Also read in

From Janta Curfew to Lockdown: Here is a special write-up from Archana Bhattacharjee

জনতা কারফিউ থেকে লকডাউন: বাঁচার সঞ্জীবনী ঘরের মধ্যেই

দৃশ্যপট ১: সময় বিকেল পাঁচটা! তারিখ ২২ মার্চ। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে কাঁসর ঘন্টা, শঙ্খ ধ্বনি, করতালি, থালা বাজানোর শব্দ। এরপর শুরু সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে অনেক চর্চা। অনেকে ব্যস্ত নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে।কেউ বা অত্যধিক আবেগিক!কেউ আবার প্রচন্ড নিন্দা বন্দনায় ব্যতিব্যস্ত। হাসাহাসিও চলল বিস্তর। কারণ কারো কারোর মতে, কাঁসরঘন্টা, শঙ্খধ্বনি কিংবা করতালির শব্দে করোনা ভাইরাস তাড়ানোর বিষয়টি হাস্যস্পদ।হাস্যস্পদতো বটেই!হাস্যস্পদ এরাই যারা ব্যাপারটাকে এভাবে ভেবেছেন। কারণ শঙ্খধ্বনি কিংবা করতালিতো জনতা কারফিউয়ের দিন যারা সারা দিন ধরে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন, হাসপাতালে রোগী দেখতে ব্যস্ত ছিলেন কিংবা যারা এই ভয়কে তুচ্ছ করে পরিষেবা দিতে ব্যস্ত ছিলেন তাদের উদ্দেশ্য করে, তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপনের এক রাস্তা। এই সহজ কথাটাতো যারা নিজেদের বুদ্ধিজীবী বলে মনে করেন তাদের না বুঝার কথা না!আবার প্রধানমন্ত্রীর কথাটার উল্টো মানে করে যারা রাস্তায় রাস্তায় ঝাঁজ, করতাল নিয়ে নাম সংকীর্তন করলেন, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে কোন ভাষায় কি বলা উচিত সে ভাষাও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই অন্ধ কিছু মানুষের কুকীর্তিতে সমাজের কতটা ক্ষতি হতে পারে তা বোঝার ক্ষমতা ওই জাতীয় লোকের নেই বলেই যত ভয়!এই দুই দলকে বাদ দিলে সারা দেশের মানুষ আমাদের জন্য যারা নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে কার্পণ্য করেননি। থালা আর বেলনের মিশ্র ধ্বনি থেকে শুরু করে করতালির গুঞ্জনে বেশিরভাগ ভারতবাসী বুঝিয়ে দিয়েছেন এই সংকটের মুহূর্তে তারা প্রধানমন্ত্রীর পাশে রয়েছেন। কারণ যখন দেশ আর জাতির সংকট শিয়রে তখন বোধহয় রাজনীতির উর্ধ্বে থাকাই শ্রেয়!

কিন্তু কথা হচ্ছে যারা অন্ধ কুসংস্কারের ঘেরাটোপে কাঁসরঘন্টা নিয়ে রাস্তায় নেমে ভাবছেন কীর্তন করে তাড়িয়ে দেবেন করোনা নামক ভাইরাসকে,ওরা যে নিজেদের সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও বিপদ ডেকে আনছেন তা কে বোঝাবে ওদের? আমরা ভারতীয়রা একটু বেশি আবেগিক সেটা অনস্বীকার্য । তাই ওরা তো আবেগের বশে ভুল করেছেন। কিন্তু তারপরও যখন কোথাও কোথাও দেখা গেছে ফেস্টুন হাতে লাইন করে রাস্তায় মিছিল বের করে কেউ কেউ মানুষদেরকে সজাগ করার চেষ্টা করছেন, তখন সত্যি অস্ফুটে বেরিয়ে আসে ‘সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ!’মিছিলের প্রথমে মহিলার হাতে যে পোস্টার ছিল, তাতে লেখা ছিল ‘বড় জমায়েত এড়িয়ে চলুন’! এরপর আর কি বলার থাকতে পারে?

দৃশ্যপট ২: দেশ কিংবা দশ যে দিকে চলে, তার ঠিক উল্টো দিকে চলতে ভালবাসেন কিছু মানুষ।আর তাই তারা জনতা কারফিউয়ের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দিহান। ঘরে বসে থাকলে করোনা চেইন যে নষ্ট হয়ে যাবে এই কথার বিজ্ঞানসম্মত তথ্য খুঁজতে তারা ব্যস্ত। এই বুদ্ধিজীবীর দলের তথ্য খোঁজার মধ্যে কোনও অসুবিধে নেই, কিন্তু সেই তথ্য খোঁজার ফাঁকে যে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, সেটা বোঝার দায়ভার কার! সংস্পর্শে আসলে রোগটা ছড়িয়ে পড়বে শুকনো বনে আগুন লাগার মত, কিভাবে বিশ্বাস করা যায় যে এটুকু বোঝার ক্ষমতা ওদের নেই! আর কোনটা দরকার কোনটা দরকার নেই সে হিসেব কষা এখন বিলাসিতা মাত্র!এ হিসাব কষা আমাদের কারোর পক্ষেই যে সম্ভব নয়। প্রথমবারের মতো আমরা এ ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করছি।

আর এজন্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় শেষ ব্যবস্থা হিসেবে নির্দেশ কঠোর হলো লকডাউনের হাত ধরে। কিন্তু নির্দেশ কঠোর হলেই তো হবে না, সঙ্গে চাই পালন করার মত মানসিকতা।সেই বললাম না, কিছু মানুষ বরাবরই উল্টো দিকে হাঁটতে ভালোবাসেন।তাই একদিকে লকডাউন’র প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নানান প্রশ্ন, অন্যদিকে বিরোধিতা করার জন্যই শুধু বিরোধিতা করা। এটাতো একপক্ষের কথা হল,অন্যদিকে আবার অনেকেই এই ২১ দিনের কোয়ারেন্টাইনকে ছুটির দিনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন। মত্ত হয়ে উঠছেন ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলায়। তাদের এই ছেলেমানুষি নিঃসন্দেহে ভারী হয়ে উঠতে পারে সমাজের জন্য। স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, প্রয়োজন না থাকলে বাড়ি থেকে না বের হতে, অতিরিক্ত মেলামেশা না করতে, ভিড়ের মধ্যে না যেতে। ডাক্তারদেরও একই পরামর্শ। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রয়োজনের তালিকাটা যেন এখন আরো বেড়ে যাচ্ছে। এই মুশকিলের সময় যখন আমাদের সীমিত আহার গ্রহণ করা উচিত, তখন এত বাজারের ঘনঘটা কেন? এভাবে ভিড় জমালে পরিস্থিতি কি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে তা বোঝা কি খুব কষ্টকর? করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে ভেসে আসা কান্না কি ওদের কানে ঢুকছে না? এখনো সময় আছে! এই ২১ টা দিন নিজেকে ঘরবন্দি রেখে নিজেও বাঁচুন, সবাইকে বাঁচতে দিন।

দৃশ্যপট ৩: তারিখটা ছিল ২৪ মার্চ। প্রধানমন্ত্রী সবেমাত্র ঘোষণা করেছেন ২১ দিনের লকডাউন। শুরু হবে রাত বারোটা থেকে। মুদির দোকান খোলা থাকবে জেনেও প্রয়োজনীয় জিনিস ঘরে তুলতে রাস্তায় মানুষের হুড়োহুড়ি। পারলে পুরো দোকানটাই যেন ঘরে তুলে নিয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে জিনিসের দামও পারদের মত উপরে চড়তে লাগলো। যেন এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলেন ব্যবসাদাররা। কিন্তু তাহলেই বা কি? ক্রেতারাও কি পিছ্ পা হওয়ার? আশ্চর্য, ‘যতটা আছে সব দিয়ে দাও’ কথাটা বলার আগে একবারও ভাবছে না পেছনে দাঁড়িয়ে অনেকগুলো লোক অপেক্ষায় ! সবার ভাগ্যেই কিছু না কিছু জোটা উচিত! কিন্তু এসব ভাবার সময় কোথায়? এখন যত পারো সব ঘরে তুলে নাও! তারপর ব্যস্। অথচ দেশ যখন আজ সংকটের মুখে, দশ যখন এই সংকটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় লড়াই করছেন, তখন অন্যের কথা ভেবে নিজের প্রয়োজনটা সীমিত করা কি উচিত নয়? যারা রাস্তায় ভিক্ষা করে খায়, তাদের আজ ভিক্ষা চাইবার মতো লোক নেই, মাথার উপরে ছাদ নেই, এক মুঠো অন্যের যোগার নেই। তাদের কথা ভেবেও তো নিজের চাহিদার চাকাটাকে থামিয়ে দেওয়া যায়!

বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক মানুষের পাশাপাশি আরও দু ধরনের মানুষ নজরে আসে। এক পক্ষ, বেশি ডেস্পারেট। এসব আমার কিচ্ছুটি করতে পারবেনা। আমিতো ভয় করিনা গোছের অহংকারকে সর্বসমক্ষে প্রতিপন্ন করার জন্য হয়তো বা নির্দ্বিধায় ঘর থেকে বেরোচ্ছেন। কিংবা মাস্ক পড়ার প্রয়োজনীয়তাটুকু অনুভব করছেন না। তর্কের খাতিরে হয়তো বলেও বসবেন, মাস্ক যে করোনা ভাইরাস আটকায়, সেই তথ্যটা কোথায়? তাদের উদ্দেশ্যে ডাক্তারের ভাষায় বলতে হয়, হ্যাঁ,মাস্ক ভাইরাস থেকে প্রটেক্ট করছে না। কিন্তু ভালো মাস্ক হলে কিছুটা হলেও সাহায্য করে প্রতিরোধে।ভাইরাসটা নিঃসন্দেহে মাস্কের ফুটোর থেকে অনেক ছোট। ভাইরাস যদি একা আসে তাহলে সহজেই মাস্কের ফুটো দিয়ে ঢুকে যেতে পারবে। কিন্তু ভাইরাস যেহেতু বেশিরভাগ সময় একা থাকে না, তার গায়ে লেগে থাকে ধুলো কিংবা জলীয়বাষ্প, মলিকোল কিংবা অন্যকিছু তাই সেটা সাইজে বড় হয়ে যায়, যাকে ভাইরাস পার্টিকোল বলে। মাস্ক ভাইরাস থেকে প্রটেক্ট করেনা, ড্রপলেট পার্টিক্যাল থেকে অবশ্যই করে। কাজেই মাস্ক ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যেতে পারে।মাস্ক পড়লেও খুব প্রয়োজন হলে তবেই ঘর থেকে বেরোনো উচিত।বিশিষ্ট ডাক্তার কিন্তু এভাবেই ব্যাখ্যা করলেন ব্যাপারটাকে।

আর যারা বলেন, এসব ভাইরাসে আমার কিছু হবে না। হয়তোবা ওরা সত্যি বলছেন। ওদের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।মানছি, ওদের প্রতিরোধ ক্ষমতার কথা, কিন্তু তারা কি জানেন, তাদের ঘরে বা আশে পাশে যে বাচ্চা কিংবা বৃদ্ধজনেরা রয়েছেন তাদের শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটুকু?একজনের মধ্যে করোনা ভাইরাস থাকতে পারে, তবে তার মধ্যে কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। হয়তোবা নিজের শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সেই উপসর্গকে বাড়তে দেয় না। কিন্তু বাড়ির সবার কিংবা আশেপাশের লোকজনদের তো একই প্রতিরোধ ক্ষমতা নাও থাকতে পারে!

এই গৃহবন্দী থাকার সময় হয়তোবা মোবাইলের সঙ্গে একটু বেশি বন্ধুত্ব হচ্ছে সবার, আর তারই সুবাদে চলে অনেক ধরনের মেসেজ আদান-প্রদানের কসরত। হঠাৎ একটা মেসেজে চোখ আটকে যায়।
রাজা পরিক্ষিতের কথা মনে আছে? নিজের মৃত্যুর কথা আগাম জেনেছিলেন। কাহিনীটি ছিল এক ঋষি পুত্র শাপ দিয়েছিলেন তাকে। সাতদিনের মধ্যে তার মৃত্যু হবে তক্ষক নাগের কামড়ের কারণে। তাই তিনি নিজেকে গৃহবন্দি করেছিলেন সাতদিনের জন্য। চরম কড়া নিরাপত্তার পরেও তার মৃত্যু হয়েছিল । কারণটা জানা আছে? তিনি নিয়ম ভঙ্গ করেছিলেন। অচেনা সাধুদের বিশ্বাস করে। আর তাদের পাঠানো ফলের মধ্যেই লুকিয়েছিল তক্ষকনাগ।

নিজের সাথে কোথাও মিল খুঁজে পাচ্ছেন কি? আমরাও এক অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে নিজেদের বাঁচা মরার লড়াই করছি গৃহবন্দি হয়ে। এই নিয়ম ভঙ্গ করলে কিন্তু আমরাও পরীক্ষিত হতে চলেছি। কে বলতে পারে আপনার পরিচিত মানুষটি তার অজান্তেই আপনার মৃত্যুদূত হয়ে আপনার সংস্পর্শে আসতে চাইছে কি না? পরিক্ষিতের হাতে সাতদিন ছিল । আমাদের হাতে ২১ দিন । তক্ষক’র মতোই করোনাও প্রাণপন চেষ্টা করবে আমাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য, প্রতিবেশী রূপে কখনো বা বন্ধু রূপে। তাই এই ২১ দিন দরজা বন্ধ রাখুন। মনে রাখবেন করোনা কিন্তু নিজের রূপে নয় মানুষের রূপ নিয়েই আসবে।

দুই পক্ষের অন্য পক্ষ একটু বেশি মাত্রায় সচেতন এবং তার চাইতেও বেশি ভীত। অল্প সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জায় আঁতকে উঠেন। আসলে দোষ তাদের নয়, পরিস্থিতিটাই এখন এমন! ডাক্তারের বক্তব্য অনুযায়ী, করনা’র লক্ষনে রোগীদের প্রথমে ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়।তবে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জায় যেমন নাক দিয়ে অবিরত জল পড়তে থাকে, এক্ষেত্রে সেরকম জল পড়ে না। বরং শুকনো কাশি থাকে। সঙ্গে জ্বর বাড়তে থাকে। যাদের জ্বর অত্যধিক হয় কিংবা ইনফেকশনটা লাংস্ অব্দি চলে যায় তাদের শ্বাসকষ্ট হতে শুরু হয়। আর এগুলোরই যদি বাড়াবাড়ি শুরু হয় তবে এই ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়। তাই সাবধানতা গ্রহণ করা খুব প্রয়োজন। যাদের চশমা রয়েছে, তাদের চশমা পড়ে থাকাটাই এখন শ্রেয়। কারণ তার ফলে চট করে হাতটা চোখে পৌঁছাচ্ছে না। আমরা সাধারণ মানুষরা পুরোপুরি ডাক্তারের উপর নির্ভরশীল। তাই ডাক্তাররা যা বলছেন কিংবা সরকার যা নির্দেশ জারি করছে তা তর্ক, বিতর্ক, বুদ্ধি, অতিবুদ্ধি না খাটিয়ে এসবের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ এবং দশের মঙ্গলের জন্য অক্ষরে অক্ষরে পালন করা উচিত। যাতে করে নিজেও বাঁচতে পারেন, অন্যদেরকেও বাঁচতে দেন।

দৃশ্যপট ৪: সময়টা দিন আর রাত্রির সন্ধি ক্ষণ! সন্ধ্যে প্রায় হল বলে! প্রকৃতি পশ্চিমাকাশের ক্যানভাসকে রাঙিয়ে দিয়েছে লালের আভায়! সূর্য যাবার আগে তার অপূর্ব শোভায় অপরূপ করে তুলেছে সেই ক্যানভাসকে। অন্য বেশিরভাগ দিন ব্যালকনিগুলো একাই সেই শোভায় লাল হয়ে উঠত। শুধু তাই নয়,একাকিত্বের ভারে বেশিরভাগ বিকেলে ব্যালকনিগুলোর উদাস ভাবেই দিন কাটত। কিন্তু বিগত চার, পাঁচ দিন ধরে সেই একাকীত্ব ঘুচে গেছে ব্যালকনির। প্রায় প্রত্যেকটা ব্যালকনি সান্ধ্য চা খেতে খেতে দম্পতি এবং বাচ্চাদের কলরবে মুখর হয়ে উঠছে। শুধু তাই নয়, যে চলচ্চিত্রটা এতদিন ধরে সময়ের অভাবে দেখা সম্ভব হচ্ছিল না, সন্ধ্যেতে সব কাজ শেষ করে সেটাও দেখা হয়ে গেল। আমাদের কাছে যখন অন্য কোন উপায় বেঁচে নেই তখন স্বেচ্ছায় এই গৃহবন্দিত্বের মধ্যেও হয়তো অনেক ভালো কিছু খুঁজে পেতে পারি আমরা। কারণ এটাতো নিশ্চিত, আজ ধনী-দরিদ্র ( যারা ছাদহীন তারা ছাড়া) সবাই ঘরে বন্দী। ব্যাঙ্ক ব্যালান্স যতই হোক দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষমতা আমাদের আজ নেই, ব্র্যান্ডেড কাপড় কিনার ক্ষমতা থাকলেও উপায় নেই, জিভে জল আনা রেস্টুরেন্টের খাবার পয়সা দিলেও এখন মিলবে না। এককথায় আজ কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, সে যত ধনী ব্যক্তি হন না কেন? আজ ধনী-দরিদ্র একই বিন্দুতে দাঁড়িয়ে!

অন্যদিকে হয়তোবা ঘর বন্দিত্বের হাত ধরে কত কবির কলম কথা বলে উঠবে, কত সাহিত্যিক সাহিত্য রসে ডুবে থাকবেন, ঘর আর অফিস সামলে যে মহিলা অনেকদিন ধরে গলা সাধার সময়টুকু পান না, তিনি হয়তো সংগীতের সুধাটুকু পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে উঠবেন। রান্না হয়তো সীমিত হবে, তবে সকাল সন্ধ্যা মায়ের হাতে ভালোবাসা মেশানো খাবার খেয়ে শিশুটি হয়তো আনন্দে আটখানা হয়ে উঠবে। অফিসের কাজের চাপে এতদিন ধরে যে বইটা পড়ব পড়ব ভেবেও পড়া হচ্ছিল না, সেই বইটা হয়তো এবার পড়া শেষ হবে। কিংবা সময়ের অভাবে যে সেলাইটা আধা হয়ে আলমারির কোনায় পড়ে পড়ে ক্লান্ত হচ্ছিল, তার হয়তো একটা গতি হবে এখন। হয়তো এই ফাঁকে পারিবারিক বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে।খাবার টেবিলে একসঙ্গে খাবার খেতে খেতে গল্প করার ফাঁকে বারবার ঘড়ির কাটায় চোখ রাখতে হবে না। যন্ত্রের মতো অফিস আর বাড়ি করে করে ক্লান্ত কোনও মায়ের ছেলে হয়তো কতকাল পর মায়ের কোলে মাথা রেখে দু’দণ্ড শোয়ার সময় পাবে। এসবই বা কম কিসে!

তাই নিয়ম মেনে ঘরে থেকে নিজেও বাঁচুন। অন্যকেও বাঁচতে দিন। ঘরে থাকুন।ভালো থাকুন। সবচাইতে প্রথমে বাঁচাটা জরুরি। কবির ভাষায়, “প্রাণই এক আশ্চর্য সম্পদ! এক ক্ষয়হীন আশা!এক মৃত্যুহীন মর্যাদা!

Comments are closed.

error: Content is protected !!