India-Bangladesh border: 34 families living in no man's land celebrating Durga Puja
অকৃত্রিম প্রাণের স্পন্দন: কাঁটা তারের ওপারে সংকীর্ণতার প্রাচীর ডিঙিয়ে গোবিন্দপুরে ৩৪ টি পরিবারে মাতৃবন্দনা
চন্ডীপাঠ, ঢাকের আওয়াজের সঙ্গে প্রাণের স্পন্দন মিলে মিশে একাকার । মহাসপ্তমীর সকালেই কাঁটাতারের ওপারে নো ম্যান্স ল্যান্ডে অকৃত্রিম আপ্যায়নে হৃদয়ছোঁয়া অনুভূতি। যদিও বোধনের দিন থেকেই উচ্ছাসে মেতে উঠেছিলেন ভারত- বাংলা সীমান্তের ওপারে থাকা নো ম্যান্স ল্যান্ড গবিন্দপুরের বাসিন্দারা । সীমান্তের কাঁটা তারের ১৩৬২/১০ এর কাছাকাছি গবিন্দপুর গ্রামে এবছর সীমিত সামর্থ নিয়ে গ্রামবাসীরা আয়োজন করেছেন দেবীর রাতুল চরণে অর্ঘ্য নিবেদনের। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিনদিনই চলবে মহাপ্রসাদ বিতরণ । এখানে উল্লেখ্য, ভারতীয় মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই ৩৪ টি পরিবার । তবে মাতৃবন্দনায় সবাই একাকার ।
সুতারকান্দি কুড়িখালা গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ০৭ বিএন বিএসএফের অধীনে থাকা গবিন্দপুরে মহাসপ্তমীর সকালে পৌঁছে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও আপ্যায়ন পেয়েছি । আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে কাঁটা তারের ওপারে এসে উপস্থিত হয়েছেন বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, ০৭ বিএন বিএসএফ কর্তৃপক্ষ । আলো নেই সেখানে, নেই কোনো আধুনিকতা, তবে সাত্বিকতা বজায় রেখেছেন নো ম্যান্স ল্যান্ডের ৩৪ টি পরিবারের পুজো কমিটির সদস্যরা । সবার দান ও বিএসএফের সহযোগিতায় আয়োজিত হয় তিন দিনের এই মহোৎসবের । সবাই একই আনন্দে সামিল ।এখানে কোনও ধর্মীয় ভাব প্রাচীর গড়ে তুলতে পারেনি । আনন্দে সামিল ওপারে থাকা মুসলিম পরিবারের সদস্যরাও।
গ্রামেরই অনিল নমঃশূদ্র, জিতেন্দ্র নমঃশূদ্র, দিবেন্দ্র নমঃশূদ্র মায়ের আশীর্বাদপ্রাপ্তির এই আয়োজনের ধারাবাহিকতা আজ অবধি বজায় রেখে চলেছেন। অশুভ শক্তির নাশ করতে এবং শুভ শক্তির বিজয় ধ্বজা উড়াতে দেশ ভাগের আগে থেকে, তাঁদের পূর্ব পুরুষদের আমল থেকেই চলে আসছে এখানে মাতৃবন্দনা। শহরের পূজামণ্ডপগুলিতে আধুনিকতার যে জোয়ার লক্ষ্য করা যায়, গবিন্দপুর গ্রামে তা না পাওয়া গেলেও প্রানের স্পন্দন সব সংকীর্নতাকে ডিঙিয়ে গেছে । প্রতিমা গড়া, মণ্ডপ সাজানো- সব কিছু তাদের নিজের হাতে তৈরি । সীমান্তের ওপারে থাকায় এখানে পৌঁছেনি বিদ্যুৎ সংযোগ । যার কারণে সৌরশক্তি, ব্যাটারির মাধ্যমে করা হয়েছে আলোকসজ্জা ।
এই আয়োজনে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সামিল সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানরাও । এবারে বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, সংবাদ মাধ্যমের উপস্থিতিতে যেন আনন্দে বাড়তি অনুভূতি যোগ হয়েছে । আপ্যায়নে বিন্দু মাত্র খামতি নেই । খুশির সঙ্গে গ্রামবাসীরা নিজেরাই জানালেন, নো ম্যান্স ল্যান্ডে তাদের খবর কোনদিন গণমাধ্যমে পৌঁছেনি । দেবী বরণ করার ইতিহাস তাদের কাছে দীর্ঘদিনের থাকলেও এই প্রথমবার অতিথি বরণ করতে পেরেছেন ।
অতিথি আপ্যায়নে আপ্লুত হয়ে বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ জানালেন নিজের মনের কথা। তিনি বলেন, আন্তজাতিক মানচিত্রে নো ম্যান্স ল্যান্ডে হলে কি হবে গোবিন্দপুরের মানুষের বসবাস সুপ্রাচীন । দেশ ভাগের কোপে গ্রামবাসীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেও মায়ের আরাধনায় কিন্তু এর কোনও প্রভাব পড়েনি । অর্থনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা গ্রামের প্রত্যেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুদ্র আয়োজন কিন্তু শহরের আধুনিকতার পূজা মন্ডপগুলিকে পেছনে ফেলবে । সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য ধন্যবাদ জানান বিএসএফ কমাণ্ডার পি কে থাপাকে ।
Comments are closed.