নাবালিকা ধর্ষনের সাজা হোক মৃত্যুদন্ড : রাজ্যপাল জগদীশ মুখি
রাজ্যপালের হাইলাকান্দি আগমন ঘিরে জেলার সরকারি কার্যালয় আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেহারা পালটে দেওয়া হয়েছিল শনিবার। বিশেষ করে হাইলাকান্দির এস কে রায় সিভিল হাসপাতালের শনিবারের দৃশ্য দেখে রোগী আর তাদের পরিজনদের চোখ কপালে উঠেছে । এদিন এই হাসপাতাল পরিদর্শনে রাজ্যপালের আসার কথা ছিল। হাইলাকান্দির এস কে রায় অসামরিক হাসপাতালের অব্যাবস্থার সঙ্গে জেলাবাসীর পরিচয় অনেকদিনের। বাস্তবে বিপন্ন মানুষ এই হাসপাতালে এসে আরও বেশী সমস্যায় পড়ে থাকেন। কারন রোগী নিয়ে এলে এই হাসপাতালে চিকিৎসক না পাওয়া, হাসপাতালের বেডে বেডকভার না থাকা, মাথার উপরের পাখা না ঘুরা, চিকিৎসক আর নার্সদের দুর্ব্যাবহারের শিকার হওয়া এবং আবর্জনার দুর্গন্ধে নাকাল হওয়াই এই হাসপাতালের পরিচিত দৃশ্য। কিন্তু রাজ্যপালের হাইলাকান্দি আগমন উপলক্ষ্যে এস কে রায় হাসপাতালের পুরো চেহারাই পালটে ফেলেছিলেন কতৃপক্ষ। অন্য যেকোন দিন যেখানে এই হাসপাতালে এলে চিকিৎসক না পাওয়াই স্বাভাবিক, সেখানে এদিন এই হাসপাতালে অনেক ডাক্তার আর নার্সের উপস্তিতি দেখে হতবাক হয়ে গেছেন ভুক্তভোগী মানুষ। সেইসঙ্গে নোংরা আর আবর্জনার দুর্গন্ধে রোগী আর পরিজনদের যেখানে নাকে রূমালচাপা দিতে হত সেখানে এদিন এই হাসপাতালের বারান্দায় ছিল লাল কার্পেট আর রুম ফ্রেশনার এর সুগন্ধ। রোগীর বেডের জন্য বেডকবার বার বার চেয়েও যেখানে পাওয়া যায়না , সেখানে এদিন হাসপাতালের প্রতিটি বেডে চকচকে বেডকবার দেখে কৌতুহলী মানুষের প্রশ্ন এসব সামগ্রী এলো কোথা থেকে। অন্যদিন এসব কাদের দখলে থাকে । কেন রোগীর শয্যায় এসব দেয়া হয়না । এভাবেই শুধুমাত্র রাজ্যপালকে দেখানোর জন্য হাসপাতালের চেহারা পালটে দিয়েছিলেন কতৃপক্ষ। গত কদিন ধরে রাতদিন কাজ করে সাফ সাফাই চালানো হয়েছিল এই হাসপাতালে । শুধু তাই নয়, হাসপাতাল সুপার সুদীপ চক্রবর্তী এবং জেলার যুগ্ম স্বাস্থ্য সঞ্চালক অভিজিৎ বসুকে তদারকি করতে দেখা গেছে।
একইভাবে হাইলাকান্দির অন্যান্য কার্যালয় আর প্রতিষ্ঠানেও রাতারাতি রঙ লাগিয়ে চেহারা পালটে ফেলা হয়েছিল। সবচেয়ে বেশী তদারকি লক্ষ্য করা গেছে স্বয়ং জেলাশাসকের কার্যালয়ে। রাজ্যপালের হাইলাকান্দিতে আসাকে কেন্দ্র করে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনের দেওয়াল নির্মান করা সহ কার্যালয় প্রাঙ্গনে ব্লক বসানো, পিচ করা সহ সার্কেট হাউসকে নানাভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। একইভাবে হাইলাকান্দির জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগের কার্যালয়েও ছিল সাজসাজ রব। রাজ্যপালকে দেখাবার জন্য হাইলাকান্দি শহরের সাবেক চেহারাকে পাল্টে দেওয়া হলেও শেষরক্ষা কিন্তু হয়নি। রাজ্যপাল এদিন হাইলাকান্দি আসার পথে প্রথমে আলগাপুরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং হাইলাকান্দির এস এস কলেজে প্রবেশ করে তা পরিদর্শন করে বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। হাইলাকান্দির এস এস কলেজের শৌচাগারের বেহাল অবস্থা দেখে বেজায় অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল জগদীশ মুখি। তিনি কলেজের অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনা করার পাশাপাশি কলেজের ছাত্রদের টয়লেটও পরিদর্শন করেন বলে জানা গেছে। এরপর এদিন রাজ্যপাল বিভিন্ন সিকিউরিটি এজেন্সির সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি বিশিষ্ট নাগরিক এবং দলসংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাদের বিভিন্ন দাবি সম্বলিত স্মারকপত্র ও গ্রহন করেন। এছাড়া রাজ্যপাল হাইলাকান্দির সাংবাদিকদের সঙ্গে চায়ের আসরেও মিলিত হন। এই বৈঠকে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময় করার ফাঁকে তিনি তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
আলোচনায় বর্তমান সমাজের ধর্ষণের মত ভয়াবহ সমস্যার সাজা কি হওয়া উচিত এই নিয়ে সাংবাদিকরা তার মতামত জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে বলেন , তার মতে কিশোরী ধর্ষণকারীদের সাজা মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিত। তবে তার মতে এব্যাপারে চিন্তার বিষয় হচ্ছে নব্বই শতাংশ ধর্ষণের ক্ষেত্রে ধর্ষিতার আত্মীয়দের জড়িত থাকতে দেখা যায়। তাই ধর্ষণের মত জঘন্য অপরাধের ব্যাপারে কঠোর আইন প্রনয়নের পক্ষে তিনি বলে জানান রাজ্যপাল মুখি। স্বাস্থ্য শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাবসায়ীদের দাপট ব্যাপকভাবে বাড়ার ফলে মানুষকে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে সাংবাদিকরা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি মতামত ব্যাক্ত করে বলেন, ব্যাক্তিগতকরনে তার কোন আপত্তি নেই। তবে খেয়াল রাখতে হবে ব্যাক্তিগত ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠানে মানুষ উপযুক্ত সেবা পাচ্ছেন কিনা। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীশ মুখি বর্তমান সরকারের প্রশংসা করে বলেন, কেন্দ্র সরকার উত্তরপুর্বের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিছুদিন আগে এড্যান্টেজ অসমের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার লগ্নি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তিনি অসমের যুব সমাজকে আধুনিক পদ্ধতির কৃষিকাজ করে স্বনির্ভর হয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে হালাকান্দির জেলাশাসক আদিল হান, পুলিশ সুপার মনীশ মিশ্র, সচিব সঞ্জীব গোহাই বড়ুয়া এবং সহকারি সচিব ডি জে বরকাকতি উপস্থিত ছিলেন।
Comments are closed.