
Hailakandi : Police personnel beaten up by Mob, tension prevails
বেশ কিছুদিন ধরে বরাক উপত্যকায় ছেলেধরা গুজব চাউর হয়ে চলেছে, এবার সেই গুজবের শিকার হলেন এক পুলিশ কর্মী। হাইলাকান্দি জেলার নিতাই নগর গ্রামের লস্কর বাজারে গতকাল বিকেলে এমন গুজবে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে। ভাঙচুর হয় খোদ ডিএসপির গাড়ি, পুড়ে একটি আরটিগা গাড়ি, আহত হন একজন উচ্চস্থানীয় আধিকারিক সহ জনা ১২ পুলিশ কর্মী।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সোনাই এলাকায় হওয়া একটা মহিষ চুরির ঘটনার তদন্তে শুক্রবার বিকেলে হাইলাকান্দিতে আসেন সোনাই থানার কনস্টেবল জামিল আহমেদ লস্কর; সঙ্গে ছিলেন ঐ থানার গাড়িচালক ফিরোজ আহমেদ লস্কর ও মহিষের মালিক সফিক উদ্দিন লস্কর। হাইলাকান্দি শহরের কাছে লস্কর বাজারে এসে ‘মহিষ চোরে’র হদিস ও পেয়ে যান তারা। চোরকে ধরতে গেলে সেই ‘মহিষ চোর’ই নাকি তাদেরকে ছেলেধরা বলে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। ছেলেধরা গুজব এখন পুরো উপত্যকা জুড়ে তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে রেখেছে, তাই সাথে সাথে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এই গুজব, কয়েক শত জনতা অকুস্থলে ছুটে আসেন। পুলিশ কর্মীর সঙ্গী দুজন নিকটবর্তী একটি দোকানে ঢুকে শাটার লাগিয়ে দেন। পুলিশকর্মী জামিল আহমেদ লস্কর ধরা পড়ে নিজের আই কার্ড দেখালেও জনতা নিরস্ত হয়নি, তাকে টেনেহিঁচড়ে বেধড়ক মারপিট করতে শুরু করে।
ঘটনার খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ-সিআরপিএফ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ অধীক্ষক বরুণ পুরকায়স্থ, ডিএসপি নয়ন মনি বর্মন, সদর থানার ওসি হেমন্ত কুমার দাস, টাউন ইনচার্জ প্রমুখরা। আসেন আলগাপুরের বিধায়ক হাজী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী ও। পুলিশকর্মী জামিল আহমেদকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হন তারা। কিন্তু দোকানের ভিতরে থাকা দুই জনকে উদ্ধার করতে গেলে জনতা আবার অশান্ত হয়ে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে জনতা, এতে হাইলাকান্দি পুলিশের প্রায় ১২ জন কর্মী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। উত্তেজিত জনতা জামিল আহমেদের ব্যক্তিগত আরটিগা গাড়িটি ও পুড়িয়ে দেয়, ভাঙচুর করে ডিএসপির গাড়ি। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে আহত হন হাইলাকান্দির ওসি হেমন্ত কুমার দাস। ঘটনায় গুরুতর আহত কনস্টেবল ফয়জুর রহমানকে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন হাইলাকান্দি ডিসি অফিসের কারণিক ফখরুল ইসলাম, সেকেন্ড অফিসার অশোক চক্রবর্তী, সিআরপিএফ জওয়ান রাহুল সিন্ধে, পুলিশ কনস্টেবল টিংকু গোস্বামী, স্থানীয় এক ব্যক্তি রমিজ উদ্দিন লস্কর সহ প্রায় ৫০-৬০ জন। শেষমেষ ছেলেধরা সন্দেহে আহত সবাইকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
হাইলাকান্দি সদর থানার সূত্র অনুযায়ী এ ধরনের কোনো অভিযানের খবর হাইলাকান্দি পুলিশকে জানানো হয়নি, যার ফলশ্রুতিতেই এই ঘটনার বিস্তৃতি ঘটেছে। যাই হোক গল্পের গরু গাছে চড়ছে, ‘ছেলেধরা’ গুজবে গুজবে ছয়লাপ উপত্যকায় সাধারণ জনগণের আরো বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন গুজবে কান না দিয়ে নিজের বিচার-বিবেচনা, বিবেক-বুদ্ধিকে জাগ্রত রাখা।
এই ঘটনার পর হাইলাকান্দি জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে:
“পুনরায় অবগত করা হচেছ জেলার পুলিশ স্টেশনগুলিতে নিখোঁজ ব্যক্তি বা অপহরণের মামলা দায়েরের কোনও রিপোর্ট নেই। ভিত্তিহীন গুজবে নির্মিত হচ্ছে ভয় । বিষয়টি তদন্তাধীন এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ রইল। আমরা আপনাদেরকে প্রশাসন ও পুলিশ সজাগ ও সতর্ক থাকার আশ্বাস দিচ্ছি। ”
Comments are closed.