Also read in

How can Cachar Sports Forum emerge as a substitute of Silchar DSA? Where is the AOA vs DSA stand-off headed?

বরাক উপত্যকা তো বটেই, গোটা রাজ্যে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা এক বিশেষ জায়গা জুড়ে রয়েছে। নিজেদের স্পোর্টিং অ্যাক্টিভিটির জন্য রাজ্যের অন্যতম সেরা ডি এস এর স্বীকৃতি পেয়েছে শিলচর। এটা কিন্তু একদিনে আসেনি। ‌ এর পেছনে রয়েছে অসংখ্য লোকের অবদান। ‌ এর মধ্যে কেউ ক্রীড়াবিদ, তো কেউ স্পোর্টস লাভার। তবে ইদানিং কালে রাজ্যের এই অন্যতম সেরা ডি এস এ ভুল সব কারনের জন্য সংবাদ শিরোনামে রয়েছে। সংস্থার সংবিধান নিয়ে চলছে টানাটানি। ‌ লেগে আছে একের পর এক বিতর্ক। ‌ এর ফলে এমন একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে যেখানে সম্মুখ সমরে এসে দাঁড়িয়েছে শিলচর ডি এস এ এবং অসম অলিম্পিক সংস্থা (এ ও এ)। 

 

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই দুটোই কিন্তু অটোনমাস বডি। এই দুই সংস্থার ওই নিজ নিজ সংবিধান রয়েছে। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অভিভাবক যেমন এ ও এ, ঠিক তেমনি ইন্ডিয়ান অলিম্পিক এসোসিয়েশন হচ্ছে এ ও এর অভিভাবক। তবে প্রত্যেকেরই নিজস্ব একটা সংবিধান রয়েছে। আর সেই অনুসারে শিলচর ডি এস এ এবং এ ও এর কাজ করার কথা। তবে বাস্তবে এমনটা হচ্ছে না। বাস্তবে চলছে রাজনীতির খেলা। গদি দখলের খেলা। আর এজন্যই জন্ম নিচ্ছে একের পর এক বিতর্ক।

 

এর সূত্রপাত শিলচর ডি এস এর কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল করা নিয়ে। ডি এস এর সংবিধানে 6 A তে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, যদি কোন ক্লাব অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টানা দুটি টার্ম নিষ্ক্রিয় থাকে, অর্থাৎ সংস্থার কোনো ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ না করে তাহলে এমনিতেই তার সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। এজন্যই কোনো বৈঠকের দরকার পড়বে না। সংস্থার সচিব নিজ কক্ষে বসে একটা সই করে দিলেই নিষ্ক্রিয় থাকা ক্লাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে। তবে সংস্থার সচিব বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং জিবি বৈঠকে সব সদস্যদের সামনে বিষয়টি তুলে ধরেন। এতে সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে নিষ্ক্রিয় থাকা কুড়িটি ক্লাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন। এনিয়ে পরবর্তীকালে বিতর্কের ঝড় উঠে। আসলে সদস্যপদ বাতিল হওয়া অধিকাংশই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যাদের ভোটে শাসকগোষ্ঠীর একটা দাবি থাকে। নিষ্ক্রিয় থাকা ক্লাব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সদস্য পদ বাতিল করার ফলে সংস্থার মোট ৩০টি ভোট কমবে। এখানেও লুকিয়ে রয়েছে আরও একটা রহস্য। এই ভোট গুলি কমার অর্থ হচ্ছে সংস্থার নির্বাচনে শাসক গোষ্ঠীর প্রভাব কমে যাবে। ‌ আর এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি এর ফলে লাভবান হবেন সচিব বিজেন্দ্র। ‌ অন্তত শাসকগোষ্ঠী এমনটাই মনে করছে।

 

সত্যি কথা হচ্ছে, নিষ্ক্রিয় থাকা ক্লাব ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলির সদস্যপদ আরো আগে বাতিল করা উচিত ছিল। তবে এমনটা করা হয়নি।‌ এটা ছিল শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার এক বিরাট ব্যর্থতা। কারণ এতে লুকিয়েছিল রাজনীতি। না হলে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন স্পোর্টিং অ্যাক্টিভিটি নেই তাদের সদস্য পদ দিয়ে স্থানীয় খেলাধুলার কি উন্নয়ন হবে? বছরের পর বছর শুধু সংস্থার নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সদস্যপদ টিকিয়ে রাখা হয়েছিল। সদস্যপদ বাতিল হওয়ার পর শাসকগোষ্ঠীরই একটি লবি প্রশ্ন তুলছে গত দু’বছর করোনার জেরে সবকিছু বন্ধ ছিল, তাহলে কিসের ভিত্তিতে স্কুল-কলেজের সদস্য পদ বাতিল করা হলো। ডি এস এর পক্ষ থেকে এ নিয়েও আগেই স্পষ্টীকরণ দেওয়া হয়েছিল। তারা জানিয়েছিল, ২০১৭ সাল থেকেই এই কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই তো আরো আগে থেকেই নিষ্ক্রিয়। কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বারবার চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও এর জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি তারা।

 

উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, সদস্যপদ বাতিল হওয়ার পর এ ও এর কাছে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ে। তবে অভিযোগকারীরা অধিকাংশই ছিলেন শাসকগোষ্ঠীর। যারা অভিযোগ করেছিলেন তাদের স্বাক্ষর করা কপি বরাক বুলেটিন এর কাছে রয়েছে। এখানে আসল লড়াইটা কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ। ইগোর লড়াই। না হলে ভারতীয় জনতা পার্টিরই বিজেন্দ্রর বিরুদ্ধে এভাবে সংস্থার প্রধান গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে হত না শাসকগোষ্ঠীর কর্মকর্তাদের। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, গত ৩১ অক্টোবর যারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন, তারা বারবার নিজেদের ক্রীড়াপ্রেমী ও স্কুল কলেজের প্রাক্তন হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু সেদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় শাসকগোষ্ঠীর একাধিক কর্মকর্তা ‘ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্যরা ডি এস এতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন’ (ছবি সহ) এমনটা পোস্ট করেন। যারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন তাদের অধিকাংশই ভারতীয় জনতা পার্টির সক্রিয় কর্মকর্তা। তাহলে এখানে খেলাধুলার বিষয়টা আর থাকলো কই? আসল খেলাটাই তো রাজনীতির। সেদিন তো বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে স্লোগান ও দেওয়া হয়েছিল, চলো ডিএস এ দখল করি।

 

শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা নিয়ে এ ও এর হস্তক্ষেপ ও কিন্তু এই রাজনীতির ফসল। মনে রাখতে হবে, শিলচর ডি এস এ কোন ক্লাব নয়, যাকে বারবার অনুমোদন বাতিল করে দেওয়ার ধমকি দেওয়া হবে। এ ও এ সচিব লক্ষ্য কোওর দু’দিন আগেই বরাক বুলেটিন কে জানিয়েছেন, বিজেন্দ্র প্রসাদ সিং অবৈধভাবে সচিব বনেছেন। এমনকি সদ্য গঠিত হওয়া কাছাড় স্পোর্টস ফোরামকে তিনি ডি এস এর বিকল্প ভাবনার প্রসঙ্গ উড়িয়ে দেননি। ‌ তার মতে, কাছাড়ের ক্রীড়াপ্রেমীরা যদি আওয়াজ তুলেন তাহলে তিনি অবশ্যই বিষয়টা খতিয়ে দেখবেন। সেই সঙ্গে তিনি এটাও জানিয়ে দেন তার কাছে ফোরামের কর্মকর্তারা শিলচর ডি এস এ সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন। এই স্পোর্টস ফোরামেও রয়েছেন শাসকগোষ্ঠীর কর্মকর্তারা। এ থেকেই তো বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।

 

আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, একদিকে এ ও এ সচিব লক্ষ্য কোওর বলছেন, শিথিল ধর তার কার্যকাল ফুরিয়ে যাওয়ার তিন মাস আগে ডি এস এর বি জি এম করে সংবিধান অবমাননা করেছেন। আবার সেই শিথিল ধরকেই সংবিধান সংশোধন করার কথা বলছেন? লক্ষ্যবাবু যে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন, সেই সংবিধান মেনেই তো কুড়িটি ক্লাব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। তাহলে এনিয়ে তার সমস্যা কোথায়? সবচেয়ে বড় কথা, ডি এস এ যদি নিজের সংবিধান অবমাননা করেই থাকে তাহলেও তো তিনি এনিয়ে নাক গলাতে পারেন না। কারণ এটা ডি এস এর অভ্যন্তরীন বিষয়। এ ও এ শুধু দুটি ক্ষেত্রেই শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনুমোদন বাতিল করতে পারে। এক, যদি ডি এস এ এ ও এর বার্ষিক ফি না জমা দেয়। দুই, ডি এস এ যদি এওএর স্পোর্টিং অ্যাকটিভিটিতে অংশগ্রহণ না করে। তবে এই দুটি ক্ষেত্রেই শিলচর ডি এস এ সব নিয়ম মেনে আসছে। নিয়মিত এওএর আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে। আর গত মাসেই এওএর ফিও জমা দিয়েছে। এখানে আরও এক প্রশ্ন উঠতে পারে। যদি বিজেন্দ্র অবৈধ হয়ে থাকেন তাহলে তার সই করা চেক এওএ গ্রহণ করছে কিভাবে?

 

যে স্পোর্টস ফোরামকে ডি এস এর বিকল্প ভাবনা করছেন লক্ষ্য বাবু, সেই ফোরামের কর্মকর্তারা কারা? স্থানীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে এই ফোরামের অবদান কতোটুকু? শাসকগোষ্ঠীর জনাকয়েক কর্মকর্তা ডি এস এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন বলেই কি অনুমোদন বাতিল করে দেবেন লক্ষ্য কোওর? এতে কী এওএর প্রত্যেক সদস্যের সম্মতি রয়েছে? নাকি কোনো চাপে পড়ে এমনটা করছেন তিনি? যদি সত্যিই সমস্যার সমাধান করতে হতো তাহলে তো শিলচরের ক্লাবগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারতেন। এখানকার ক্রীড়া সংগঠকরা কি চাইছেন, সংস্থার সদস্যরা কি চাইছেন, সেটা জানার চেষ্টা করতেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ডি এস এর বর্তমান কমিটি যদি সংবিধান সংশোধনী না করে বার্ষিক সাধারন সভা আয়োজন করে নিত তাহলে তো ফের নতুন কমিটিকে অবৈধ আখ্যা দিতেন লক্ষ্য বাবু। তিনিই তো সংবিধান সংশোধন করতে বলেছিলেন শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা কে। সেই অনুসারে কাজ করেছে ডি এস এ। তাহলে এখানে অনুমোদন বাতিল করার প্রসঙ্গ এল কীভাবে? আর স্পোর্টস ফোরাম কে ডি এস এর বিকল্প ভাবনা করার চিন্তা ধারা এলো কিভাবে?

Comments are closed.