General public hits the road; demands for improved healthcare
“জনপ্রতিনিধিরা ত্রাণ দিয়ে ফটো উঠতেই ব্যস্ত,” চিকিৎসা পরিষেবার গাফিলতি নিয়ে সোচ্চার হলেন শিবকলোনির বাসিন্দারা
সম্প্রতি শিবকলোনি এলাকার এক ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় ঘন্টার পর ঘন্টা বাড়িতে পড়ে ছিলেন। সকাল ৯টায় এম্বুলেন্সকে খবর দিলেও দুপুর ১টায় সেটি পৌঁছায় এবং রোগীকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। পরে মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং সাধারণভাবেই শিলচর শ্মশানঘাটে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এরপর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয় তার রিপোর্ট পজিটিভ। এবার এলাকায় বাড়তি আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই পুরো ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন স্তরের উদাসীনতা এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ না থাকার পরিষ্কার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।
সেদিন সাধারন মানুষ করোনার ভয়ে পাশে আসেননি, তবে সময়মতো তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হয়তো বাঁচানো যেত, অনেকেই এমনটা মনে করছেন। তবে এক সময় এলাকার লোকেরাই সমস্ত ভয় ত্যাগ করে তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তবু বাঁচানো সম্ভব হয়নি রোগীকে। এবার তারা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বাস্থ্য বিভাগের সব ধরনের অব্যবস্থার বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ তুলেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে রাঙ্গিরখাড়ি পয়েন্টে শিবকলোনি সহ আশপাশের সচেতন নাগরিক জড়ো হন। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে শহরের বিভিন্ন সমাজ সচেতন ব্যক্তিরাও এসে যোগ দেন। প্রায় ঘন্টাখানেক প্রতিবাদ চলে এবং শেষমেষ পুলিশ পাঠিয়ে প্রতিবাদ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বরিষ্ঠ আইনজীবী সৌমেন চৌধুরি প্রথম থেকেই এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আসছিলেন। তিনি এদিন বলেন, “আমাদের চোখের সামনে একজন ব্যক্তি চিকিৎসার অভাবে প্রাণ হারিয়েছেন, এটা কোনভাবেই কাম্য ছিল না। করোনা ভাইরাসের ভয় এমনভাবে মানুষের মনে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা এগিয়ে এসে অসুস্থ ব্যক্তির পাশে দাঁড়াতে প্রথমে সংকোচ করেছেন। তবে এম্বুলেন্স আসতে শহরে ৪ ঘন্টা সময় লাগার কথা ছিল না, ঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে পারলে হয়তো মৃত্যু আটকানো যেত। এজন্য আমরা কার কাছে যাবো? পরে মৃতদেহ ঠিকঠাক পরীক্ষা না করেই পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হল, তারা দাহ করলেন এবং একদিন পরে জানানো হলো মৃতদেহের কোভিড ছিল। এবার যারা দাহকার্যে সহায়তা করেছিলেন প্রত্যেকের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এর দায় অবশ্যই স্বাস্থ্য বিভাগ তথা শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। এত কিছু ঘটে গেছে, কিন্তু কোন জনপ্রতিনিধি এব্যাপারে একটা কথা বলেননি। তারা শুধুমাত্র পাড়ায় পাড়ায় ত্রাণ দিয়ে ফেসবুকে ছবি দিতেই ব্যস্ত থাকেন। অথচ মানুষের দুর্দিনে তাদের মুখ থেকে একটা আশ্বাসের শব্দ আসে না। আমরা অভিযোগ জানাচ্ছি না তবে এই প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় এসে আমাদের নানান স্বপ্ন দেখান। আমরা এই লড়াইয়ে নিজেরাই লড়বো, শুধুমাত্র আমার পাড়ার এক জন লোক মারা গেছেন বলে নয়, যে কোন ব্যক্তির চিকিৎসা ছাড়া মৃত্যু আমরা মেনে নেব না। প্রয়োজনে এই আওয়াজ অনেক উপরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।”
এদিন প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অধ্যাপক পরিতোষ দত্ত, এলাকার প্রাক্তন পুরকমিশনার সজল বণিক, যুব কংগ্রেসের সভাপতি কুশল দত্ত, সংগঠক কৃষাণু ভট্টাচার্য সহ অনেকেই যোগ দেন।
সজল বণিক বলেন, “সরকারের উদাসীনতায় মেডিক্যাল কলেজে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতিদিন দুর্ব্যবহার চলছে। মানুষের জীবনের কোনো মূল্যই থাকছে না অথচ জনপ্রতিনিধিরা একটিবারের জন্যও মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। পরিস্থিতি একদিন স্বাভাবিক হবে তবে সাধারণ মানুষ জনপ্রতিনিধিদের এই ব্যবহার অবশ্যই মনে রাখবেন। সেদিন দুপুরে আমাদের এলাকার অনেকেই শেষমেষ ভয় ভুলে অসুস্থ ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আবার যখন জানা গেল তিনি পজিটিভ ছিলেন, আমরা প্রয়োজনমতো প্রত্যেকের পরীক্ষা করিয়ে নেব। আশাকরি স্বাস্থ্য বিভাগ এক্ষেত্রে আমাদের পাশে থাকবে।
প্রায় একঘন্টা চলার পর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদকারীদের থামানো হয়। বলা হয়, তারা আগে থেকে কোন ধরনের অনুমতি না নিয়েই এধরনের সমাগম গড়ে তুলেছেন। পুলিশের কথা রেখে তারা আপাতত প্রতিবাদ কর্মসূচি স্থগিত রাখেন। তবে এটি আগামীতেও চলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে যান।
Comments are closed.