Also read in

শিলচরের খেলোয়াড়দের স্বপ্ন দেখার রাস্তাটা আমাদের তৈরি করে দিতে হবে: নবনির্বাচিত সচিব বিজেন্দ্র

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিভিন্ন পদের জন্য নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে জল্পনা-কল্পনার শেষ ছিল না। ছিল টানটান উত্তেজনা। উৎসাহ-উদ্দীপনা। এসবের মাঝখানে অনুষ্ঠিত হলো নির্বাচন। গঠন করা হলো নতুন বোর্ড। শপথ নিলেন নতুন বোর্ডের সদস্যরা। নতুন বোর্ড কিভাবে কাজ করবে? তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? এ অঞ্চলের নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে কি ভাবছে? উঠতি খেলোয়াড়দের কিভাবে সাহায্য করবে নতুন বোর্ড?এই মুহূর্তে ক্রীড়াপ্রেমীদের এসব প্রশ্ন মনে আসা খুব স্বাভাবিক! এগুলোর উত্তর জানতে মন উৎসুক হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে এবং তাদের পরিকল্পনা জানতে বোর্ডের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বীজেন্দ্র প্রসাদ সিং’র সঙ্গে আমাদের সংবাদদাতা কথা বলেছেন। জেনে নেওয়া যাক নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক কি বলেছেন?

বীজেন্দ্র প্রসাদ সিং অবশ্যই আশাবাদী। তিনি বিশ্বাস করেন যে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছর ধরে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়ামটা সম্পূর্ণ হয়নি। এখনো অর্ধেকটা বাকি। অনেক চেষ্টা করার পরও সতীন্দ্র মোহন মেমোরিয়াল স্টেডিয়ামকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে আমরা অক্ষম। আর তার ফলে আমরা আইএসএল, আইপিএল বা আইলিগ’র মত গুরুত্বপূর্ণ খেলা গুলো কিন্তু শিলচরের মাঠে নামাতে সমর্থ হচ্ছি না।”

তিনি আরও যোগ করেন, ” আমরা যদি ভালো খেলা উপহার দিতে না পারি, তাহলে লোকজন মাঠে আসবে কেন? টিভির রিমোটে হাত রাখলেই যেখানে অনায়াসে বড় মাপের খেলাগুলো উপভোগ করতে পারছেন, সেখানে খেলাধুলার ক্ষেত্রে মান বজায় রাখতে না পারলে মানুষের মাঠে আসার সম্ভাবনা নগণ্য।” এই অবস্থায় বিজেন্দ্র সিং দৃঢ়ভাবে বললেন, “আমাদের সবচেয়ে প্রথম লক্ষ্য হবে, পরিকাঠামোগতভাবে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়ামকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া। যদিও কাজটা এত সহজ হবে না, কারণ আমাদের সীমিত সংস্থান রয়েছে। তাই সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সরকারের সাহায্য নিয়ে এটা সম্পূর্ণ করার প্রচেষ্টা চালানো হবে, এই প্রতিশ্রুতি অবশ্যই দিচ্ছি।”

বরাক উপত্যকার প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি তার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন ,”শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থায় ১৩ টি ইভেন্ট নিয়ে কাজ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিকেট-ফুটবল, হকি, ইনডোর গেম, সুইমিং, ভলিবল ইত্যাদি। এক্ষেত্রে আমার মাথায় একটা বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে, যা স্বল্প সময়ের মধ্যে আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়। তবে এই মুহূর্তে এটুকু বলতে পারি, আমাদের খেলোয়াড়দের এক্সপোজার ট্যুরে পাঠাতে হবে। ভালো খেলতে হলে কিংবা খেলাকে একটা বিশেষ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হলে সেই জায়গাটা তৈরি করতে হবে।”

সিং’র দৃঢ় বিশ্বাস,” আমরা অবশ্যই পারব।তবে এই লড়াকু মনোভাবটা খেলোয়ারদের মনে চুকিয়ে দিতে হবে। সেই সঙ্গে খেলোয়াড়দের মন থেকে নেতিবাচক মনোভাবটা পুরোপুরি ঝেরে ফেলতে হবে। আর তার জন্য তাদেরকে বাইরে পাঠাতে হবে কিংবা বাইরের ভালো খেলোয়াড়দের এখানে নিয়ে এসে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক খেলার ব্যবস্থা করতে হবে।”

তিনি আজকালকার দিনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বলেন,” আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, শহরের এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুকের মত সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ঘুরপাক খাচ্ছে,এর বাইরে বেরোতে পারছে না। তাই খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এই অবস্থায় আমাদের জোর দিতে হবে গ্রামের ছেলে মেয়েদের উপর। আর তাছাড়া অনেক ইভেন্ট রয়েছে যার জন্য গ্রামাঞ্চলে খেলোয়াড় বেশি পাওয়া যায়। তাই আমি চাইবো কিছু ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রোগ্রাম করতে। যাতে করে ওখান থেকে কিছু খেলোয়াড়রা উঠে আসে। আর তারপর তাদেরকে নিয়ে বাইরে থেকে কোচ আনিয়ে যদি ট্রেনিং ক্যাম্প করা যায়, তাহলে অবশ্যই আমরা সাফল্য পেতে পারি।”

তবে এক্ষেত্রে ধৈর্যশীল হওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন সিং। “আমাদের এও স্বীকার করতে হবে যে এই সাফল্য চটজলদি আসবেনা। প্রচেষ্টা হতে হবে দীর্ঘমেয়াদি। তবে একটা সঠিক পদক্ষেপ অবশ্যই আমাদের আগামী কালকে আরো প্রত্যয়ী করে তুলবে।” তিনি যোগ করেন।

সেই সঙ্গে তিনি হিমা দাস’র উদাহরণ তুলে ধরেন,”আমরা হিমা দাসকে চিনি। তার সাফল্যের গল্পও জানি। কিন্তু সেই মেয়েটিকে হিমা দাস হয়ে ওঠার জন্য বছরের-পর-বছর সাধনা করতে হয়েছে।”

“পাশের রাজ্য মনিপুরের ছেলেমেয়েরা যেখানে অলিম্পিকের প্রতিযোগিতায় নেমেছে, সেখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা কিছুই করছে না।
এই অবস্থায় ছেলেদেরকে স্বপ্ন দেখাতে হবে। স্বপ্ন দেখলেই স্বপ্ন সফল হয়। আর স্বপ্ন দেখানোর রাস্তাটা আমাদের তৈরি করে দিতে হবে। ‘এক্সপোজার’ আমাদের দিতে হবে। শিলচর থেকে সবকিছু সম্ভব নয়। এখানে এক সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। অনস্বীকার্য, এক্ষেত্রে সেই পর্যায়ের টেকনিক আমাদের কাছে নেই। তাই হয় তাদেরকে বাইরে পাঠাতে হবে, নয় এই টেকনিক গুলো এখানে এনে কাজ করতে হবে।” তিনি স্বীকার করেন।

সবশেষে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন,” আমি আশা করছি, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার খেলাধুলার উন্নতি হবে। সেই সঙ্গে পরিকাঠামোগত উন্নতি হবে।আমি ব্যক্তিগতভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করব যাতে করে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার মান আরো বৃদ্ধি পায়।”

Comments are closed.

error: Content is protected !!