Also read in

বাড়ি বাড়ি ১০ দিনের চূড়ান্ত সময় সীমার নোটিশ ধরিয়ে দিলো রেল, কোনও রেহাই নয়, জমি দখলমুক্ত করতে শীঘ্রই অভিযান

না, এবার আর কোনভাবেই রেহাই দিতে রাজি নয় রেল বিভাগ। গতমাসে মৌখিকভাবে শিলচর তারাপুরের জমি দখলমুক্ত করতে ফরমান জারি করেছিল রেল। ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা থেকে ৩-৪ জন কর্মী এসে সাফ জানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রেলের জমি ছাড়তে হবে।‌ সময়ের মধ্যে জমি খালি করে না দিলে কড়া অবস্থান গ্রহণ করবে রেল। ‌ চলবে উচ্ছেদ অভিযান। ‌ এতে সঙ্গে থাকবে জেলা প্রশাসন ও। এবার বাড়ি বাড়ি নোটিশ ও পাঠিয়ে দিলো রেল।

শুক্রবার বিকেলে ইন্ডিয়া ক্লাব পয়েন্ট থেকে তারাপুর অ্যাথলেটিক ক্লাব পর্যন্ত রেলের জমিতে বসবাসকারীদের দশদিনের চূড়ান্ত সময়সীমার নোটিশ দিয়েছে রেল। বিভাগের চার জন কর্মী প্রতিটি ঘরে ঘরে এই নোটিশ পৌঁছে দেন। এতে লেখা রয়েছে, ১০ দিনের মধ্যে রেলের জমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। এরপর ওই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। আগামী দু-তিন দিন ঠিক এই ভাবেই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে এই নোটিশ। জমি দখলমুক্ত করতে স্টেশন রোডের গোটা এলাকায় এভাবে নোটিশ পাঠাবে রেল। ইতিমধ্যে নতুন করে অনেকের কাছেই নোটিশ পৌঁছে গেছে। তারাপুর প্রথম পল্লী ক্লাব কে প্রথম নোটিশ পাঠিয়েছে রেল বিভাগ।

গতমাসে রেল বিভাগের কাছ থেকে মৌখিকভাবে জমি ছাড়ার ফরমান আসার পর থেকেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। অনেক দৌড়ঝাঁপ বৈঠক করেও কোন লাভ হয়নি। রেল বিভাগের সঙ্গে এক দফা বৈঠক করেও লাভ হয়নি। কোন ধরনের রেহাই দিতে রাজি নয় রেল বিভাগ। এমনকি জমি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য ছয় মাসের সময়সীমা দিতেও রাজি নয়। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন।

শিলচরের বিধায়ক দ্বীপায়ন চক্রবর্তীর সঙ্গেও এলাকার বাসিন্দারা এক বৈঠক করেছিলেন। রেলের কাছ থেকে যাতে একটু সময় পাওয়া যায় সেটা নিশ্চিত করতে বিধায়ক এর কাছে আর্জি জানানো হয়েছিল। তবে সূত্র মতে জানা গেছে, রেল বিভাগ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য নাকি গোয়াহাটি থেকে বেশ কয়েকটি মেশিন ও আসছে। স্টেশন রোড এলাকায় রেলের জমিতে বসবাস করছেন প্রায় ১৭০ পরিবার। এই মুহূর্তে এই প্রতিটি পরিবারের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

জমি দখলমুক্ত করতে অনেক আগে থেকেই নোটিশ দিয়েছিল রেল বিভাগ। ২০১৯ সালে প্রথম নোটিশ জারি করেছিল রেল। তারপর যথাক্রমে ২০২০ ও ২০২১ সালেও জমি খালি করার জন্য নোটিশ জারি করেছিল রেল। তবে এবার কড়া অবস্থান গ্রহণ করেছে রেল। বেঁধে দিয়েছে চূড়ান্ত সময়সীমা।একটা সমাধান সূত্র বের করতে উদ্বিগ্ন মানুষরা এক জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন। নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে এলাকার বিশিষ্ট জনেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, রেল বিভাগের কাছে তিন-চার মাসের সময়সীমা চাওয়া হবে। সেই অনুসারে রেলের কাছে একটু সময় চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছিল। তবে রেল বিভাগ সেটাও ফিরিয়ে দিয়েছে। সেইসঙ্গে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, শিলচরে রেলের আধুনিকরণের জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‌ শুধু শিলচরে নয়, গোটা দেশে রেলের ভোল পাল্টাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ‌ তারই অঙ্গ হিসেবে রেলের এই উচ্ছেদ অভিযান। ‌

রেলের এই সিদ্ধান্ত তারাপুরের ১৭০ পরিবার ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত। এক সূত্র অনুসারে, প্রায় ৮৫ টি বাড়ি দোকান ক্লাব ঘর উচ্ছেদ এর আওতায় রয়েছে। সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারে। ইন্ডিয়া ক্লাব পয়েন্ট থেকে তারাপুর বাজার পর্যন্ত চলবে এই উচ্ছেদ অভিযান। বাদ যাচ্ছে না তারাপুর অ্যাথলেটিক ক্লাব এর ভবন ও। এবার তালিকায় ঢুকে পড়ল প্রথম পল্লী ক্লাব ও।

রেলের জমিতে বসবাসকারীরা অধিকাংশই ব্যবসায়ী। ‌ নিজেদের পরিবার নিয়ে এতটা বছর ধরে সেখানে থাকছেন। অনেকের তো বাড়ির সঙ্গেই রয়েছে দোকানও। সেগুলোও উচ্ছেদের আওতায় রয়েছে। গত দু’বছরে করোনার জেরে প্রত্যেকেরই আর্থিকভাবে মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। ‌ অধিকাংশই ব্যাংক থেকে নেওয়া লোনের কিস্তি ও মেটাতে পারেন নি। এমন পরিস্থিতিতে সবাই ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছিলেন। এরমধ্যে গোদের উপর বিষফোড়ার মত যোগ হয়েছে রেল বিভাগের ফরমান। এর ফলে সবাই এখন প্রচন্ড উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। নিজেদের ঘর দোকান বাঁচাতে এদিক-ওদিক ছুটছেন। বৈঠক করছেন। তবে লাভ কিছুই হচ্ছে না।

এদিন নোটিশ দিতে আসা রেল কর্মীদের কাছে অনেকেই জানতে চান কতটুকু জায়গা জুড়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। তবে এর জবাবে রেলকর্মীরা নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। এতে উৎকণ্ঠা আরো বেড়েছে। রেল সূত্রে জানা গেছে, শনিবার তারাপুর অ্যাথলেটিক ক্লাব ভবন থেকে বাজার পর্যন্ত অংশে ঘর দোকানে নোটিশ পৌঁছে দেওয়া হবে।

Comments are closed.