ে সমস্যা থেকে পালিয়ে বেড়ান এবং এই কারনেই আমরা মনে করি যে তিনি ইঁদুর। তিনি আমাদের শ্রদ্ধা অর্জনের জন্য এখন পর্যন্ত এমন কিছু করে উঠতে পারেননি। তাই আমরা তাকে এই নামে ডেকে কোনও ভুল করিনি”।
শিক্ষার্থী এবং উপাচার্যের মধ্যে এমনতর পার্থক্য গড়ে উঠার পেছনে কি কারণ রয়েছে? পিকে নাথ বলেন, “প্রথমত, উপাচার্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন না, কিংবা ছুটি উপভোগ করতে কোথাও যাননি। তিনি অফিসিয়াল ট্রিপে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাইরে রয়েছেন।”তিনি সেই সঙ্গে এও বলেন,” এটা খুবই দুঃখজনক যে ছাত্ররা আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের চেয়ারকে অসম্মান করছে। আমরাও ছাত্র ছিলাম। এমনও সময় ছিল যখন আমরা এক বছর উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করিনি। আর এখন শিক্ষার্থীরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই উপাচার্যের হস্তক্ষেপ চায়, এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। উপাচার্যকে একটি প্রটোকল অনুসরণ করে চলতে হয়। ছাত্রদের উপাচার্যের চেয়ার এবং অফিসকে সম্মান জানাতে হবে। কেউ কখনও আশা করতে পারে না যে উপাচার্য রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কোনও বিষয়ে আলোচনা করবেন। এটা কখনো ঘটবে না এবং ঘটা উচিতও নয়।”
এই অবস্থায় দেখার বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে এই ব্যবধানটি কিভাবে ঘুচে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার জন্য কিভাবে সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয় কিংবা আদৌ সম্ভব হয় কিনা।
Comments are closed.