বন্যপ্রাণী-প্রেমী সালমা সুলতানার সচেতনতায় রক্ষা পেলো বিদ্যুৎস্পৃষ্ট পেঁচা, বিদ্যুতের খোলাতারে প্রায়ই প্রাণ হারাচ্ছে পাখিরা
ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফার তথা বন্য পশুপ্রেমী সালমা সুলতানা সবসময়ই পশুপাখিদের সুরক্ষা নিয়ে সচেতন থাকেন। রবিবার শিলচর দেবদূত পয়েন্টের পাশে খোলা বিদ্যুতের তারে স্পর্শ হয় একটি বার্ন ওউল প্রজাতির পেঁচার এবং সেটি রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এটা চোখে পড়ে সালমা সুলতানার, তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন এবং খবর দেন বন বিভাগকে। সৌভাগ্যবশত পাখিটি খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এবং তার প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রাণ রক্ষা করা গেছে। সাধারণত মানুষ এমন ঘটনা দেখলে হয় এড়িয়ে যান, অথবা দু’একটা ফটো তুলে সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েই ক্ষান্ত হন। তবে আমাদের চারপাশে এমন লোকও রয়েছেন যারা দায়িত্ব নিয়ে পশুপাখিদের রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেন এবং তাদের প্রয়াসে নিরীহ প্রাণীর রক্ষা পায়।
সালমা সুলতানা তার এক বন্ধুর সঙ্গে বাইকে করে রবিবার সন্ধ্যেবেলা দেবদূত পয়েন্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই তার চোখে পড়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা পাখিটির উপর। এগিয়ে যেতেই তিনি দেখেন বিদ্যুৎ পিষ্ট হওয়া বার্ন ওউল প্রজাতির পেঁচাটি কাতরাচ্ছে। তার বন্ধুর সহায়তায় একটি কার্টুন সংগ্রহ করে খুব সাবধানে তাকে আগে পাখিটিকে তোলেন এবং বন বিভাগের কর্তাদের খবর জানান। বিদ্যুতের খোলা তারে প্রায়ই পাখিরা আটকে পড়ে এবং মারা যায়। যে পাখিগুলো তারে স্পর্শ করে মাটিতে ছিটকে পড়ে তারাও সুরক্ষার অভাবে প্রায় প্রাণ হারায়। তবে সচেতন ব্যক্তিরা এভাবে এগিয়ে এলে অনেক সময় এদের রক্ষা করা সম্ভব হয়।
বন বিভাগের ডিএফও সানিদেও চৌধুরী প্রথমেই সালমা সুলতানার মত মানুষকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, “সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা এমন হয়েছে যেখানে সমাজ-সচেতন মানুষ এগিয়ে এসে নিরীহ পশুপাখিদের রক্ষা করেছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা অত্যন্ত বিরল প্রজাতির একটি কচ্ছপকে মাছের বাজার থেকে উদ্ধার করেছিলেন। তার বিচক্ষণতায় একেবারে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনা গেছিল বিরল প্রজাতির কচ্ছপটিকে। একইভাবে সালমা সুলতানা পাখিটিকে রক্ষা করলেন। তিনি যদি আর পাঁচটা মানুষের মতো রাস্তার পাশে পড়ে থাকা পাখিটিকে দেখে এড়িয়ে যেতেন, তাহলে তার মৃত্যু হতো, বা হয়ত অন্য কোনও পশু থাকে খেয়ে ফেলত। আমরা মানুষ হিসেবে চারপাশে থাকা পশুপাখিদের প্রতি আরেকটু সহানুভূতিশীল এবং দায়িত্বশীল হলে অনেক বিরল প্রজাতির প্রাণী এভাবে রক্ষা পায়।”
তবে এধরনের ঘটনা নতুন নয়, বাঁদুর বা কাক-জাতীয় পাখি খোলা বিদ্যুতের তারে স্পর্শ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা আমাদের চারপাশে প্রায়ই ঘটে। মূল সমস্যা সেখানে, এই প্রশ্নের উত্তরে সানিদেও যদি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং তাদের কাছে আবেদন জানিয়েছে যেসব এলাকায় পাখিদের বিচরণের সম্ভাবনা বেশি, সেখানে বিদ্যুতের তারগুলো যাতে খোলা রাখা না হয়। আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু এলাকার চিহ্নিত করে তাদের কাছে জানিয়ে দেব এবং তারা আগামীতে হয়তো বিদ্যুতের খোলা তারগুলো ঢেকে ফেলবেন।”
রবিবার রাতে উদ্ধার হওয়া পাখির ব্যাপারে তিনি বলেন, “বার্ন ওউল প্রজাতির পেঁচা বিরল প্রজাতির না হলেও আমাদের এলাকায় এর সংখ্যা খুবই কম। এখন এধরনের প্রাণী আক্ষরিক অর্থে সবগুলোই বিরল। হয়ত সারাদেশের নিরিখে আমরা সেটা বলতে পারিনা, কিন্তু এদের সুরক্ষা নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি জেলায় যেসব প্রাণী রয়েছে তাদের পর্যাপ্ত সুরক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে। অবশ্যই এতে সাধারণ মানুষের সহায়তা এবং তাদের মধ্যে সচেতনতা সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয়। সালমা সুলতানার মত মানুষ আমাদের পাশে থাকলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।”
Comments are closed.