Also read in

স্পেনে ওয়ার্ল্ড সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ : শিলচরের শাটলার জগজ্যোতির প্রস্তুতিতে মানসিকভাবে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থের অভাব

গত মাসে গোয়ায় ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার অল ইন্ডিয়া মাস্টার্স রেঙ্কিং টুর্ণামেন্টে ভালো পারফর্ম করেছিলেন শিলচরের শাটলার জগজ্যোতি রাজকুমার। যার সুবাদে তিনি বি ডব্লু এফের ওয়ার্ল্ড সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। আগামী ২৮ নভেম্বর থেকে স্পেনের হুয়েলভা শহরে বসবে এর আসর। চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ক্যারিয়ারে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন জগজ্যোতি। এর আগে মালয়েশিয়ায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি। স্পেনের আসরে ৪৫ বছরের বেশি বয়সের গ্রুপে খেলবেন শিলচরের শাটলার।

বিষয়টা শুধু শিলচরের ক্রীড়ামহল এর জন্য নয়, গোটা বরাক উপত্যকার জন্য এক গর্বের বিষয়। তবে আন্তর্জাতিক একটা মঞ্চে জগজ্যোতির অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যেখানে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অর্থের যোগান না হলে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না শিলচরের শাটলার। হ্যাঁ, এটাই সত্যি। দেশের জার্সি গায়ে ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার (বাই) ব্যানারে খেললেও অর্থের যোগান জগজ্যোতিকেই করতে হবে। বাই এখানে আর্থিকভাবে কোনো সাহায্য করছে না। আর বি ডব্লু এফের আসরে খেলতে কমপক্ষে দু লক্ষ টাকার দরকার। এটাই এখন জগজ্যোতির জন্য সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা মানসিকভাবে তাঁর প্রস্তুতিতেও বাধা সৃষ্টি করছে। চ্যাম্পিয়নশিপের প্রস্তুতিতে ঠিক ভাবে ফোকাস করতে পারছেন না জগজ্যোতি।
গোয়ার টুর্ণামেন্ট খেলে শিলচরে আসার পর দিন থেকেই স্পেনের টুর্নামেন্টের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন জগজ্যোতি। নিয়মিতভাবে দিনে দুটি শিফটে চলছে তার প্র্যাকটিস। প্রথমে সকাল সাড়ে সাত টা থেকে দশ টা পর্যন্ত, তারপর বিকেল চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত চুটিয়ে প্র্যাকটিস করছেন। এর মধ্যে জিমও করছেন। সবকিছুই চলছে। ‌ তবে ওয়ার্ল্ড সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই দুশ্চিন্তা বেড়ে চলেছে জগজ্যোতির। স্পেনের আসরে অংশ নিতে হলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুরই ব্যবস্থা হয়নি। অন্তত দু লক্ষ টাকার দরকার জগজ্যোতির। এমন অবস্থায় প্রত্যেকটা দিন তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খুব কমই এমন সুযোগ পেয়ে থাকেন। এর জন্য কঠিন পরিশ্রম করতে হয়েছে জগজ্যোতিকে। গোয়ায় নিজের সেরাটা নিংড়ে দিতে হয়েছে। তারপর মিলেছে আন্তর্জাতিক মঞ্চের একটা টুর্নামেন্ট এর ছাড়পত্র। তবে এখন শুধু অর্থের অভাবই জগজ্যোতি মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য আগামী ২৪ নভেম্বর সকালে নয়াদিল্লির বিমান ধরার কথা। সেদিন ওই রাতে নয়া দিল্লি থেকে ভারতীয় দলের স্পেনের বিমান। এবার ওয়ার্ল্ড সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য অসমের মোট চারজন শাটলার ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। এটা এক রেকর্ড। এই প্রথম রাজ্য থেকে এতজন আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সুযোগ পেলেন।
স্পেনের আসরে বড়োসড়ো একটা দল নিয়েই যাচ্ছে ভারত। টুর্নামেন্টের প্রস্তুতিতেও বেশ অর্থের দরকার। ইন্ডিয়া ক্লাবের ইনডোরে প্রতিদিন এস টু ফ্লাওয়ার দিয়ে প্র্যাকটিস করছেন জগজ্যোতি। চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা হবে এস ফাইভ অথবা এস ফিফটিন ফ্লাওয়ার দিয়ে। এস টু এক একটা ফ্লাওয়ার এর মূল্য ২০০ টাকা। জগজ্যোতি জানান, এস টু দিয়ে প্র্যাকটিস করলে এস ফাইভ অথবা এস ফিফটিন এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া যায়। তাই তিনি এস টু দিয়ে প্রস্তুতি সারছেন।
তাৎপর্যের বিষয় হচ্ছে, বাই এর অধীনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করা সত্ত্বেও স্পেনের আসরে অংশ নেওয়া শাটলারদের প্রত্যেকেই নিজেদের অর্থ নিজেদেরকেই যোগাড় করতে হচ্ছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড: হিমন্ত বিশ্বশর্মা বাই এর অন্যতম শীর্ষ কর্তা। তিনি আসাম ব্যাডমিন্টন সংস্থার সভাপতি ও। তা সত্ত্বেও জগজ্যোতিকে অর্থের জোগাড় করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে। এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন ঠিক, তবে কেউই এগিয়ে আসছেন না।
এমন পরিস্থিতিতে জগজ্যোতির পাশে দাঁড়িয়েছে তার সংস্থা কাছাড় মাস্টার্স গেমস। সংস্থার সভাপতি চন্দন শর্মা জগজ্যোতির জন্য অর্থ জোগাড় করতে সব ধরনের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাফল্য আসেনি। শিলচরের বিধায়ক ও সাংসদের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন। তবে দুজনেই এই মুহূর্তে জেলার বাইরে থাকায় কিছু সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে যত সময় যাচ্ছে জগজ্যোতির দুশ্চিন্তা কিন্তু ততই বেড়ে যাচ্ছে। সবশেষে যদি অর্থের অভাব বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সেটা এখানকার ক্রীড়ামহলের জন্য হবে সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয়।

Comments are closed.