."সাগরিকা রিজেন্সির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?" সুমিত সত্যওয়ানকে তলব গৌহাটি হাইকোর্টের
শিলংপট্টির সাগরিকা রিজেন্সির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গের দায়ে গৌহাটি হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল। শিলচরের বাসিন্দা সুব্রত মজুমদার সহ আট ব্যক্তি সাগরিকা রিজেন্সির কর্ণধার বিশ্বজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে পিআইএল ফাইল করেন। তাদের অভিযোগ, হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট বানাতে গিয়ে বেশ কিছু নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে। যে কথা বলে বিল্ডিংটি বানানো হয়েছিল সেটা মানা হয়নি। এমনকি যতটুকু এলাকাজুড়ে বিল্ডিংটি গড়ে তোলার কথা ছিল তার থেকে অনেক বেশি জায়গা ব্যবহার করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে গৌহাটি হাইকোর্ট শিলচর পুরসভাকে বিষয়টি তদন্ত করে বিস্তারিত তথ্য আদালতের কাছে তুলে ধরতে নির্দেশ দেয়। তবে শিলচর পুরসভা সময়মতো সে কাজটি করতে পারেনি, এমনকি নির্ধারিত দিনে পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার সুমিত সত্যওয়ান আদালতে উপস্থিত হতে পারেননি। তারা আদালতের কাছে সময় চেয়েছেন, তাদের কথা মেনে আদালত ১৯ দিন ধার্য করে সুমিত সত্যওয়ানকে সেদিন উপস্থিত থেকে নিজের পক্ষ তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছেন।
গৌহাটি হাইকোর্টের নির্দেশের সঙ্গে যে অভিযোগের কথা উল্লেখ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে, বিল্ডিং বানানোর ক্ষেত্রে শিলচর পুরসভার কাছ থেকে কমার্শিয়াল (জেনারেল এবং রিটেল) কাজের উদ্দেশ্যে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে বিল্ডিংটি হোটেল এবং রেস্টুরেন্টের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। অনুমতি অনুযায়ী বি+জি+৪ বিল্ডিং বানানোর কথা ছিল কিন্তু এটি বানানো হয়েছে বি+জি+৫। অর্থাৎ একটি আরসিসি ফ্লোর অতিরিক্ত বানানো হয়েছে। বিল্ডিং বানানোর ক্ষেত্রে মিউনিসিপাল আইন অনুযায়ী সম্পূর্ণ এলাকার ৪০ শতাংশ বিল্ডিং’র জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এই বিল্ডিং বানানোর ক্ষেত্রে ৭১.৩৮ শতাংশ এলাকা ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আইন অমান্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
চিফ জাস্টিস অজয় লাম্বা এবং জাস্টিস মনিশ চৌধুরী এব্যাপারে একটি তদন্তের নির্দেশ দেন। ২৪-০৩-২০২০ তারিখে শিলচর পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এক রিপোর্ট হাইকোর্টের কাছে পেশ করেন। তদন্তের রিপোর্ট বলছে, পুরো বিল্ডিং বানাতে শিলচর পুরসভার পক্ষ থেকে যে এলাকা ধার্য করে দেওয়া হয়েছিল সেটাতে, বিল্ডিং বানানোর ক্ষেত্রে চারদিকে প্রয়োজনের বেশি জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যতটুকু জায়গা ছেড়ে কনস্ট্রাকশনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল সেটা পালন করা হয়নি। ইঞ্জিনিয়ার পুরো এলাকা মেপে তার রিপোর্ট পেশ করেছেন।
১৬ সেপ্টেম্বর গৌহাটি হাইকোর্টের তরফে চিফ জাস্টিস অজয় লাম্বা এবং জাস্টিস মনিশ চৌধুরী এক নির্দেশে বলেন, “যেহেতু তদন্তের রিপোর্ট বলছে বিল্ডিং বানানোর ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি এবং প্রয়োজনের বেশি এলাকা জুড়ে কনস্ট্রাকশন হয়েছে, তাই আমরা শিলচর পুরসভার তরফে আইএএস সুমিত সত্যওয়ানকে নির্দেশ দিচ্ছি তিনি যেন ৫ অক্টোবরের মধ্যে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেন।”
চিফ জাস্টিস অজয় লাম্বা আরও বলেন, “যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অর্থাৎ সুমিত সত্যওয়ান ধার্য করা তারিখের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেন, তাহলে তাকে আদালতের সামনে হাজির হতে হবে এবং কাজটি না করার জন্য পর্যাপ্ত কারণ দেখাতে হবে।”
মামলার শুনানির একটি তারিখ ছিল ৫ অক্টোবর, সেদিন শিলচর পৌরসভার পক্ষ থেকে সুমিত সত্যওয়ান আদালতে উপস্থিত হননি, বরং তাঁর হয়ে এস দত্ত সেখানে উপস্থিত হন। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, “বিশেষ কিছু কারণে শিলচর পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার আদালতের নির্দেশমত পদক্ষেপ নিতে পারেননি। এমনকি তিনি এব্যাপারে আদালতকে বা কোন সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে জানাতে পারেননি। তিনি অবশ্যই অবগত আছেন যদি এই নির্দেশ পালন করতে না পারেন, তাহলে তাকে আদালতে নিজে হাজির হতে হবে। যদিও ১৪ সেপ্টেম্বর জারি করা হাইকোর্টের নির্দেশ এখন পর্যন্ত পালন করা সম্ভব হয়নি, তবে এর পিছনে পর্যাপ্ত কারণ রয়েছে। তাই আদালতের কাছে আরও কিছু সময় চেয়ে নেওয়া হচ্ছে।”
হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চে এন কোটসিওয়ার সিং এবং মনিশ চৌধুরী শিলচর পুরসভার পক্ষে উপস্থিত থাকা এস দত্তের আবেদন শোনেন। তারা আপাতত আরেকটি তারিখ দিতে রাজি হয়েছেন, তবে সেই তারিখে সুমিত সত্যওয়ানকে দুটি বিষয়ে নিজের কৈফিয়ৎ তুলে ধরতে হবে। কেন তিনি আদালতের নির্দেশমত সাগরিকা রিজেন্সির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিলেন না এবং দ্বিতীয়ত কি কারণে নির্ধারিত দিনে আদালতে উপস্থিত হলেন না।
আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, “আদালতের নির্দেশ সময়মতো পাওয়ার পরেও যখন শিলচর পুরসভার পক্ষ থেকে সুমিত সত্যওয়ান সময় চেয়েছেন, তাই ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত তাকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত দিনে তাকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে এবং তার পক্ষ সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরতে হবে। যেহেতু তিনি আগের তারিখে এই কাজটি করতে পারেননি আদালত আশা রাখছে তিনি দ্বিতীয়বার ব্যর্থ হবেন না।”
এব্যাপারে সাগরিকা রিজেন্সির কর্ণধার বিশ্বজিৎ রায়কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্ত হয়েছে, এতে হাত রয়েছে একজন প্রাক্তন মন্ত্রীর ছেলের। সাধারণত এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় কোন সামাজিক সংগঠন বা সমাজসেবী মানুষ পিআইএল ফাইল করছেন। তবে এক্ষেত্রে আমি খবর পেয়েছি একজন কংগ্রেস নেতা আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন।”
তিনি আরও বলেন, “যদি আমার বিল্ডিং অবৈধ হয় তাহলে কেন সরকারি কোয়ারেন্টাইন হিসেবে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সহ সরকারি আধিকারিকরা কেন এখানে এসে থাকেন? আমি আদালতের সিদ্ধান্তের সম্মান করি তবে সেখানে ভুল তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। একজন প্রাক্তন মন্ত্রী যিনি সম্প্রতি শাসক দলে যোগ দিয়েছেন, তার ছেলে ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের বদনাম করার জন্য এসব কাজ করাচ্ছেন। তবে আমি বিশ্বাসী, আসল তথ্য ঠিক সময় বেরিয়ে আসবে।
তদন্তের ব্যাপারে তিনি বলেন, “বলা হয়েছে আমার হোটেলের শিলচর পুরসভার পক্ষ থেকে তদন্ত হয়েছে। আমাদের না জানিয়ে তারা কিভাবে তদন্ত শেষ করলেন এটা বুঝতে পারছি না। আমাদের এব্যাপারে কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি, তারা কবে এসেছিলেন কেউ দেখেনি, এমনকি আমাদের কোনও কর্মচারিদের পর্যন্ত জানানো হয়নি। তবে কি দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা নিজেদের কার্যালয়ে বসে কাল্পনিক রিপোর্ট বানিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন? এসব প্রশ্ন আমরাও করবো যাতে আসল সত্য উদঘাটিত হয়।”
পুরো ঘটনায় এবার বল সুমিত সত্যওয়ানের কোর্টে। তিনি আদালতে কি তথ্য তুলে ধরেন এর উপর নির্ভর করবে সাগরিকা রিজেন্সির বিরুদ্ধে গৌহাটি হাইকোর্টের আগামী নির্দেশ। তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি এই মুহূর্তে কোনো বক্তব্য করতে রাজি হননি।
Comments are closed.