প্রধানমন্ত্রী অসন্তুষ্ট, দাবি দিলিপের; "বিজেপি একটি কর্পোরেট দলে পরিণত হয়েছে"
বরাক উপত্যকায় নির্বাচনের আগে এসে একেবারেই নিস্প্রভ ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্টেজে দাঁড়িয়ে প্রার্থীদের সঙ্গে কথাই বলেননি, এতেই বোঝা গেছে তিনি দলের কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট। প্রার্থিত্ব-বন্টন নিয়ে যেভাবে সিন্ডিকেটের কথা শোনা গেছে, এটা একেবারেই বিজেপির আদর্শ নয় এবং আমার বিশ্বাস নরেন্দ্র মোদীর কানে কথাগুলো গেছে, তাই তিনি প্রার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করেননি, এমনটাই দাবি প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ কুমার পালের। দল থেকে তাকে বহিষ্কার করার ঘটনাকে তিনি হাস্যকর বলে আখ্যা দিয়ে শুক্রবার এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন দিলীপ।
তিনি বলেন, “এক সপ্তাহ আগে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে ই-মেইল পাঠিয়ে বিজেপি থেকে ইস্তফা দিয়েছি। আমি এখন যে দলের সদস্য নই তারা কিভাবে আমাকে দল থেকে বের করছে? এটা একদিকে যেমন হাস্যকর অন্যদিকে এই ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে বরাকের নেতৃত্ব কতটুকু দুর্বল। বিজেপি এখন একটি কর্পোরেট দলে পরিণত হয়েছে যেখানে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির পছন্দ-অপছন্দ দলের আদর্শ থেকে বড়। অবশ্যই এর পেছনে রয়েছে সিন্ডিকেটের টাকা। আমি তাদের জিজ্ঞেস করতে চাই, তারা আমাকে বহিষ্কার করার কে? ১ এপ্রিল জনগণ এর উত্তর দেবেন কারণ আমি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচনে লড়ছি।”
প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “ব্যক্তি হিসেবে এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমি নরেন্দ্র মোদীজিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। তিনি সৎ এবং বিচক্ষণ ব্যক্তি, আমার সুযোগ হয়নি তার কাছে সরাসরি নিজের কথাগুলো পৌঁছে দেওয়ার কিন্তু দলের ভেতরে এবার টিকিট বন্টন নিয়ে যে কার্যকলাপ হয়েছে, আমার বিশ্বাস তিনি খবর পেয়েছেন। এছাড়া এই প্রথমবার দেখা গেল, বরাক উপত্যকায় নরেন্দ্র মোদী এসেছেন এবং তার সঙ্গে আসেননি সর্বানন্দ সোনোয়াল। অর্থাৎ তিনিও অসন্তুষ্ট, এই কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন। শুধুমাত্র বরাক উপত্যকায় নয় দেশের যে কোনও এলাকায় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী গেলে স্থানীয় প্রার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করেন এবং তাদের হয়ে দু’একটা কথা প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেন। এতে একদিকে যেমন প্রার্থীদের মনোবল বাড়ে অন্যদিকে জনমনে তাদের প্রতি বিশ্বাস জন্মায়। অথচ গতকাল সভায় প্রধানমন্ত্রী কোনও প্রার্থীর সঙ্গে পরিচয় করলেন না বা তাদের জনসমক্ষে তুলে ধরলেন না। এতে পরিষ্কার হয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী বরাকের নেতৃত্তের উপর অসন্তুষ্ট।”
দিলীপ কুমার পাল বলেন, “এখন বরাক উপত্যকায় দু’নম্বরী (দ্বিতীয় শ্রেণীর) বিজেপি রয়েছে, সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীরা এখন বিজেপির সর্বেসর্বা। যারা আসল বিজেপি, এদের ধীরে ধীরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল আমরা দেখলাম প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বরাক উপত্যকায় বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থকে প্রধানমন্ত্রীর সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমন আরও অনেক কথা রয়েছে যেগুলো খতিয়ে দেখলে এটা বিশ্বাস হয় বিজেপি এখন বরাকে দু’নম্বরি।”
দিলীপবাবুর অভিযোগ, বিজেপি সদস্যরা প্রচার করতে গিয়ে তার নাম ধরে মিথ্যা প্রচার করছেন। তিনি বলেন, “আমি খবর পেয়েছি যখন বিজেপির সদস্যরা প্রচারে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ তাদের প্রশ্ন করছেন দিলীপ কুমার পাল কোথায়। কেউ কেউ বলছেন দিলীপ কুমার পাল তাদের পাঠিয়েছেন, আবার কেউ কেউ মিথ্যে গুজব রটাচ্ছেন, যেমন দিলীপ পালকে ভোট দিলে সব সরকারি প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে ইত্যাদি। সরাসরি মাঠে লড়াই করতে না পেরে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন বর্তমান বিজেপি সদস্যরা। আমি শুধু আশ্চর্য হচ্ছি, তাদের মনে আমাকে নিয়ে এত ভয় কেন? এর উত্তর হচ্ছে তারা বুঝে গেছেন জনমনে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু। অনেকে বিজেপিতে থেকেও আমাকে সহায়তা করছেন, কারন তারা জানেন বিজেপি আমার প্রতি অন্যায় করেছে।”
Comments are closed.