Saiyam: Biswaraj Bhattacharjee reviews 'Aajker Prajanma's' short film
‘সংযম’—স্বল্প দৈর্ঘ্যে বড় স্বপ্ন দেখালো আজকের প্রজন্ম
কয়েক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গের ডাকসাইটে সাংবাদিক অনিন্দ্য জানা শিলচরে এসে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেছিলেন,”খবর যখন খাবার”!
কিন্তু খাবারে যখন ভেজাল মেশানো থাকে তখনই হয় বদহজম । পেট ফেঁপে যায়। এই করোনা-সংকটের সময় তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। ভুয়ো খবর জনগণকে নাকানিচোবানি খাওয়াচ্ছে।
একদিকে সাংবাদিকরা দিন-রাত করোনাকে পরোয়া না করে, ঘাম ঝরিয়ে সত্য খবর সংগ্রহ করে আনছেন। অন্যদিকে, সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে ভুয়ো খবর রটাচ্ছে স্বঘোষিত ‘খবরিলালরা’। আমজনতাকে করছে বিভ্রান্ত। সব খবর আগে দিতে গিয়ে ঝামেলা পাকাচ্ছে এই আনাড়িরা। খুব জরুরি ও স্পর্শকাতর এই বিষয় নিয়ে শিলচরের তরুণদের নাট্যদল ‘আজকের প্রজন্ম’ বানালো শর্ট ফিল্ম ‘সংযম’। লকডাউনে একঘেয়েমিতে চিড় ধরালো এই ‘হোম মেড’ প্রযোজনাটি। এই উদ্যোগের জন্য নিঃসন্দেহে সাধুবাদ জানাতে হয় দলটিকে।
৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের ছবিটিতে সংবাদমাধ্যমের ওপর আস্থা ও ভরসা রাখার কথা পই পই করে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, সত্যতা যাচাই না করে খবর ছড়ানোর বিষয়ে সংযমী হতে। তাই ছবির টাইটালটাও একেবারে জুতসই।
ছবির শুরুতেই দেখা যাচ্ছে একটা মধ্যবিত্ত সকাল। মা (রিহা পাল) ছেলে ‘সোহম’ ( অনির্বাণ রায়) ও মেয়ে ‘সিমি'(অংকিতা দেব)কে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ডাকছেন। স্বাস্থ্য সচেতন স্বামী( অরিত্র ধর) প্রাণায়ামে ব্যস্ত। বিছানা ছাড়ার আগেই পেশায় সাংবাদিক সিমির মোবাইলে ফোন এলো। সম্ভবত সহকর্মী ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে জানাচ্ছেন, আগের দিন ফাইল করে আসা সিমির স্টোরিটা পত্রিকায় ক্যারি হয়নি। মেজাজ খিঁচড়ে যায়। ‘আজ সকাল আটটা থেকে পাইকারি দোকান খুলবে’– খবরটা না যাওয়ায় সম্পাদকের বিরুদ্ধে রাগ উগরে দেয় সিমি। পত্রিকা এ ধরনের খবর না ছাপলে মানুষ জানবে কি করে! এই আপশোস ঝরে পড়ল তার গলা থেকে।
ছেলে সোহম বিছানায় গড়াগড়ি করতে করতে বন্ধুকে করোনার নামে দু পেগ লাগিয়ে নেওয়ার শলা দিচ্ছে। ওরা ক’জন বন্ধু মিলে ‘কুইক নিউজ’ নামের হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ চালায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো পোস্ট দেয়। সোহম বাবাকেও জয়েন করাতে চায় তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। দিদি সিমি ছোটভাইকে এসব করতে বারণ করে। হাল্কা কথা কাটাকাটি হয়। হঠাৎ সোহমের মোবাইলে ফোন আসে, তাকে পুলিশ তলব করেছে ফেক নিউজ পোস্ট করার অভিযোগে। শেষমেশ সম্বিত ফেরে তার। ঘরের সবাইকে সে সরি বলে। মাফ চায়। ‘Say no to fake news’ এই বার্তাই দিয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি ‘সংযম’।
মধ্যবিত্ত পরিবারের টিপিক্যাল মায়ের চরিত্রটা বেশ ভাল ফুটিয়ে তুলেছেন রিহা। সিমির চরিত্রে অংকিতা মেয়েদের পায়ের বেড়ি ভেঙেছেন সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে। মেয়েদের সশক্তিকরণের বিষয়টা স্বল্প পরিসরে ফুটে উঠল। নিদের্শক সায়ন বিশ্বাস ও স্ক্রিপ্টরাইটার সোমশিখাকে এ জন্য ধন্যবাদ ।
সোমশিখা দারুণ কনসেপ্ট বাছলেন চিত্রনাট্যের জন্য। তিনি সম্পাদনাও করেছেন যত্নের সঙ্গে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজক মুগ্ধ করলো। ঘরে বসে এই কাজ চাট্টিখানি কথা নয়! ব্র্যাভো টিম সংযম। কিন্তু কিছু খটকা আছে। সিমি নিউজ ক্যারি না হওয়ার জন্য সম্পাদককে দোষারোপ করায় কাল্পনিক পত্রিকা সম্পাদকের নিউজ সেন্স নিয়ে প্রশ্ন জাগলো। তিনি কি করে এমন সময় দাঁড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর ছাপতে ভুলে গেলেন! ভুল করে না ছাপায় তার পত্রিকারই সাংবাদিকের “ধুৎ শালা” বলে এমন উষ্মা প্রকাশ পরস্পরবিরোধী নয় কি? বরং সিমি ভাইরাল কোনও ফেক নিউজ নিয়ে এই রাগ ঝারলে তা স্বাভাবিক মনে হতো। অনির্বাণ বাবা আর অরিত্র যদি ছেলের চরিত্রটা করতেন তাহলে হয়ত অনস্ক্রিন রসায়নটা জম্পেশ লাগতো। উচ্চারণের সমস্যা আছে। বিশেষ করে ‘সোহম’ ‘সিমি’ নামের উচ্চারণ বারবার হিন্দি ঘেঁষা ছিল কেন বুঝলাম না। সাংবাদিক সিমির সংলাপগুলো আরেকটু সহজ ও ক্ষুরধার হলে ভাল লাগত। ডায়লগ স্ক্যানিং আরেকটু পরিচ্ছন্নতা দাবি করে।
প্রোসেনিয়ামে বা থার্ড থিয়েটারে দাপট দেখানো এই তরুণ তুর্কিদের কাছ থেকে আরও মোবাইল শর্ট ফিল্ম উপহার পাওয়ার প্রত্যাশা কিন্তু বেড়ে গেল। তারা লকডাউনে বিশেষ টেকনিক্যাল সাপোর্ট ছাড়াই ছবিটি বানিয়ে যে চমক দিয়েছেন তার রেশ কিন্তু অনেক দিন থাকবে। ঘরবন্দি থেকেও এমন একটা প্রোডাকশন করার জন্য কুর্নিশ। লং লিভ আজকের প্রজন্ম!
The author of this article Biswaraj Bhattacharjee is a renowned lyricist, composer, singer.
Here is the film
Saiyam, a Home Quarantine video
এই ঘরবন্ধি সময়ে একটি ছোট্ট প্রচেষ্টার মাধ্যমে সবাইকে সচেতন রাখার তাগিদে এই মোবাইল শর্ট ফিল্ম। অনুরোধ, পুরোটি দেখুন। ভাল লাগলে শেয়ার করবেন প্লিজ, যাতে একটু ভাল বার্তা আমরা পৌঁছতে পারি এই লকডাউন পিরিয়ডে।আজকের প্রজন্মের প্রোডাকশন, সংযম।
Posted by Ajker Projonmo and Bibartan Theatre group on Saturday, April 25, 2020
Comments are closed.