Cloud of uncertainty looming like forecast over the Bengalis in Barak Valley
সমস্যাটা নামকরণ থেকেও বটে। অনেকের ধারণা, আসামে যাঁরা বাস করেন তাঁরা অসমিয়া, আসামের ভাষা অসমিয়া। এ পর্যন্ত সবই ঠিক আছে। আসামে অসমিয়ারা তো থাকবেন, তাঁদের ভাষাও থাকবে – এতে কোনো দ্বিমত থাকার কথাই নেই। তবে কি আর কেউ এখানে থাকতে পারে না, অন্য কোনো নৃ বা ভাষিক গোষ্ঠী কি এখানে কদাপি বাস করেনি বা ভবিষ্যতে বাস করবে না? ওখানে বাঙালি ছাড়া আর কারও অস্তিত্বের বৈধতা কি নেই বা থাকতে পারে না? বিহার, পাঞ্জাব, ওড়িশা ইত্যাদি নামবাচক রাজ্যে তো বিভিন্ন ভাষিক গোষ্ঠীর মানুষ বৈধ নাগরিক হিসেবেই বসবাস করছেন। আর উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, উত্তরাখণ্ড – এ সব রাজ্যের প্রধান ভাষিকগোষ্ঠী কি বিপন্ন? আমাদের প্রতিবেশী স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের কথা ধরা যাক। ও দেশে যদিও একক ভাবে বাংলা ভাষার অধিষ্ঠান, তবুও অপরাপর ভাষিক এবং নৃগোষ্ঠীর সংস্থান তো রয়েছে। মণিপুরি, চাকমা, মার, রাজবংশী, হিন্দিভাষী, চা-জনজাতির ভাষার প্রচলন তো রয়েছে ওখানে। ওদের নিজস্ব সাহিত্য, সংগীত, নাটক, সিনেমার সৃজনশীল ধারাও অব্যাহত রয়েছে, গণমাধ্যমে সীমিত হলেও বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার অনুষ্ঠানের সংস্থান রয়েছে। বিভিন্ন জনজাতির ভাষা, লোকসংস্কৃতি এবং সংগীতের চর্চা বাংলাদেশে অব্যাহত রয়েছে, রেডিও-টিভিতে ওদের ভাষার সংস্থান রয়েছে। চা-জনজাতির ভাষায় বাংলাদেশের রেডিও-নাটক শোনার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। অসংখ্য তথ্যচিত্রে দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি জনজাতির জীবনচিত্রও প্রতিফলিত হয়। পাঠকরা তনবির মোকাম্মেলের ছবিগুলো দেখতে পারেন। আর পশ্চিমবাংলায় তো হিন্দি, উর্দু, নেপালি, চা-জনগোষ্ঠীর ভাষা প্রচলিত। রেডিওর নব ঘোরালে অলচিকি ভাষাও শুনতে পারেন। নেপালি, উর্দু সংবাদ তো রেডিও-টিভি, উভয় মাধ্যমেই প্রচারিত হয়।
এ থেকে এটাই স্পষ্ট, বাংলার মূল ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে যেমন অপরাপর ভাষিক এবং নৃগোষ্ঠীর সংস্থান হতেই পারে, তেমনি ভিন্নতর প্রাদেশিক ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে বাঙালি এবং বাংলা ভাষার অবস্থানও স্বাভাবিক। আসামে বাঙালি এবং বাংলা ভাষার অবস্থান কোনো অস্বাভাবিক, অনৈতিহাসিক ব্যাপারও নয়। কিন্তু এখানে দীর্ঘদিন যাবৎ একটা বিপরীত চিন্তা প্রশ্রয় পেয়ে এসেছে – ‘আসাম কেবল অসমিয়াদের জন্য, আসামের একমাত্র ভাষা অসমিয়া’ ইত্যাদি, এবং পরবর্তীতে দাবি আরও এগিয়ে এল, ‘আসামে অসমিয়াদের জন্য একশো শতাংশ অধিকার চাই’; আর সর্বশেষ প্রবণতা, আসামে বসবাসরত বাঙালিরা সন্দেহজনক বাংলাদেশি, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, এদের ভারতীয়ত্ব প্রমাণসাপেক্ষ।
এর বিপরীত চিন্তা যাঁরা করছেন তাঁদের কন্ঠস্বর উগ্র ভাষা-সম্প্রসারণবাদীদের হৈ-হট্টগোলে চাপা পড়ে গিয়েছে। বরাক উপত্যকায় প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ধ্বনিত হলেও রাজ্য বিধানসভা বা কেন্দ্রীয় সংসদে তা পৌঁছে দেওয়ার কেঊ নেই। একতরফা প্রচারের মাধ্যমে সারা দেশকে এটাই শোনানো হচ্ছে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। উত্তর ভারত, মধ্য ভারত, দক্ষিণ ভারত এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও একাংশ মানুষের মনে ধারণাটা বদ্ধমূল হতে চলেছে যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা আসামের জনবিন্যাস পালটে দিয়েছে, আসামে বাঙালিদের প্রবল দাপটে নাগা, মণিপুরি, খাসি এবং অরুণাচলিরা আলাদা রাজ্য বানিয়ে পরিত্রাণ পেয়েছেন; আর যাঁরা রয়েছেন এঁদের মধ্যে বড়ো জনগোষ্ঠীও স্বতন্ত্র রাজ্য গড়ার কথা ভাবছেন, কারবি-ডিমাসাদের মধ্যেও অসন্তোষ দানা বাঁধছে।
আসামে বাঙালিদের কোনো স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল নেই। দু’একটি জেলাভিত্তিক সংবাদপত্র ছাড়া নিজেদের কথা বলার কোনো মাধ্যম নেই, কথায় কথায় দিল্লি গিয়ে নিজেদের কথা সরবে ঘোষণা করার সঙ্গতি নেই। সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিরা নিজেদের কথা রাজ্য স্তরের নেতাদের কাছেই পৌঁছে দিতে পারেন না, দিল্লি তো দূর।
বিগত ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭-এর পরবর্তীতে গুয়াহাটির প্রচার মাধ্যমগুলো সরাসরি বাঙালি-বিদ্বেষ ছড়িয়ে যাচ্ছে। আসামের ক্ষমতাসীন চক্র রাজ্যটিকে এক-ভাষী রাজ্য হিসেবে দেখাতে এবং গড়ে তুলতে আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও ঐতিহাসিক কাল থেকেই আসাম অসংখ্য ক্ষুদ্র, মাঝারি নৃ এবং ভাষিকগোষ্ঠী সমন্বিত রাজ্য। এখানে কোনো একক সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বই নেই। যা আছে তা হল অসংখ্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, এদের মধ্যে ৩০ শতাংশ অসমিয়া। প্রাক-ঔপনিবেশিক আসামের মূল ভূখণ্ড ছিল পাঁচটি জেলা নিয়ে, যেখানে অসমিয়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যাধিক্য থাকলেও ক্ষুদ্র মাঝারি জনগোষ্ঠীর অবস্থানও ছিল – সেই দরং, কামরূপ, শিবসাগর, লখিমপুর, নওগাঁর সঙ্গে ক্রমে সংযুক্ত হল উত্তর কাছাড়, খাসিরাজ্য, মিকির পাহাড় গোয়ালপাড়া, সিলেট আর কাছাড়, এবং এ সংযুক্তির ফলেই বহুভাষিক চরিত্রলক্ষণ আরোপিত হল আসামে। এরও আগে প্রাচীন এবং মধ্যযুগে বঙ্গদেশের সঙ্গে আসামের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মধ্যযুগে বঙ্গদেশ যখন সুবে বাংলার অন্তর্ভুক্ত হয় তখন আসামের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক ভিন্ন মাত্রা লাভ করে। বঙ্গদেশ থেকে আসাম রাজ্যে প্রব্রজনও ঘটে তখন। আর আহোম রাজত্বে বঙ্গদেশ থেকে আহ্বান করে আনা হয় বাঙালিদের, নব্য আসাম গড়ে তুলতে যাঁদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
বাঙালিদের সংখ্যাধিক্য ঘটে ইংরেজ ঔপনিবেশিক আমলে যখন বঙ্গদেশ থেকে আমলা, শিক্ষক, করণিক এবং নানা পেশার লোকদের ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রয়োজনে নিয়ে আসা হয়। আসামে চা-শিল্প এবং তার পর রেল সম্প্রসারণের সূত্রেও সেই ঊনবিংশ শতকেই বঙ্গভাষী জনগণের আত্মপ্রকাশ। যখন আসামকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস নেওয়া হয় সেই ঊনবিংশ শতকে, তখন জনসংখ্যা এবং রেভিনিউ একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌঁছোনো অনিবার্য হওয়ায় বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি থেকে সিলেট-কাছাড় এবং গোয়ালপাড়াকে কেটে এনে আসামের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। বলা বাহুল্য, সেই তিনটি জেলা ছিল বাঙালি অধ্যুষিত এবং এটাও বলা বাহুল্য যে সেই ১৮৭৪ সালেই সিলেট, কাছাড় এবং গোয়ালপাড়ার ২৩,৬৯,৩২৭ জন বঙ্গভাষী আসামের ৫টি জেলার ১৪,৯১,২২৭ জন বাসিন্দার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আসামে বঙ্গভাষীদের সংখ্যাধিক্য সূচিত করল। চিফ কমিশনার শাসিত আসাম প্রদেশ গঠনের প্রক্রিয়ার ফলে এ রাজ্যে বাঙালির সংখ্যা বৃদ্ধি করা হল। বলা চলে বাঙালির বাসভূমিকে আসাম অবধি নতুন করে সম্প্রসারিত করা হল। এ সূত্রেও বাঙালিরা আসামের বৈধ বাসিন্দার দাবিদার। এ ইতিহাস সবারই জানা। রাজ্যের বিশিষ্ট বিদ্বজ্জন এটা স্বীকারও করেন, কিন্তু উগ্র ভাষিক সম্প্রসারণবাদীরা এটা জেনেও জানেন না, মানতে চান না। তাই স্বাধীনতার তেরো বছরের মাথায় রাজ্য বিধানসভায় একটি বিল উত্থাপন করে অসমিয়া ভাষাকে বিকল্পহীন সরকারি ভাষা হিসেবে পাশ করিয়ে নিতে গেলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্ট হয় রাজ্য জুড়ে। শিলচর রেলস্টেশনে পুলিশের গুলিতে একাদশ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৬১ সালে ‘আসাম রাজ্য সরকারি ভাষা আইন ১৯৬০’-এর একটি সংশোধনীর মাধ্যমে আংশিক ভাবে বাংলা ভাষার অধিকার স্বীকৃত হয়। কিন্তু দশকে দশকে ওই সামান্য অধিকারটুকু ছিনিয়ে নেওয়ার প্রয়াস অব্যাহত থাকে এবং ১৯৭২, ১৯৮৫ এবং ১৯৯৫ সালে উপত্যকার মাটি ভিজে ওঠে শহিদের রক্তে।
১৯৮৫ সালে আসাম চুক্তি সম্পাদনের পরবর্তী দিনগুলিতে প্রণালীবদ্ধ ভাবে অন্য-অসমিয়া জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণের উদ্দেশ্যে অবিরাম ছোটো ছোটো আন্দোলন, প্রচারাভিযান, জনমত গঠন এবং সামাজিক চাপ সৃষ্টির ধারা চলছে। আসামের আদি বাসিন্দার সংজ্ঞা নিরূপণ, রাজ্যভাষা আইনের বাস্তবায়ন (১৯৬১ সালের সংশোধনীর কথাটি অস্বীকার করেই), বিদেশি বহিষ্কার, ডি-ভোটার মামলা, ডিটেনশন ক্যাম্প চালু করা ছাড়াও একের পর এক আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে বাঙালিদের কোণঠাসা করার সমস্ত আয়োজন সম্পূর্ণ করার পর সর্বশেষ নাগরিকপঞ্জি নবায়ন প্রকল্প।
অবশ্য ইতিমধ্যে স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং রাজ্য স্তর পেরিয়ে জাতীয় স্তরের উচ্চতর, উচ্চতর প্রতিষ্ঠানগুলোতে উগ্র-জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের প্রতিষ্ঠার পর্বটিও সমাপ্ত করা হয়ে গিয়েছে। স্বাধীনতার উষালগ্নে যে ‘আসাম অসমিয়াদের জন্য’ স্লোগানে জাতির জনক পর্যন্ত বিপন্ন বোধ করেছিলেন, সেই সংকীর্ণতার তত্ত্বকে নিরন্তর প্রচারের মাধ্যমে জাতীয় স্তরে প্রায় প্রতিষ্ঠিতই করে দেওয়া হল। ভিন্ন প্রাদেশিক, এমনকি বঙ্গভাষীদেরও মনে সন্দেহ জন্মে যাচ্ছে, আসামে বাঙালিদের বুঝি বৈধতা নেই, না ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় না বরাক উপত্যকায়। এ বাঙালিরা বুঝি সবাই অর্বাচীন, অনুপ্রবেশকারী। প্রচারের ডামাডোলে মিথ্যা হতে চলেছে প্রাচীন কামরূপ রাজ্যে বঙ্গদেশের পণ্ডিতদের অস্তিত্ব, আহোম রাজ্যে বাঙালি ব্রাহ্মণদের ভূমিকা; বরাক-সুরমা উপত্যকায় হরিকেল-কামরূপ-সমতট রাজত্বের ইতিহাস, নিধনপুর তাম্রশাসন, ত্রিপুরী শাসনপর্ব, শ্রীহট্ট রাজ্যের উত্থান, শাহজালাল-শ্রীচৈতন্যদেবের সমকালীন সামাজিক ইতিহাস, ডিমাসা রাজত্বের ইতিহাস। মিথ্যা হতে চলেছে মাইবং এবং সমতল কাছাড়ের প্রস্তরলিপির বাংলাভাষা, ‘হেড়ম্ব রাজ্যের দণ্ডবিধি’র বাংলা অক্ষরমালা, ভুবনেশ্বর বাচস্পতির ‘শ্রীনারদি রসামৃত’ কাব্য, ডিমাসা রাজাদের কীর্তনগীতিকা, ‘রাসোৎসব গীতামৃত’, মহারাজ কীর্তিচন্দ্রের সনন্দের ভাষা (১৭৩৬)। মিথ্যা হতে চলেছে ডিমাসা মুদ্রায় উৎকীর্ণ বাংলা অক্ষর, সিপাহী বিদ্রোহের দ্রোহগাথা, জঙ্গিয়ার গীত; স্বদেশি আন্দোলন, অসহযোগ-খিলাফৎ আন্দোলনে পূর্বসূরিদের অংশগ্রহণ, কারাবরণ, আত্মবলিদান।
এ মুহূর্তে আসামে চক্রান্ত চলছে নাগরিকপঞ্জিতে লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে বাদ দিয়ে এদের রাষ্ট্রহীন করার। বাঙালির সামনে এ এক মহা দুর্যোগ। ইতিমধ্যে বরাক উপত্যকায় এ চক্রান্তের বিরুদ্ধে বৌদ্ধিক প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। আমরা ইতিমধ্যেই বলেছি আসামের বিরাট সংখ্যক শান্তিকামী জনগণ পরিস্থিতির সঠিক পাঠ করতে সক্ষম, এবং হিংসার পথকে পরিহার করে চলার সপক্ষে আছেন। বাঙালিদের মধ্যেও অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতিকে মান্যতা দিয়ে চলার মানসিকতা সততই বিদ্যমান। সংকীর্ণতাবাদীদের ইচ্ছানুসারে বৃহত্তর অসমিয়া জাতিসত্তার সঙ্গে বাঙালি জাতিসত্তাকে বিলীন করে দেওয়ার আহ্বান অস্বীকার করার অর্থ যে অসমিয়া ভাষা বা জাতিসত্তাকে অস্বীকার করা নয়, এটা বুঝিয়ে দেওয়া এ সময়ের আশু কর্তব্য। সমমর্যাদার ভিত্তিতে প্রতিটা জাতি এবং ভাষিক গোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের আদর্শ যদি ব্যাপক জনমানসে প্রতিষ্ঠা না লাভ করে তা হলে আসামের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
আসামের বাঙালিদের অবস্থিতির বৈধতা সম্পর্কে দেশবাসীর মনে একটা দ্বিধা এবং সংশয় রয়েছে (সংশয় রয়েছে অসমিয়া জনগোষ্ঠীরও প্রবল ভাবে)। সমস্যাটা বাঙালিদের উৎভূমি এবং বিস্তারভূমি সংক্রান্ত। প্রশ্নটা হল, বাংলাটা কোথায়? পশ্চিমবঙ্গে, না পূর্ববঙ্গে যা এক সময়ে হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান, এখন বাংলাদেশ? ও দিকে আবার বিহার, ওড়িশাও যে নবাবি আমলে বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল, কাছাড় তো প্রাচীন এবং মধ্যযুগ থেকেই বাংলার সম্প্রসারিত ভূমি ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক দিক থেকেও। এই জটিলতা বোঝার কথা নয় সবার। কিন্তু নীতি নির্ধারক, বুদ্ধিজীবী এবং সমাজকর্মীদের তা না বুঝলে চলবে কেন? বঙ্গদেশের বিবর্তন ঘটেছে হাজার বছরের ঐতিহাসিক পরিক্রমায় – বিভিন্ন সময়ে এর সীমা সংকুচিত হয়েছে, সম্প্রসারিত হয়েছে, নানা রাষ্ট্রশক্তির আত্মপ্রকাশ বঙ্গভূমিকে খণ্ডিত বিখণ্ডিত করেছে। ঔপনিবেশিক আমলে রাজ্য পুনর্গঠনকালে বঙ্গদেশ (আসাম-সহ) একাধিকবার খণ্ডিত হয়েছে। স্বাধীনতার মুহূর্তেও আরও একবার খণ্ডিত হওয়ার পর পরিবর্তনের প্রক্রিয়া রুদ্ধ হয়েছে ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশের পর। কিন্তু বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং পশ্চিমবঙ্গ নামক ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রদেশের সীমারেখার বাইরেও বাঙালির বাসভূমি এবং বাংলা ভাষার বিস্তৃতি ঘটেছে – আসাম যার মধ্যে অন্যতম। এই আসাম রাজ্যে বাঙালিদের ভাগ্য নিয়ে চলছে টানাহ্যাঁচড়া এবং এই মুহূর্তে এদের জাতীয়তা কিংবা ভারতীয়ত্বকে অস্বীকার করার প্রয়াসও চলছে। এর বিরুদ্ধে হয়তো বাঙালিকে আরও দীর্ঘ লড়াইয়ের ময়দানেই নামতে হবে। আপাতত আদালত, প্রশাসন, গণমাধ্যম, রাজনৈতিক ক্ষমতা, সমস্ত কিছুই প্রতিকূলে।
অবশেষে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ৩০ জুলাই আসামে দ্বিতীয় তথা চূড়ান্ত পর্যায়ে নাগরিকপঞ্জির খসড়া প্রকাশিত হল। এতে বাদ পড়ল ৪০,০৭,৭০৭ জনের নাম। আগস্টের ৭ থেকে সেপ্টেম্বরের ২৮ পর্যন্ত এ ব্যাপারে পুনরাবেদন/আপত্তির সুযোগ থাকবে। অঘোষিত জরুরি অবস্থার মধ্যে, আধা-সামরিক বাহিনী, রাজ্য পুলিশ এবং র্যাফের সিপাইদের পদভারে কম্পিত রাজ্যে পরিবেশ থমথমে, যদিও কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার খবর নেই, যদিও উগ্র জাতীয়তাবাদীদের একতরফা অপপ্রচারের ঘাটতি নেই। নাগরিক পঞ্জিকরণ প্রক্রিয়ায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর আতংকিত হওয়ার আশঙ্কাটুকু ব্যক্ত করেই মামলায় জড়িত হলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, বিশিষ্ট লেখক, শিক্ষাবিদ তপোধীর ভট্টাচার্য। ‘আজকাল’ আর ‘এই সময়’ পত্রিকায় দু’ খানা নিবন্ধ নিয়ে রাজ্যস্তরের বৈদ্যুতিন মাধ্যমে সে কী ধুন্ধুমার কাণ্ড – মিডিয়া ট্রায়াল, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাব্যাপী প্রতিবাদ এবং দেশবিরোধী চক্রান্তের অভিযোগে থানায় কেস ডায়েরি। কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে এখন নিজের দুর্ভাবনার কথা বলবে, এই আসাম রাজ্যে!
ও দিকে সেই যে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যরাত্রির পর থেকে আসামের আধ ডজন টিভি চ্যানেলে উত্তেজনাকর সংবাদ, ভাষ্য, আলোচনা, টক শো, বিতর্ক চলছে, তাতে ভাষিক সংখ্যালঘু, বিশেষ করে বাঙালিদের প্রতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হুমকির বিরাম নেই। ওই সব সচেতন বুদ্ধিজীবী, সমাজকর্মী, ভাষাপ্রেমী স্বঘোষিত স্থানীয় (খিলঞ্জিয়া) স্বার্থরক্ষকদের কাছে বাঙালি আর বাংলাদেশি যেন সমার্থক। এঁরা ভুলেই গিয়েছেন বাংলাদেশ তো সে দিনের সৃষ্টি (১৯৭১), বাঙালিরা যে দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকেই আসামের বাসিন্দা। এর পূর্বে খ্রিস্টীয় পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকে যে বঙ্গভূমি থেকে কামরূপ রাজসভায় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করে আনা হয়েছিল তাঁদের উত্তরসূরিরাই (তখন বাংলা ভাষা বা বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে মাত্র, এ বিষয়ে আমরা সচেতন আছি) আসামের বর্তমান বাঙালি জনগোষ্ঠীর একটি অংশ, এটাকে তো গ্রাহ্যের মধ্যেই আনছেন না ওঁরা। ঐতিহাসিক কাল থেকে কামরূপ, গোয়ালপাড়া, কাছাড় নিয়ে বিস্তৃত অঞ্চলে বাঙালিদের অবস্থানকে ওঁরা প্রচারের জোরে অস্বীকার করে আসছেন। ফলে আসামের বাইরে (এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও) এ ধারণাটা জনমানসে প্রায় বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছে যে আসামে বাঙালিদের কোনো বৈধতা নেই।
কাছাড় তথা আজকের বরাক উপত্যকা ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজ, জাতিগঠন এবং রাষ্ট্রগঠন প্রক্রিয়ার সূচনা থেকেই বঙ্গীয় সমভূমির সঙ্গে বিলগ্ন। ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস’ প্রণেতা নীহাররঞ্জন রায় এ সূত্রে এখানকার জনজীবনে বঙ্গীয় সংস্কার ও সংস্কৃতির প্রসার এবং জনবিন্যাসে বাঙালির সংখ্যাধিক্যের কারণ নির্ণয় করেছেন। টিভি চ্যানেলের বৌদ্ধিক চর্চার প্রথম এবং শেষ উদ্দেশ্যই যেন এই কথাগুলো অস্বীকার করা। সে সঙ্গে তো সংবাদপত্রের উত্তর সম্পাদকীয় রয়েছেই।
আসামে যে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা দেখানো হয়ে আসছে এটা নিছকই কল্পকাহিনি। যে পরিসংখ্যান দেখানো হয়েছে ইতিমধ্যে, এটা সত্যি হলে এত দিনে বাংলাদেশ তো জনশূন্য হয়ে যেত। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে তদানীন্তন আসামের সিলেট জেলা থেকে যাঁরা এসেছেন, তাঁরা তো নিজ বাসভূমি আসামেরই একটি অংশ থেকে (যে অংশটি বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে) অপর অংশে এসেছেন। এঁরা কি অনুপ্রবেশকারী হতে পারেন? আর ১৯৭১-এর পর নবসৃষ্ট স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের পর ও পার থেকে অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা তো এমনিতেই সীমিত হয়ে গেল। তৎসত্ত্বেও যে সব অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে মাঝে মধ্যে তার জন্য সীমান্তরক্ষীদের দায় অস্বীকার করা যাবে না যদি যে সংখ্যাটি নয়ের দশকের রাজ্যপাল লে. জেনারেল এস কে সিনহা তাঁর প্রতিবেদনে দিয়েছেন তা সত্য বলে ধরা হয়। সিনহা মহাশয়ের অবশ্য বিদেশি শনাক্তকরণের পদ্ধতিটি কেমন গোলমেলে। তিনি লুঙ্গি আর তকি দেখেই বুঝে নিতেন যা বোঝার। ১৯৯৮ সালের নভেম্বরে একটি প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন: Looking at the population in the border areas of Assam, sometimes one wonders whether one is in Assam or in Bangladesh. তিনি আরও বলেছেন: the influx of these illegal migrants is turning these districts into Muslim majority region. It will then be a matter of time when a demand for the merger with Bangladesh may be made। এক জন সাংবিধানিক প্রধান যদি এ ধরনের তত্ত্ব ছড়ান তবে সাধারণ মানুষ তো বিভ্রান্ত হবেই। তিনি জানিয়েছেন, প্রতি দিন পাঁচ হাজার করে বাংলাদেশি আসামে ঢুকছে। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়াও যে নেই তা নয়, তার ওপর সীমান্তরক্ষী তো আছেই, তবু এ সব! আজকের দিনের সমস্যাটা বুঝতে হলে এটাও মনে রাখতে হবে।
আসামের সমস্যা ঠিক অনুপ্রবেশজনিত সমস্যা নয়, সমস্যা হল ভাষিক সম্প্রসারণবাদীদের সৃষ্ট সমস্যা। আসামের বহুভাষিক চরিত্রলক্ষণকে অস্বীকার করে এক ভাষার (এতে সম্প্রতি সংযোজিত হচ্ছে ধর্মীয়) আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসই সংকটের মূলে।
বৃহত্তর অসমিয়া জাতি গঠনের যে আওয়াজ ওঁরা উঠিয়েছেন, তাতে নিজস্ব ভাষিক সত্তাকে অসমিয়া সত্তার সঙ্গে বিলীন করে দেওয়ার চাপের কাছে বাঙালিরা নতি স্বীকার করতে চাইছে না। এটাই ওদের গাত্রদাহের কারণ। ও দিকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় যে বঙ্গীয় মূলের মুসলিম জনগোষ্ঠী অসমিয়া ভাষাকে স্বীকার করে নিয়ে নিজেদের জন্য নব্য অসমিয়া পরিচয় গ্রহণ করে নিয়েছিলেন, বিগত পাঁচটি দশকের অভিজ্ঞতায় এঁরা আবার ঘরে ফেরার টান অনুভব করছেন – এঁদের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারে নেলি-গহপুরের (১৯৮৩) নির্মম হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি ছাড়াও জমা হয়েছে বৈষম্যমূলক আচরণ, সামাজিক অবহেলা, ঘৃণা এবং নাগরিকপঞ্জি নবায়নকে কেন্দ্র করে চক্রান্ত, পুলিশি সন্ত্রাস, ডি-ভোটার তকমা পেয়ে ডিটেনশন ক্যাম্প। এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার প্রসার, মধ্যবিত্ত শ্রেণির আত্মপ্রকাশ ঘটতেই এঁদের নতুন প্রজন্ম নিজেদের বাঙালি বলে পরিচয় দিতে আরম্ভ করল, তাই এরা আজ বিদেশি, অনুপ্রবেশকারী এবং আইএসআই, আরও কত কী! ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশক পর্যন্ত এরাই প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসামের অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় এনেছে, বন্যপ্রাণী, সরীসৃপ, ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ দিয়েছে। এদের ত্যাগেই আসামের চর-চাপর অঞ্চল, ব্রহ্মপুত্রের বুকে আড়াই হাজারের মতো অস্থায়ী দ্বীপ হয়ে উঠেছে ফসল ভাণ্ডার। আর এদেরই উত্তরসূরিদের জমির অধিকার, ভোটাধিকার হরণ করে এদের বিদেশি বানিয়ে দেওয়ার সুযোগ এসে গেল এই নাগরিকপঞ্জি নবায়নের ঘনঘটায়। ঠিক এ রকম মুহূর্তেই সংসদে উত্থিত হল Citizenship (Amendment) Bill 2016, যেখানে শরণার্থী হিন্দুদের নাগরিকত্ব প্রদানের স্বপ্ন দেখিয়ে মুসলিম ও হিন্দুর বিভাজনের আয়োজন প্রায় সম্পূর্ণ করে অবশেষে বিলটিকে হিমঘরে পাঠানোর ব্যবস্থাও হয়ে গেল। চল্লিশ লক্ষ হিন্দু-মুসলিম এনআরসি-ছুটদের সামনে এ মুহূর্তে এ দিকে আর একটি নতুন দুর্যোগ।
ইতিমধ্যে রাষ্ট্রহীন হয়ে যাওয়ার ভয়ে বেশ কয়েক জন ভীত সন্ত্রস্ত নাগরিকের প্রাণ গেল — কেউ হলেন আত্মঘাতী, কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। এঁদের মধ্যে বাঙালি ছাড়া নেপালি ও মণিপুরি জনগোষ্ঠীর মানুষও আছেন। এই এনআরসি-শহিদের নামগুলোও এখানে লিপিবদ্ধ থাকুক। এঁরা হলেন যোগীঘোপার বালিজান বিবি (৪৫), গোপাল দাস (৬৫), লালছন আলি (সাতগাঁও, বরপেটা), সাহিমন বিবি, রতন রাই (পান্ডু কলোনি), আনোয়ার হোসেন (৩৭), কাছাড়ের অর্জুন নমঃশূদ্র, হানিফ খান (৪০), করিমগঞ্জ জেলার মাসুক মিঞা (৪০)। উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর হানিফ খান প্রথম খসড়ায় নিজের নাম না দেখতে পেয়েই আত্মহননের পথ বেছে নিল। ঘটনাটা ঘটল শিলচরের অদূরে। আর রিকশাচালক মাসুক মিঞা ৩০ জুলাই এনআরসি সেবাকেন্দ্রে গিয়ে নিজের নাম দেখতে না পেয়ে মানসিক আঘাত পেয়ে প্রাণত্যাগ করলেন।
ও দিকে ৩০ জুলাইয়ের দুপুর পেরোতে না পেরোতেই আসামের উগ্র জাতীয়তাবাদীদের প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় আসাম-মেঘালয়, আসাম-মিজোরাম সীমানায় গাড়ি থামিয়ে বাঙালিদের এনআরসি কাগজ দেখা শুরু হয়ে গেল এবং ভারতীয়ত্বের প্রমাণে সন্তুষ্ট না হয়ে এদের ফেরত আসতে বাধ্য করা হল। পরদিন থেকে মণিপুর সীমানায় এবং এ লেখা চলাকালীন খবর এল অরুণাচল প্রদেশেও স্বঘোষিত দেশপ্রেমীরা ভারতীয়ত্ব নথি যাচাই শুরু করলেন বাঙালিদের গাড়ি থেকে নামিয়ে।
৩০ জুলাই যে এনআরসি নথি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে প্রতিটি পরিবারেই এক জন, দু’ জন করে নাম ইচ্ছাকৃত ভাবে কেটে দেওয়া হল। এঁদের পুনঃআবেদনের দৌড় শুরু হবে ৭ আগস্ট থেকে। এর শেষ কোথায় কে জানে। অবশ্য প্রকাশিত নথিতে দয়া করে বাংলা হরফ ব্যবহার করা হয়েছে, তবে অসমিয়া লিপি পদ্ধতিতেই। তাই সোমা হয়েছে চুমা, শিখা হয়েছে চিকা, সোমনাথ হয়েছে চুমনাথ, জগন্ময়ী দেবী হয়েছেন যোগেন ময়ো। এও বাহ্য। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রাস্তা আটকে বসা খাসি ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যরা আবার ইংরেজি ছাড়া অন্য হরফ চিনতেই পারছে না। এদের কী করে সন্তুষ্ট করা হবে? এরা এ নথিকে গ্রাহ্যই করেনি।
আসামের দেশপ্রেমীরা এখন আদালত চিনেছেন খুব। একেবারে জেলাস্তর থেকে হাইকোর্ট হয়ে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত এঁদের সর্বত্র বিচরণ। রাজ্যের যত্রতত্র যার-তার বিরদ্ধে এফআইআর লিখিয়ে হেনস্থা করার নতুন অধ্যায় শুরু হল বলে। এতে সংবাদপত্রের কলামনিস্ট, সমাজসেবী, সংখ্যালঘু সংগঠক থেকে ভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, কাউকেই রেয়াত করা হচ্ছে না।
সর্বশেষ আশঙ্কা হল, আগামী দিনগুলিতে বাদ পড়ে যাওয়াদের নাম ওঠানোর সঙ্গে সঙ্গে ‘objection’-এর সংস্থান রাখা হয়েছে। এই ইংরেজি শব্দটিকে একেবারে নির্দোষ ভালোমানুষ ভাবলে ভুল হবে। এতে হাজার হাজার দাবি/আপত্তির রাস্তা খোলা রইল। এখন নিজেদের অপছন্দের মানুষকে এনআরসি থেকে বাদ দেওয়ানোর ব্যাপারে নব্য দেশপ্রেমিকদের যে নতুন খেলা শুরু হবে তা নিশ্চিত। এখন দেখা যাক, বাদ পড়ে যাওয়া ৪০ লক্ষ থেকে কত জন ফিরে আসেন আর কত জন থাকেন রাষ্ট্রহীন হয়ে।
Comments are closed.