Also read in

AGP's Jwalanta Sengupta is no more

অসম গন পরিষদ দলের হাইলাকান্দি জেলা সভাপতি,   ভাষা সংগ্রামী  প্রবীন সমাজসেবী জ্বলন্ত সেনগুপ আর নেই।  বুধবার ভোর রাতে গুয়াহাটির জি এন আর সি হাসপাতালে তিনি  শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন   । বয়স হয়েছিল ৭৬  বছর। সর্বজন পরিচিত  জলন্ত  সেনগুপ্তের মৃত্যুতে হাইলাকান্দি জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সম্প্রতি  তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গুয়াহাটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার জ্বলন্ত সেনগুপ্তের মৃতদেহ তার হাইলাকান্দির  আশ্রম রোডের বাড়িতে নিয়ে আসা হলে শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। জাতি ধর্ম বর্ণ  নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ  বাড়িতে গিয়ে পুষ্পস্তবক দিয়ে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।  প্রবীন সমাজসেবী জলন্ত সেনগুপ্তের মৃত্যুতে  অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত, হাইলাকান্দির জেলাউন্নয়ন আধিকারিক অমলেন্দু রায়,  অসম গন পরিষদ দলের জেলা সাধারন সম্পাদক কমরুল ইসলাম বড়ভুইয়া, জেলা বিজেপি সভাপতি সুব্রত নাথ, প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়, দুই বিধায়ক সুজাম উদ্দিন লস্কর এবং আনোয়ার হুসেন লস্কর, প্রাক্তন বিধায়ক রাহুল রায়, জেলাকংগ্রেস সভাপতি জয়নাল উদ্দিন লস্কর , গৌতম গুপ্ত, অগপ নেত্রী মেহেনাজ সাহিদ চৌধুরী, অগপ নেতা মমতাজ্জামান লস্কর, হাইলাকান্দি জেলা এ আই ইউ ডি এফ-র সভাপতি আইনজীবী আফজল হুসেন, জেলাপরিষদ সদস্য সহিদুল ইসলাম, জেলাবিজেপির সহসভাপতি হীরকজ্যোতি চক্রবর্তী , হাইলাকান্দির পুরসদস্য অরুণ কুমার দাশ , এপিসিসি সম্পাদক দিলোয়ার হোসেন বড়ভূইয়া, লালা  ঈদ মিলন সমিতি সম্পাদক নুরুল হোসেন মজুমদার সহ আরো অনেকে গভীর শোক ব্যাক্ত করেছেন।

উল্লেখ্য, প্রয়াত জ্বলন্ত সেনগুপ্ত মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত অসম গণ পরিষদ দলের হাইলাকান্দি জেলা সভাপতির পদে ছিলেন। রাজনীতির  সাথে  যুক্ত থাকা সত্বেও সেনগুপ্ত সর্বজনশ্রদ্দেয় নেতা ছিলেন।  তিনি  রাজনীতির উর্ধে উঠে বিভিন্ন সংস্থা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থেকে সমাজসেবা করে গেছেন। পরাধীন ভারতের বর্তমান বাংলাদেশে  ১৯৪৩ সালে তার জন্ম হয়েছিল । এরপর দেশভাগের বলি হয়ে সেনগুপ্ত পরিবার ভারতের হাইলাকান্দিতে চলে আসে।

প্রয়াত সেনগুপ্তের বাল্যবন্ধু হাইলাকান্দির পাব্লিক প্রসিকিউটোর উজ্জ্বল কুমার দাস তার কথা বলতে গিয়ে জানান, নিঃসন্তান জ্বলন্তবাবু মৃত্যুকালে তাঁর ভাতৃবধূ এবং দুই ভাতিজি সহ আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুনমুগ্ধ রেখে গেছেন। কয়েকবছর আগে স্ত্রীকে  হারিয়ে তিনি একেবারে একা হয়ে গিয়েছিলেন। হাইলাকান্দির রামকৃষ্ণ পাঠশালায়  তার ছাত্রজীবন আরম্ভ হয়েছিল। এরপর হাইস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬১ র  ভাষা আন্দোলনে তিনি  সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন । একসময় সাংবাদিকতার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন জ্বলন্তবাবু।  তার সম্পাদনায় সাপ্তাহিক মহাকাল নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল হাইলাকান্দি থেকে । এই পত্রিকায় অনেক সাহসী প্রতিবেদন প্রকাশ করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ১৯৮৫ সালে রাজ্য অসম গণ পরিষদ দল  ক্ষমতায় এলে তিনি অগপ-র সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন । সে সময়ের মন্ত্রী শহিদুল আলম চৌধুরীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন প্রয়াত সেনগুপ্ত। সেইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্তের ঘনিষ্ঠ হওয়া ছাড়াও অগপর একজন বিশিষ্ট নেতা  হিসাবে তিনি পরিচিত লাভ করেছিলেন। রাজনীতির বাইরে একসময় বরাকের শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে ছিলেন তিনি। হাইলাকান্দির সংস্কৃত বিদ্যালয়য়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রয়াত সেনগুপ্ত । এছাড়াও তার উদ্যোগে হাইলাকান্দির আদি কালীবাড়িতে রথ স্হাপন করা হয়েছিল।

কিছুদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। প্রথমে তাঁকে হাইলাকান্দির এস কে রায় হাসপাতাল এবং পরে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয় । কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে গুয়াহাটি নেওয়ার পরামর্শ দিলে প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায়ের প্রচেষ্টায় তাকে গুয়াটির জি এন আর সি-তে ভর্তি করানো হয় । সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।। তার আসল নাম স্মৃতি ভূষণ সেনগুপ্ত হলেও তিনি জ্বলন্ত সেন নামেই সর্বাধিক পরিচিত ছিলেন।

Comments are closed.