Attack on Press in Silchar and Police's inaction; Journalists demonstrate in front of SP Office
সাংবাদিক নিগ্রহের বিরুদ্ধে এসপি অফিস ঘেরাও, “আপনাদের সঙ্গে এমনটা হলে তবে কি সজাগ হবেন?” পুলিশকে প্রশ্ন
শনিবার কাছাড়ের দুই জায়গায় সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছেন, কাটিগড়া ইমাদুদ্দিন মজুমদারকে প্রাণে মারার চেষ্টা হয়েছে, সঙ্গে আরো দুই জন সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছেন। এদিকে শিলচরে সাংবাদিক হিমু লস্করকে টিপারের চাকায় পিষে মারার হুমকি দিয়েছে চালকরা। এব্যাপারে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরও পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শেষমেষ মঙ্গলবার পথে নামলেন জেলার সংবাদকর্মীরা, বন্ধ করে দেওয়া হলো পুলিশ সুপারের গেট। কয়েক ঘন্টা ধরে সাংবাদিকরা প্রতিবাদ করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। তবে সংবাদকর্মীরা জানিয়ে দিয়েছেন, এই আওয়াজ সহজে থামবে না, এবার থেকে পুলিশের প্রতি সাংবাদিকদের মনোভাব পাল্টে যাবে। শুধুমাত্র দুটো ঘটনা নয়, সারা বছর ধরে সংবাদকর্মীদের ওপর বিভিন্নভাবে ঘাত-প্রতিঘাত আসে, তাদের আওয়াজ দমিয়ে রাখতে অন্যান্য হুমকি দেয়া হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক ভাবে আঘাত করা হয়। এই সবকিছু বন্ধ হতে হবে, এই দাবিতে সাংবাদিকরা এদিন সরব হয়েছেন। পাশাপাশি কাটিগড়া পুলিশ আধিকারিক নয়ন জ্যোতি শর্মাকে অতিসত্বর বরখাস্ত বা বদলি করার দাবি তোলা হয়।
সকাল দশটায় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকরা জড়ো হন, সেখান থেকে মিছিল করে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ধর্নায় বসেন। এতে যোগ দেন কাটিগড়া থেকে আসা সাংবাদিকরাও। প্রত্যেকেই প্লেকার্ড হাতে নিয়ে এসপি অফিসের সামনে প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শংকর দে, বরিষ্ঠ সাংবাদিক বিকাশ চক্রবর্তী, সাংবাদিক চয়ন ভট্টাচার্য, অভিজিৎ ভট্টাচার্য সহ অনেকেই নিজেদের অভিমত তুলে ধরেন।
বিকাশ চক্রবর্তী বলেন, গত ছয় মাসে কাছাড় জেলায় অন্তত ৫০ জন লোক দ্রুতগামী গাড়ির চাকায় পিষে প্রাণ হারিয়েছেন। অথচ পুলিশ প্রশাসন এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি যাতে পরিচালকরা কিছুটা হলেও নিজেদের সংযত করবে। এবার তারা প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের পিষে মারার হুমকি দিচ্ছে, এব্যাপারে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরেও শুধু আশ্বাস দেওয়া ছাড়া আর কোনও কাজ হয়নি। আমরা পুলিশের কর্তাদের বলতে চাই, আপনাদেরও পরিবার-পরিজন রয়েছে, তারাও রাস্তাঘাটে চলেন, আপনারা মঙ্গল গ্রহে বাস করেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের পরিবারের কেউ এভাবে মারা যাবেন না ততক্ষণ কি আপনাদের টনক নড়বে না? এতটাই বধির হয়ে গেছেন আপনারা?
সাংবাদিক অভিজিৎ ভট্টাচার্য সরাসরি পুলিশ সুপার বিএল মিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, সবকিছু জেনেও পুলিশসুপার নীরব রয়েছেন, আমার সন্দেহ হয় এতে তার কতটুকু মদত রয়েছে। আমাদের সহকর্মীকে মারধর করা হয়েছে, আরেকজনকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, অথচ দৃষ্টান্তমূলক কোনও পদক্ষেপ নেয়নি পুলিশ প্রশাসন। তারা কেন চুপ করে রয়েছেন? এর পেছনে তাদের কি স্বার্থ রয়েছে?
তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তীব্র ভাষায় নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “সংবাদকর্মীরা সারাবছর অক্লান্ত পরিশ্রম করেন অথচ তাদের দুঃসময়ে জনপ্রতিনিধিরা একেবারেই নীরব। তাদের চোখের সামনে সাংবাদিকদের এই অবস্থা, অথচ একজন জনপ্রতিনিধিও এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললেন না। আমরা এই কথাগুলো ভুলে যাবো না, সময় এলে যোগ্য জবাব মিলবে।”
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শংকর দে বলেন, “সংবাদকর্মীরা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের অংশ, এর অর্থ হয়তো পুলিশ প্রশাসন এবং দুষ্কৃতিরা বোঝেনা। সাংবাদিক ছাড়া কোনও সরকারি প্রকল্প সফল হয় না, করোনা পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। প্রকাশ্যে তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবহার হচ্ছে। আর সরকারপক্ষ বা পুলিশ আমাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। আমরা তাদের সহায়তা চাইছি না, তবে অপরাধমূলক কাজের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে না এবং দুষ্কৃতিরা আরও সাহস পাবে, এটা কেমন কথা? আজ আমরা এখানে ন্যায্য দাবি নিয়ে জড়ো হয়েছি, শুধুমাত্র দুই একটা ঘটনা নয় সমাজে সাংবাদিকদের সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষা পাইয়ে দিতে আমাদের এই প্রতিবাদ। তবে আমরা তাদের কাছে দাবি জানালেও নিজেরা দুর্বল নই। আজ যদি আমাদের কথা শোনা না হয়, আমরা আমাদের মত করে আরও জোরে আওয়াজ তুলবো, এই জল অনেকদূর গড়াবে।”
চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা আজ জড়ো হয়েছি পুলিশের কানে আমাদের আওয়াজ পৌঁছে দিতে, তারা যেন নিজেদের কর্তব্য ভুলে না যান। আমরা অবশ্যই শিলচর বা কাছাড়ের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নই, প্রয়োজনে এই আওয়াজ দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে বেশি সময় লাগবে না।”
কাটিগড়ার সাংবাদিকরা এদিন প্রতিবাদে অংশ নিয়ে শনিবার ঘটে যাওয়া ঘটনার বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। তারা বলেন, “সাংবাদিকরা এলাকায় পৌঁছে যাবেন এটাই স্বাভাবিক, টিপারের ধাক্কায় দুই ব্যক্তির মৃত্যুর পর আমরাও সেখানে গিয়েছিলাম। তবে সেখানে পরিকল্পিতভাবে আমাদের সহকর্মীকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে তারা আমাদের অশ্রাব্য গালাগাল এবং হুমকি দিয়েছিল। অথচ সেই ঘটনা দাঁড়িয়ে দেখছিলেন পুলিশের আধিকারিকরা। আমাদের বারবার মনে হয়েছে এতে দু’একজন পুলিশ আধিকারিকের মদত ছিল। পুলিশ আধিকারিক নয়ন জ্যোতি শর্মা সরাসরি এতে জড়িত রয়েছেন। আমরা চাই তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক পুলিশ প্রশাসন।” তাদের অভিযোগের সুর স্পষ্ট হয়।
প্রায় চার ঘণ্টা ধরে সাংবাদিকরা তার কার্যালয়ের সামনে ধর্না দিলেও বেরিয়ে আসেন নি পুলিশসুপার বিএল মিনা। শেষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসে আশ্বাস দেওয়ার পর সাংবাদিকরা তাদের প্রতিবাদী কার্যসূচি আপাতত স্থগিত রাখেন।
Comments are closed.