Chief Postmaster General in Silchar; assures post won't be abolished in Cachar Division
ডাক বিভাগের পদ বিলুপ্তি আটকে দিলেন চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল, শাস্তি হতে পারে অধীক্ষক অরুণ সরকারের
সম্প্রতি কাছাড়ের ডাক বিভাগে ১৩৯টি পদ বিলুপ্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন অধীক্ষক অরুণ সরকার। পিএ, পোস্টম্যান এবং মাল্টিটাস্কিং স্টাফ সহ যেসব পদ বিলুপ্ত করা হয়েছে এরমধ্যে অনেকগুলোর ক্ষেত্রে সরাসরি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। এতে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়, পরিস্থিতি সামাল দিতে শিলচর আসতে হয় স্বয়ং চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল আরকেবি সিংকে। বৃহস্পতিবার শিলচরে এসে তিনি পুরো ব্যাপার খতিয়ে দেখেন এবং আশ্বাস দেন, কোনও পদ বিলুপ্ত হবে না।
তিনি পরিষ্কার জানিয়েছেন, ভুলবশত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, ডিভিশনের কোনও পোস্ট বিলুপ্তি হচ্ছে না। পোস্ট বিলুপ্তি বা স্থায়ীকরণের অধিকার অধীক্ষক অরুণ সরকারের নেই। বিভাগের পক্ষ থেকে এব্যাপারে তদন্ত হবে এবং প্রয়োজনে অধীক্ষকের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত শাস্তিমুলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
লকডাউন চলাকালীন রাজ্যের প্রায় এক হাজার সহকারী পদে নিযুক্তি হয়েছে যেখানে কাছাড় জেলার কোন যুবক-যুবতী স্থান পাননি। এরপর ডাক বিভাগের কাছাড় ডিভিশনের ১৩৯টি পোস্ট বিলুপ্তির খবর আসে। এব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য থাকা সত্ত্বেও অধীক্ষক অরুণ সরকার কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। খবরটি বরাকবুলেটিনে বেরোনোয় জনমনে ক্ষোভ দেখা দেয় এবং তড়িঘড়ি অরুণ সরকারকে গুয়াহাটি ডেকে পাঠানো হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল আরকেবি সিং নিজে শিলচর পরিদর্শনে আসেন। বরাক বুলেটিনের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি পুরো ব্যাপার তুলে ধরেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পোস্ট অফিস কার্যালয়ে বসে আরকেবি সিং বলেন, “কাছাড় ডিভিশনে শেষবারের মত পথ বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালে, এরপর আর কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হলে সরাসরি কেন্দ্র সরকারের অর্থ মন্ত্রকের সম্মতি প্রয়োজন, কেননা বিভাগটি সেই মন্ত্রকের অধীনে কাজ করে। স্থানীয় কোনও আধিকারিক চাইলে পদ বিলুপ্ত বা স্থায়ীকরণ করতে পারেন না। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে আমাদেরও অধিকার সীমিত রয়েছে। তাই শিলচর থেকে এই নির্দেশ জারি করা যায়না।”
তবে কেন এই নির্দেশ জারি করলেন স্থানীয় অধীক্ষক? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “কাছাড় ডিভিশনের অধীনে বেশকিছু ছোট এবং বড় ডাকঘর রয়েছে, সেখানে অনেক পদ রয়েছে। স্থানীয় স্তরে কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় তালিকা গঠন করা হচ্ছিল, এখানেই ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। এব্যাপারে আমরা যখন সংবাদ মাধ্যমে খবর পেলাম বিভিন্ন স্তরে তদন্ত করা হয়েছে। প্রয়োজনে আধিকারিকদের ডেকে পাঠানো হয়েছে, এবার আমি নিজে এসেছি। আমি কথা দিচ্ছি কাছাড় ডিভিশনের কোনও পোস্ট বিলুপ্ত করা হবে না।”
প্রথমে তিনি ব্যাপারটি মানতে না চাইলেও পরে পদ বিলুপ্তির নির্দেশের কপি দেখার পর বলেন, “যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে আমরা তদন্ত করব। কেউ দোষী থাকলে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত শাস্তির সম্ভাবনাও রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত শুধু আমি নিতে পারি না আমার ওপরে অনেক বড় আধিকারিকরা রয়েছেন। তারা পুরো ব্যাপার পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।”
এছাড়া বিভাগের বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ে কথা বলেন চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল। তিনি জানান, লকডাউনে ডাক বিভাগের কাজ ছাড়াও প্রয়োজনে বিভিন্ন এলাকায় ঔষধ, পিপিই কিট, মাস্ক, সেনিটাইজার ইত্যাদি পৌঁছে দেওয়ার কাজ করা হয়েছে। তিনি বলেন, “বিশেষ করে পার্বত্য রাজ্য যেমন মিজোরাম মনিপুর নাগাল্যান্ড ইত্যাদিতে এধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছানোর কাজ করেছে ডাক বিভাগ। লকডাউন যখন চরম পর্যায়ে, বিভিন্ন রাজ্য ও তাদের উপর দিয়ে যাওয়া যাত্রীদের পুরোপুরি আটকে দিয়েছে, সেই সময়ে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে ডাক বিভাগের গাড়ি। পাশাপাশি এই লকডাউনের সময় বিভাগের কার্যকলাপ অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতে বসে কাজ করছেন তাই পার্সেল ইত্যাদি পাঠানোর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। ডাক বিভাগের আর্থিক ক্ষতির কোনও খবর আমাদের কাছে নেই। বরং আমরা নতুন নতুন ডাকঘর খোলার পরিকল্পনা রয়েছি। এই পরিস্থিতিতে পদ বিলুপ্ত করে জনবল কমিয়ে আনার যুক্তি আমাদের কাছে নেই।”
বিশ্বের প্রথম সারির ডাক বিভাগ হচ্ছে ভারতীয় ডাক। এই ইন্টারনেটের যুগে দাঁড়িয়ে এখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে বিভাগের পরিষেবা। বরাক উপত্যকার অনেক যুবক যুবতীরা বিভিন্ন পদে চাকরি করে সংসার চালাচ্ছেন।
তবে জানা গেছে, এবছর জুন মাসের ২৬ তারিখ অরুণ সরকার একটি চিঠি পাঠিয়ে পিএ ক্যাডারের ২৬টি পোস্ট বাতিলের নির্দেশ দেন। জুলাই মাসের ২৪ তারিখ আর একটি চিঠিতে পিএ ক্যাডারের ১৬টি, পোস্টম্যান ক্যাডারের ৩৮টি এবং ১টি মাল্টিটাস্কিং কর্মী পোস্ট বাতিলের নির্দেশ জারি করেন। তাকে এই চিঠিগুলো দেখিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন সিদ্ধান্ত গুয়াহাটির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে। তবে এবার আসল সত্য সামনে আসায় পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এবার দেখার বিষয় হচ্ছে তার এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কি সিদ্ধান্ত নেয় ডাক বিভাগ।
এছাড়া চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল অধীক্ষক অরুণ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন, বিভাগের স্বচ্ছতা জনসমক্ষে তুলে ধরতে সংবাদমাধ্যমের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করা হয় সেদিকে নজর রাখতে। সিপিএমজি বলেন, “অধীক্ষক অরুণ সরকারকে বিভাগের পক্ষ থেকে অধিকার দেওয়া হয়েছে তিনি যেন সময়মতো প্রয়োজনীয় তথ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন। অবশ্যই কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার কথা বলার অধিকার নেই, এই নিয়ম আমার ওপরেও প্রযোজ্য। তবে একেবারে মুখ ফিরিয়ে থাকা চলবে না।”
Comments are closed.