
করোনা পজিটিভের স্ত্রীকে পরীক্ষায় বসতে পরামর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ের! আক্রান্ত হচ্ছে পরীক্ষায় বসা আরও পড়ুয়ারা
শিলচর গুরুচরণ কলেজের ছাত্র পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর এবার করিমগঞ্জ কলেজের এক ছাত্র পজিটিভ হয়েছে। তবে ছাত্রটির পরীক্ষা এখনও শুরু হয়নি, প্রথম পরীক্ষা ২২ এপ্রিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলে দেওয়া হয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছাত্রদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না। তাদের জন্য আগামীতে অন্য ব্যবস্থা থাকবে। এদিকে শিলচরের একে চন্দ আইন মহাবিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর স্বামী পজিটিভ হয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে পরীক্ষায় বসতে পরামর্শ দিয়েছেন। এব্যাপারে একটি অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার অব এগজামিনেশন কিছু অদ্ভুত যুক্তি দিচ্ছেন।
আইন কলেজের ছাত্রী এবং সুপ্রবীর দত্তরায়ের মধ্যে যে কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হয়েছে, সেটা অবশ্যই একটু উদ্বেগজনক। ছাত্রীর স্বামী সম্প্রতি রাজ্যের বাইরে থেকে বাড়ি ফিরেছেন এবং স্বাভাবিক নিয়মে তার কোভিড পরীক্ষা হয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বিমানে ফেরার পর কোভিড পরীক্ষা করিয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে থাকবেন যাত্রী এবং আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট তাকে পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। আরটিপিসিআর রিপোর্টে ছাত্রীর স্বামী পজিটিভ হন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের খবরটি জানিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু স্বামীর সঙ্গেই তিনি ছিলেন, তার পরীক্ষা হয় কিন্তু রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। তবে ডাক্তাররা পরামর্শ দেন তিনি যেন অন্তত ১৪ দিন হোম আইসোলেশনে কাটান। সামনেই তার পরীক্ষা, তিনি কি করবেন বুঝতে উঠতে পারছেন না, তাই সরাসরি কন্ট্রোলার অব এক্সামিনেশনের কাছে ফোন করেন। তবে সেখান থেকে যে উত্তর আসে সেটা অদ্ভুত।
কন্ট্রোলার অব এক্সামিনেশন সুপ্রবীর দত্তরায় প্রথমেই বলেন, আপনি যখন জানেন আপনার স্বামী পজিটিভ তাহলে তার সঙ্গে থাকতে গেলেন কেন? এভাবেই কথা এগোয় এবং ছাত্রীটি নানান ভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। একসময় তিনি বলেন, “যেহেতু আপনি পজিটিভ নন তাহলে পরীক্ষায় বসতে অসুবিধা কোথায়? আর পাঁচটা ছাত্রের মতো আসবেন, পরীক্ষা দেবেন এবং বাড়ি ফিরে যাবেন।” ছাত্রীটি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে, একে তো এই অবস্থায় ঘর থেকে বেরোনো অন্যায় হবে, দ্বিতীয়তঃ আশেপাশের লোকেরা প্রতিবাদ করতে পারে। কলেজে গিয়ে যদি পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় তার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। সুপ্রবীর দত্তরায় বলেন, “যদি পরীক্ষা দিতে হয় তাহলে আমরা যেরকম বলছি সেভাবেই করুন, না হলে আপনি নিজেরটা নিজেই বুঝে নিন।”
করিমগঞ্জ কলেজের ছাত্রটি বিজ্ঞান শাখার পঞ্চম সেমিস্টারের, তার প্রথম পরীক্ষা ২২ এপ্রিল। সম্প্রতি তার বাবা পজিটিভ হন, এরপর পরিবারের প্রত্যেকের পরীক্ষা হয়, এতে ছাত্রটি পজিটিভ হয়। প্রথমে করিমগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে সে যোগাযোগ করে এবং জানতে চায় আগামীতে তাকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে কিনা। অধ্যক্ষ জানিয়ে দেন, একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছাত্রকে কোনওভাবেই কলেজে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটার উপরে নির্ভর করবে পুরোটা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানান এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি নির্দেশ আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ছাত্র পরীক্ষায় বসতে পারবে না, তবে তাদের যাতে বছর নষ্ট না হয় তার জন্য নেগেটিভ হওয়ার পর অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোলার অফ এক্সামিনেশন সুপ্রবীর দত্ত রায় নির্দেশটি জারি করেছেন। তবে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে প্রথমে ছাত্র-ছাত্রীদের আবেদন নাচক করা হলো এবং অফলাইনে পরীক্ষা আয়োজন করলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার যখন ছাত্র-ছাত্রীরা একে একে সংক্রমিত হচ্ছে তখনও বিশ্ববিদ্যালয় দায় চাপাচ্ছেন তাদের উপরেই। করিমগঞ্জের ছাত্রটি পজিটিভ হওয়ার পর যখন কলেজের অধ্যক্ষ সদুত্তর দিতে পারছিলেন না, ছাত্রটি করুণ সুরে বলেছিল, “আমার করোনা হয়েছে সেটা কি আমার অপরাধ যে এভাবে আমাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে?”
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ইতিমধ্যে দাবি জানিয়েছে পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে পরীক্ষা পিছিয়ে নেওয়া হোক, অথবা অন্য কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের নির্দেশের দোহাই দিয়ে নিজেদের একের পর এক নির্দেশ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর চাপিয়ে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র রাজ্য নয় কাছাড় জেলায়ও করোনা সংক্রমনের হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। গতকাল দুই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এবং সংক্রমনের সংখ্যা ইতিমধ্যে ১৭০ পেরিয়ে গেছে। একই সঙ্গে হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একের পর এক এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যাতে বিপদের মুখে পড়ছে ছাত্রছাত্রীরা। মনে হচ্ছে এক অভিভাবকহীন পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলছে বরাক উপত্যকার সবথেকে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি।
গত বছর এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রতিনিধিরা অনেক সক্রিয় ছিলেন তবে এবার তারা একেবারেই মাথা ঘামাচ্ছেন না। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পর ছাত্র পজিটিভ হয়েছে, পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক আক্রান্ত হয়েছেন, অথচ জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের পর যেন কোথায় হারিয়ে গেছেন। গত বছরের মতো হয়তো এবারও শেষমেষ প্রশাসন এবং সরকার সাধারণ মানুষকেই দোষারোপ করবে।
Comments are closed.