Also read in

Chandradhar Das had to leave this world with the label 'foreigner', People's representatives are silent about the rights of Bengalees : Barak Banga

রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষাগোষ্ঠী হচ্ছেন বাঙালিরা; জনসংখ্যা প্রায় ৯০ লক্ষ। অথচ পদে পদে বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করে চলেছে রাজ্য সরকার। মুখে এই ভাষার গুনগান করলেও অধিকার দেবার ক্ষেত্রে শুধু বঞ্চনাই আসে। এক্ষেত্রে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন বাঙালির ভোটে বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়া প্রতিনিধিরা। ফলে ১০৪ বছর বয়সে নাগরিকত্ব পাওয়ার শেষ ইচ্ছাটুকু পূরণ না করেই পৃথিবী ছাড়েন চন্দ্রধর দাসের মত লোকেরা। যদি এখনও নিজেদের অধিকার আদায়ের চেতনা না আসে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনেকেই এই বঞ্চনার ইতিহাসের অংশ হবেন, এমনটাই অভিমত বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের।

বিভিন্ন দাবি নিয়ে সোমবার বরাক উপত্যকার তিন জেলায় সম্মেলনের পক্ষ থেকে ধর্না কর্মসূচি পালন করা হয়। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের উদ্দেশ্যে লিখিত বার্তা প্রেরণ করা হয়।

এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ শিলচরে ক্ষুদিরাম মূর্তির সামনে ধর্না কর্মসূচি শুরু হয়। উপস্থিত সদস্য এবং সাধারণ মানুষ সরকারীভাবে ক্রমাগত বাংলা ভাষাকে কোনঠাসা করার ব্যাপারে অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। ধর্না কর্মসূচি চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে লেখা স্মারকলিপিটি অতিরিক্ত জেলা শাসক রাজীব রায়ের হাতে তুলে দেন বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি সৌরিন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য, কাছাড় জেলা সমিতির সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অমূল্য কুমার পাল, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গৌতম প্রসাদ দত্ত, জেলা সমিতির সংস্কৃতি সম্পাদক সব্যসাচী পুরকায়স্থ ও আঞ্চলিক সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা।

এরপর জেলাশাসক কার্যালয় চত্বরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের কাছে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন তারা । বলেন, ‘রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী বাঙালিকে সংবিধান প্রদত্ত অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। অসম ভাষা আইন অনুসারে বিধিব্যবস্থাকে লংঘন করে নিযুক্তির পরীক্ষায় অসমীয়া ভাষাজ্ঞান, বরাকের কর্মপ্রার্থীদের জন্যও বাধ্যতামূলক করে এবং জাতিবিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে নিযুক্তির ক্ষেত্রে বাঙালিকে ক্রমাগত বঞ্চিত করা হচ্ছে। কার্যত এই রাজ্যে সরকারি নিযুক্তির ক্ষেত্রে বাঙালির দুয়ার প্রায় রুদ্ধ করে দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অন্যদিকে নাগরিকত্ব ইস্যুতে এযাবত দেওয়া সরকারি প্রতিশ্রুতিগুলো রূপায়ণ হয়নি। ২০১৫ সালের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ছিন্নমূল উদ্বাস্তু আশ্রয় সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি এই রাজ্যে এখন পর্যন্ত কার্যকর না করে এবং এক বছরেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হবার পরও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিধি প্রণয়ন না হওয়ায় বিদেশি অজুহাতে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে। এই বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের আজকের প্রতিবাদ।’

ধর্না কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি সৌরিন্দ্র কুমার ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইমাদ উদ্দিন বুলবুল, কাছাড় জেলা সমিতির সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী, শিলচর আঞ্চলিক সমিতির সভাপতি সঞ্জীব দেব লস্কর , সহ-সভাপতি অমিত শিকদার ও সীমান্ত ভট্টাচার্য ,সাধন পুরকায়স্থ, সুজাতা বণিক সহ অন্যান্যরা। তাদের বয়ান, ‘বরাক উপত্যকা এবং অসমের অন্যান্য এলাকায় বসবাসকারী বাঙালি সম্প্রদায় সরকারের চোখে বরাবরই উপেক্ষিত। নানা সরকারী কাজ, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ইত্যাদিতে বাংলার উপস্থিতি ক্রমশ খাটো করছে রাজ্য সরকার। বিভিন্ন ভাষার উন্নতির ক্ষেত্রে যেটুকু সরকারি অনুদান আসে, ন্যূনতম সেটাও পাচ্ছেনা বাংলা ভাষা । অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বারবার সমন্বয়ের কথা বলছেন। তবে সরকারের কার্যকলাপ একেবারেই সমন্বয়ের বার্তা দেয় না।’

তারা আরও বলেন, ‘বহুজাতিক এবং বহুভাষিক এই রাজ্যে সুকৌশলে সর্বক্ষেত্রে বাঙালিকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে। ফলে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। এনিয়ে সরকারের দরবারে দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। অসম ভাষা আইন লংঘন করে বরাকে বহু সরকারি বিভাগ তাদের কর্মসূচি রূপায়ণ করছে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে স্থানীয়ভাবে নিযুক্তি দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা এখনও প্রতিশ্রুতির পর্যায়েই রয়ে গেছে। চন্দ্রধর দাসের মত শতবর্ষ পেরোনো ব্যক্তিদেরও বিদেশি নাগরিক তকমা নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হচ্ছে। ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে এই শীতেও উপযুক্ত উপকরণ না দিয়ে চলছে চরম অমানবিক আচরণ। সরকারি কর্পাস ফান্ড থেকে বাঙালি ছাড়া অন্যসব জনগোষ্ঠীকে ডেকে নিয়ে গিয়ে অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। ১৯মে ভাষা শহীদ দিবসের দিনটি উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষার রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এক্ষেত্রে দৃষ্টি আকর্ষণের পরও নির্বিকার ভূমিকায় রয়েছেন। বিধানসভায় বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এসব বিষয় উত্থাপন করলেও উপত্যকার অন্য প্রতিনিধিরা একেবারেই মৌন ভুমিকা পালন করছেন।’

এদিন ধর্নার শুরুতে উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন আঞ্চলিক সমিতির সম্পাদক উত্তম কুমার সাহা। সম্মেলনের কেন্দ্রীয় সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাছাড় জেলা সমিতি ও শিলচর আঞ্চলিক সমিতি যৌথভাবে এই ধর্না কর্মসূচির আয়োজন করেছিল।

Comments are closed.