Also read in

Parthapratim Maitra, Poet and Filmmaker Behind 'Ashraf Alir Swadesh', Passes Away at 64

থেমে গেল অনিকেতজীবন। ‘নিরাপত্তা পেলে তুমি বৃক্ষ হয়ে যাবে কমলিকা’-র কবি আর নেই।২৪/০৪/২০২৫-এ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন এই অসাধারণ পংক্তির স্রষ্টা ‘অনিকেত’ কবি ও চলচ্চিত্রকার পার্থপ্রতিম মৈত্র। দীর্ঘ রোগভোগের পর চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বিদায় নিলেন উপত্যকার অন্যতম কবি ও বরাকের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্যর ‘সুপার এইট ফর্ম্যাটে’ নির্মিত সিনেমা ‘আশরাফ আলির স্বদেশ’-র পরিচালক পার্থপ্রতিম। বৃহস্পতিবার বিকেলে কলকাতার এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল চৌষট্টি। রেখে গেছেন সহধর্মিণী ইন্দ্রাণী মৈত্র, এক ছেলে বিহান ও ভাইবোন সহ পারিবারিক আত্মীয়স্বজন ও অসংখ্য গুণমুগ্ধ।

প্রায় দেড়দশক তিনি ভুগছিলেন লিভারের সমস্যায়। সেসঙ্গে দেখা দেয় আরও কিছু জটিলতাও। ২০০৭/০৮ থেকে তাঁর লিভার সিরোসিস ধরা পড়ে। সেই থেকে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু। এই অবস্থায়ও হার না-মানা কবির কলম থামেনি। মৃত্যুকে তিনি যেন দর্জির ফিতে দিয়ে মেপে যাচ্ছিলেন। কারণ, এই সময়সীমায় প্রকাশ হয় তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘মৃত্যু বিছানায় শুয়ে’। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘হিমঘর’ এর বেশ আগের। এর কিছু বছর পর বেরোয় কবির প্রিয় যাপনভূমি রেলশহর বদরপুর নিয়ে ‘বদরপুর জংশন’। বদরপুরের ঝর্ণা কলোনিতে তার বেড়ে ওঠা। বদরপুর রেলওয়ে হায়ার সেকেন্ডারি স্কুল থেকে ভাল রেজাল্ট করে ভর্তি হন জিসি কলেজে। এখানেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যান। শুধুমাত্র কবিতাই নয়, নাট্যমঞ্চেও তাঁর প্রতিভা তোলপাড় করেছে। নিজে অভিনয় করতেন ,নির্দেশনা করতেন, নাটক লিখতেন।

তাঁর নাটক ‘ক্রুসেড’ বাংলা নাটকের বিভাগে ১৯৮৫ সালে All India Radio তে সম্ভবত শ্রেষ্ঠ নাটক হিসেবে পরিচিত হয়েছে। ছাত্র রাজনীতির সুবাদে পার্থপ্রতিম ও নাট্যকার তীর্থঙ্কর চন্দ তখন উড্ডীন। তখনই প্রকাশ হয় তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘অনিকেত’। তাঁর চির প্রতিবাদী ও প্রতিষ্ঠানকে চ্যালেঞ্জ জানানো কবির কলমে শোভা পায় আরও অনেক লেখা। গল্পকার মলয় কান্তি দের সাথে ১৯৮১-তে যুক্ত হয়ে আসাম চুক্তি নিয়ে তার তৈরি ছবি “আসরাফ আলীর স্বদেশ” করা হয়েছে সম্পুর্ণ চাঁদা তুলে। তাঁর সঞ্চালনায় তৈরী ছায়াছবি ‘প্রজন্ম’ তুলে ধরেছে আসামের বাঙালি অস্তিত্ব নিয়ে কিছু কঠিন বাস্তব। তাঁর বিভিন্ন সৃষ্টির মাধ্যমে সোচ্চার হওয়া প্রতিবাদী কন্ঠ বার বার আমাদের সাহস দিয়েছে।

এনআরসি-বিপর্যস্ত সময় কলকাতায় বসেও থেমে থাকেননি তিনি। একের পর এক শাণিত লেখা দিয়ে রাষ্ট্রহীন করে দেওয়ার চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছেন।কলকাতায় সংগঠিত করেছেন মানুষকে। তাঁর ক্ষুরধার ভাষণে কাঁপিয়েছেন প্রশাসনের ভিত। বামপন্থী পরিবারে বড় হওয়ার জেরে জরুরি অবস্থার সময় মিথ্যা মামলায় জেল খাটেন ‘নৈরাজ্যবাদী’ পার্থপ্রতিম।
এরপর বিদেশি বিতাড়ণ-বিরোধী সোচ্চার কণ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। পেশায় পশ্চিমবঙ্গ-এর গ্রামীণ ডেভেলপমেন্ট চ্যানেলে ডিরেক্টর হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত হলেও থেমে থাকেনি তার কলম। তার যুক্ত প্রয়াসে সমকালীন সহযোগীদের সাথে গড়ে উঠেছে বদরপুরে তাঁর প্রাণের ঝিনুক সাংস্কৃতিক সংস্থা। নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে একসময় দাপিয়ে বেড়িয়েছে এই ঝিনুক।তাঁর এই চলে যাওয়া আমাদের মনে কষ্ট দেই ঠিকই তবে তার সাথে দেই আরো অনেক বেশি শক্তি, তাঁর জীবনশৈলী শিখিয়ে দেই ভুলকে ভুল, ঠিক কে ঠিক বলতে। ওপারে ভালো থেকো, মিঠু দা।

[রেলশহর বদরপুরের পুরোনো প্রশংসক মৃত্যুঞ্জয় দাস থেকে সংগ্রহিত।]

Comments are closed.

error: Content is protected !!