Also read in

A special interview on the occasion of Unishey May!

‘ধর্মের ঘেরাটোপ ছেড়ে যেদিন আমরা শুধু বাঙালি হয়ে উঠতে পারব সেদিন হবে উত্তরণ’

একটা সময় ছিল যখন ডক্টরেট পাওয়া একটা বড় মাপের সাফল্য বলে পরিগণিত হত। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ডক্টরেট পাওয়ার সংখ্যাটা দিনের পর দিন দ্রুত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খবরটা প্রায় অন্য আর চার পাঁচটা সুখবরের মতই একটা।তবে ব্যক্তিগতভাবে এই সাফল্যের স্বাদ নিশ্চয়ই অনন্য। কিন্তু গবেষণার বিষয় যদি হয় বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন, তখন খবরটা মনটাকে নাড়া দিয়ে যায়। কারণ ৬১ র উনিশ আর তারপরে আরও অনেকগুলো ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের হৃদয়ের বাঁধন যে সুদৃঢ়। তাই ক্যালেন্ডারের এই তারিখটার সঙ্গে জুড়ে আছে আমাদের হৃদয়ের যন্ত্রনা, স্বজন হারানোর ব্যথা। আমাদের গর্ব, আমাদের আত্মাভিমান, আমাদের অহংকার সেই উনিশে মে তে সদ্য ডক্টরেট প্রাপ্ত আনোয়ার বেগম মজুমদারের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছেটা তীব্র হয়ে উঠলো, কারণ তার গবেষণার বিষয় যে ছিল বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনগুলোতে মহিলাদের অংশগ্রহণ। এই প্রথম গবেষণার বিষয় হিসেবে কেউ বেছে নিলেন বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনকে।

এই কথোপকথনের সম্পাদিত অংশ তুলে ধরা হলো।

আপনার গবেষণার বিষয় ছিল বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনগুলোতে মহিলাদের অংশগ্রহণ। আপনি কেন এই বিষয়টাকে গবেষণার জন্য বেছে নিলেন?

মাস্টার ডিগ্রিতে আমি স্পেশালাইজেশন করেছি ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট অর্থাৎ নারীবাদী আন্দোলনের উপর। তাই যখন গবেষণা করার কথা ভাবলাম প্রথমেই মনে হলো নারীবাদী আন্দোলন নিয়েই আমার এগোনো উচিত। আর যেহেতু আমি বরাক উপত্যকার মেয়ে তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই এ অঞ্চলের নারীবাদী আন্দোলন সম্পর্কে জানার আগ্রহ মনের গভীরে ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের উপরই আমার নজরটা ছিল। তাই জানতে চাইছিলাম এই সময়ে বরাক উপত্যকায় নারীবাদী আন্দোলনের রূপরেখা কেমন ছিল। তাই দেখলাম স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ভাষা আন্দোলন একটা বড় মাপের এবং নিঃসন্দেহে একটি সফল আন্দোলন। আর এই আন্দোলন পর্যায় ক্রমে বারবার বরাকের আকাশ বাতাসকে আন্দোলিত করেছে। এই ভাষা আন্দোলনে মেয়েদের অবদানের বিষয়টি যদিও সবাই স্বীকার করেন, কিন্তু মেয়েদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তেমনভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। এই ব্যাপারটাই আমাকে অনুপ্রাণিত করল এই বিষয়টাকে বেছে নেওয়ার জন্য।

এই বিষয়ের উপর গবেষণা করে ডক্টরেট পাওয়ার পর আপনার কেমন লাগছে? পথটা কেমন ছিল?

আমি আপ্লুত। একদিকে সাফল্য আর অন্যদিকে সবার অভিনন্দন, শুভেচ্ছার জোয়ারে আমি যেন ভেসে যাচ্ছি। খুবই ভালো লাগছে।

তবে পথটা মোটেই মসৃণ ছিল না। যারা আজ আমার সাফল্যে হাততালি দিচ্ছে তাদের অনেকেই অনেকবার অনেক প্রশ্ন তুলেছে, আঙ্গুল তুলেছে আমার দিকে। আর এসব হয়েছে আমি একজন মেয়ে বলেই। দুঃখটা এখানেই যে আমি যদি ছেলে হতাম তাহলে এসব কিছুই হতো না। গ্রামেগঞ্জে মেয়েদের অনেক চিন্তাভাবনা করে চলতে হয়।

এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে কি আপনি কোন অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন?

অনেক ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।

আপনার ডক্টরেট পেতে সাত বছর সময় লেগেছে। সেটা কি আপনি এ ধরনের একটা বিষয় বেছে নিয়েছেন তার জন্য?

আপনারা দেখবেন জাতীয় স্তরে কিংবা এমনকি আন্তর্জাতিক স্তরে যেসব ঘটনা বা ইতিহাস রয়েছে সেগুলো নিয়ে ছোটবেলা থেকেই আমরা পড়াশোনা করি। কিন্তু আমাদের আশেপাশের অর্থাৎ বরাক উপত্যকার মানুষের সংস্কৃতি বা সাহিত্য নিয়ে চর্চা করার সুযোগ পাই না। তাই বিষয়টি আমার জন্য হয়ে ওঠে আনকোরা নতুন। কাজেই এক্ষেত্রে আমার অনেকটা সময় চলে যায় বিষয়টাকে অনুধাবন করতে, তথ্যগুলো জড়ো করতে।

তাছাড়া একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে যেখানে মানুষগুলো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চিন্তায় ডুবে থাকে কাজ-কর্ম করে কিভাবে জীবন যাপন করবে, তাদের কাছে এর বাইরে চিন্তা করার মত সামর্থ্য নেই। এরকম একটি পরিবারের মেয়ে হিসেবে এই যুদ্ধময় জীবনের বাইরে গিয়ে গবেষণার মত কাজ করা সত্যি কঠিনসাধ্য।

দ্বিতীয়তঃ আমি কাজ করেছি ভাষা আন্দোলনে নারীদের অবদান সম্পর্কে। এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া কিংবা তথ্য সংগ্রহ করা ততটা সহজ ছিল না। তাই কাজের ক্ষেত্রটা মোটেই তৈরি ছিল না। আমাকে তৈরি করে নিতে হয়েছে।

তারপর যে বিষয়টা আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই সেটা হচ্ছে, যে নারীরা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তাদের অনেকেই বিভিন্নভাবে বা বিভিন্ন কারণে হারিয়ে গেছেন। ভাষা আন্দোলনে নারীদের অবদান হিসেবে আমরা সবাই কমলা ভট্টাচার্যের নাম জানি। কিন্তু তার বাইরেও যে অনেকেই ছিলেন যাদের কথা আমরা অনেকেই জানি না। সেই সব তথ্য সংগ্রহ সময়ের দাবি রাখে।

আমরা জানি, সমাজে মেয়েদের অবস্থা। বিশেষভাবে এই গ্রাম্য পরিবেশে যখন একটা মেয়েকে গবেষণার কাজে বাইরে যেতে হয় তখন অনেকেই অনেকভাবে আঙ্গুল তোলেন।কাজের সময় বেঁধে দেওয়া হয় ১০ টা থেকে ৫ টা। অর্থাৎ পাঁচটার মধ্যেই ঘরে এসে পৌঁছাতে হবে। একদিকে আমার পরিবারে আমিই প্রথম যে গবেষণার কাজ হাতে তুলে নিয়েছি, অন্যদিকে সামাজিক চাপ।

আপনি কি মনে করেন যে বিষয়টি সম্পর্কে আপনি পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছেন আপনার গবেষণার মাধ্যমে? বিষয়টি নিয়ে কি আরও গবেষণার অবকাশ রয়েছে?

প্রাথমিকভাবে আমার কাছে বিশেষ তথ্য ছিল না। গবেষণার খাতিরে সবচেয়ে প্রথমে যা জরুরি ছিল তা হচ্ছে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অংশগ্রহণকারীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ। একজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, তার কাছ থেকে নাম শুনে হয়তো আরেকজনের কাছে পৌঁছেছি। এভাবেই কাজগুলো এগিয়ে চলছিল। এই ক্ষেত্রে সংবাদপত্র থেকে অনেকটাই সাহায্য পেয়েছি। ন্যাশনাল লাইব্রেরি দিল্লি, ন্যাশনাল লাইব্রেরি কলকাতা, যতীন্দ্রমোহন সংগ্রহশালা যাদবপুর থেকে অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে পেয়েছি।

এই কাজে আমার গাইড অধ্যাপিকা শিলা বরা ছাড়াও আমি সাহায্য পেয়েছি অনিমা ভট্টাচার্য, ভাষা আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণকারী হিসেবে যিনি আমাকে সাহায্য করেছেন তিনি হলেন করিমগঞ্জের নিশীথ রঞ্জন দাস, কলকাতার ড: সুকুমার বিশ্বাস, পরিতোষ পাল চৌধুরী ও ওনার স্ত্রী, ইমাদ উদ্দিন বুলবুল, করিমগঞ্জের মন্দিরা নন্দী প্রমুখ।

গবেষণার সময় মনে হয়েছে কি ভাষা আন্দোলন নিয়ে আরও বেশি তথ্যপূর্ণ বই কিংবা প্রবন্ধ বেরোনো উচিত ছিল।

হ্যাঁ, আমি তো মনে করি আরো অনেক বই লেখা উচিত অন্ততপক্ষে ভাষা আন্দোলনে মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়ে।

সঙ্গে এটাও মনে হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে গবেষণার কাজ আরও আগে শুরু হওয়া উচিত ছিল। আপনার আগের প্রশ্নের সূত্র ধরে বলছি বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণার অবকাশ অবশ্যই রয়েছে।বিশাল সমুদ্র! তার মধ্যে কতটুকুইবা আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে! বাকিটা তো রয়ে গেল পরবর্তীতের জন্য।

 

বিষয়টা যেহেতু ভাষা আন্দোলন, তাই আপনার গবেষণার কাজ নিয়ে কিছু জানতে ইচ্ছে করছে।

আমার গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল খুঁজে বের করা, বরাক উপত্যকায় নারীবাদী আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছিল কি না কিংবা কেমন ছিল তার ধারা? কি ধরনের কাজে তারা জড়িত ছিলেন, এই আন্দোলনে সাংগঠনিক দিক দিয়ে মহিলাদের অবস্থান কি ছিল। মহিলাদের এই আন্দোলনে জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে, না স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওরা অংশগ্রহণ করেছেন। এই আন্দোলনে মহিলারা কি পেলেন। তাঁদের কারণে আন্দোলন পরিবর্তিত হলো, না আন্দোলনের কারণে তারা পরিবর্তিত হলেন।
গবেষণার সুবাদে জানলাম যে বরাক উপত্যকার এমন কোন স্কুল কিংবা কলেজ নেই যেখান থেকে ছাত্রীরা এই আন্দোলনে কিংবা আন্দোলনের জন্য মিছিলে অংশগ্রহণ করেনি। যারা মহিলা শিক্ষক ছিলেন তারা সরাসরি যোগদান না করলেও পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছেন। আন্দোলনের প্রত্যেক স্তরে মহিলারা প্রথম সারিতে ছিলেন। আমরা যদি ১৯৬১ সালের ভাষা আন্দোলনের ‘প্রি মুভমেন্ট’ এবং ‘পোস্ট মুভমেন্ট’ দুই ভাগে ভাগ করি, তাহলে প্রি মুভমেন্টে যোগ দেন যারা সচেতন, যারা বুঝতে পেরেছিলেন নিজের মাতৃভাষার অধিকার চলে গেলে কি হতে পারে, যাদের পরিবারের কেউ এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু ‘পোস্ট মুভমেন্টে’ দেখি আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই আন্দোলনে যোগ দেন।এরপর আর নেতাদেরও মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগানোর জন্য কোনো প্রয়াসের প্রয়োজন পড়েনি। যোগদান ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।

এখানে আমি কয়েকজন মহিলার নাম উল্লেখ না করে পারছিনা, যারা এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে এর বাইরেও অনেক মহিলা রয়েছেন যারা এই ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তাদের সবার নাম এখানে তুলে ধরা সম্ভব হলো না। কাছাড়ের আলো পাল চৌধুরী, দীপ্তি চক্রবর্তী, চামেলি কর, ছায়ারানী দাস, লাকি চৌধুরী, শেফালিকা চক্রবর্তী, বিজয়লক্ষ্মী গোস্বামী, মায়া চট্টোপাধ্যায়, আরতী পাল চৌধুরী, প্রতিভা পাল চৌধুরী। করিমগঞ্জ থেকে মন্দিরা নন্দী, রিনা চৌধুরী, শিবানী বিশ্বাস, গীতা দাস, ইন্দুরেখা দাস, অঞ্জলি দাস, পূণ্যপ্রভা নন্দী, অমিও প্রভা রায়, সরযূবালা সেন, কল্পনা দাস, প্রীতি চক্রবর্তী, চারুবালা সেন, রেবা দেব, খায়রুন নেসা মজুমদার, আনোয়ার বেগম। হাইলাকান্দি থেকে গীতা দাস, লক্ষ্মী দত্ত, ভারতী চক্রবর্তী, রেবা রায়, দিপালী সিংহ।

আর এই আন্দোলন থেকে মহিলারা কি পেয়েছেন তা যদি খতিয়ে দেখি, তাহলে এটাকে দু’ভাগে ভাগ করতে হয়। স্বল্পমেয়াদী সাফল্যে অবশ্যই বলতে হয় তাদের জন্যই আমরা আমাদের মাথা উঁচু করে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি। দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যে শিক্ষাদীক্ষা সর্বক্ষেত্রে মেয়েদের পরিবর্তন ঘটেছে। এক্ষেত্রে একটা উদাহরণ দিতে চাই।১৯৭২ সালের ভাষা আন্দোলনকে অনেকের সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সন্ধ্যা রায়। তার কয়েক বছর পর কোন কারণে হাইলাকান্দিতে কমিশনারের পদ শূন্য হয়। সবার আলোচনা ক্রমে এই পদের দায়িত্বভার গ্রহণ করতে সন্ধ্যা রায়কে নির্বাচন করা হয়। তিনি এই পদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করলে ভাষা আন্দোলনে তার সু নেতৃত্ত্বের কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমবার তাকে কমিশনার হিসেবে সিলেক্ট করা হলেও পরে তিনি দুবার ইলেকশনে কমিশনার হিসেবে বিজয়ী হন। এ ধরনের অনেক সাফল্যের কাহিনী রয়েছে।

আপনার মতে আমরা ভাষা শহিদদের উত্তরাধিকারী আমরা হয়ে উঠতে পেরেছি?

কিছু ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই পেরেছি এবং কিছু ক্ষেত্রে আমাদের অনেক ঘাটতি রয়েছে। যেমন ধরুন আমাদের যে পাঠ্যবইগুলো রয়েছে সেখানে লেখাটা অবশ্যই বাংলায় কিন্তু এরমধ্যে কিছু কিছু অসমিয়া শব্দ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, আবার উদাহরণগুলো যে তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো গোয়ালপাড়া কিংবা ধুবড়ি অঞ্চলের। আমার মতে উদাহরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই বরাক উপত্যকার অঞ্চল গুলো তুলে ধরা উচিত ছিল। কারণ এই সূত্র ধরে বাংলা সংস্কৃতির জায়গায় অসমিয়া সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটছে। আমার মনে হয় এগুলো নিয়ে আরো বেশি প্রতিবাদ হওয়া উচিত।

আমাদের সমাজটা এখন রাজনৈতিকমুখী হয়ে উঠেছে। ভাষা, সংস্কৃতি থেকে আমরা বেশি প্রাধান্য দেই ধর্ম, অঞ্চলবাদকে। তবে কিছু সংগঠন এখনো সুষ্ঠুভাবে এসব নিয়ে কাজ করে চলেছে এটাই আমাদের স্বস্তির বিষয়।

আমরা উনিশে মে পালন করি। অন্যদিকে উচ্চতর মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান ডক্টর দয়ানন্দ বরগোঁহাই এখনও মন্তব্য করতে পারেন, আসামে থাকতে গেলে বরাক উপত্যকার মানুষকে অসমিয়া শিখতেই হবে। বলাবাহুল্য আমাদের পায়ের নীচের মাটিটা যতটা শক্ত থাকা উচিত ততটা আজও নয়! কেন? এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের রাস্তা কি?

বাঙালির মধ্যে সামাজিক বিভাজন খুব বেশি। যেমন ধরুন যদি ধামাইল নৃত্য পরিবেশন হয় তাহলে কোন মুসলিম মেয়ে সেটাতে যোগ দেবে না। এমনকি মুসলিম অভিভাবকরাও এটাকে মেনে নেবে না। অন্যদিকে যেমন মুসলিমদের মধ্যে গানের শিক্ষকের অভাব রয়েছে। তাই মুসলিম কোন বাঙালি যদি গান শিখতে চায়, তাহলে তার মধ্যে সংশয় থাকে হিন্দুরা কতটা সহযোগিতা করবে? একদিকে প্রচেষ্টার অভাব, তো অন্যদিকে সহযোগিতা নেই। বৃহত্তর স্বার্থে আমাদের এই ছোট ছোট পার্থক্যগুলো মিটিয়ে ফেলতে হবে।

অসমিয়াদের দেখুন! সব বিভাজন ভুলে ওদের কাছে সবচেয়ে বড় নিজের ভাষা, সংস্কৃতি। ওদের কাছ থেকে আমাদের শেখা উচিত কিভাবে এক হয়ে থাকতে হয়।

আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য কত সম্বৃদ্ধ। তবুও আমরা কেন পিছিয়ে পড়ছি। যেদিন বরাক উপত্যকায় আমরা ধর্মের বিভেদ ভুলে শুধু বাঙালি হয়ে উঠব সেদিন হবে আমার মতে উত্তরণ।

( আনোয়ারা বেগম মজুমদার হাইলাকান্দির সৈদবন্দ দ্বিতীয় খন্ড গ্রামের বাসিন্দা। গ্রামে থাকার দরুন উচ্চশিক্ষা লাভ আনোয়ারা বেগমের জন্য সহজ সাধ্য ছিল না। শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ, পড়াশোনা করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। হায়দ্রাবাদ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে এম ফিল করেন। গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপিকা শীলা বরার তত্ত্বাবধানে তিনি গবেষণা করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল ” ১৯৬১-৭২ সালে বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনগুলোতে মহিলাদের অংশগ্রহণ”।)

Comments are closed.