"If I had the capacity I would recruit requisite number of teachers" recently awarded teacher Debanjan Mukherjee
‘মোবাইলটা দেওয়া যেতে পারে ক্লাস টেন এর পরে” সম্প্রতি পুরস্কৃত শিক্ষক দেবাঞ্জন আলাপচারিতায় এমনি কিছু বলছেন
দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়। নেতাজি বিদ্যাভবন গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। অতি সম্প্রতি আসাম সরকার কর্তৃক প্রদত্ত শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন।শিক্ষকতা ছাড়াও বিশিষ্ট আবৃত্তিকার দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায় আবৃত্তি সহ বিভিন্ন গুণের অধিকারী। যদিও আজকের কথোপকথনে এই পুরস্কার প্রাপ্তির পর তাঁর মনের অনুভূতি থেকে শুরু করে শিক্ষা ব্যবস্থা কিংবা ছাত্র ছাত্রীদের উন্নয়নে কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে গুলোই অগ্রাধিকার পেয়েছে। বরাক বুলেটিনের সহপ্রতিষ্ঠাত্রী অর্চনা ভট্টাচার্যের সাথে এক সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ তুলে ধরা হলো।
এই পুরস্কারটা পেয়ে কি রকম লাগছে ?
এই পুরস্কার পেয়ে একদিকে যেমন ভীষণ ভালো লাগছে, অন্যদিকে তেমনি ভয় হচ্ছে, এই সন্মানের যথাযোগ্য মর্যাদা শেষ দিন পর্যন্ত ধরে রাখতে পারব কিনা। তবে একটা চ্যালেঞ্জ এসে গেছে, যে করে হোক শৈক্ষিক পরিবেশ নিয়ে এবং ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ
করতেই হবে।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা কি সঠিক আছে ? গুণোৎসব নিয়েই বা আপনার মতামত কি ? মিড ডে মিল সম্বন্ধেই বা আপনি কি বলেন?
এ ব্যাপারে আমি বলব যে বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা যে ভাবে সাজিয়ে দিয়েছে তাতে একেবারে ঠিকঠাক ভাবে সাজানো হয়েছে। তবে এখানে একটু সংযোজন করবো, যদি প্রত্যেকটা স্কুলে প্রাথমিক থেকে একেবারে উচ্চতর মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতি মাসে একবার পরিদর্শন হয় এবং স্কুল গুলো ঠিক মতো কাজ করছে কিনা, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কিভাবে পড়াচ্ছেন, ছাত্র-ছাত্রীরা ঠিক মতো আসছে কিনা, স্কুলটা কিভাবে চলছে তার যদি একটা পর্যালোচনা হয় প্রতিমাসে একবার, তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থা আরেকটু উন্নততর হবে বলে আমার ধারণা। আর সরকার যে নতুন নতুন প্রকল্প চালু করেছে সেগুলো যদি ঠিকভাবে কার্যকরী করা হয় তাহলে আমি বলব শিক্ষা ব্যবস্থা মোটামুটি ঠিকই আছে। কারণ সরকার আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তিকে মাথায় রেখে শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন পদ্ধতি গুলো সারা বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই নতুন করে প্রতিনিয়ত সাজিয়ে চলেছে। আমি এক্ষেত্রে বলবো ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এখন পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থা ঠিকই আছে। স্কুলের পরিকাঠামো এখন ঠিক আছে শুধু প্রত্যেকটা স্কুলে শিক্ষক সংখ্যা কম,যারা অবসর নিয়েছেন তাদের জায়গাটা পূর্ণ হয়নি। এ দিকটা একটু ভাবা উচিত।
এরপর উৎসব সম্পর্কে বলব যে গুণোৎসব একটা অত্যন্ত ভালো পদক্ষেপ, উল্লেখযোগ্য চিন্তা ধারা এবং বিজ্ঞানসম্মত একটা পরিকল্পনা। কারণ এর মধ্য দিয়েই প্রতিটি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকা আরো একটু নিজেকে আপডেট করে তোলেন, আরো বেশি নিজেদেরকে নিয়োজিত করেন স্কুলগুলোতে এবং ছাত্রছাত্রীরা উৎসাহিত হয়ে ওঠে নতুন পদ্ধতি পেয়ে। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের গুণ এর বিচার যেখানে করা হয় তার যে পদ্ধতি সেটা স্বাভাবিক কারণেই ভালো হয়ে উঠবে। কাজেই গুণোৎসব একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং আমরা শিক্ষক-শিক্ষিকা তাতে উপকৃত হচ্ছি।
আপনাকে যদি পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়, শিক্ষক হিসেবে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় কি ধরনের পরিবর্তন আনতে চান?
আমাকে যদি পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়া হয় শিক্ষক হিসেবে, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে, তাহলে আমি প্রথম যে কাজটা করব সেটা হলো ছাত্র ছাত্রীদের অনুপাতে শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীর ব্যবস্থা । অর্থাৎ যত জন শিক্ষক শিক্ষয়িত্রীর প্রয়োজন ততজন শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থাটা প্রথমেই মাথায় রাখবো।
দু নম্বর হচ্ছে, প্রতি মাসে বা দুই মাসে বা নিদেনপক্ষে তিন মাসে খতিয়ানটা অর্থাৎ এই তিন মাসে স্কুলে কি কাজকর্ম হল, তার ডেভেলপমেন্ট কতটুকু হলো তার পরিদর্শন এবং একটা পর্যালোচনা করা এবং যেখানে ভাল কাজ হবে তার স্বীকৃতি দেওয়া। যদি ভালো কাজ না হয় তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। পরিবর্তন যদি আনতে লাগে স্কুলে তাহলে সেটা হবে যেটা সরকার ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে, অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার বাধ্যতামূলক করা, এটাকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা এবং অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের সম্পর্ক বজায় রাখা। যে সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা ভালো কাজ করছেন তাদের স্বীকৃতি দিয়ে উৎসাহ দেওয়া। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই সমস্ত ব্যাপারগুলো নিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে কিছু কার্যসূচী রাখব।
ছাত্র-ছাত্রীদের কিছু টিপস দিন যাতে ওরা ভালো ফলাফলের পাশাপাশি মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠতে পারে।
আমি এই জায়গায় প্রথমেই বলবো একজন ভাল মানুষ হয়ে উঠার পথে প্রত্যেকের বাড়ির পরিবেশ কিন্তু সমান থাকে না। যে সমস্ত বাড়ির পরিবেশ ভালো আছে মা-বাবা সচেতন ছেলে মেয়েদের সম্পর্কে, সেখানে আমার বলার কিছু নেই। কিন্তু যেসব বাড়িতে সেইরকম পরিবেশ নেই, মা-বাবার বাইরে কাজ করতে হয়, যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ছেলে মেয়েদের দিকে তাকাতে পারছেন না বা ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন, সেখানে বলব যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদেরকে বাছাই করে যদি একটু ভালো ভালো কিছু বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করে দেন; আমাদের ভারতবর্ষে বহু মহাপুরুষ, মনীষী বহু ভালো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের ভালো ভালো বই আছে, সেগুলো যদি একটু বাধ্যতামূলকভাবে পড়ার ব্যবস্থা করে দেন বা তাদেরকে পড়ার জন্য উৎসাহ দেওয়া হয় বা তারা যদি পড়তে না চায় সেগুলো সম্পর্কে যদি ক্লাসে আলোচনা করা যায় এবং এগুলোকে যদি তাদের সামনে তুলে ধরা হয় এবং ‘ভ্যালু এডুকেশন’ এই শীর্ষকে তাদেরকে অন্তত সপ্তাহে যদি একটা ক্লাস নেওয়া যায় তাহলে ভালো হবে। আমি বলতে চাই যে মানবিক মূল্যবোধগুলো, মানবিক গুণগুলো, যেগুলো আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে রয়েছে সেগুলোকে জাগরিত করে যদি আমরা ব্যবহার করতে পারি তাহলে ছাত্রছাত্রীরা ভালো ফলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠতে পারবে। অভিবাবকরা উদাসীন থাকলে শিক্ষক শিক্ষয়িত্রীদের হালটা ধরতেই হবে, তারজন্য ইন্ডিভিজুয়াল কেয়ার নেওয়া এবং তাদের সঙ্গে একাত্ম হওয়া, ইন্টারেকশন করা, তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করা, তাদেরকে কাছে টেনে নেওয়া, তাদের সমস্যাটা বুঝে নেওয়া খুবই প্রয়োজন। তাদেরকে ভালোবাসলে পরে তাঁরা নিশ্চয়ই ভালো ফলের পাশাপাশি ভালো মানুষ হয়ে উঠবে।
ছাত্র ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে মোবাইল ব্যবহার নিয়ে কিছু বলুন
মোবাইল ব্যবহার সম্পর্কে বলব, ক্লাস টেন পাশ করে গেলে ইলেভেন টুয়েলভ যখন পড়ছে বা কলেজে যখন পড়ছে তখন মোবাইল রাখলে পরে কিছুটা তার লাভ হতেই পারে, যদি সে মোবাইলের সদ্ব্যবহারটা করতে পারে। ছাত্র ছাত্রী মোবাইল ব্যবহার করলে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে যে সে কিভাবে তা ব্যবহার করছে। যদি আমরা অর্থাৎ অভিভাবকরা উদাসীন থাকি তাহলে মোবাইল না দেওয়াই উচিত। অভিভাবকরা যদি সচেতন থাকেন তাহলে মোবাইল দিলে তারা লাভবানই হবে। এখন মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে ছাত্রছাত্রীরা অনেকটাই সাহায্য পেয়ে যাচ্ছে । ফলে নেট ব্যবহার করে আপডেট হতে পারছে ; সেটা ইলেভেন টুয়েলভ বা কলেজে। কাজেই মোবাইলটা দেওয়া যেতে পারে ইলেভেন ক্লাসে ওঠার পরে। ক্লাস টেন পর্যন্ত মোবাইল না দেওয়াই ভালো।
এই পুরস্কার প্রাপ্তি আপনার শিক্ষা প্রদানে কি কোনো পরিবর্তন আনবে?
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই আনবে। এই পুরস্কার পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঠিক করে নিয়েছি আমাকে আরো কিছু কাজ করতে হবে। আমি মোটামুটি একটা পরিকল্পনা নিয়ে নিয়েছি, যে পুরস্কারটা, যে সম্মানটা আমি পেয়েছি তার যথাযোগ্য মর্যাদা যেন আমি রাখতে পারি এবং আগামীতে আর কি কি ভালো কাজ করলে পরে আমার এই পুরস্কারটা তার উপযুক্ততা পাবে। আমি একটা চ্যালেঞ্জ, একটা স্বপ্ন নিয়ে তৈরি হচ্ছি যে আমাকে আগামীতে আরো ভালো কাজ করতে হবে। নতুন নতুন ভাবনা-চিন্তা করতে হবে। যখন ভালো কাজ করলে তার একটা স্বীকৃতি পাওয়া যায় তখন এই সম্মান আমাকে অনেকটাই উৎসাহ যোগাবে, অনেকটাই শক্তি দেবে এবং অনেকটাই আমাকে নতুন ভাবনা চিন্তা করার একটা পরিসর তৈরি করে দেবে। কাজেই এই পুরস্কার আমাকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে, ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে, এইটুকু অন্তত আমি বিশ্বাস করে চলছি।
Comments are closed.