Division cannot bring peace, Separate Barak is not a solution: Professor Nandini
এই পৃথিবীতে কোনো মানুষই অবৈধ ব্যক্তি বলে বিবেচিত হতে পারে না। শরণার্থী সমস্যা বিশ্বব্যাপী এবং সর্বত্রই শরণার্থীরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে বসবাস করছেন। বাস্তুহারা এইসব লোকেরা গভীর মর্ম বেদনা ও নিরাপত্তার অভাব অনুভব করেন ।আসামের বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন বিভাগের প্রধান অধ্যাপিকা নন্দিনী ভট্টাচার্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এই কথাগুলো বলেন “আসামের বর্তমান অবস্থা ও আমাদের কর্তব্য ” শীর্ষক আলোচনা সভায়।
২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ওপিনিয়ন মুভার্সের ( সোস্যাল মিডিয়া গ্রুপ ) উদ্যোগে শিলচরে দ্বিজেন্দ্র মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই প্রসঙ্গে তিনি দার্শনিক ক্যান্ট , হেগেল ও রবীন্দ্রনাথের জাতিয়বাদের উল্লেখ করেন । তিনি বরাক পৃথকিকরণ, সমস্যার সমাধান নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেন । তাঁর মতে বিভাজন স্থায়ী শান্তি আনতে সক্ষম নয় , বরং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
সভায় মতামত ব্যক্ত করেন আসাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক দিব্যেন্দু দাস , অধ্যাপক অনিন্দ্য সেন চৌধুরী, সাংবাদিক পীযূষ দাশ, শিক্ষাবিদ সুমিত্রা দত্ত ,অধ্যাপক রমাপ্রসাদ বিশ্বাস সমাজকর্মী গৌরী দত্ত বিশ্বাস, শিক্ষাবিদ দিলীপ দে , শিক্ষক নেতা কৃষ্ণেন্দু রায়, শিক্ষিকা মধুছন্দা দে রায় , গ্রুপ এডমিন দীপক সেন গুপ্ত, সমাজকর্মী অরবিন্দ রায ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জয়শ্রী ভূষণ প্রমুখ ।
মতবিনিময় সভার সঞ্চালক শিক্ষাবিদ দিলীপ দে বরাকে অসমিয়া আগ্রাসনের সাথে মেরুকরণের রাজনীতিতে নাগরিকত্ব বিলের উল্লেখ করেন।অধ্যাপক অনিন্দ্য সেন চৌধুরী নাগরিকত্ব বিলের স্ববিরোধিতা ও অসারত্ব ব্যাখ্যা করেন ।
অধ্যাপক দিব্যেন্দু দাস বরাক উপত্যকার সামগ্রিক সমস্যার উপর ইংরেজি ভাষার প্রবন্ধ, সাহিত্যের অপ্রতুলতা ব্যক্ত করে এই বিষয়ে অধিক চর্চা ও সর্বভারতীয় পর্যায়ে বিষয়টি প্রচারে আনার জন্য ইংরেজি ভাষার রচনার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন ।
পীযূষ দাশ নাগরিকত্ব বিলের ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হিন্দুদের সমস্যার বিষয়ে আলোকপাত করেন ।
শিক্ষাবিদ সুমিত্রা দত্ত অসমিয়া গণ মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান ভাষিক সাম্প্রদায়িক প্রচারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন । সেই সাথে তিনি বরাক উপত্যকার জনগণের সংঘবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেন । সমাজকর্মী গৌরী দত্ত বিশ্বাস আসামের বাঙালিদের অস্তিত্বের সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বরাকে আশানুরূপ প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে না উঠায় গভীর ক্ষেদ প্রকাশ করেন।
কৃষ্ণেন্দু রায় নাগরিকত্ব বিলে নানা অসঙ্গতির ব্যাখ্যা করেন। মধুছন্দা দে রায় শিক্ষা জগতে বরাকে বাংলা স্কুলে অসমিয়া ভাষী শিক্ষক নিয়োগের ফলে শিক্ষাদানে বাস্তব সমস্যার কথা উল্লেখ করেন । সেই সঙ্গে তিনি এর ফলে স্থানীয় শিক্ষিত যুবক যুবতীর চাকরির ক্ষেত্রে বঞ্চনায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেন ।
সভার আহ্বায়ক দীপক সেনগুপ্ত সংবিধান বহির্ভূত শব্দ ভূমিপুত্র নিয়ে রাজনীতির তীব্র বিরোধিতা করেন । তিনি বলেন, বাঙালিরা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আসামের ভূমিপুত্র এবং তাদের ভূমিপুত্র হিসেবে গণ্য না করা এক গভীর ষড়যন্ত্র । অরবিন্দ রায বলেন যে আসামের বর্তমান পরিস্থিতি জাতিয়তাবাদ বনাম হিন্দুত্ববাদের লড়াইয়ের ফল, যাতে হিন্দু বাঙালি বিদ্বেষ জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চলছে । বর্তমানে আসাম দুই ভাগে বিভক্ত । বরাকবাসীর সমস্যার সমাধান একমাত্র বরাক পৃথকিকরণের দ্বারাই সম্ভব বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন । কারণ বর্তমানে বরাকবাসী ঔপনিবেশিক শাসনে আছেন।
সভার শেষে সঞ্চালক দিলীপ দে বলেন,আসামের হিন্দু বাঙালিদের টার্গেট করে একঘরে করার চেষ্টা চলছে । তাই বরাক উপত্যকার হিন্দু বাঙালিদের অন্যান্য ধর্মীয় ও ভাষা গোষ্ঠীর মানুষের সাথে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন ।
Comments are closed.