বিবাহ অনুষ্ঠান, রেস্তোরাঁ বা পিকনিক, বাচ্চাদের নিয়ে সব জায়গায় গেলেও স্কুলে পাঠাতে অনীহা কেন অভিভাবকদের?
বিয়ের মরসুমে যেকোনও বিবাহ বাসরে ঢুকলে দেখা যাবে মানুষের সাধারণভাবে সেজেগুজে অংশ নেওয়ার দৃশ্য। পরিবারের শিশুরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। অথবা ধরুন কোনও রেস্টুরেন্টে গেলেন, কখনো কখনো এতটাই ভিড় থাকে চেয়ার পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এতেও মা-বাবার সঙ্গে শিশুরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি, প্রায় প্রত্যেক রবিবারে হাজার হাজার মানুষ পিকনিকে যাচ্ছেন, তার ফটো ফেসবুকে তুলে ধরছেন। সেখানেও শিশুরা অংশ নিচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা নির্দেশ দিয়েছেন ১লা জানুয়ারি থেকে সব ধরনের বিদ্যালয় স্বাভাবিকভাবে খুলে দিতে, তবু অভিভাবকরা সন্তানদের ক্লাসে পাঠাতে অনীহা দেখাচ্ছেন। অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত শিশুরা বাড়িতেই পড়াশোনা করছে কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মনে করেন ক্লাসে গেলে যে ধরনের পড়াশোনা হয় সেটা অনলাইনে সম্ভব নয়।
গত বছরের মার্চ মাসে লকডাউন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যালয় গুলো বন্ধ হয়েছে। পড়াশোনা জারি রাখতে বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস চলছে। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষাও অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকরা মনে করেন ক্লাসে এসে যতটুকু পড়াশোনা হয়, অনলাইনে তার কিছুটা হলেও বাদ পড়ে। ক্লাসের ভিতর পড়াশোনার যে পরিবেশ এবং অভ্যাস থাকে সেটা বাড়িতে অনেক সময় হয়না।
সরকারি নির্দেশে বিদ্যালয়গুলোয় সব ধরনের প্রটোকল মেনে ক্লাস চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে গিয়ে তৈরি থাকছেন কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা আসছে না।
শিলচর শহরের ঐতিহ্যবাহী ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয় যেমন হলিক্রস স্কুল, সাউথ পয়েন্ট স্কুল বা শিলচর কলেজিয়েট স্কুল, সবগুলোতেই উপস্থিতির হার কুড়ি শতাংশের নিচে। কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ মন্দিরা দাস গুপ্ত বলেন, “আমরা অনলাইনে ক্লাস খুব ভালোভাবে চালিয়ে যাচ্ছি, ফলে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে না। কিন্তু শুধুমাত্র কোর্স শেষ করলেই ভাল রেজাল্ট হয় না। আমাদের অফলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে, শিক্ষকরা এসে তৈরি থাকছেন যদি ছাত্র আসে পড়াবেন বলে, তবে অভিভাবকরা সাহস করছেন না। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি, সব ধরনের প্রটোকল মেনে ক্লাস হবে, তবু তাদের অনীহা রয়েছে। আমরা জানি না ঠিক কবে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন অভিভাবকরা। আমাদের ক্লাস এবং শিক্ষক প্রত্যেকেই তৈরি হয়েছেন, ছাত্ররা এলে তাদের শিক্ষার পরিবেশ দিতে আমরা রাজি আছি।”
কলেজিয়েট স্কুল ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অফলাইন ক্লাস বন্ধ করবে, তাতে ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্য হয়েই বিদ্যালয় আসবে। একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বিবেকানন্দ ডিগ্রী কলেজ। কলেজের ডিরেক্টর পিনাক পাল এব্যাপারে বলেন, “আমরা সরকারের নির্দেশ মেনে ক্লাস ছাত্রদের জন্য তৈরি রাখছি তবে তারা কোনোভাবেই আসতে চাইছে না। যারা বাইরে থেকে এসে পড়াশোনা করে তারা অনেকেই ঘর ভাড়া ছেড়ে দিয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের অনলাইন ক্লাস। লকডাউনে শিক্ষকরা অনলাইনে এত ভাল প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, ছাত্ররা ক্লাসে না এসেই পর্যাপ্ত নোট পেয়েছে। তবে আগামীতে আমরা অনলাইন ক্লাস বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে আসবে। ক্লাসে এসে পড়াশোনা করার অনেক সুফল রয়েছে, সেটা কোনভাবেই ছেড়ে দেওয়া যায় না।”
তবে শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীরা তাদের অভিভাবকের ওপর দোষ দিলে চলবে না, কিছু কিছু ছাত্র ক্লাসে গিয়েও ফিরে আসছে। স্নাতক স্তরের এক ছাত্র জানিয়েছে, ক্লাসে যাওয়ার পর শিক্ষকরা বলেছেন, এত কম ছাত্র নিয়ে পড়ানো যাবে না এখন ক্লাসে না আসতে। এমন আরও অনেক ঘটনা রয়েছে, এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা চাইলেও ক্লাসে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারছেনা।
বেসরকারি বিদ্যালয় পরিস্থিতি অন্যরকম হলেও সরকারি বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্লাসে অংশ নিতে চাইছেন। সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা সোমা সোম জানিয়েছেন, তার বিদ্যালয়ে ছাত্র ছাত্রীর ক্লাসে আসতে কোনও ধরনের অনীহা নেই। তিনি বলেন, “আমাদের বিদ্যালয় খুলে যাওয়ার পর ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্লাসে আসছেন। আমরা সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বা অন্যান্য প্রটোকল মেনেই ক্লাস করাচ্ছি। কোনও ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ভয় নেই অথবা উৎসাহের কোনও অভাব নেই।”
একই অবস্থা অন্যান্য সরকারী বিদ্যালয়গুলোয় দেখা যাচ্ছে। সরকারি বালক বিদ্যালয় হোক বা নরসিং হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল, সবখানেই পড়ুয়ারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্লাস করতে আসছে।
Comments are closed.