Also read in

Do Visit Haflong to get peace of mind

একদিন এক মেঘবালিকা প্রশ্ন করলো কৌতুহলে, “এই ছেলেটা নাম কিরে তোর?”
পাহাড়ের গায়ে সাদা তুলোর মতো মেঘগুলোর সামনে দাঁড়ালেও কোনও মেঘ বালিকা কিন্তু এমন প্রশ্ন করল না। তবু মনে হচ্ছিল, মর্ত্য ছেড়ে কোথায় কোন্ স্বর্গ রাজ্যে এসে পড়েছি! পাহাড়ের গায়ের সবুজ যেন উধাও! মেঘের সাদা তুলতুলে শরীরটা যেন ঝাপটে ধরেছে বজ্রকঠিন পাহাড়কে। “মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে, পাহাড় ছিল মেঘের ঢেউ-জলে।” পাহাড় সমৃদ্ধ হাফলং এ দাঁড়িয়ে প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যেতে যেতে পূর্ণেন্দু পত্রী’র “সেই গল্পটা” কিংবা জয় গোস্বামীর “মেঘ বালিকা” বড্ড বেশি মনে পড়ছিল। ইচ্ছে করছিল মেঘের কাছে গিয়ে আলতো করে বলে আসি, “তোমার জন্য লিখতে পারি এক পৃথিবী”। না সেরকম কিছু বলা হলো না। সঙ্গীদের হাতের টানে এক ঝটকায় মেঘের আর কবিতার দেশ থেকে বাস্তবে ছিটকে পড়লাম। তা হলেই বা কি! প্রকৃতির সৌন্দর্যে আপাদমস্তক ভালো লাগায় ডুবে রইলাম। টানা তিন দিন । এ যেন কিছুটা নেশার মত। নেশা যত বাড়বে ভালো লাগার মাত্রাও ততই বাড়তে থাকবে। আর এতে ডুবে বুঁদ হয়ে যাওয়ার মধ্যেই আনন্দ। আশেপাশের কোলাহল, হট্টগোল, কথাবার্তা কিছুই কানে ঢুকছে না। তবে বেশি সময় নিজের মধ্যে নিজেকে আটকে রাখা সম্ভব হলো না।

দলের অন্যরা এগিয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বাস্তবের পথ ধরে হাঁটতে হল। সবার সঙ্গে পথচলাতেও অনেক আনন্দ! একরাশ ভালো লাগা! গোড়া থেকে বলাই শ্রেয়। কারণ আমার মত যারা ভ্রমণপিপাসু, তারা হয়তো এই লেখাটা পড়ার পরই বানিয়ে ফেলতে পারেন ছোট্ট একটা সফরের ছক।

প্রথমেই বলা ভালো, এই হাফলং সফরের সঙ্গীরা ছিলেন আমার কাছের এবং ভালোবাসার সব মানুষ। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে তাই সফরটা ভালো লাগায় ভরে গেছিল। আমরা দলে বেশ ভারি ছিলাম। ছোট-বড় মিলিয়ে ১৬ জনের দলে ছিল পাঁচমেশালি ভাব।

সময় বাঁচাতে ইদানিং উড়োজাহাজকে প্রাধান্য দিলেও ট্রেনে চড়ার আনন্দটা তুলনাহীন! তাই আমরা ট্রেনকে বেছে নিয়েছিলাম হাফলংয়ে পৌঁছার মাধ্যম হিসেবে। সেই সাত সকালে হুড়োহুড়ি করে ট্রেন ধরার মধ্যে একটা চাপা রোমাঞ্চ কাজ করে। তাই ট্রেনে চেপে বসার পর স্বস্তিটা যেন পিপাসায় কাঠ হয়ে যাওয়া গলায় ঢকঢক করে জল খাওয়ার মত।

আমাদের পাঁচ পার্টির মধ্যে তিন পার্টি শিলচর রেল স্টেশনে চেপে বসলো শিলচর-গৌহাটি ট্রেনে। বাকি দুই পার্টি বদরপুর থেকে আমাদের সঙ্গী হলেন। বদরপুর স্টেশনে ট্রেন থামতেই আমরা নেমে পড়লাম তাড়াতাড়ি। ষ্টেশনে চা খাওয়ার মজাটা কি আর ছাড়া যায়? এক অদ্ভুত মন ভালো লাগা সকালে স্টেশনের চা আর সঙ্গে বেকারির সেই গোল গোল বিস্কুট ভালো লাগার পারদটাকে উপরের দিকে ঠেলছিল। ট্রেনের ষোলটা সিট আমাদের দখলে ছিল বলে বোধহয় “মামার গাড়ি” কথাটার সঙ্গে এক যোগাযোগ খুঁজে পাচ্ছিলাম। হৈ হুল্লোড়, গল্প-গুজব আর মুড়ির মোয়া, নারকেলের নাড়ুতে সফরটার সূচনা খুবই ভালো হয়েছিল। সেই সূচনায় ভালোলাগা পাড়ি জমাচ্ছিল পাহাড় লাইনে ট্রেন চলার মজার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। পাহাড়ের গা বেয়ে ট্রেন ছুটছিল যেন সর্পিল গতিতে। পাহাড়ের কোল বেয়ে যখন ট্রেনটা ছুটছিল জানালায় চোখ রেখে মনে হচ্ছিল রঙের তুলিতে নিখুঁত ভাবে সেজে উঠেছে প্রকৃতির ক্যানভাস। পরপর অনেকগুলো গুহা পার হয়ে যাওয়ার সময় রোমাঞ্চ অনুভূত হচ্ছিল। গুহাগুলোর ভেতরে লাইটের ব্যবস্থা থাকায় এখন আরো সুন্দর দেখায়। পাহাড় লাইনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে দুচোখ জুড়িয়ে পৌঁছলাম হাফলং স্টেশনে।

কিন্তু হাফলং স্টেশনে পৌঁছে সব কিছু হার মেনে গেল অন্তরের অনুভূতির কাছে। হাফলং’য়ে পা দিয়েই বুঝতে পারলাম কেন এই শহরটাকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মিনি সুইজারল্যান্ড বলা হয়! মনে হল ছবির শহরে পা দিলাম! হাফলং একটি ডিমাসা শব্দ, যার অর্থ পিঁপড়ার পাহাড়। প্রথম দর্শনে ভালবাসার অমোঘ বাঁধনে জড়িয়ে পড়লাম হাফলং নামের ছোট্ট, পাহাড় সমৃদ্ধ শহরের সঙ্গে। দু দলে বিভক্ত হয়ে দুটো এসইউবিতে চড়ে যখন আমাদের হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম তখন রাস্তায় যেতে যেতে মনে হচ্ছিল এ কোন্ কল্পনার রাজ্যে পা দিলাম। উঁচু-নিচু পথে যেতে যেতে মেঘ গুলোর এদিক ওদিক ছুটোছুটিতে মনে হচ্ছিল মেঘের দুষ্টুমিতে পা মেলাই। নয়ত হাত বাড়িয়ে মেঘগুলোকে ছুঁয়ে ফেলি! প্রকৃতি যেন এই ছোট্ট শহরটাতে দুহাত ভরে উজাড় করে দিয়েছে নিজের সৌন্দর্য। একটু এগোতেই ঝপ ঝপ করে বৃষ্টি নেমে এলো। প্রকৃতি যেন অন্য সাজে সেজে উঠল।

হোটেলে এসে জিনিসপত্র নামিয়ে গোছগাছ করে খেতে খেতে বৃষ্টি উধাও। মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠলো। এবার বেরুতে পারবো। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম সঙ্গী সাথীদের নিয়ে। সোজা গিয়ে থামলাম সুইসাইড পয়েন্টে। সুইসাইড পয়েন্ট? নামটা অদ্ভুত! এমনতর নাম কেন? উত্তরটা পেয়ে গেলাম আমাদের ড্রাইভারের কাছে। আসলে ওকে ড্রাইভার কাম গাইড বলাই ভালো। সারা রাস্তা ধরে হাফলং নিয়ে কত সব গল্প শুনলাম ওর মুখে। রূপক ক্যাম্প্রাই আসলে শিলচরের জয়পুরের ছেলে। কাজের তাগিদে হাফলংয়ে রয়েছে ।ওর কাছ থেকে হাফলং নিয়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম ।

অনেক ধরনের পাখি এখানে সুইসাইড করে বলে এর নাম পড়েছে সুইসাইড পয়েন্ট। জানা গেল, আমাদের ড্রাইভার রূপকের কাছ থেকে। সবচাইতে বেশি সেপ্টেম্বর মাসে সুইসাইডের ঘটনা ঘটে। নটা দশটার পর যখন প্রচুর পরিমাণে জোনাকিরা এই স্থানে আসে,পাখি সেই আলোকে অনুসরণ করে। আবার এও জানা গেল অনেক দুষ্ট বুদ্ধির মানুষ ইচ্ছেকৃতভাবে লাইট জ্বালিয়ে রেখে দেয়। দেখতে ঠিক মনে হয় জোনাকির মতো। তাই পাখিগুলো জোনাকি ভেবে ওই লাইট গুলোকে অনুসরণ করে এবং লাইটে আটকে পড়ে মারা যায়। পরে ওই লোকগুলো পাখিগুলোকে ধরে নিয়ে গিয়ে পাখির মাংস খায়। অন্য এক তথ্যমতে, শীতকালে আগুন পোহানোর জন্য আদিবাসীরা যখন আগুন জ্বালায়, সেই আগুনে প্রচুর পাখি এসে ঝাঁপ দেয়। এ নিয়ে আরও একটি তথ্যও রয়েছে, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে কুয়াশাচ্ছন্ন এবং মেঘলা আবহাওয়ার কারণে প্রতিবছর প্রচুর সংখ্যক পাখি এখানে মারা যায়।

সুইসাইড পয়েন্টের হাওয়া যেন আমাদেরকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। হাওয়ার সঙ্গে কিছুক্ষণ যুদ্ধের পর রওয়ানা দিলাম মাইবং’র দিকে। মাহুর নদীর তীরে পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত এই ছোট্ট শহরটি হাফলং থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে। দেড় ঘন্টার পথ পেরুলেই প্রাকৃতিক দৃশ্যের এই অপরূপ শহরে পৌঁছে যাওয়া যায়। মাইবংকেও প্রকৃতির কোলে বড় বেশি ছিমছাম মনে হল।

মাইবং ছিল ডিমাসা কাছাড়ি রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী। যা ষোল শতকের মধ্য থেকে আঠারো শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ছিল। তাছাড়া মাইবংয়ে বয়ে যাওয়া মাহুর নদী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঘেরাটোপে বড় বেশি আকৃষ্ট করে; আমার মতো হয়তো বা হাজার পর্যটককে।

একটু দেরিতে বেরোনোর জন্য সন্ধ্যে হয়ে যাওয়ার ভয়ে ফেরার একটা তাড়া ছিল। তবু ঝিলের পাশে পরিজনদের সঙ্গে কাটানো সময়টুকু মূল্যবান হয়ে স্মৃতির ঘরে জমা হল।ঝিলের ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা রাজার কুটির আকৃষ্ট করলো আমাদের দলের অনেককে। বিশেষভাবে বাচ্চাদের। অনেকটা পথ ঘুরিয়ে এবড়োখেবড়ো রাস্তায় যেতে হবে বলে আমরা যারা সে ঝুঁকি নিলাম না, ঝিলের মধ্যেই নিজেদের মতো করে সময় কাটালাম। তারপর সবার সঙ্গে হুলস্থুল করতে করতে হোটেলে ফিরে এলাম।

আমরা জীবনে যা কিছু করি প্রায় সবটারই একটা উদ্দেশ্য থাকে। প্রতিযোগিতার বাজারে এবং ব্যস্ততম এ পৃথিবীতে উদ্দেশ্যহীনভাবে আমরা বেশি কিছু করে উঠতে পারি না বা করতে চাই না। সফরের দ্বিতীয় সকালে আমরা বেরিয়ে পড়লাম ভাই বোন সবাই প্রাতঃভ্রমণের জন্য। সোজা চলে যাওয়া রাস্তায় উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটতে হাঁটতে এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা মজাটা খুঁজে পেলাম। আর স্নিগ্ধ এক সকালে শেষ না হওয়া রাস্তায় শান্ত পরিবেশে হাঁটতে হাঁটতে প্রকৃতিকে বড় আপন করে খুঁজে পেয়েছিলাম। দু চোখে ভরে নিয়েছিলাম প্রকৃতির অপরূপ শোভা। সকালের স্নিগ্ধতা আর আকাশে মেঘের আনাগোনায় এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যে বারবার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল প্রকৃতির ডাকে।আরো ইচ্ছে করছিল এক মুঠোয় সাদা মেঘ আর অন্য মুঠোয় সকালের স্নিগ্ধতা চেয়ে নেই প্রকৃতির কাছ থেকে। তবে এই চাওয়াচাওয়ির মধ্যেই ডাক পড়ল পেছন থেকে। রাস্তার পাশে ছোট ছোট দোকানে চা বিক্রি চলছে। তারই একটাতে দাঁড়িয়ে পড়ল আমার সাথীরা। সকালে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে চায়ে চুমুক! আহা! এ যেন সোনায় সোহাগা! অনেক বছর পর রাস্তার পাশে দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাওয়ার আনন্দটাও আবার পেলাম হাফলং সফরের দৌলতেই।

হোটেলে ফিরে এসে গল্পগুজবে কিছুক্ষণ কাটালেও বেশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব ছিল না। কারণ দ্বিতীয় দিনের সূচিতে ছিল অনেকগুলো গন্তব্য স্থল।

দুদিকে পাহাড় আর সবুজের মেলা’র মধ্য দিয়ে যখন আমাদের গাড়ি পরবর্তী গন্তব্যের দিকে ছুটছিল হঠাৎ করে একটা মোড়ে এসে একটু অন্যরকম ঠেকলো। আমরা সাধারণত ইউটার্ন পেয়ে অভ্যস্ত। এটা ছিল ইংরেজি অক্ষর ‘এস’ এর মত। তাই এটা এখানে ‘এস টার্নিং’হিসেবেই পরিচিত।

এ দিনের প্রথম গন্তব্যস্থল ছিল হাফলং লেক। এই লেকও টুরিস্ট দেরকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। শহরটাকে দু ভাগে ভাগ করে নেওয়া লেকের উপরে ঝুলন্ত সেতুটা পার হওয়ার সময় অদ্ভুত এক রোমাঞ্চ কাজ করে। ঝুলন্ত সেতুতে দাঁড়িয়ে সবাই মিলে সেলফি বা নিজস্বী তোলাটা যেন মনের রোমাঞ্চকে আরো একটু রাঙ্গা করে তোলে। ঝুলন্ত সেতু পার হয়ে ওপারে গিয়ে লেকের পাশে যে যার মত করে সময় কাটালাম। কেউবা সেলফি তুলতে ব্যস্ত, কেউবা ঝুলন্ত সেতু পার হওয়ার আনন্দ দ্বিগুণ করে তুলতে ব্যস্ত। আমি এখানেও প্রকৃতি নিয়েই মেতে রইলাম। অদ্ভুত শান্ত লেক! বড্ড ভালো লাগলো একমনে বসে থাকতে। কিন্তু সে আর কতক্ষণ! ফটো ওঠার ঠেলায় শান্ত হয়ে বসার কি আর জো আছে! অগত্যা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে পোজ দেওয়াই শ্রেয়। ক্যামেরা মানে মোবাইল!

এখন মোবাইলের আতিশয্যে ফটো ওঠার মধ্যে কার্পণ্যতা নেই। ধরে রাখা যায় প্রতিটি মুহূর্তের স্মৃতি। স্মৃতির ঘরে আরো কিছু সঞ্চয়ের লোভে চললাম পরবর্তী গন্তব্যে। এবারের গন্তব্যস্থলটি হচ্ছে অ্যাথনিক ভিলেজ।অ্যাথনিক ভিলেজে বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের মিশ্রণে ঐক্যতানের সুরে স্থানটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। জায়গাটা বেশ বড়। সরু পাকা করা রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে দেখা যায় দুধারে বাঁশ দিয়ে বানানো অনেকগুলো কুটির। ডিমা হাসাও জেলার বেশ কয়েকটি উপজাতীয় গোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী কুটিরগুলি সারিবদ্ধ ভাবে রয়েছে। কুটিরের গায়ে লেখা রয়েছে কোন জাতিকে উদ্দেশ্য করে এটি বানানো হয়েছে, যেমন কুকি, ডিমাসা, কাছারি, কারবি, বড়ো কাছারি, খাসি, রংমাই নাগা, খেলমা ইত্যাদি। এই জায়গাটিতে এখানে বসবাসরত লোকেদের দৈনন্দিন জীবন ধারা এবং তাদের অনুসরণকৃত ঐতিহ্যগুলি প্রতিফলিত হয়েছে।বিভিন্ন ধরনের ফুল, গাছ ইত্যাদি নিয়ে দেখতে বেশ ভালো এই অ্যাথনিক ভিলেজ। এই জায়গাটাকে অনেকেই পিকনিক স্পট হিসেবেও ব্যবহার করেন। খাওয়া-দাওয়া সহ বিভিন্নভাবে আনন্দের হাঁট বসান। এমনকি রান্নাবাড়া করার ব্যবস্থা হিসেবে একটি রান্নাঘরও রয়েছে।

এখান থেকে বেরিয়ে সার্কিট হাউসের দিকে যাওয়ার সময় সবারই চা খাওয়ার ছলে সময় কাটানোর ইচ্ছে হলো। এ উদ্দেশ্যেই রাস্তার পাশে ছোট্ট একটা চায়ের দোকানে গিয়ে আমরা ঢুকলাম। দোকানের ভেতরে বাইরে যে যেখানে পারে সুযোগ করে বসে গেল। একজন মহিলা নিচে বসে চা বানাচ্ছেন। খুব আন্তরিকভাবে আমাদের সবাইকে চা পরিবেশন করলেন। আমরাও চায়ের সঙ্গে এটা ওটা কিনে চা খেতে খেতে জমিয়ে একটা মিনি আড্ডা দিয়ে দিলাম। ছোট্ট দোকানের মহিলা দোকানদারের একসঙ্গে এত জনকে গ্রাহক হিসেবে পেয়ে চোখেমুখে খুশির ছোঁয়া ছিল।

এর পরের গন্তব্য স্থল আব্রাহাম ভিউ পয়েন্টে পৌঁছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য হয়ে ওঠা ছবির এই শহরটা আবারো মিষ্টি এক অনুভূতি দিলো। এই পয়েন্টে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল যেন হাওয়া এবার উড়িয়ে নিয়ে ছাড়বে। অনেক উঁচুতে দাঁড়িয়ে শহরটাকে দেখতে খুব ভালো লাগছিল। সাদা মেঘের তুলোর পাহাড় ছোটাছুটি করছে এদিক থেকে ওদিক। তারই মাঝে হাওয়ার প্রবল বেগ। সব মিলিয়ে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

সেখান থেকে বের হতে না হতেই প্রবল বেগে ঝড় বৃষ্টি শুরু হল। বৃষ্টির মধ্যে ভিজে কোথাও কোথাও দাঁড়িয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে হাফলংয়ের ভিউ দেখলাম। সার্কিট হাউসকে বাইরে থেকেই বাই বাই জানিয়ে ছুটলাম খাবার খেতে।

বাজার করাটা মেয়েরা সবসময়ই খুব পছন্দ করে । যেকোনো জায়গায় বেড়াতে গেলেই কেনাকাটা মেয়েদের চুম্বকের মত আকর্ষণ করে। আমাদের দলের মেয়েরাই বা বাদ যায় কেন? গাড়ির চালকের কাছ থেকে সব তথ্য সংগ্রহ করা হলো, কোথায় কি ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু বাদ সেজে বসল সেই অঝোরে বৃষ্টি। তাই হোটেলে ফিরে বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা উপভোগ করা শ্রেয় বলে মনে হল।

একটু বেশি তাড়াহুড়োতেই যেন এসে গেল তৃতীয় দিনটা। এবার ফিরতে হবে। তবু সকালে কিছুটা সময় হাতে পাওয়ার সুবাদে রামকৃষ্ণ মিশন ঘুরে আসা হবে বলে ঠিক হলো। শারীরিক কারণে যেতে পারিনি। মনটা খারাপ হতে গিয়েও দলের কেউ না কেউ ঘুরে আসছে ভেবে ভালো লাগলো।

ফেরার পথে গাড়িটা যখন রেলওয়ে স্টেশনের দিকে ছুটছিল, গাড়িতে বসে সবার মুখেই কমবেশি বিষাদের ছায়া,কন্ঠে আফসোসের সুর।এত তাড়াতাড়ি চলে গেল দুটো দিন! আরো যদি কিছুটা সময় কাটানো যেত! আমারও যে মন খারাপের ছোঁয়া ছিল না তা বলবো না। কিন্তু প্রাপ্তির ঘরটা অনেকটা ভরে ছিল বলে মনটা বেশ ফুরফুরেও লাগছিল। তাই দলের অন্যান্যদের কথাগুলো কানে ঢুকছিল না। হয়তোবা ঢোকাতে চাইছিলাম না। ছবির শহরটাকে বিদায় জানিয়ে যখন ট্রেনে উঠলাম তখন মৃদু হাওয়া কানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় যেন অতর্কিতে বলে গেল “গল্পটা এখনো শেষ হয়নি”। গল্পের শেষে পৌঁছাতে হাফলংকে উদ্দেশ্য করে আরও একটা সফরের অপেক্ষায় রইলাম।

আমার মত যারা ভ্রমণ পিপাসু এবং যারা ভ্রমণকে তেমন ভালোবাসেন না দু’পক্ষকেই বলছি, হাফলং ঘুরে এলে ভ্রমণপিপাসুদের তৃষ্ণা মিটবে এবং অন্য পক্ষ ভ্রমণকে অবশ্যই ভালবাসতে শুরু করবেন।

Comments are closed.