প্রতিপক্ষে যেই থাকুক আমি প্রস্তুত, জানালেন শিলচর ডিএসএ সভাপতি বাবুল হোড়, সচিব বিজেন্দ্রর ঢালাও প্রশংসা সভাপতির মুখে
এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি তাতে মনে হচ্ছে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আসন্ন বি জি এমে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছেন সভাপতি বাবুল হোড়। পোড়খাওয়া এই ক্রীড়া সংগঠকের বিরুদ্ধে সভাপতির পদে কে দাঁড়াবেন, সেটা এখনো পরিষ্কার না হলেও তার লড়াইটা যে বেশ কঠিন, সেটা কিন্তু পরিষ্কার। কারণ এবার তার লড়াই সরাসরি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। সভাপতি পদের জন্য শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তীর নামও শোনা যাচ্ছে। তবে শেষ মুহূর্তে যেই দাঁড়ান না কেন, তিনি প্রস্তুত। ভোটে লড়বেন। বৃহস্পতিবার বাকসের মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে দৃঢ়তার সঙ্গে এমনটাই জানালেন বাবুল হোড়। সেইসঙ্গে এটাও সাফ জানিয়ে দেন, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থায় এবারই শেষবারের মতো নির্বাচনে লড়বেন তিনি। এরপর আর পদের জন্য দাঁড়াবেন না। তবে ডিএসএর সদস্য হিসাবে কাজ করে যাবেন। জড়িয়ে থাকবেন এই ঐতিহ্যবাহী সংস্থার সঙ্গে।
বাবুল বাবু বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কে দাঁড়াবে, সেটা আমি জানি না। তবে যেই দাঁড়াক, আমি কিন্তু প্রস্তুত। বাকিটা ঠিক করবেন সংস্থার সদস্যরা। তারাই আমার যোগ্যতার বিচার করবেন।’ এবার শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার আসন্ন বি জি এম নিয়ে রাজনৈতিক লড়াই তুঙ্গে রয়েছে। শাসকগোষ্ঠী ও বিরোধী শিবির যেন আদা জল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন। ডি এস এর ক্ষমতা দখল করতে কেউ চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। ডি এস এর নির্বাচনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে সভাপতি বলেন, ‘শিলচর ডিএসএ র বিজিএম র জন্য একাংশ প্রার্থীর রাজনৈতিক প্রচার শুরু হয় মূলতঃ ২০১৮ সাল থেকে। সেবারের দ্বি বার্ষিক সাধারণ সভাকে সামনে রেখে মধ্যসহর এস এসে রাজনৈতিক স্তরের প্রচার সভা প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই এর সূত্রপাত। এরআগে পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচার করেছেন। তবে মাঠের লোকদের সঙ্গে নিয়ে। গাড়ী বোঝাই করে সংগঠকরা ক্লাবে ক্লাবে যেতেন। নিজ পচ্ছন্দের প্রাথীর পক্ষে সমর্থন আদায় করতেন। সভাপতি পদে দ্বিজেশ রঞ্জন সেন বনাম জিতেন্দ্র চন্দ্র দাসগুপ্ত এবং সচিব পদে সন্তোষ মোহন দেব বনাম ডোনাল ক্রোজিয়ার নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৮ র আগে পর্যন্ত এই চিত্র ছিল। অবশ্য যুগ র সঙ্গে তাল মিলিয়ে নানা সময়ে বিভিন্ন ভাবে প্রচার হয়েছে। কিন্তু ইদানিংকালে রাজনৈতিক প্রচার ও হস্তক্ষেপ মাথা চাড়া দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডি এস এ র ইতিহাসে অনেক নির্বাচনের সাক্ষী আমি । বিভিন্ন সময়ে ভোটে জিতে পদে এসেছি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রচারের প্রয়োজন হয়নি। তবে জেলার প্রথম সারির ক্লাব ও সংগঠনগুলো হস্তক্ষেপ করেছে। এর বাইরে কিছু হয়নি।’ অবশ্য ক্রীড়া ক্ষেত্রে জন প্রতিনিধি এবং সরকার প্রতিনিধির প্রয়োজন রয়েছে মনে করেন সভাপতি হোড়। কারণ, কোনও টুর্নামেন্ট আয়োজন কিংবা পরিকাঠামো উন্নয়নে জন প্রতিনিধিদের দরকার। তাদের হাত দিয়ে অনেক কঠিন কাজ সহজে করা সম্ভব। ইদানিংকালে সিংহ ভাগ জেলা ও রাজ্য ক্রীড়া সংগঠন শাসক গোষ্ঠীর অধীনে।
বাবুল হোড় বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে জড়িত। এই মুহূর্তে কাছাড় কংগ্রেসের অন্যতম বড় মুখ তিনি। তবে ডি এস এর সভাপতি জানান, তিনি কখনোই সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না। বলেন, ‘ভরসার পাত্র ছিলাম বলেই সন্তোষ মোহন দেব তার সঙ্গে রাখতেন। কিন্তু সক্রিয় রাজনীতিতে কখনও ছিলাম না।’ তিনি মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বরা খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। ফলে ক্লাব থেকে এসে কোনও ভুল করছেন না। সাধারণ পরিষদে নাম পাঠানোকে কেন্দ্র করে ক্লাবের ঝামেলা বহু পুরনো। তবে এসব ঘটনায ডি এস একে জড়িয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি নন তিনি। তবে কেন উধারবন্দ ক্রীড়া সংস্থার মান্যতা প্রসঙ্গে ডি এস এ জড়িয়ে পড়ল। সচিব ডিসেন্ট নোট দেওয়ার পরও সেদিনের গভর্নিং বডি পিছু হটে নি। এব্যাপারে সভাপতি হোড়ের বক্তব্য হচ্ছে, ‘সচিব হলেন সংস্থার চিফ এক্সিকিউটিভ। তিনি বিষয়টি এর আগের গভর্নিং বডির সভায় আনেন এজেন্ডায়। ফলে এর সমাধানে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং সবশেষ রশিদ অনূযায়ী সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া সংস্থাকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।’
সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবসে বসেছে শিলচর ক্রীড়ার প্রাণ পুরুষ সন্তোষ মোহন দেবের আবক্ষ মূর্তি। এ নিয়ে কম রাজনীতি হয়নি। সেদিনের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন সচিব বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং। তা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। তবে আজ সচিব বিজেন্দ্রকে ঢালাও সার্টিফিকেট দিলেন সভাপতি। সাফ জানালেন, আবক্ষ মূর্তি বসানোর ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন সচিব। মূর্তি বসানোর জায়গাটি সুন্দর ভাবে তৈরি করেছেন সচিব সিং। সেই সময়ে আম্পায়ারিংয়ের জন্য তাঁকে বাইরে চলে যেতে হয়েছিল। তাই অনুষ্ঠানের দায়িত্ব আমায় সমঝে দিয়ে যান সচিব বিজেন্দ্র । শুধু এই অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নয়, নিজের কার্যকালে সচিব বিজেন্দ্র সব কাজই সভাপতি কে জানিয়ে করেছেন। নিজের মর্জি মাফিক কিছুই করেননি। তবে হ্যাঁ, যেহেতু তিনি সচিব এবং ডিএসএ সচিব কেন্দ্রিক সংস্থা তাই একাধিক সিদ্ধান্ত তাকে নিতে হয়েছে। এতে দোষের কিছু নেই।
বাবুল বাবু বলেন, ‘বিজেন্দ্রর সময়কালে শিলচর জেলা সংস্থার পরিকাঠাময় দারুন উন্নতি হয়েছে। খুব ভালো কাজ করেছে বিজেন্দ্র। সংস্থার প্রশাসনিক বিল্ডিং থেকে শুরু করে জিম, আর্কাইভ এবং হোস্টেল সবকিছু হয়েছে। এমনকি এতদিন যে লাইফ মেম্বারদের নিয়ে একটি সমস্যা ছিল সেটারও খুব সুন্দর ভাবে সমাধান করেছে সচিব। বি জি এম কে সামনে রেখে খুব সুন্দর করে কাজ গুছিয়ে এনেছে। ১৮ পাতার এক বই প্রকাশ করেছে। যাতে রয়েছে ২২৭ সদস্যের ভোটার তালিকা। সচিব হিসাবে কিন্তু আমিও এই কাজটা করতে পারিনি। তাই ওকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে সভাপতি জানান, তিনি টিম ওয়ার্ক-এ বিশ্বাসী। বলেন, ‘আমি সব সময় টিমওয়ার্ক এ বিশ্বাস করি। সচিব থাকাকালীন ও সবাইকে নিয়ে কাজ করেছি। সম্প্রতি সন্তোষ মোহন দেবের আবক্ষ মূর্তি অনুষ্ঠান সফল হওয়ার পিছনেও কিন্তু এই টিম ওয়ার্কই কাজ করেছে। সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সবাই এসেছেন। এমনকি স্থানীয় জন প্রতিনিধিরাও ছিলেন। অনুষ্ঠান সফল। আর এটা সম্ভব হয়েছে টিম ওয়ার্কের জন্য। সবার সহযোগিতা করেছেন।’
শোনা যাচ্ছে, বর্তমান কর্ম সমিতির অনেকেই আজ সভাপতির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে চান। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সাধ্যমত চেষ্টা করি। কিন্তু সব সময় সবাইকে খুশি রাখা সম্ভব হয় না। এতেই অনেকের অভিমান থাকলেও থাকতে পারে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে সভাপতি জানান, অতীতে মার্কেট কমপ্লেক্সের ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। এর উপর হোটেল দিয়ে সংস্থার আয়ের উৎস করে দেন। তাছাড়া জেলা গ্রন্থাগার সংলগ্ন বিবাহ ভবন ভাড়া দিয়েছেন সামন্য টাকায়। আজ সেই ভবন থেকেই ভাড়া বাবদ আসছে ১.২৫ লক্ষ টাকা। ছোট ভাই মৃদুল হোড়ের স্মৃতিতে নতুন প্রবেশদ্বারের নির্মাণ কাজ চলছে। এটা ১৯৭৯ সালের সভায় অনুমোদন লাভ করেছিল জেলা গ্রন্থাগারের সামনে থাকা পথে। কিন্তু সেখানে ব্যাস স্ট্যান্ড থাকায় তা সম্ভব হচ্ছিল না। ফলে বর্তমান সচিব বিজেন্দ্রর সঙ্গে আলোচনা করে গেইট মূল প্রবেশদ্বারে নিয়ে আসা হয়। তাছাড়া শিলচর ফুটবল অ্যাকাডেমি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল তাঁর অর্থে। ১.২৫ লক্ষ দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরবর্তীতে পি সি চ্যাটাজি ট্রাস্ট ৩০ লক্ষ টাকার অনুদান দেওয়ায় জিমনেশিয়ামটি মৃদুল হোড়ের স্মৃতিতে করা হয়।
ফের সভাপতি বনে গেলে আসন্ন কার্যকালে তাঁর তিনটি উন্নয়ন মুলক পরিকল্পনা রয়েছে। প্রথমতঃ ব্যাডমিন্টন ইন্ডোরে নতুন মেট বসানো। দ্বিতীয়ত টেবিল টেনিস প্রশিক্ষণের জন্য আদর্শ প্র্যাকটিস এরিনা তৈরি। তৃতীয়তঃ ফুটবল অ্যাকাডেমি তৈরি করা। কারণ, ঘরোয়া টুর্নামেন্টে স্থানীয় ফুটবলার ক্রমশ লুপ্ত পাচ্ছে। ফুটবল অ্যাকাডেমি চেষ্টা করেও এই অভাব পূরণ করতে পারছে না। সুতরাং আরও একটি অ্যাকাডেমি চান তিনি।
Comments are closed.