Also read in

Amidst all the rape stories in media, here's what a mother of a teenage daughter goes through

This emotional piece has been penned in Bengali and we retained it to stay true to the emotions.

মেয়েদের চারপাশে লক্ষণ রেখা টানার বদলে পুরুষরা নিজেদের শুধরে নিলে বাঁচতে পারে নির্ভয়া, আসিফারা

দুদিন আগেই কথা হচ্ছিল আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে। কথাচ্ছলে একটা ঘটনার উল্লেখে আমি থমকে গেলাম। ওর সাত বছরের মেয়ে কোথাও যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। প্রথমে ও সর্ট আর টপ পরে, কিন্তু তার পরেই সে ড্রেসটা পাল্টে অন্য একটা হাঁটু অব্দি জামা পরে নেয়। আমার বান্ধবীর অবাক হওয়ার পালা,কারণ ওই ড্রেসটা ওর খুবই প্রিয় ছিল। খুব স্বাভাবিকভাবে আমার বান্ধবী রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,সর্ট পাল্টালি কেন? কি খারাপ ছিল ওইটার মধ্যে?

“ওইটার মধ্যে কোনকিছু খারাপ নেই মা, কিন্তু ওইটার জন্য যদি কিছু খারাপ হয়ে যায়?”

“মানে?” বিস্ময়ে হতবাক মা!

“ মেয়েরা এমন ড্রেস পরে বলেই আজকাল এত সব কিছু ঘটছে। সবাই বলে মা!”

“কি ঘটছে?”

“কেন? এই যে এত রেপ হচ্ছে?”

“ কিন্তু তুই তো ছোট মা! মাত্র সাত বছর!!”

“ওরা যে সাত মাসের শিশুকেও রেহাই দিচ্ছে না!!

এরপর আমার বান্ধবীর মুখ দিয়ে আর রা টি বেরুলো না! ওদের কথোপকথন শুনে এক দলাপাকানো কষ্ট আমাকে ভাবতে বাধ্য করল, আজকের এই সমাজ আর সমাজের কিছু পাশবিক মনের মানুষের জন্য বাচ্চাদেরকেও আর ওদের মনের সারল্যটুকু নিয়ে বাঁচতে দেবে না?

হ্যাঁ, রেপের পরে ওই বিষয়টির পোষ্টমোর্টমে অনেকেই অনেক বিজ্ঞতার পরিচয়ে অনেক কারণ দর্শান। তার মধ্যে মেয়েদের পোশাক পরিধান অবশ্যই জায়গা করে নেয়। সেটা কতটা সঠিক তা পরে ভাবা যাবে। এই মুহুর্তে বান্ধবীর মেয়ের মনের ভেতরের তোলপাড় আমাকে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। কারণ এখানে পশু মনোভাবাপন্ন কিছু মানুষ জিতে যাচ্ছে। যারা মেয়েদেরকে ভয় পাইয়ে দিতে চায়, যারা প্রমাণ করতে চায় তারাই শক্তিশালী, তারা যা চায় তাই করতে পারে। নাহলে সাত মাস, নয় মাসের দুধের শিশুকে রেপ করে কি পাচ্ছে ওরা? কোন্ শারিরীক তৃপ্তি? শিশুকে ভগবানের সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাই বলা উচিত ভগবান আজ ধর্ষিতা? কিন্তু এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা জরুরি। রেপের পরে পোষ্টমোর্টেম পর্বে আরো একটা বিষয় স্থান পায়, সেটা হচ্ছে রেপিষ্ট কোন সম্প্রদায়ের কিংবা কোন ধর্মের? কিন্তু রেপিষ্টের আবার সম্প্রদায় বা ধর্ম কি? রেপিষ্ট যদি কোন ধর্ম ধারণ করত তাহলে এতটা পাশবিক হতে পারত?

আজকাল অনেকেই সোসিয়্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে স্টেটাস আপলোড করছেন, প্রতিবাদে সামিল হচ্ছেন, প্রতিবাদের সাক্ষী ফটো আপলোড করছেন, প্রোফাইল কালো করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এসবের প্রয়োজন নেই কিংবা এসব কোন কাজে আসবে না সেটা বলছি না। কিন্তু এমন অনেক মেয়ের মা আছেন যারা এতসব কিছু বোঝেন না, মেয়ের বাড়ি ফিরতে একটু দেরি হলে দুরুদুরু বুকে ঘরে ফেরার রাস্তায় চোখ আটকে থাকে, ফোনে বারবার কল করতে থাকেন। আর অপার থেকে মেয়ে যদি ফোন না তুলে তখন শত চিন্তায় ভগবানের নাম নেওয়াই একমাত্র ভরসা! মনে মনে হয়ত অঙ্ক কষতে শুরু করেন, পোশাক আশাক ঠিক ছিল তো? অহেতুক ছোট কাপড় পরে যায়নিতো? কঠিন সত্যিটা হচ্ছে নিজের রুচিতে পোশাক পরিধান নয়, অন্য কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে এক্ষেত্রে। কারণ দোষটা এসে পড়বে মেয়েদের পোশাক নির্বাচনের উপর। তাই যদি হয়, তাহলে দশ মাসের শিশুর এক্ষেত্রে দোষটা কোথায়? সে তো ভাল মন্দ বোঝার গন্ডির বাইরে, শুধু মায়েরই স্পর্শ বোঝে, মায়ের বুকে নিরাপত্তা খোঁজে। ফেসবুকে অনেক পোষ্ট, অনেক উদ্ধৃতি থাকে। একটা উদ্ধৃতি বার বার ঘুরে ঘুরে আসছিল। অনেকেই পড়েছেন। কিন্তু কতজন অস্বীকার করতে পারবেন?

“WAS IT REALLY MY FAULT?” ASKED
THE SHORT SKIRT
“NO, IT HAPPENED WITH ME TOO”.
REPLIED THE BURKHA.
THE DIAPER IN THE CORNER
COULDN’T EVEN SPEAK

মায়ের মন এতসব কথা বোঝে না। মেয়ের ভাল চাওয়া মনটা সমঝোতার ভাষায় সায় দিয়ে ভাবে পছন্দের পোশাকের চাইতে স্বস্তি আর সন্মানের দাম অনেক বেশি। তাই মায়ের ভীত মন মেয়েকেও সমঝোতার ভাষা শেখাতে চায়। প্রতিবাদী মায়ের সংখ্যা হাতে গুনা যাবে। বাকি মায়েদের মনে ভয় এমন পর্যায়ে ঘর করেছে যে মেয়ের স্বাভাবিক জীবনেও মায়েদের চোখ প্রতিনিয়ত অন্বেষণে থাকে, কোথাও কোনও অসঙ্গতি নেইতো? পুরুষবন্ধু নির্বাচন কিংবা বাইরে পার্টিতে যাওয়া সবকিছুতে মায়েদের চিন্তা পিছু ছাড়তে চায় না। পানীয়তে মেশানো ড্রাগসের স্লো পয়সনিং থেকে শুরু করে কত ধরনের মেসেজ ঘুরতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মে। তাই এইক্ষেত্রে যদি মেয়ে মায়ের কথা না শুনে, তাহলে অসহায় মায়ের এক বুক চিন্তা নিয়ে প্রহর গুনতে হয় মেয়ের বাড়ি ফেরার। মায়ের চিন্তা অমূলক তা যেমন বলা যাচ্ছে না তেমনি ওই পশু তুল্য কিছু মানুষের জন্য নিশ্চয়ই সম্পূর্ণ পুরুষজাতি খারাপ হতে পারে না। মেয়েদের স্বাভাবিক জীবন স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে না। অনেক মায়েরা মেয়েকে ক্যারাটে, তায়কন্ডু শিখিয়ে লড়ার জন্য প্রস্তুত করে তুলছেন। প্রংশনীয় উদ্যোগ। সবসময় দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার চলে এসছে। রুখে দাঁড়ানোর জন্য শক্তিশালী হয়ে উঠা খুব জরুরি। কিন্তু যারা দুধের শিশু ওদের কি হবে? কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে আইনজীবি বীথিকা আচার্য বলেছিলেন, বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, যে ঘর শিশুর আশ্রয়স্থল, সেখানেই তারা বেশি নির্যাতিত।
মঙ্গলবার অনেকেই ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে ডি পি কালো রেখেছেন ৮ টা থেকে ৯টা। মহিলারা প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে এটাকে বেছে নিয়েছেন। এটা যদি প্রতিবাদের সঠিক ভাষা হয় তাহলে মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষরা কেন কালো করছেন না তাদের ডিপি? সবাই না হলেও রেপিস্টতো পুরুষই! ওদেরও দায় বর্তায় সমাজকে শুধরানোর।

এধরনের এক একটা ঘটনার পর কিছুদিন ঝড় উঠে দেশজুড়ে। সে ঝড়ে কখনও এক আধ জন অনেক যুদ্ধের পর শাস্তি পায় তার অপকর্মের। বাকি জানা অজানা অজস্র দোষী হাত গলে বেরিয়ে যায়! তাই দ্বিগুণ সাহস সঞ্চয় করে পরের বারের জন্য তৈরী হয় দানবগুলো। আর এই দানবলীলায় যাদের কোনও অপরাধই নেই সেই মেয়েরা কুঁকড়ে থাকে লজ্জ্বায়, অপমানে আর ভয়ে। শুধু তারাই নয় ধর্ষিতার পরিবারের লোকজনও এক ঘরে হয়ে যান অপমান আর গ্লানির দায়ভার নিয়ে। তাই কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পর দুঃখ, ভয় আর এক বুক কষ্ট নিয়ে যদি কোনও মা বাবা ভাবেন “কিভাবে আলগে রাখব আমার এই বুকের ধনকে এই পিশাচের থাবা থেকে?” তাহলে কি উত্তর থাকবে আমাদের কাছে?

তাই রাজনীতির মোড়কে এগুলো ঘটনাকে না বেঁধে, ধর্মকে এর মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে না জড়িয়ে, দল মত ধর্ম সবকিছুর উর্ধে উঠে মানুষের মুখোসধারী ওই পিশাচ রেপিস্টদের বিরুদ্ধে এক হয়ে ওদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হতে পারি না আমরা? কারণ আজকের পাশের বাড়ির মেয়েটি কাল নিজের বাড়ির হবে না ,কে বলতে পারে? মহামারীর রূপ নিয়ে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা এই ধর্ষনের ঘটনাগুলো যদি আমাদের ভেতরটাকে আজও নাড়িয়ে না দেয়, ওদের হৃদয়ছেড়া কান্না আজও যদি আমাদের স্পর্শ না করে তাহলে কি মানুষের মুখোসটা আমাদের মুখেও চড়ানো নেই? দোষীরা শাস্তি না পেলে বাড়তে থাকবে এই তান্ডবলীলা। তাই মেয়েদের জীবনে লক্ষন রেখা টানার আগে ওই রাবণদের শাস্তির ব্যবস্থা করা জরুরি। মেয়েদের জীবনে রাশ টানার বদলে পুরুষরা যদি নিজেদের শুধরে নিতে পারে, তাহলে তো নির্ভয়া, আসিফারা বাঁচতে পারে, ভগবানকে ধর্ষিত হতে হয় না, বুক উজার হয়ে যাওয়া মায়ের সঙ্গে কান্নায় এ পৃথিবীকে সামিল হতে হয় না!

Comments are closed.