Also read in

Makarsankranti: One festival many names

মকর সংক্রান্তি, ভোগালি বিহু, লহরি, পোঙ্গল কত যে নাম এই পৌষ পার্বণের। পুরাণেও উল্লেখ আছে এই মকর সংক্রান্তির। এই দিনেই অসুরদের সঙ্গে দেবতাদের যুদ্ধ শেষ হয়। ভগবান বিষ্ণু অসুরদের বধ করে তাদের ছিন্ন মাথা মন্দিরা পর্বতে পুঁতে রেখেছিলেন। তাই এই দিন অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। মহাভারতেও উল্লেখ আছে এই দিনটির। পিতামহ ভীষ্ম এই দিনেই শরশয্যায় ইচ্ছা মৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন।

এই দিনে মনিপুরে অনেকে তাঁদের ঈশ্বর লিনিং-থৌয়ের আরাধনা করেন। আজকের দিনেই অরুণাচল প্রদেশের ভ্রহ্মকুণ্ডে রামায়ণ, মহাভারত ও কালিকা পুরাণের সুত্র ধরে বিভিন্ন দেবদেবীর আরাধনা করা হয়। বরাকে আমরা যেভাবে মেড়া-মেড়ির ঘর জ্বালিয়ে দিনটি পালন করে থাকি, ঠিক সেরকম ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় মেজি-ঘর জ্বালনোর রীতি আছে। তামিলরা তেমনই কাঠকুটো জড়ো করে আগুন জ্বালান আর সেই আগুনে পুরনো পোষাক ও অন্যান্য জিনিস পত্রের আহুতি দেন। এই দিনে আমাদের তিলের তৈরী দ্রব্যাদি খাওয়ার আমাদের যেমন রীতি আছে, ঠিক তেমনি তামিলনাডুতে এই আখ ও তিলের তৈরি মিষ্টি খাওয়ার প্রচলন আছে। পুরো দেশে মকর সংক্রান্তি নামটি প্রচলিত হলেও স্থানীয় নামেরও প্রচলন আছে, যেমন মধ্যপ্রদেশে সরকত, ঝারখণ্ডে খিচড়ি পর্ব, গুজরাটে উত্তরায়ণ, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ভোগালি বিহু, পাঞ্জাব-হরিয়ানায় লহরি, কর্ণাটকে মকর সংক্রমণ, কাশ্মীরে শায়েন-ক্রাত ইত্যাদি। ভারতবর্ষের বাইরে নেপালে মাঘি নামে, থাইল্যান্ডে সংক্রান, লাওসে পি-মা-লাও, মায়াম্মারে থিং-ইয়ান এবং কম্বোডিয়াতে এই উৎসব মহাসংক্রান নামে পালিত হয়।

কারও মতে সূর্যদেব এই দিনেই ছেলেকে নিয়ে মকর রাশির অধিপতি শনিদেবের বাড়িতে এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন। তাই এই দিনটিকে বাবা-ছেলের সম্পর্কের এক বিশেষ দিন হিসেবেও ধরা হয়।

আর বিজ্ঞান কী বলে ? সূর্যের গতি দুই প্রকার, উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ণ। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় সম্ভবত ২১ডিসেম্বর তারিখটিতে সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে মকর ক্রান্তির উপর অবস্থা করে। এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল আর উত্তর গোলার্ধে শীতকাল বিরাজ করে। এই বিশেষ দিনে, দিন সবচেয়ে ছোট আর রাত সবচেয়ে বড় হয়। ২১ ডিসেম্বরের পর থেকে সূর্য কিরণ ক্রমে উত্তর দিকে সরে যেতে থাকে। আর ক্রমে দিন বড় ও রাত ছোট হতে শুরু করে। শ্রাবন থেকে পৌষ, এই ছয়মাস দক্ষিণায়ণ আবার মাঘ থেকে আষাঢ় এই ছয় উত্তরায়ণ। উত্তরায়ণের শুরু বলেই এই উৎসবও উত্তরায়ণ।

(প্রবন্ধে উল্লেখিত তথ্যগুলো বিভিন্ন লেখা থেকে সংগ্রহ করেছেন লেখক)

Comments are closed.