Also read in

রাস্তা নিয়ে বিবাদ, পাথর দিয়ে মেরে অসুস্থ মহিলার পা ভেঙে দিল যুবক, 'নীরব রয়েছে পুলিশ' অভিযোগ পরিবারের

সোনাই সমষ্টির অধীনে উত্তরকৃষ্ণপুর এলাকায় দুই পরিবারের ঝগড়ায় পাথর দিয়ে এক অসুস্থ মহিলার পা ভেঙে দেয় অপর পরিবারের যুবক। এখানেই শেষ নয়, রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের ঘন্টাখানেক বাড়িতেই বন্দি করে রাখা হয়। শেষমেষ পুলিশের তৎপরতায় তাদের ছাড়িয়ে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আহত মহিলার পরিবারের সদস্যরা রাঙ্গিরখাড়ি থানায় মামলা করেন। ঘটনার দুই দিন হয়ে গেলেও কাউকে আটক করেনি পুলিশ। আহত অবস্থায় যখন মহিলাকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সঙ্গে একজন পুলিশকর্মী গিয়েছিলেন। তিনি চা-পান খাবার জন্য পরিবারের কাছ থেকে ৫০০ টাকা দাবি করেন, এমনটাই অভিযোগ জানিয়েছেন মহিলার পরিবারের সদস্যরা।

ঘটনাটি ঘটে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে। উত্তর কৃষ্ণপুরের সমির উদ্দিন লস্কর, তার স্ত্রী সাইনা বেগম এবং পুত্র সরওয়ার আলম লস্কর ঘটনায় আহত হয়েছেন। সরওয়ার আলম লস্কর জানিয়েছেন, নিজের বাড়িতে কাজের জন্য ট্রাক দিয়ে মাটি আনিয়েছিলেন তারা। মিজোরাম রোড হাইওয়ের দিকে রাস্তার পাশে মাটি ফেললে জনগণের অসুবিধা হবে, তাই পেছনদিকে ইএনডি এলাকায় মাটি ফেলার সিদ্ধান্ত নেন তারা। তবে সেখানে বাধা দেয় তাদের গলিতেই থাকা জাবেদ বড়ভুঁইয়া নামের এক যুবক। অনেক কথাবার্তার পরেও তারা মাটি ফেলতে দেয়নি, শেষমেষ হাইওয়ের দিকেই সেটা ফেলা হয়। তবে এতেও ক্ষান্ত হয়নি জাবেদ বড়ভুঁইয়া এবং তার সহযোগীরা। নানাভাবে তারা মাটি আনতে বাধা দেয়, এতে কিছুটা ঝগড়াঝাটি হয়। তবে ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে হঠাৎ করেই সমির উদ্দিন নস্করের বাড়ির সামনে এসে ডাকাডাকি করে জাবেদ ভুঁইয়া এবং তার ভাইয়েরা। তিনি বেরিয়ে গেলে তার ওপর হামলা করে তারা। তাকে বাঁচাতে স্ত্রী এবং পুত্র এগিয়ে যান, তারাও হামলার শিকার হন। একসময় লাঠি এবং পাথর নিয়ে সাইনা বেগমের ওপর হামলা করে যুবকরা। তার মাথা ফেটে যায় এবং কিছুক্ষণ পরেই তিনি বুঝতে পারেন একটি পায়ের গোড়ালি ভেঙে গেছে। এলাকার মানুষ এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহায়তায় কোনক্রমে তারা গেটের ভিতরে ঢুকে সেটা লাগিয়ে দেন। তখন বাইরে থেকে জাবেদ ভুঁইয়া এবং তার সহযোগীরা হুমকি দেয় কোনভাবেই আহত মহিলাকে হাসপাতালে যেতে দেবে না। শেষমেশ তারা পুলিশের কাছে ফোন করেন এবং প্রায় ঘণ্টাখানেক পর পুলিশ এলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এলাকার যুবক তারিখ এম বলেন, “রক্তাক্ত অবস্থায় অসুস্থ মহিলাকে আটকে রেখেছিল জাভেদ বড়ভূইয়া এবং তার সহযোগীরা, আমি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। আমরা পুলিশের সহায়তায় তাদের শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিভিন্নভাবে হেনস্তা হতে হয়েছে আমাদের। তবে সবথেকে বাজে অভিজ্ঞতা হচ্ছে, পুলিশের যে আধিকারিক আমাদের সঙ্গে গেছিলেন, তিনি আমাদের পৌঁছে দিয়ে বলেন তাকে চা-পান খাবার জন্য কিছু টাকা দিতে। আমরা ১০০ টাকা দিলে তিনি বলেন এটাই হবেনা, ৫০০ টাকা দিন। তিনি আমাদের সহায়তা করেছেন, তাকে কিছু খাওয়াতে আমাদের ভালই লাগত, কিন্তু কঠিন সময়ে এভাবে হাত পেতে টাকা নিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন তারা টাকার জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে তারা এলাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি এবং তার নির্দেশে রাঙ্গিরখাড়ি থানার কিছু আধিকারিক এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তবে পুলিশ আসার আগেই অভিযুক্তরা সবাই গা-ঢাকা দেয়, অর্থাৎ কেউ জানিয়ে দিয়েছিল পুলিশ আসছে। আমাদের মনে হয় বিভাগের ভিতরেই এমন কিছু লোক রয়েছেন যারা অপরাধীদের সহায়তা করেন, হয়তো বিনিময়ে তাদের কিছু জোটে। এমনটাই যদি হয়, তাহলে অপরাধমূলক কাজ করেও দুষ্কৃতীরা ছাড়া পাবে এবং যার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে তিনি বিচার পাবেন না। আমরা চাই এই বার্তাটুকু বিভাগের আধিকারিকদের কাছে পৌঁছুক এবং তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।”

সরওয়ার আলম লস্কর জোরহাট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পড়াশোনা করে এসেছেন এবং এলাকায় নিজের টিম ছোটখাটো ব্যবসা করেছেন। তিনি জানান, জাবেদ বড়ভূঁইয়া এবং তার ভাইয়েরা প্রায়ই নিজেদেরকে এলাকার পুরনো মানুষ বলে পরিচয় দিয়ে অন্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তবে ১৫ ফেব্রুয়ারি তারা বারবার হুমকি দেওয়ায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল। এতে তারা সরাসরি হামলা চালিয়েছে এবং তার মায়ের পা ভেঙে দিয়েছে। এরপরেও নানাভাবে হুমকির বার্তা পাঠানো হচ্ছে।

ঘটনার একদিক জানা গেলেও জাবেদ বড়ভুঁইয়া বা তার পরিবারের বয়ান জানা যায়নি। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি, কিন্তু কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Comments are closed.

error: Content is protected !!