Also read in

"Amidst pompous festivities in Vishakapattanam, my heart wants me to be in Barak Valley," Mithu Saha

আয়োজনের ঘনঘটা থাকলেও পুজোতে মন ছুটে যেতে চায় বরাকের মাটিতে:বিশাখাপত্মম থেকে শিলচরের মিঠু সাহা

দক্ষিণ ভারতের বন্দর শহর বিশাখাপত্নম ! অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের অতি পুরাতন ও পরিচিত শহর ! এখানের দূর্গা পুজোগুলোও তাই অনেক দিনের পুরোনো ! পুজো মানেই আরো একটি বছর মা দূর্গার পূজা অর্চনার মাধ্যমে বহুপ্রতীক্ষিত আনন্দ উৎসবে মেতে উঠা ! এবার অবাঙালি জায়গায় পুজো দেখার আনন্দটা আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি !

এখানে তেলেগু ভাষা ভাষী লোকের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর বাঙালি ,উড়িয়া, বিহারি ,পাঞ্জাবি, মাড়োয়ারি, অসমিয়া লোকেরাও রয়েছেন ! ওয়ালটায়ার কালীবাড়ি সIর্বজনীন এবং ইস্ট কোস্ট রেলওয়ে দূর্গা পূজা কমিটি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খুব জাকজমক করে পঞ্চমীর দিন থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দূর্গা পূজার আয়োজন করেছে! দূর্গাপুজোর সাধারণ সম্পাদক বিসি বর্মণের কাছে জানতে চাইলাম, এবারের পুজো তে বিশেষ কি সংযোজন করা হয়েছে ! উত্তরে তিনি জানান, এবার মহিলাদের জন্য রান্নার একটা প্রতিযোগিতা ও জি বাংলা ও সারেগামাপা র সংগীতশিল্পীদের অনুষ্ঠান রয়েছে ! চার দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান ! কচি কাঁচা দের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ,রচনা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান- সব মিলিয়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে আঠান্ন বছরের এই পুরোনো কালীবাড়ির পুজো ! ভিড় হয় খুব বেশি! স্টেশন রোডের পুজোতে গরিব ,দুঃখী ধনী, সবার জন্য তিন চার দিন ধরে প্রসাদ বিতরণ হয়ে থাকে ! নবমীতে ফ্রাইড রাইস, পনির ,চাটনি, পায়েস , পটলের তরকারি সহ রকমারি খাবারের আয়োজন ছিল।এসব স্পনসর করে বড় বড় কোম্পানি ও ব্যক্তিগতভাবে অনেক জন মিলে !সপ্তমীর দিন ছিল অয়েল ইন্ডিয়া কর্পোরেশন এর উদ্যোগে সবার জন্য ভোগ ! এই পুজোর কাভারেজ দেয় ইটিভি তেলেগু !বাঙালি অবাঙালি সবাই মিলে এই পূজাটা খুব আনন্দ উল্লাসের সঙ্গে পালন করে থাকেন !

এছাড়া ও মুখ্য পুজোগুলোর মধ্যে “উৎসব” নামের সংস্থা আট বছর ধরে পুজো করে চলেছে ! এই পুজোতে কমিটির সদ্যসদের নিজস্ব টাকা দিয়ে হল ভাড়া করে একটু অন্য রকমভাবে পুজো করা হয়। অনেকের অভিমত, ভারতের বাইরে বিদেশে যেমন পুজো অনুষ্ঠিত হয়, এ পুজোর ধাঁচটা সেরকমই কিছুকটা। কমিটিতে যারা রয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ইঞ্জিনিয়ার না হয় ডাক্তার জানালেন হিরণ্ময় বাড়াই। হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সংস্মৃতিক অনুষ্ঠানে ভরে উঠে এই পুজো !এই পুজোর বিশেষ আকর্ষণ এবার ‘উৎসব’ এর নিজের সদ্স্যদের শিশু শিল্পীদের ও বৃদ্ধ দের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ! সপ্তমীতে ছিল বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের “কর্ণ কুন্তী “সংবাদ এর নৃত্য রূপ !এই পুজোতে বাঙালির সঙ্গে মাড়োয়ারি , তেলেগু সবাই একসঙ্গে পুজোর আনন্দে মেতে উঠেন। নাচে গানে, ধনুচি নাচে , বিভিন্ন স্বাদের রান্না, খাওয়া দাওয়া -সব মিলিয়ে সকাল থেকে রাত অব্দি খুব আনন্দে পুজোর দিনগুলো ভরে উঠে !

বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের পুজো প্রায় একশো বছর পুরনো! জানালেন উদ্যোক্তারা ! তাছাড়া তেলেগু জনসাধারণের উদ্যোগে এখানে পাড়ায় পাড়ায় অষ্ট ভূজা দূর্গা মূর্তি পূজা করে খাওয়া দাওয়া ,কুমারীদের বসিয়ে ভোগ খেতে দেওয়ার মাধ্যমে নবরাত্রি উৎসব পালন করে থাকেন !

এছাড়া স্টিল প্লান্ট পোর্ট এর কর্মচারীদের উদ্যোগেও খুব বড় করে পুজো হয়েছে এই বছর !
রামকৃষ্ণ মিশন বিচ রোড এর দুর্গাপূজাটা নিয়ম মেনে পালিত হয়ে থাকে। ভজন, মায়ের বন্দনা, অঞ্জলি , আরতি ,খিচুড়ি ভোগ সব মিলিয়ে খুবই জনপ্রিয় মিশনের দুর্গাপূজা।

আয়োজনের অভাব নেই। রয়েছে আনন্দের পসরা।কিন্তু তবু যেন একটা পিছুটান। মন ঘোড়ায় চড়ে ছুটে যেতে চায় বরাকের মাটিতে। শিলচর বিশেষভাবে উধারবন্দের পুজোর কথা বারবার মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছিল পুজোর প্যাণ্ডেলগুলো ঘোরার ফাঁকে। মনে করিয়ে দিচ্ছিল আমার জন্মস্থানের পুজোগুলোর কথা, মন বারবার ছোটবেলার পুজোগুলোর সৌরভ খুঁজে বেরিয়েছে। তবু দূর্গাপূজা তো দূর্গাপূজাই, তাই পরক্ষণেই আবার আনন্দে মেতে উঠেছে মন।কামনা করছি এবছরের দূর্গাপুজো সবার জীবনে নিয়ে আসুক আনন্দ ও খুশির জোয়ার !

মিঠু সাহা ঘর সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে গৃহশিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি তাঁর প্রবাসে এবারের পুজোর অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন।

Comments are closed.