Ashish Ranjan Nath writes about the tourism potentialities of Barak Valley
বরাক উপত্যকায় পর্যটন বিকাশের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। প্রত্নস্থল, ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থল, ইকো-ট্যুরিজম এমনকি গার্ডেন বেস ট্যুরিজম বা চা বাগিচা কেন্দ্রিক পর্যটনের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু মুশকিলের বিষয়, অনেক ক্ষেত্রে মসৃণ সড়কপথের অভাবের পাশাপাশি সব পর্যটন স্থলের পরিকাঠামোর বড় অভাব। পরিশ্রম ক্লান্ত পর্যটকের শ্রমলাঘবের স্বার্থে বিশ্রাম নেবার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। রাত্রিযাপনের তো ব্যবস্থা নেই-ই। ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্যও নেই তেমন সু পরিবেশ ও ব্যবস্থা। পরিকাঠামো বলতে যা বুঝায় তার প্রায় কোনো কিছুই নেই। প্রচারের ব্যবস্থাও নেই। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে নেই কোন প্রচেষ্টা। গাইড বই এর ব্যবস্থা করা হলে পর্যটকদের কিছুটা সুবিধে হতো। এতসব ‘নেই’ র মধ্যেও সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা থাকে যদি সেও হবে এক ইতিবাচক দিক।
আধুনিক বিনোদনের কথা বাদ দিলেও পর্যটকরা যেসব কারণে কোন জায়গার প্রতি আকৃষ্ট হন, বরাক উপত্যকায় কিন্তু এসবের অভাব নেই। বেসরকারিভাবে রিসোর্ট করে বেশ সাড়া জাগানোর উদাহরণ অধুনা তৈরি হয়েছে। আরো দু’একটি রিসোর্টের কাজ চলছে। এসব রিসোর্টের খবর পেয়ে যখন উপত্যকা ও উপত্যকার বাইরের মানুষ আনন্দ উপভোগ করতে ভিড় জমাচ্ছেন, তখন অন্যান্য পর্যটনস্থলের জন্যও আকর্ষণ বোধ করবেন তাতে সন্দেহের অবকাশ থাকার কথা নয়। ব্যাপক প্রচার, গাইড বইয়ের ব্যবস্থা, পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ যোগাযোগ ব্যবস্থার অবশ্যই উন্নয়ন করা জরুরি। সিদ্ধেশ্বর বারুনি মেলা, ভুবন পাহাড়ে শিব চতুর্দশীর মেলা, মেহেরপুর- আলমবাগের লক্ষীটিলার মেলা, উদারবন্দের কাঁচাকান্তি বাড়ির উৎসব প্রভৃতিতে এমনিতেই জনারণ্য হয়ে থাকে। ধর্মীয় আবেগে মানুষ ছুটে যান প্রাণের তাগিদে। তেমনি শিলিগুড়ির বরমবাবার মেলার জন্য মানুষ সারা বছর অধীর অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্র যেমন খাসপুর রাজবাড়ি, বদরপুরঘাটের ঐতিহাসিক দুর্গ, মির আরপিন দরগা, সুফি সাধক পীর মকা শাহ মোকাম, শনবিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সহ নৌকাবিহার প্রভৃতিতে ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন রয়েছে। অন্যান্য শিল্পের মতো পর্যটনও অধুনা শিল্প এবং তার প্রসারের স্বার্থে প্রচারের বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
এখানে পরিবেশ ভ্রমণ বা ইকো-ট্যুরিজমের মধ্যে চা বাগানও আকর্ষণীয় হতে পারে। বরাকের অর্থনীতিতে চা বাগানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বা অবদান যেমন রয়েছে, তেমনি পর্যটনের ক্ষেত্রেও তা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। বরাকের অধিকাংশ চা বাগান সবুজ পাহাড়- টিলায় ঘেরা। তার নৈসর্গিক শোভা মনে আলোড়ন তুলে। প্রফুল্ল হয়ে ওঠে চিত্ত। সবুজের সমারোহে গা ভাসিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। প্রাকৃতিক শোভার সঙ্গে চা গাছের বিন্যস্ত ভূমি অন্য মাত্রা যোগ করে দেয়।
উপত্যকায় শতাধিক চা বাগানের সমাহার। বিশ্বের বাজারেও সমাদর রয়েছে উপত্যকায় উৎপাদিত চায়ের। কিন্তু চা উৎসব কখনো হয়নি। সরকারি কিংবা বেসরকারি ভাবে এমন উৎসব আয়োজনের কথা জানা যায়নি। অথচ শিলচরে কুকুর প্রদর্শনী( ডগ শো), ফুল প্রদর্শনী, হর্টিকালচার প্রদর্শনী প্রভৃতি রীতিমত উৎসবের চেহারা নিয়ে থাকে। চা উৎপাদনের কলাকৌশল, চা পানের উপকারিতা, চা বাগানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, এখানের পার্বণ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে যদি উৎসব আয়োজন করা হয় তবে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর এই সুবাদে বরাকে চা পর্যটনও উপত্যকার পর্যটন ক্ষেত্রে নতুন সংযোজন হতে পারে।
Comments are closed.