Also read in

Pradip Dutta Roy questions the silence of elected representatives in Assam Assembly

“আমরা যাদের নির্বাচিত করে দিসপুরে পাঠিয়েছি, তারা দিসপুর এর লেজুড় হয়ে থাকার জন্য গিয়েছে,” প্রদীপ দত্ত রায়

বরাক উপত্যকা থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এবার ধারালো আক্রমণ করলেন আকসার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তথা গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী প্রদীপ দত্ত রায়।

গতকাল রাজ্য বিধানসভায় উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ ভাষা শহীদ স্টেশন এবং বরাকের বাংলা ভাষা শহীদদের প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে বরাকের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলে এক প্রেস বিবৃতিতে প্রদীপ দত্ত রায় বলেন, বিজেপি হলো বাঙালি বিরোধীদল । বাঙালির স্বার্থে ওরা কিছুই করতে চায়না । গোটা আসামে বাঙালিদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে বিজেপি । ওই দল কোনদিনই বাঙালির স্বার্থে কিছুই করবেনা । বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ্য দে পুরকায়স্থ শিলচরে ভাষাশহীদ স্টেশনের নামকরণের সরকারের কি সিদ্ধান্ত তা  জানতে চেয়েছিলেন । তার জবাবে মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারী বলেছেন বরাকের দু-একটি ভাষাগোষ্ঠী মানুষ এতে আপত্তি জানিয়েছে । তার জন্য ভাষাশহীদ স্টেশনের নামাকরণে সরকার পক্ষ থেকে স্বীকৃতি দেওয়া যাচ্ছে না । কিন্তু আসাম সরকার জানে কি জানে না যে ২০১৬ সালের  ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার নামাকরণ এর ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে । কেননা রেল  নিয়ন্ত্রণ করে কেন্দ্রীয় সরকার । সেখানে কি নামাকরণ হবে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তটাই বড় কথা । কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৬ তে সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এটাকে আটকে রেখেছিল । নানা অজুহাত দেখিয়ে বর্তমান বিজেপি সরকার ও এটাকে আটকে রেখেছে । দুই সরকার বারবার জেলা শাসকের কাছে এ ব্যাপারে একটা ক্লিয়ারেন্স চেয়ে ছিল । দুই বারই জেলা প্রশাসন ভাষাশহীদ স্টেশন নামাকরনের পক্ষে মতামত দিয়েছিল । তারপরও আসাম সরকারের কেন আপত্তি

এই ভাষা শহীদ স্টেশন শুধু বাঙ্গালীদের নয় । বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরীর সুদেষ্ণা সিনহা ভাষার জন্য শহীদ হয়েছিলেন ।  যারাই ভাষা রক্ষার জন্য শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মৃতিতেই স্টেশনের নাম ভাষাশহীদ স্টেশন চেয়েছি । কিন্তু কী কারণে আসাম সরকার তাকে আটকে রেখেছে তা জানা নেই । সরকারের উচিত কোন ভাষা গোষ্ঠী তাতে আপত্তি জানিয়েছে তাদের নাম প্রকাশ করা । এই সম্পর্কে প্রদীপ দত্ত রায় আসাম সরকারকে স্মরণ করে দেন কেন্দ্রীয় সরকার যখন ক্যাব সংসদে পেশ করেছিল তখন সারা ভারতবর্ষ জুড়ে মানুষ তার আপত্তি করেছিল । শাহীনবাগে আন্দোলন হয়েছে । আসামে আসু , অসম জাতীয়তাবাদী ছাত্র যুব পরিষদ , কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি সহ বিভিন্ন দল সংগঠন তুমুল আন্দোলন করেছে । তার ফলে  সংসদে ক্যাব পাস করতে কি কোন অসুবিধা হয়েছে । সেটা তো এখন কা তে পরিণত হয়েছে । আসাম সরকার যে যুক্তি দেখাচ্ছে দু’একটি ভাষাগোষ্ঠীর আপত্তির জন্য নামাকরন করা যাচ্ছে না সেটা কি আদৌ যুক্তিতে ঠেকে ।

এই বিজেপি সরকার যে বাঙালি বিরোধী তা প্রমাণ হয়ে গেছে । বিগত কয়েক মাসে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগে নিযুক্তি হয়েছে । যার মধ্যে বরাক উপত্যকা থেকে একজন বাঙালিও চাকরি পায়নি । এ ধরনের বিমাতৃসুলভ আচারণ আমরা বারবার বর্তমান বিজেপি সরকারের কাছ থেকে পেয়ে আসছি । আশ্চর্যের বিষয় হলো বরাক উপত্যকায় যে ১৫ জন বিধায়ক আছেন তারমধ্যে কেবলমাত্র কমলাক্ষ কে বাদ দিয়ে কোন বিধায়ক কিছুই বলেন না । কমলাক্ষ যখন ভাষাশহীদ স্টেশনের নামাকরণ নিয়ে প্রশ্ন করার পর সরকার পক্ষ যে জবাব দিয়েছে তার প্রতিবাদ অন্য কোন বিধায়ক করেননি । “এতে বোঝা যাচ্ছে, আমরা যাদের নির্বাচিত করে দিসপুরে  পাঠিয়েছি, তারা বরাক উপত্যকার স্বার্থে কোনো চিন্তা করে না । তারা দিসপুর এর লেজুড় হয় থাকার জন্য গিয়েছে । সবাই আগামী নির্বাচনে টিকেট পাওয়ার ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না । এইসব বিধায়করা বরাকে আসার পর তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা উচিত । তাদের বাড়িতে বিক্ষোভ দেখাতে হবে । তার জন্য তারা যেন প্রস্তুত থাকেন । শুধু রাজ্য সরকার কেনো কেন্দ্রীয় সরকারও বাঙ্গালীদের সঙ্গে বিরূপ মনোভাব নিয়ে চলছে । তার একটি প্রমাণ আমি দিচ্ছি উত্তর-পূর্ব ভারত তথা অসমে বিজেপির জন্মদাতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থ যাকে বিজেপির পিতামহ বলা হয় তাকে রাজ্যপাল করার জন্য বর্তমান আসাম সরকার কোন সুপারিশ করেনি । অথচ পশ্চিমবঙ্গের তথাগত রায়কে ত্রিপুরা এবং মেঘালয়ের রাজ্যপাল করা হয়েছে । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্বাচনের আগে বলেছিলেন বিদেশ থেকে কালো টাকা এনে প্রতি মানুষের ঘরে ১৫ লক্ষ টাকা করে পৌঁছে দেবেন । বছরে দুকোটি চাকরি দেবেন । ডিটেনশন ক্যাম্প ঘুরিয়ে দেবেন । এসবের কি হলো । উল্টো কেন্দ্র সরকার ডিটেনশন ক্যাম্প বানাতে যাচ্ছে । এছাড়া পেপার মিল চালু করার কথাও প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন । হাহাকার চলছে পেপার মিলে ।পেপারমিল খোলার প্রতিশ্রুতি নরেন্দ্র মোদী না সর্বানন্দ সোনোয়াল রক্ষা করতে পারেননি । এ ধরনের ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে ।তাই আগামী বিধানসভা নির্বাচনে অসমের বাঙালিদের কাছে আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা এ ব্যাপারে সতর্ক হোন আপনারা এবার বুঝে নিন বাঙালি বিরোধী বিজেপিকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জবাব দিতে হবে ।”

আসাম সরকার যখন বরঝার বিমানবন্দর গোপীনাথ বরদলৈ এর নামে করেছিল, তখন আসামের বহু জনসাধারণ চেয়ে  ছিলেন শহীদুল্লাহর নামে করার জন্য । তখন কি আসাম সরকার তা মেনে ছিল । দুই-একটি ভাষাগোষ্ঠীর আপত্তিতে ভাষা শহীদ স্টেশনের নামাকরণ তাহলে কেন হবেনা । বরাক উপত্যকায় ভাষাশহীদ স্টেশন নামাকরণ এর পক্ষে সবাই একমত । সরকার যে যুক্তি দেখাচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা । এই সব পরিস্থিতির পর আর দিসপুর এর সঙ্গে থাকা সম্ভব হবে না । তার জন্য বিকল্প চিন্তা আর এখন সময় এসে গেছে ।

Comments are closed.