I was attacked for standing against corruption says Subha Prasad
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদারের উপর আক্রমণের পাঁচ দিন অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। এখনো এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং শুভ প্রসাদের ব্যক্তিগত জীবনে বিষয়টি ঘিরে উত্তেজনা রয়েছে। এ ব্যাপারে শুভপ্রসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। হামলাকারীদের পক্ষ থেকে তার সমর্থকদেরও বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যদিও তার সমর্থকরা তার পাশেই রয়েছেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বৃহস্পতিবার নিজের দফতরেই একদল যুবকের হাতে শুভপ্রসাদ আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই দলে দশ থেকে পনেরো জন যুবক ছিলেন বলে জানা গেছে। জনৈক ছাত্রীর ফেলোশিপ নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল। এখানে এক পক্ষের অভিযোগ, ছাত্রীটির ভর্তি উপলক্ষ মাত্র; পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। অভিযোগ মতে, পূর্বে ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে অনেক ধরনের অনিয়ম হতো। কিন্তু বর্তমানে শুভপ্রসাদ স্নাতকোত্তর শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ভর্তির দায়িত্বে থাকার দরুন এবং এ ক্ষেত্রে প্রচণ্ড কড়াকড়ির জন্য কোনো দুর্নীতির সুযোগ ছিল না। তাতে করে অনেকের অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছিল। আর এরই ফলস্বরূপ এই আক্রমণ বলে সূত্রটির দাবি। জানা যায়, অনেকবার শুভপ্রসাদকে হুমকিও দেওয়া হয়েছিল যে তিনি ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে অচলাবস্থার সৃষ্টি করছেন। বারবার ওরা তাকে নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করে। ঘটনাটির পরেও শুভ প্রসাদকে উৎকোচের লোভ দেখিয়ে থামানোর চেষ্টা করা হয়েছিল বলেও সূত্রটি উল্লেখ করে।
ঘটনার দিন ছাত্রীটির ফেলোশিপের বিষয়টি নিয়ে ওই যুবকের দল আবার চড়াও হয়। সূত্র অনুসারে জানা যায়, সিনিয়র সেক্রেটারি শুভপ্রসাদ ও কলেজের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট ছাত্রীটিও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চলে যায়। কিন্তু তারপরও ওই যুবকের দল শুভপ্রসাদকে প্রচণ্ড গালিগালাজ করে। আরো দুজন অধ্যাপকের সঙ্গে লিফটে চড়ার সময় আক্রমনকারী দলটি শুভপ্রসাদকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। টানা হেচড়াও করে। অবস্থা বেগতিক দেখে বাকি কর্মচারীরা এসে ঘটনাটি সামাল দেন।
এ ব্যাপারে আমাদের প্রতিনিধি শুভপ্রসাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, তবে উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এরকম ক্ষেত্রে উপাচার্য নিজেই হস্তক্ষেপ করেন কিংবা পুলিশের সাহায্য নেন। এক্ষেত্রে কোনটাই হয়নি বলে শুভপ্রসাদ জানালেন। এই অবস্থায় প্রসাদ উপাচার্যকে চিঠি মারফত ব্যাপারটি জানান। উপাচার্যের কাছ থেকে কোনো সাহায্য না পাওয়া গেলে তিনি আচার্য তথা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে জানাবেন বলে উল্লেখ করেন।
পত্রপত্রিকায় সংবাদটি পরিবেশন করার পর এখন পরিস্থিতিটা কিছুটা থমথমে বলে জানালেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য স্তরের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসারদের অ্যাসোসিয়েশন থেকেও চিঠি পাঠানো হয়। তাছাড়া, জার্মানিতে পাঠরতা শুভপ্রসাদের মেয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ইমেইল মারফত শুভপ্রসাদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন। শিক্ষক সংগঠন সহ বিভিন্ন সংগঠন তথা শিল্পী-সাহিত্যিকরা ঘটনাটির প্রতিবাদ করেছেন বলে জানা যায়।
শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস কিংবা ঘটনাটির বিষয়ে তিনি দ্রুত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বলে শুভ প্রসাদ যেমন খুশি, একই সঙ্গে বিস্মিত, উপাচার্যের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে।
ঘটনাটি সম্পর্কে শুভপ্রসাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন,” আমার একজন সহকর্মী এ ব্যাপারে বলেন যে, যেখানে একটা মেরুদন্ড দৃশ্যমান, সেখানেই আক্রমণ। আমার মনে হয়, এটাই সত্য। ওরা চায় মেরুদণ্ডহীনতা। এই পৃথিবীতে অনেকেই সৎ, কিন্তু সাহস নেই। অনেকের সাহস আছে কিন্তু সততা নেই। আমি আমার সততাকেই সাহসের সম্বল করে এগিয়ে যেতে চাই।”
Comments are closed.