Also read in

Bud Club misses ticket to finale by dropping Mura Singh's catch; Captain Thakuri took Royals to challenge Gladiators for BPL

 

ম্যাচ তখন পেন্ডুলামের মত দুলছে। একদিকে মনি শংকর মুরা সিংয়ের উপর সমস্ত আশাভরসা টিকে রয়েছে হাইলাকান্দি গ্ল্যাডিয়েটরসের। তো উল্টোদিকে গুয়াহাটি বাড ক্লাবের ক্রিকেটাররা নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন। তাদের দুরন্ত বোলিং ও ফিল্ডিং এর জন্য গ্লাডিয়েটরসকে প্রতিটি রানের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে। এর মধ্যেই আস্কিং রেট আটের উপরে চলে গেছে। ফলে প্রচন্ড চাপে পড়ে গিয়েছে গ্ল্যাডিয়েটরস। ঠিক এমন এক পরিস্থিতিতে বড় শট হাঁকাতে গিয়ে মিস টাইম করে ফেললেন মনি শংকর। লং অন থেকে ছুটে এলেন ফিল্ডার নিহার ডেকা। এর আগে পর্যন্ত দারুন ফিল্ডিং করছিলেন তিনি। তবে ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ভুল করে বসলেন। মনি শংকরের ক্যাচ হাতছাড়া করলেন ডেকা। সেই সঙ্গেই ক্রিকেট প্যাভিলিয়ন থেকে এক দর্শক চিৎকার করে উঠলেন, ‘এই ক্যাচের সঙ্গে ম্যাচটাও বুঝি ছেড়ে দিলো বাড ক্লাব।’ সত্যি, দিনের শেষে কিন্তু সেই দর্শকের কথাই মিলে গেল। ত্রিপুরা তারকা মণিশংকর একার হাতেই গ্ল্যাডিয়েটর্সকে ফাইনালের টিকিট এনে দিলেন।

সত্যি, রবিবাসরীয় বিকেলে শিলচর ভেটেরন ক্রিকেটার্স ক্লাব আয়োজিত বরাক প্রিমিয়ার লিগের (বি পি এল) দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচটি ছিল ‘পেসা উসুল’। এমন একটা লড়াইয়ের শেষে স্কোরবোর্ডে বাড ক্লাব পরাজিত হলেও সত্যি কারের অর্থে কিন্তু তারা হারিনি। হাতে সীমিত রানের পুঁজি নিয়েও গুয়াহাটির দলটা যা ফাইট দিল তা স্থানীয় দর্শকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছে।

প্রথম ম্যাচে যারাই হাইলাকান্দি গ্ল্যাডিয়েটরসের বিস্ফোরক ব্যাটিং দেখেছেন, তাদের হয়তো আজকের স্কোরশিটে বিশ্বাস হবে না। কিন্তু এটাই ক্রিকেট। আর এই খেলাটার বিশেষত্ব হচ্ছে, রোজ রোজ এখানে কেউ হাফ সেঞ্চুরি অথবা সেঞ্চুরি করে না। তা না হলে যে দলটা প্রথম ম্যাচে প্রায় ৩০০ রান করে নিয়েছিল তাদের ১২৫ রানের একটা টার্গেট চেজ করতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হতো না।

এদিন সতীন্দ্র মোহনদেব স্টেডিয়ামে টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাড ক্লাব। তবে তাদের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান নিহার ডেকা। তবে তারা সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় রাজ্যের তারকা ক্রিকেটার স্বরূপম পুরকায়স্থ ফিরে যাবার পর। দুটি দুরন্ত শটে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে শুরু করেছিলেন স্বরূপম। তবে অসমের প্রাক্তন রঞ্জি তারকাকে অসাধারণ স্টাম্পিং করে সাজঘরে ফেরান ত্রিপুরা রাজ্য দলের উইকেট কিপার উদয়ন ঘোষ। এটা যেন বাড ক্লাবের ছন্দটা বিগড়ে দেয়। তাদের ব্যাটিংয়ে সেই ‘ইন্টেনই’ ছিল না। মিডল অর্ডারে ঋতুরাজ বিশ্বাস (৩৬ বলে ২৩) খুবই স্লো ব্যাটিং করলেন। নিয়মিত স্ট্রাইকরটেট করতে পারছিলেন না তিনি। একই অবস্থা ছিল ত্রিনাথ রাওয়ের (২৬ বলে ১৬)। তবে লোয়ার মিডল অর্ডারে কৌশিক গিরি ২৮ রানের কেমিও খেলে দেন। যা তাদের ৯ উইকেটে ১২৪ রানে পৌঁছে দেয়। গত ম্যাচের হিরো এরিক রায় এদিন খাতাই খুলতে পারেননি। গোটা ইনিংসে বাড ক্লাবের একজনও বড় শটের চেষ্টা করেননি। তাদের ইনিংসে ছক্কা মার ছিলো শুধু একটি। তাও আসে ইনিংসের একেবারে শেষ ওভারে। দুটি করে উইকেট নেন মণিশংকর মুরা ও সৌরভ দাস।

রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ঝড়ের বেগে করে গ্ল্যাডিয়েটর্স। দুই ওপেনার কৃষ্ণেন্দু দাস ও উদয়ন বোস যেন ম্যাচটা দ্রুত শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে নেমে ছিলেন। বিশেষ করে অধিনায়ক কৃষ্ণেন্দু তো ছিলেন তাড়াহুড়োর মধ্যে। ইনিংসের প্রথম বলেই চার দিয়ে শুরু করেন তিনি। মারেন একটি বিশাল ছক্কা ও। তবে এভাবে বেশিদূর এগোতে পারেননি কৃষ্ণেন্দু (১৭)। প্রথম ম্যাচে ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন প্রীতম দেবনাথ। কিন্তু দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কেবল ৪ রান করে ফিরে যান তিনি। এর মধ্যেই দু-দুবার জীবন দান পেয়েছিলেন তিনি। সাত ওভারের শেষে হাইলাকান্দি দলটির স্কোর ছিল এক উইকেটে ৫২। কিন্তু এরপরই ম্যাচের রং বদলাতে শুরু করে। বোলিংয়ে আসেন অফ স্পিনার কৌশিক গিরি। রানের গতিতে যেন একেবারে ব্রেক লাগিয়ে দেন তিনি। দারুন ছন্দে থাকা উদয়ন বোস (৪০) ফিরে যেতে প্রচণ্ড চাপে পড়ে যায় গ্লাডিয়েটরস। মিডল অর্ডারে ব্যর্থ হন তারকা রেহান জামিল মজুমদার (৪)। একদিক থেকে নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট পড়লেও এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন মনি শংকর। শেষ পাঁচ ওভারে তো খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তার দুটি বিশাল ছয় আছড়ে পড়ে স্ট্যান্ডে। অবশেষে এক বল বাকি থাকতে জয় লক্ষ্যে পৌঁছে যায় গ্ল্যাডিয়েটরস। মণিশংকর অপরাজিত থাকেন ৪২ রানে।

এর আগে প্রতিযোগিতার প্রথম সেমিফাইনালে শিলচর লায়ন্স কে ৫ উইকেটে হারিয়ে দেয় রয়াল চ্যালেঞ্জার শিলচর।

ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে ৫ উইকেটে ১৩৮ রান করে লায়ন্স। দুরন্ত অর্ধশত রান করেন জেলা দলের তারকা রাজু দাস (৫০)। ১২.৪ ওভার শেষে তাদের স্কোর ছিল এক উইকেটে ৮২। কিন্তু মিডল অর্ডারে ব্যর্থতায় একটা ভালো অবস্থানে থেকেও বড় স্কোর করতে ব্যর্থ হয় লায়ন্স। বিকাশ চৌধুরী (৩৬), রোমারিও শর্মা (১১), ফাহিম নাজ (১১) ও বিভূ ত্যাগি (১৪) রান করেন।

জবাবে দু ওভার বাকি থাকতেই ৫ উইকেট হারিয়ে প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় রয়াল চ্যালেঞ্জার। স্কোরবোর্ডে রয়াল চ্যালেঞ্জার এর জয় সহজ মনে হলেও একটা সময় কিন্তু চাপে পড়ে গিয়েছিল তারা। তবে রাজ্য দলের তারকা তথা লোকাল বয় অভিষেক ঠাকুরির (অপরাজিত ৪৫) দৌলতে অবশেষে সহজ জয় ছিনিয়ে নেয় চ্যালেঞ্জার। ভালো ইনিংস খেলেন মায়ানক রাওয়াত (৩৫) ও ইয়াসির আলী (২৯)। তবে ওপেন করতে নেমে ব্যর্থ হন সোমিক দাস। ৩ উইকেট নেন আয়ুস রয়।

সোমবার ফ্লাড লাইটের আলোয় মেগা ফাইনালে মুখোমুখি হবে হাইলাকান্দি গ্ল্যাডিয়েটরস রয়াল চ্যালেঞ্জার শিলচর।

Comments are closed.