Also read in

পিনাক রায়দের রাজা হরিশচন্দ্র বললেন রাজদীপ; "সরকারের কাছে তাদের বার্তা পৌঁছে দেব", আশ্বাস

কাছাড় জেলায় করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন প্রায় প্রত্যেকের মৃতদেহ দাহ করছে শিলচরের রাইজিং ইয়ুথ সোসাইটির সদস্যরা। সম্প্রতি বরাক বুলেটিনের এক প্রতিবেদনে তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। মাসের পর মাস নিজের পরিবারের সদস্যদের দেখতে পাচ্ছেন না। শ্মশানে সারারাত কাটালেও এক বোতল জল কিনে খাওয়ার অধিকার নেই তাদের। ইতিমধ্যে ৭০ টির বেশি করোনায় মৃত ব্যক্তির সৎকার করেছেন তারা। তবু সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অমানুষের মত ব্যবহার পাচ্ছেন। তাদের এক সদস্য অসুস্থ মায়ের কাছে ওষুধ দিতে যাওয়ায় দা লাঠি নিয়ে জনগণ আক্রমণ করেছিলেন। তবু হাসি মুখে প্রতিরাতে মৃতদেহ সৎকার করছেন উপত্যকার নয়জন তরুণ। এবার ধীরে ধীরে জনপ্রতিনিধিরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

সম্প্রতি শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায় তাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাদের গল্প শুনে তিনি আশ্চর্য হন। তিনি বরাক বুলেটিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, “আমার শহরে এধরনের ঘটনা আমি একেবারেই জানতাম না। তারা যে কাজটি করছেন এর কোনও বিকল্প নেই। তাদের গল্প শুনে আমি আশ্চর্য হয়েছি এবং শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়েছে। আমার মনে হয় না সারারাত জেগে এমন কাজ করার উদাহরণ আর রয়েছে বলে। আমরা এলাকার সাধারন মানুষের মনে সাহস জোগানোর চেষ্টা করছি। তবু এদের মত তরুণরা দুর্ব্যবহার সহ্য করছেন। তবে ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, যারাই গতানুগতিক চিন্তা ধারার বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন তাদের অনেক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাদের ঘটনা শুনে আমার মনে হয়েছে এরা রাজা হরিশচন্দ্রের মতই। ভারতবর্ষের মহান রাজা হরিশচন্দ্র একসময় শ্মশানে মৃতদেহ পুড়িয়েছেন, তার ওপর সাধারণ মানুষ অত্যাচার করেছে, কিন্তু তিনি দমে যাননি। আমার শহরে এধরনের যুবকরা রয়েছেন জানতে পেরে আমি অত্যন্ত গর্বিত। তাদের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন নেই, তারা নিজেরাই স্বেচ্ছায় কাজটি করছেন। তবে এই কাজের যোগ্য সম্মানটুকু তাদের পাইয়ে দিতে আমি অবশ্যই চেষ্টা করব। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্র সরকারের কাছে তাদের কাজের বৃত্তান্ত তুলে ধরব এবং যদি তাদের কোনো সম্মান পাওয়ার যোগ্যতা থাকে তাহলে সেটা পাবেন, এইটুকু আশা দিতে পারি।”

১৬ জুলাই নারায়ণ মিত্রের মৃতদেহ সৎকারের মাধ্যমে রাইসিং সোসাইটির পিনাক রায় এবং তাদের সদস্যদের তাদের এই যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর শুরু হয় শিলচর শ্মশানঘাটে কোভিড মৃতদেহ সৎকারের প্রক্রিয়া। এক সময় এলাকার মানুষ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, এখনো তারা রাতের বেলা বিভিন্ন ধরনের দুর্ব্যবহার সহ্য করেন। তবে এতে তাদের উৎসাহ দমে যায়নি। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পচা গলা মৃতদেহ পর্যন্ত তারা সৎকার করেছেন। সারারাত খাওয়া-দাওয়া, জল ইত্যাদির ছাড়া দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তবে পুরো কাজটি করছেন স্বেচ্ছায়, এতে তাদের কোনও লাভ হয় না। সমাজসেবার যে সংকল্প তারা নিয়েছিলেন সেটা পালন করার উদ্দেশ্যে এতদূর এগিয়ে যাবেন এটা সাধারণ মানুষের চিন্তার ঊর্ধ্বে। সম্প্রতি বিধায়ক দিলীপ পাল সহ অনেকেই তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারা কারও সাহায্য চাইছেন না, নিজের শক্তিতেই সমাজের উৎকৃষ্টতম সেবা দিয়ে যাচ্ছেন রাইজিং ইউথ সোসাইটির যুবকরা।

আরো জানতে হলে নিচের লিংকে ক্লিক করুন :

 

https://barakbulletin.com/bn_BD/unsung-covid-warriors-in-silchar-who-cremated-60-bodies-and-the-cruelty-they-face-in-society/

Comments are closed.

error: Content is protected !!