
Ripun Bora calls Rumi Nath, Rajdeep Goala traitors, makes paper mill a poll issue
রুমি-রাজদীপ বিশ্বাসঘাতক, বললেন রিপুন বরা
সম্প্রতি কাছাড় জেলার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা এবং দুইবারের বিধায়ক রুমি নাথকে কংগ্রেস দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রবিবার শিলচরে এসে দুই বহিস্কৃত নেতাদের বিশ্বাসঘাতক বলে আখ্যা দিলেন অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি রিপুন বরা। পাশাপাশি আগামী বছর নির্বাচনে বদরুদ্দিন আজমলের দল এআইইউডিএফ সহ বিজেপি বিরোধী যে কোন দলের সঙ্গে আঁতাতের যাওয়ার কথা ঘোষণা করলেন তিনি। এছাড়া কাগজ কল নিয়ে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগও তোলেন। একেবারে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছে কংগ্রেস এবং তার নেতৃত্বে দিতেই দুদিনের বরাক সফরে এসেছেন সভাপতি রিপুন বরা।
নির্বাচনের ছয়মাস আগে দুই সম্ভাবনাময় নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আগামী নির্বাচনে তাদের সাফল্যে কতটা প্রভাব ফেলবে, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দলের আদর্শে যারা চলতে পারেননা তাদের বহিষ্কার করার রীতি কংগ্রেসের নতুন নয়। অতীতে অনেক বড় বড় নেতাকে দল বিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত হওয়ার দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং এরপরেও কংগ্রেস দল সফলভাবে জয়ী হয়েছে। রাজদীপ গোয়ালা কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়ে দীর্ঘ দিন ধরে দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছেন। বিজেপির কাজের সমালোচনা করেন না অথচ তাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তার বাবা আমাদের দলের বরিষ্ঠ নেতা ছিলেন। রাজদীপ গোয়ালা তার বাবার যোগ্য ছেলে হয়ে উঠতে পারেননি, তিনি দলের হয়ে কি করে কাজ করবেন? এমন নেতার প্রয়োজন আমাদের নেই। রুমি নাথ যখন বিজেপি থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলেন, আমরা তাকে তুলে নিয়েছিলাম, কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়ে যথেষ্ট সম্মান পেয়েছেন তিনি। তাকে বিশেষ দায়িত্ব পর্যন্ত দিয়েছিলেন তরুণ গগৈ। অথচ তিনিও আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। বর্তমানে তিনি কংগ্রেস দলের প্রাথমিক সদস্য ছাড়া তিনি আর কিছুই ছিলেন না। শোনা গেছে তার বাড়িতে ফলাও করে নরেন্দ্র মোদির ফটো লাগিয়ে রেখেছেন। এমন লোকেদের নিয়ে আমরা কোনদিন গর্ব করি না। এরা আজ না হোক কাল, দল থেকে বেরিয়েই যেতেন, দলের নেতৃত্ব তাদের বহিষ্কার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের দল আদর্শবাদী, নির্বাচনে জেতার জন্য আদর্শের সঙ্গে বোঝাপড়া করে চলিনা আমরা।’
আগামী বছরের নির্বাচনে এআইইউডিএফের সঙ্গে কংগ্রেস দল জোট করবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের নির্বাচনের বিধানসভা নির্বাচন হোক বা ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন, ভারতীয় জনতা পার্টি বদরুদ্দিন আজমলের সহায়তা নিয়ে জয়ী হয়েছে। তারা প্রত্যক্ষভাবে জোট না করলেও পরোক্ষভাবে সহায়তা নিয়েছেন। এবার যদি আমরা আজমল সাহেবের দলের সঙ্গে সরাসরি জোট করি, সেটার সঙ্গে বিজেপির আঁতাতের কোনও তফাৎ থাকবেনা। শুধুমাত্র বদরুদ্দিন আজমলের দল নয়, আমরা এমন প্রত্যেক দলের সঙ্গে জোট করতে রাজি আছি যারা বিজেপির অপশাসন বন্ধ করে দিতে চায়। এতে যদি কেউ আমাদের দোষারোপ করে বা গালাগাল দেয় সেটা হবে তাদের নিজস্ব ব্যাপার।’
কাছাড় কাগজ কল বিক্রির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেই শিলচরে এসেছেন কংগ্রেস দলের রাজ্য কমিটির সভাপতি রিপুন বরা। সোমবার কাগজ কলের সামনে বিরাট ধর্না প্রদর্শন করবেন তিনি, এতে যোগ দেবেন বরাক উপত্যকার কংগ্রেস দলের প্রত্যেক স্তরের নেতারা। এব্যাপারে তার বয়ান, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জনগণের টাকায় 8 হাজার কোটির বিমানে ঘুরে বেড়াতে পারেন অথচ দুইহাজার কোটি টাকা খরচ করে রাজ্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে চাঙ্গা করা যায় না। এখানে বিজেপির দ্বিচারিতা এবং কাগজ কল পুনরুদ্ধারকে নিয়ে কপটতা প্রকাশ পায়। সরকারপক্ষের অনেকেই কংগ্রেস দলের ওপর দোষারোপ করেন, আমাদের শাসনকালে নাকি কাগজ কল ধ্বংস হয়েছিল। ধরুন এই অভিযোগ আমরা মেনেই নিলাম, যদি আমরা এটা ধ্বংস করার পিছনে মূল কারিগর হয়ে থাকি তাহলে গত পাঁচবছরে বিজেপি কাগজ কল পুনরুদ্ধার করতে পারল না কেন? শুধুমাত্র রাজ্য নয় কেন্দ্রেও তারা ছয় বছর ধরে শাসন করছেন। ভারতবর্ষের মতো বিশাল দেশে ছয় বছর শাসন করার পর একটি কাগজ কল পুনরুদ্ধার করতে পারলেন না তারা, এটা কি ব্যর্থতা নয়? তারা যতই দোষারোপ করে থাকুন, এটা মানতেই হবে তাদের শাসনকালেই কাগজ কল বন্ধ হয়েছিল। একের পর এক কাগজ কল কর্মীর মৃত্যু হচ্ছে, অনেকে আত্মহত্যা করেছেন, অথচ শাসক দল মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছাড়া বিন্দুমাত্র কাজ করেনি। এই সত্যটুকু তারা মেনে নিতে পারছেন না, আর নির্লজ্জের মত শুধুমাত্র অতীতের সরকারকে দোষারোপ করে যাচ্ছেন। এটা তাদের দ্বিচারিতার তার প্রমান। ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল কথা দিয়েছিলেন তারা কাগজ কল পুনরুদ্ধার করবেন, অথচ আজও এব্যাপারে ন্যূনতম পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এটাই প্রমাণ করছে তারা শুধুমাত্র কংগ্রেস দলকে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকছেন। আমরা এবার তাদের মুখোশ টেনে ছিড়ে ফেলে দেবো। এই আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা বিজেপির দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে নিয়ে আসব।’
বিধানসভা নির্বাচনের আগে বেশকিছু কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে কংগ্রেস দল। দলের একের পর এক প্রভাবশালী নেতা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরও তারা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে আশাবাদী। তরুণ গগৈ দীর্ঘদিন ধরে এআইইউডিএফ সুপ্রিমো বদরুদ্দিন আজমলের সঙ্গে প্রকাশ্যে সখ্যতা দেখিয়েছেন। এতে দলের অনেকেই অসন্তুষ্ট। তবে রবিবার শিলচরে এসে আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি আবার জানিয়ে দিলেন আগামী বছর নির্বাচনে বদরুদ্দিন আজমলের দলের সঙ্গে কংগ্রেসের আঁতাত হচ্ছে। বললেন, “বিজেপির স্বৈরাচারী মনোভাবকে রুখে দিতে যেসব দল প্রস্তুত, তাদের সঙ্গে আমরা জোট করব।”
Comments are closed.