মন্ত্রী-আধিকারিক সহ দশ হাজার কর্মচারির আজকের রাতের ঠিকানা 'কুড়েঘর'
মন্ত্রী-আধিকারিক সহ দশ হাজার কর্মচারির আজকের রাতের ঠিকানা ‘কুড়েঘর’
হ্যাঁ ঘটনাটা সত্যিই ঘটতে চলেছে, আজ ১১ আগস্ট, শনিবার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার অধীনে ইতিমধ্যে ঘর পেয়ে যাওয়া হিতাধিকারীদের ঘরে রাত কাটাতে চলেছেন বিভাগীয় মন্ত্রী নবকুমার দোলে সহ পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের প্রধান সচিব ডঃ জে পি এক্কা, কমিশনার ডঃ পি অশোক বাবু সহ প্রায় ১০ হাজার কর্মী ও কর্মচারিরা। এর আগে আমরা বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে বিভিন্ন নেতাদের দেখেছি এরকম সাধারণ জনতার ঘরে গিয়ে খাবার খেতে বা রাত কাটাতে, কিন্তু সরকারি নির্দেশে সরকারি আধিকারিক কর্মচারিদের এরকম বিশাল সংখ্যায় সরকারি কর্মসূচি রূপায়নে সাধারণ জনতার ঘরে রাত কাটানোর ঘটনা খুব সম্ভব এটাই প্রথম।
ঘটনাটা খোলসা করে বলা যাক। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ‘২০২২ সালের মধ্যে সকলের জন্য গৃহ’ কর্মসূচি রূপায়ন সফল করার জন্য আসাম সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই যোজনার অধীনে এখন পর্যন্ত মঞ্জুর হওয়া ২,৫৯,৭৭৯ টি ঘরের কাজ খুব কম সময়ের মধ্যে শেষ করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে সরকার। ইতিমধ্যে সম্পন্ন হওয়া ঘরগুলোর হিতাধিকারীরা এটা রূপায়ণ করতে গিয়ে কি ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন, কি করলে ঘরগুলো আরেকটু ভালো হতে পারে তা এই ঘরগুলোতে বাস করা লোকেদের কাছ থেকে জেনে নেওয়া এবং কি করে প্রকল্পটির ভালোভাবে রূপায়িত করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করার জন্যই এই রাত কাটানোর কর্মসূচি। এটা অনেকটা সমীক্ষার মত, যা থেকে তথ্য নিয়ে বিশ্লেষণ করে সরকার পরবর্তীতে কাজে লাগাবে।
বরাক উপত্যকার তিন জেলার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে করিমগঞ্জ এই রাত কাটানোর সরকারি কার্যসূচির অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। যেসব কর্মচারিরা রাত্রিযাপন করবেন তারা হলেন প্রতিটি জেলার সিইইও, বিডিও, জেই, ব্লকের হিসাবরক্ষক, কম্পিউটার সহায়ক, গ্রাম পঞ্চায়েত কো-অর্ডিনেটর, গ্রাম রোজগার সহায়ক। ইতিমধ্যে, কে কার ঘরে রাত্রি যাপন করবেন সেই ঘরের মালিকসহ সরকারি কর্মীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগ।
করিমগঞ্জে আজকের এই কার্যসূচিতে অংশ নিয়ে জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা শাসক আন্দামুথান চেরাগী এলাকার কুটিন্দ্র দাসের ঘরে ; জেলা পরিষদের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নবারুণ ভট্টাচার্য পাথারকান্দি উন্নয়ন খন্ডের চরগোলা জিপির রেনু বালা দাসের ঘরে, , ডিআরডিএ’র প্রকল্প সঞ্চালক রসরাজ দাস দুল্লভ ছড়া ব্লকের চেরাগী জিপির অন্য এক হিতাধিকারীর ঘরে থাকবেন । এদিন করিমগঞ্জ জেলায় প্রশাসনিক আধিকারিক সহ পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের আধিকারিক ও কর্মচারীরা জেলায় দারিদ্র সীমার নীচের ১৫২টি আবাসগৃহে রাত কাটাবেন । এই রাত কাটানোর মধ্য দিয়ে তারা বরাদ্দকৃত গৃহের সব তথ্য নিয়ে একটা ফর্ম পূরণ করার পাশাপাশি কাছাকাছি থাকা অসম্পূর্ণ দুটো প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ঘরের তথ্য সংগ্রহ করবেন এবং দেরি হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করবেন। এই কাজে তাদের সহায়তা করবেন বর্তমানে ওই ঘরের আবাসিক।
তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যাদের ঘরে রাত কাটাবেন এসব ভিভিআইপি থেকে আরম্ভ করে সাধারণ কর্মচারিরা, তারা কিন্তু ব্যাপারটা শুনে মুচকি মুচকি হাসছেন আর নিজেদের মধ্যে ঠাট্টা তামাশা করছেন। এখনো সঠিকভাবে বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকেই। এটা গ্রামে গঞ্জে একটা মজাদার আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। আধিকারিক, কর্মচারিদের মধ্যে বেশির ভাগই এই কর্মসূচিকে খোলা মনে গ্রহণ করেছেন, দু’একজন তো আবার পিকনিকের মেজাজে রয়েছেন। তবে এই অনন্য কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য সরকার সর্বতোভাবে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে ।
Comments are closed.