Also read in

From the pages of Lockdown-diary!

‘কেমন আছ, কেমন চলছে সংসার!’ জানালেন ঝুমুর পান্ডে, দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়, সৌমিত্র শংকর চৌধুরী, মঞ্জুশ্রী দাস

সোসাইটির গার্ডেনটা চুপচাপ বসতে বসতে অস্থির হয়ে উঠেছে, বাচ্চাদের কলরব শুনবে বলে! সি-সো’টার কোমরে ব্যথা ধরে গেছে, এক দিকে বাঁকা হয়ে থাকতে থাকতে। খেলার মাঠটা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, ছেলে ছোকরাদের ঘরে ফেরার। অন্যদিকে দূষণমুক্ত হয়ে আকাশটা নীল হয়ে উঠেছে।এ কোন নতুন বসন্ত! প্রকৃতি সেজে উঠেছে নতুন রঙে। আর সেই সৌন্দর্যে স্নাত হয়ে কবির কলম তার ছন্দ খুঁজে পাচ্ছে। রমলা বৌদি এরইমধ্যে শেষ করে ফেলেছেন পথের পাঁচালীটা আরও একবার। ছোট্ট দিশা আনন্দে আটখানা, বীনা দিদির হাতে নয়, রোজ মায়ের হাতেই তিন বেলা খাবার খাওয়ার আনন্দ কি ধরে রাখা যায়! রাজশ্রীর হারমোনিয়ামটাও খুব খুশি, নিজের গায়ে জমে থাকা ধুলো গুলো এবার বিদায় নিল।এত দিন পর রাজশ্রীর সুরে সুর মিলিয়ে সেকি আনন্দ হারমোনিয়ামটার! হ্যাঁ, কয়েনের যেমন দুটো দিক রয়েছে। এইযে লকডাউনের মধ্যে আমাদের ঘরে বসে থাকা, তারও দুটি দিক রয়েছে। আমরা কেউই এভাবে ঘরে বসতে চাই না।অনেকের কাছেই দুঃসহ। তার মধ্যে যারা অসুস্থ রয়েছেন, তাদের কথা ভেবে ভয়ে বুক কাঁপে।

অন্যদিকে অনেকে আবার এরই মধ্যে থেকে খুঁজে নিচ্ছেন অনেক কিছু।তাই এই ঘরে বসার অবসরে হয়তোবা অনেক ‘ভালো কিছু’র সঙ্গে পরিচয় হয়ে যাচ্ছে অনেকের নিজের অজান্তে।হয়তো কেউ খুঁজে পাবে আবার নিজেকে নতুন করে! আবার অন্য রকম কিছুও হতে পারে।

এদিকে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কেউ বলছেন, পৃথিবীর মেনটেনেন্স চলছে। কেউ বলছেন, আমাদের পাপের বোঝা বেড়ে গেছে, তারই পরিনাম। কেউ আবার বলছেন, গাছপালা, নদনদী, পাহাড় পর্বত, পশুপাখি সবাই আমাদের অত্যাচারে ক্লান্ত, তাই এবার বুঝি ভগবান তাদেরই ডাক শুনলেন!

আপাতত এত তত্ব কথায় গিয়ে লাভ নেই! তার চাইতে বরং জেনে নেওয়া যাক শিলচরের বহু পরিচিত কিছু ব্যক্তিত্ব এই কোয়ারান্টিনে কেমন করে দিন কাটাচ্ছেন, জেনে নেওয়া যাক!

 

বাপী দত্তরায়, গীতিকার, সুরকার

বর্তমানে সবার মত আমিও গৃহবন্দী। ছবি আঁকছি চুটিয়ে।আমার লেখা গানের একটা ভিডিও এডিটিং করছি।

তবে একটা প্রশ্ন মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে, যদি মানুষ আজ আর্তনাদ করছে করোনা ভাইরাসের বিষে আক্রান্ত হয়ে, চাইছে পরিত্রাণ, তবে মানুষের দীর্ঘদিনের পাপে সৃষ্ট পরিবেশ দূষনের বিষে আজ ঈশ্বরও আক্রান্ত হয়ে পরিত্রাণ খুঁজছেন কী? মানুষ পরিত্রাণ পাবার আশায় আবিষ্কার করছে ভ্যাক্সিন, মাস্ক, ভেন্টিলেটর। ঈশ্বর কী পরিত্রাণ পেতে আবিষ্কার বা সৃষ্টি করলেন “করোনা ভাইরাস”। মানুষকে করলেন গৃহবন্দী কোয়ারেনটাইন্ড। তিনি কী কিছুদিন নেবেন পরিবেশকে দূষণ ভাইরাস মুক্ত করতে? এমনই কী ঈশ্বরের অভিপ্রায়???….. জানিনা, বুঝিনা।
মাঝে মাঝে এমন ভাবনা মনে আসে।

শুধু এইটুকু ভরসা…. ঈশ্বর মঙ্গলময়,সদা করুণাময়। নিশ্চয়ই মানুষকে তাদের ভুল বুঝিয়ে, ভুল শুধরিয়ে, আবার সহজ সরল নিত্যদিনের জীবনে ডেকে নেবেন।

সবশেষে একটা ছোট্ট কবিতা,

“পরিবেশ দূষিত হয়
মানুষের পাপে
মানুষ নিশ্চিহ্ন হবে
পরিবেশ অভিশাপে”।

এগুলোই কলমে বারবার ফিরে আসছে। আগেও লিখেছি, আবারও লিখলাম। বারবার যেন একই সুর বাজছে।

 

ঝুমুর পান্ডে, লেখিকা, সমাজকর্মী

আজ লকডাউনের ১৮ দিন পূর্ণ হলো। চারদিকে কেমন নিস্তব্ধতা। রাস্তা যতটুকু দেখা যাচ্ছে আমার ছাদ থেকে একদম ফাঁকা। সবকিছু কেমন থমথম করছে।একজন সব্জিওয়ালা শুধু সব্জি নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। শুনেছি টুকটাক বাজার বসে। আমি কিন্তু সেসব দেখতে পাই না। মনটা একদম খারাপ হয়ে গেছে। কিছুই ভালো লাগছে না। রাতে ঘুমোতে পারি না। মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা‌। নিজের জন্য নয়। পৃথিবীর জন্য। পৃথিবীর মানুষের কথা ভাবি। কি হবে? পড়তেও পারি না।যাকে বলে নিবিড় পাঠ। লেখাও হয়না তেমন করে। এখন এই গাছগুলো, পাখিগুলো আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। বাঁচিয়ে রাখে নির্মল আকাশ, তারা, ডাহুকের, কোকিলের ডাক। ভেবেছিলাম সিনেমা দেখব। একটা ক্লাসিক সিনেমা। তাও দু মিনিটের বেশি দেখতে পারলাম না। বন্ধ করে দিলাম। আসলে আমি কিছুই করতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। করোনা এমন একটা রোগ, রাজা, প্রজা, রাজকন্যা, রাজপুত্র কাউকে ছাড়ছে না। এই লকডাউনের সময়ে দিনমজুরদের জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ। কষ্ট হচ্ছে অসুস্থ মানুষজনদের জন্যও। এখনতো সব হাসপাতাল, ডাক্তার করোনায় ব্যস্ত। পুরো পৃথিবী, হ্যাঁ গোটা পৃথিবী এরকম করে কবে কখন একসঙ্গে আতঙ্কিত হয়েছে, এত ভয় পেয়েছে কেউ জানেনা।তবে পৃথিবীটা বড় শান্ত হয়ে গেছে। সবাই বলছেন অশান্ত। আমি বলছি শান্ত। শুধু মানুষ নিয়ে তো আর পৃথিবী নয়। গাছপালা, সাগর, নদী, পাহাড়, পশুপাখি নিয়েই তো। এটা মানুষ কেন বোঝেনা। কেন যে বোঝেনা, কে জানে! যার ক্ষমতা থাকে ওই শাসন করে সর্বত্র। ইতালিতে কয়েক হাজার, ব্রিটেনে, স্পেনে, জার্মানি, আমেরিকা সর্বত্র করোনার প্রকোপ। আমাদের দেশেও। উন্নত দেশগুলোরও এই অবস্থা। আমাদের কোটি কোটি মানুষ যেখানে চিৎকার করছে কি হবে? কি হবে? কি হবে এই দেশের? লকডাউন কতদিন করা যাবে? বিদেশ থেকে যখন মানুষদের আনা হলো বা ওরা এল। ওদের প্রথমেই কোয়ারেন্টাইন করা হলো না কেন? বা নিজামুদ্দিনে এত মানুষ সারা পৃথিবী থেকে জড়ো হল। সরকার জানতো না? নিউজ চ্যানেল গুলো জানতো না? তাও খোদ দেশের রাজধানীতে! সব কেমন ধোঁয়াশা লাগছে। সারা পৃথিবীর কথা ভেবে আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নামে কষ্টের, আতঙ্কের এক নদী। সেই নদী বয়ে যায় না, যেতে যেতে ধমকে দাঁড়ায়। হয়ে যায় শবনদী। সেই নদীর কষ্ট কথা আমি বুঝি। আর বোঝে সেই নদী। করোনার শেষে আগামী পৃথিবী কেমন হবে জানিনা। হয়তো আমিও থাকবো না। তবে দূষণ কমবে।প্রকৃতি শ্বাস ফেলবে।গাছগাছালি হাসবে। আকাশ নির্মল হবে। হাসবে পৃথিবী। হ্যাঁ, হাসবে ঝলমল করে। তখন সারা আকাশ জুড়ে রোদ উঠবে। পাখিরা ডানা মেলে উড়বে। গান গাইবে বেঁচে থাকার, ভালোবাসার গান………

 

দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়, প্রধান শিক্ষক,আবৃত্তিকার

লকডাউনে অনেকের মতো আমার যাপন বদলে গেছে কিছুটা।
ভোর পাঁচটায় উঠে প্রাণায়ম সেরে ছাদের উপরে একটু সময় করে মর্নিং ওয়ার্ক সাথে হেডফোনে গান কিংবা কবিতা শোনা।
এবার নিজের জন্য কিছু পড়াশোনা। তারপরেই চা জলখাবার। এটা সেরে ছাত্রীদের জন্য অনলাইনে ক্লাসের রেকর্ডিং গুলো করে নেওয়া নোট গুলো হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেওয়া। তারপর বাড়ির গিন্নি সঙ্গে রান্নার কিছু কাজে সহযোগিতা করা সাথে সাথে বাড়িতে পুরনো জমে যাওয়া কিছু কাজএদিক ওদিক গুছিয়ে রাখা। বইয়ের আলমারি, কাপড়ের আলমারি, বিছানাপত্র একটু ঝাড়পোঁছ এবং রোদে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। তার পরের সময়টুকু একান্ত আমার নিজস্ব। সেই সময়টুকু একান্তে কবিতাপাঠ এবং গান শোনা, হোয়াটসঅ্যাপ দেখা, ফেসবুক দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে টেলিফোন করা। এরপর চেষ্টা করি যদি সৃষ্টি মূলক কিছু কাজ করা যায় তার জন্য বিছানায় শুয়ে কখনো পড়ার টেবিলে বসে। সেটা চলে বেলা একটা অব্দি। তারপর স্নান সেরে সন্ধ্যা পুজো করা, দুপুরের খাওয়া। এবার বিছানায় শুয়ে নিউজ চ্যানেল গুলো দেখা বিকেল চারটে অব্দি। এরপর বিছানায় গড়াগড়ি। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চা জলখাবার সন্ধ্যায় ছাদে আবার হাঁটা, টেলিফোনে কিছু মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা, আবারো ফেইসবুক দেখা হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন সংবাদ পাঠানো। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় পড়তে বসা নটায় পড়া শেষ করে টিভি সিরিয়াল এবং আমার ছোট মেয়ে ও গিন্নির সাথে খুনসুটি করা। রাত দশটায় ডিনার করে সাড়ে দশটা থেকে নিজের পড়াশোনায় এবং কিছু সৃষ্টি মূলক কাজে ডুবে যাওয়া। রাত সাড়ে বারোটায় করোনা মুক্ত পৃথিবী এই প্রার্থনা ভগবানের কাছে জানিয়ে নিদ্রাদেবীর কোলে ঢলে পড়া। বাইরে কাজ না থাকাতে জীবন-যাপন টাকে একেবারে শৃঙ্খলিত করতে পারায় বেশ আনন্দ পাচ্ছি।

 

সৌমিত্র শঙ্কর চৌধুরী, নৃত্যশিল্পী

করোনার জন্য যখন ঘরে আবদ্ধ তখন করোনা নিয়েই কিছু একটা ভাবতে বা করতে মন চাইছিল।করার জায়গাটা খুবই সীমাবদ্ধ কারণ সামাজিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে যেভাবেই হোক। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চা খেতে খেতে গুনগুন করছিলাম রবীন্দ্রনাথের একটি গান,’কোন পুরাতন প্রাণের টানে ছুটেছে মন মাটির পানে…… ‘ বয়সটা আমার মধ্যগগনে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের নিয়ে খুব ভাবনা চিন্তা হয় আজকাল।করোনার প্রতিষেধক বা ঔষধ বের করা নিয়ে অনেক গবেষণা চলছে দেশ-বিদেশে। হয়তোবা বেরোবে। দেরি হবে। কিছুদিন পর আবার অন্য কোনো বিপদ না চলে আসো সম্মুখে। বিপদ যখন আসবে, দেখা যাবে। যাইহোক, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সহজ সুন্দর বেঁচে থাকার মন্ত্র দিয়ে যেতে হবে যা কিছু আমরা শুনেছি, জেনেছি মা ঠাকুমাদের কাছ থেকে। সুস্থ হওয়ার জন্য ডাক্তারের কাছে যাবে, কিন্তু সুস্থ থাকার জন্য দিতে হবে ঘরোয়া মন্ত্র। খোঁজ শুরু করলাম দেশজ প্রবাদের।
কোন সময় কি খাওয়া দরকার, কি করা দরকার, কিভাবে চলা দরকার, কোন বনৌষধিতে কি উপকার পাওয়া যায়, শুদ্ধ আয়ুর্বেদ কি বলে। কেরালা, উড়িষ্যা প্রভৃতি রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি আয়ুর্বেদ কলেজ আছে। আমাদের বরাক উপত্যকায় যদি তা খোলানো যায় ইত্যাদি নানা পোকা মাথায় ঘুরঘুর করতে আরম্ভ করল।সহজ জীবন ধারনের রাস্তায় হয়তো আবার যেতে হবে সবাইকে। আজকাল মনে হয়, খুব কি দরকার আছে নগরায়নের অতিরিক্ততার? লোকসংস্কৃতি নিয়ে টুকটাক কাজ টাজ করি, তাই শিকড়ের দিকে চলে যায় মন অর্থাৎ পুরাতনের টানে। পুরাতনের উপর দাঁড়িয়েই চলছে নতুনের গবেষণা। বিজ্ঞানমনস্ক মন নিয়ে দেখতে চাই পুরাতনকে। দেশজ প্রবাদের খোঁজে প্রথম পোস্টিং দিলাম আমার ফেসবুক পেজে।পেলাম বেশ সুন্দর কিছু প্রবাদ। মা ঠাকুমার বয়সী যে কজন এখনো বেঁচে আছেন আমার চেনা জানার মধ্যে তাদের সঙ্গে ফোন মারফত কথা বলার সুযোগ খুঁজলাম লকডাউনের এই সময়ে। এখনও করে যাচ্ছি।করোনার দাওয়াই কিন্তু খুঁজছি না, করোনা পরবর্তী সময়ের জন্য ভাবছি। ছোট একটি দেশজ প্রবাদ দিয়ে শেষ করব এই লেখা-
চৈত্রে চলিতা, বৈশাখে নালিতা
জ্যৈষ্ঠে দই, আষাঢ়ে খৈ
শ্রাবণে দাতিয়ার কৈ……

আমার ওয়াটস্অ্যাপ নম্বর দিলাম, সহজ সুন্দর বেঁচে থাকার দেশজ প্রবাদ পেলে ইনবক্স করবেন । নম্বর : ৯৪৩৫০৭১৫৬১

 

মঞ্জুশ্রী দাস, সংগীতশিল্পী

সোশ্যাল ডিস্টানসিং, Quarantine, লক ডাউন এই শব্দ গুলো আমাদের অনেকের কাছেই প্রায় নতুন । আর শুনে থাকলেও হয়তো অন্য আরও দশটি সাধারণ শব্দের মতোই শুনেছি। যার ধ্বনি বিদ্ধ করেনি আমাদের জীবন। আলাদা অর্থ এনে দেয়নি জীবনে। হাজার, লক্ষ শব্দের মতোই অভিধানে ছিল সাজানো , সুপ্ত। অভিধানের শয্যা ছেড়ে আজ শব্দ গুলি ওঠে এসেছে আমাদের সামনে কোনো বোতল বন্দি দৈত্যের মত। তছনছ করে দিচ্ছে চারিদিক। অন্ধকারময় বিভীষিকার জীবন।
‘করোনা ভাইরাস’ যন্ত্রনাময় অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের জীবন। আর আজ আমরা নিজেদের আশ্রয় খোঁজে নিচ্ছি ঐ শব্দ গুলোর মধ্যে। এখন আমাদের জীবন, সমাজ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছে এই শব্দ গুলো।
যাক এটা আমার এক উপলদ্ধি। কিন্তু আমরা তো মানুষ, তাই এই সীমাবদ্ধ জীবনেও বাঁচার উপাদান খোঁজে নিতে হয় । প্রতিদিন জীবনের গতিকে সচল করে নিতে কত পথ বেছে নিতে হচ্ছে মানুষকে।
এখন আমার ব্যক্তিগত জীবন কাটানোর দিনগুলি থেকে বলছি । আমি এখন আমার মায়ের ঘরেই বন্দি। করোনার জন্য অনেক অনুষ্ঠান বাতিল হলো। তাই ভাবলাম ঘুরে আসি করিমগঞ্জ। বেড়াতে এসে আটকা পড়েছি ।
তবে এই লক ডাউন এ, আমার একটাই পাওনা হলো , আমি মায়ের ওখানে এসে থাকার সুযোগ পাই না । অফিস আর অনুষ্ঠান-এ দুটো নিয়েই ব্যস্ত থাকি । সারা বছর জুড়েই তো অনুষ্ঠান থাকে ,আর এই সময়টা এভাবে ঘরে বসে কাটানো ভাবাই যায় না ! যাক তবু ভাগ্যিস এই লক ডাউন সময়টা মা বাবুদের সঙ্গে, নাহলে তো শিলচরে আমার ফ্ল্যাটে প্রায় নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে হতো । এখানে তো খাওয়া দাওয়া আড্ডা বেশ জমজমাট। কিন্তু তবু মনের ভেতরে মাঝে মাঝে একটা নিঃসঙ্গতা ,অভাব বোধ হয়। হঠাৎ করে গানের জগৎটা যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। গানহীন জীবনটা তো ভাবতেই পারি না । এই distancing টা মেনে নিতে বড় কষ্ট হচ্ছে ! তবু তো চুপ করে থাকলে হবে না যেহেতু মোবাইল আছে। তাই সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি । সেদিন আমি আমার মেয়ে দুজনে মিলে, পিট সিগারের, We Shall Over Come … গানটির একটি video করেছি।কারণ এই সময়ে মনের সাহসটা যে বড় দরকার ।
যেহেতু সঙ্গে কোনো যন্ত্র নেই তাই লতা মুঙ্গেশকরের গাওয়া সলিল চৌধুরীর, “ও সজনা ররখা বাহার…. ” music ট্রাকে গানটির ভিডিও করেছি। তাছাড়া, ‘দুটি মন আর নেই ……’ , ‘ তোমার ভুবনে ফুলের মেলা, আমি কাঁদি সাহারায়…’ , ‘ তুমি নির্মল করো মঙ্গল করো….’ ,
আর এই সময়টাকে সাক্ষী রেখে ভিডিও এলবাম করেছি , সলিল চৌধুরীর বিখ্যাত গান ‘আজ নয় গুন গুন গুঞ্জন প্রেমের ….’ ।
তাছাড়া আমি আগে কখনো স্টার Maker এ গান করিনি অর্থাৎ করার সময় সুযোগ পাইনি। যাক এই অবসর সময় টাকে কাজে লাগিয়ে…. , ‘ ও সাজনা আর সাথে যেও না…’ , ‘বেদর্দি বলমা তুঝকো …’ , ‘দো নয়না ওর এক কাহানি,..’ এই গান গুলি করলাম ।
এ সবই আজ হয়তো জীবনের রসদ যোগাচ্ছে। সাময়িক, তবুও।
মাঝে মাঝে এক অজানা ভয় হয় ,কারণ প্রকৃতির খেয়াল কী তা তো আমরা জানি না। মনে হয় আমাদের জীবনটাকে কি প্রকৃতি এখানেই বেঁধে দিতে চাইছে? প্রকৃতি কি তার উপর অত্যাচারের প্রতিশোধ নেবার চরম প্রস্তুতি নিচ্ছে ? এসবের কোনো উত্তর খোঁজে পাই না নিজের কাছে। শুধু কামনা করি এই দুঃসময়, দুর্দশা থেকে মানুষ যেন বেরিয়ে আসতে পারে। আমাদের পৃথিবীটা যেন আমার আর আমাদের প্রজম্ম পরম্পরায় বাসযোগ্য হয়ে থাকে।

Comments are closed.

error: Content is protected !!