"রামকৃষ্ণ মিশনে না গিয়ে পুজো ভাবাই যায়না" : কৃষ্ণাশিস ভট্টাচার্য
দুর্গা পুজোর চার দিন উপভোগ করার জন্যে সবসময় ভাল পরিকল্পনা করে থাকি আমরা, সবাই জানি কখন আমরা কি করবো। পরিকল্পনা অনুযায়ী আমি এবং আমার বন্ধুরা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম, নতুন কুর্তা পরিধান করে রামকৃষ্ণ মিশনে চলে গেলাম। তখন ঘড়িতে বাজে সকাল ৮ টা, আমি এবং আমার বন্ধুরা ভাবলাম যে আমরা ভোরের পাখি এবং আমরা খুব সহজে উড়তে পারি। কিন্তু আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম প্রায় ৫০০০ ভক্তগণকে দেখে। মিশন চত্বর মানুষের জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল এবং একটা ধার্মিকভাবে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে গেছিল। ঢোকার কিছু সময় পর পার্কিংয়ের জায়গা খোঁজার জন্যে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়। অবশেষে আমরা আমাদের দু চাকী পার্ক করতে সক্ষম হই।
একটি প্রধান আকর্ষণ হওয়ার পাশাপাশি রামকৃষ্ণ মিশন পদ্ধতিগত ব্যবস্থার প্রকৃষ্ট উদাহরণ, যা ছাড়া সহজেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারতো। কয়েক মিটার হাঁটার পর আমরা আমাদের জুতো স্বেচ্ছাসেবকের কাছে হস্তান্তর করি, তারপর সে আমাদের একটি টোকেন দেয় রাখার জন্যে। আমরা মন্দির প্রাঙ্গনে ঢুকি এবং একটি লাইন ছিল, এটি ছিল ‘অঞ্জলি’ (দেবীকে ফুল ও বেলপাতার মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠান)। প্রায় ৩০০ জন ভক্ত সেখানে মিশনের মহারাজ স্বামী বৈকুণ্ঠানন্দের মাইক্রোফোন নিসৃত ‘মন্ত্র’ অনুসরণ করছিলেন। আমরা প্রায় ৪৫ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করলাম এবং ৩০০ জনের তৃতীয় ব্যাচে সুযোগ পেলাম। ভক্তির সহিত আমরা সমস্ত ধর্মানুষ্ঠান অনুসরণ করি এবং সেখানেও মিশন পদ্ধতিগত ব্যবস্থার প্রদর্শন করে। সেখানে একটি নির্দিষ্ট প্রস্থান পথ ছিল যেটা দিয়ে আমাদের বেরিয়ে যেতে বলা হয়, ঠিক প্রস্থান বিন্দুতে একজন স্বেচ্ছাসেবক ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। মা দুর্গার পায়ে লক্ষ্য করে ফুল নিক্ষেপ করার পরিবর্তে আমাদের সেই ডালায় ফেলতে হয়।স্বেচ্ছাসেবক পরে দেবী দুর্গার মূর্তি পর্যন্ত গিয়ে তাঁর পায়ের উপর বেলপাতা রাখে। অঞ্জলির পর আমাদের নিষ্পত্তিযোগ্য বাটি এবং কাচা প্রসাদ প্ৰদান করা হয় শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে। সেই প্রসাদের সাথেসাথেই আমাদের উপোস ভাঙে।
মিশন একটি ধর্মীয় ও পবিত্র স্থান হলেও পুজোর সময় এটি একটি পুনর্মিলনের প্ল্যাটফর্ম হয়ে যায়। অঞ্জলি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আমরা আমাদের অনেক বন্ধু ও পরিবারের সাথে দেখা করলাম, কয়েকজনকে অনেক বছর পর দেখা করছিলাম। আমাদের দলের অনেক সদস্য চাকরিসূত্রে বা পড়ার জন্যে বিভিন্ন জায়গায় চলে যায় এবং মিশনই এমন জায়গা যেখানে আমরা প্রায়ই একে অপরের সাথে দেখা করতে পারি। আমরা কয়েকটি সেলফি নেই এবং তারপর প্রায় সকাল ১১ টায় মহাপ্রসাদের (খিচুড়ি) লাইনের দিকে হাঁটতে থাকি। আমাদের প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল, এখানেও প্রবেশ পথের মতোই পুরুষ ও মহিলাদের জন্যে আলাদা আলাদা লাইন ছিল। ১২ টার দিকে আমরা প্লেট পাই এবং খিচুড়ি ও আলুর দম সবসময়ের মতোই অনেক স্বাদ হয়, তারপর আমরা বেরিয়ে আসলাম।
সেটা খিচুড়ি নয় যা আপনাকে ঘন্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে বিরক্ত করে না, নয় সেটা তাঁর স্বাদ, সেটা হলো অভ্যন্তরীণ শান্তি যা আপনি মিশনের প্রসাদ খেয়ে পান। আপনি উৎসাহের সহিত আসেন এবং পবিত্র কৃতিত্ব অর্জন করে বের হন।
কৃষ্ণাশিস ভট্টাচার্য পেশায় একজন শিক্ষক। এটি ছিল উনার পুজো কাহিনী। আপনিও যেখানেই আছেন সেখান থেকে আমাদের কাছে আপনার পুজো কাহিনী ভাগ করতে পারেন। শুধু আমাদেরকে পাঠান আপনার নাম ও ছবি সহ barakbulletin@gmail.com এ।
Comments are closed.