১৯৬১'র ভাষা আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বরাকের মন পেতে চাইলেন যোগী, সমর্থকদের কম উপস্থিতি চিন্তা জাগালো
নির্বাচনী প্রচারের প্রায় এক সপ্তাহ বাকি রয়েছে, এর আগে বিজেপির প্রার্থীদের পালে হাওয়া তুলতে মঙ্গলবার কাছাড় জেলার তিনটি এলাকায় জনগণকে সম্বোধন করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তবে তাকে নিয়ে যতটুকু উন্মাদনা হবে বলে আশা করা হয়েছিল সেটা একেবারেই চোখে পড়েনি। বিশেষ করে শিলচরে পৌঁছানোর পর প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তিনি সার্কিট হাউসে অপেক্ষা করেছেন অনুষ্ঠানের মাঠে সমর্থকদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হওয়ার জন্য। এমনকি যখন যোগী আদিত্যনাথ ডায়াসে উঠলেন, সাংসদ রাজদীপ রায় মাইকে পুলিস আধিকারিকদের বলছেন যারা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে তাদের ভেতরে পাঠিয়ে দিন। এতেও ইন্ডিয়াক্লাব মাঠের একটা বড় অংশ খালিই ছিল।
তবে তার ভাষণে ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলন এবং দেশভাগের উল্লেখ করে যোগী আদিত্যনাথ বরাক উপত্যকার মানুষের আবেগের জায়গায় স্পর্শ করতে চেয়েছেন। দুপুর প্রায় দুটো নাগাদ ডায়াসে ওঠেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির হিন্দুত্ব ভাবধারার পোস্টার বয় যোগী আদিত্যনাথ। তাকে শীতলপাটি, দুর্গার মূর্তি এবং অসমীয়া সংস্কৃতির নিদর্শন থাকা কিছু উপহার তুলে দেন দলের বিভিন্ন শাখার সদস্যরা।
যোগী আদিত্যনাথ খুব লম্বা ভাষণ দেননি কিন্তু বেশ কিছু বিষয় স্পর্শ করতে চেয়েছেন। শুরুতে দেশভাগের জন্য কংগ্রেস দলকে দায়ী করে তিনি বলেন, “আজ বাংলাদেশ বা পাকিস্তান বলে কোনও দেশ থাকতো না এবং নাগরিকত্ব সমস্যা এতটা গভীরে গিয়ে পৌঁছুতে পারত না। অবশ্যই এর জন্য দায়ী কংগ্রেস দল। পরবর্তীতে ১৯৬১ তে তারা বরাক উপত্যকার মানুষের উপর ভাষা আইন চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং এই শহরে ১১ জন যুবক যুবতী প্রাণ দিয়েছেন। গত পাঁচ বছরে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল রাজ্যের বিদ্রোহীদের সমস্যা মিটিয়েছেন এবং শান্তি ফিরে এসেছে। বরাক উপত্যকা শুধু আসাম নয় দেশের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। আমরা যদি আসামের কামাখ্যা মন্দিরের কথা বলি, একইসঙ্গে বরাকের চায়ের গন্ধ আমাদের মননে থেকে যায়। এই এলাকাকে উন্নত হতে দেয়নি কংগ্রেস দল। আজ তারা এআইইউডিএফ এবং বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। জনগণ বামপন্থীদের ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা থেকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এবার তাদের সঙ্গে মিলে অসমে নির্বাচন লড়ছে কংগ্রেস। এই কংগ্রেসকেও জনগণ প্রত্যাখ্যান করবেন।”
গান্ধী পরিবারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “দেশের মানুষ দশকের পর দশক তাদের ক্ষমতায় এনেছেন অথচ মানুষের কঠিন দিনে কংগ্রেস নেতারা পাশে থাকেন না। দেশ যখন কঠিন পরিস্থিতিতে থাকে, কংগ্রেস নেতাদের নানীর কথা মনে পড়ে এবং তারা ইটালিতে ছুটি কাটান। বিজেপির নেতারা মানুষের পাশে থেকে তাদের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেন।পরবর্তীতে আবার যাতে জনগণের সেবা করতে পারেন, সেই দায়িত্ব পাওয়ার জন্য নির্বাচনী প্রচারে আসেন। কংগ্রেস নেতারা নির্বাচনের প্রচারেই জনগণের পাশে আসেন, বাকি সময় তাদের দেখা যায় না।”
এছাড়াও তিনি বিভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস এবং বিজেপির তুলনা করেন এবং দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে সমর্থকদের কাছে আবেদন জানান। সম্প্রতি করিমগঞ্জে দলের বিজয় সংকল্প অভিযানে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্থানীয় প্রার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করেননি এবং তাদের হয়ে কোনও কথা বলেননি এমন অভিযোগ উঠেছিল। যোগী আদিত্যনাথ কিন্তু এমনটা করলেন না, দলের প্রার্থীদের ব্যাপারে অনেক খুঁটিনাটি তুলে ধরে তাদের ভোটে বিজয়ী করার আবেদন রাখেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী।
Comments are closed.