International Women's day; let's read a few success stories in Barak Valley
The English Version of this story is not available yet, meanwhile, you can read the Bengali version.
সবাই বলছে ‘আজ বিশ্ব নারী দিবস’, এই দিনে আমাদের বরাকের অনন্যারা কি ভাবছেন!
“আমি বুঝতে পারিনি, যে বিংশ শতাব্দীর শেষ সীমানায়
এসে দাঁড়িয়েও এই পুরুষ শাসিত সমাজ
বুদ্ধিমতীদের জন্য অপ্রস্তুত।
আমিই সেই মেয়েটি, যে দেখেছে একটি নারী
কেমন করে নিছক মেয়েছেলে বনে যায়।
চরিত্রের উল্টোদিকে হেঁটে যায় সফল স্বামীদের গিন্নীরা।
শিক্ষার চেয়ে উজ্জ্বলতা পায় বেনারসী শাড়ীর ফুলকি।
বুদ্ধির চেয়ে দ্বিপ্তীমান হয়ে উঠে অন্ধকারে হীরাপান্না”
একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা কি সম্পূর্ণ অস্বীকার করতে পারি কবিতার এই অংশটুকুকে? আজ বিশ্ব নারী দিবস। আমাদের দেশের অনেক জায়গায় সাড়ম্বরে পালিত হয় দিনটি। আবার আমাদেরই এই দেশে বিভিন্ন সব স্থান রয়েছে যেখানে নারী, পুরুষের সমকক্ষ তো দূরের কথা নিজেদের মানুষ বলেই ভাবে না। এক্ষেত্রে নারী দিবস পালন বিলাসিতা মাত্র নয়? কোনও একটা নির্দিষ্ট দিনে আবদ্ধ না থেকে প্রত্যেক দিনকেই নারীর কল্যান সাধনের দিন ভাবা শ্রেয় নয়? আবার অনেকে মনে করেন এই বিশ্ব নারী দিবসকে উপলক্ষ করেও যদি নারীদের নিয়ে চিন্তা করা হয়, সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করা হয়, এগুলোর মাধ্যমে নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে জাগরুক করে তোলা হয়, সে তো নারীরই কল্যানসাধন! হোকই বা একদিন! আমরা অবশ্য আপাতত এ বিতর্কে যাচ্ছি না। তার চাইতে বরং বিশ্ব নারী দিবসকে অযুহাত করে ওই নারীদের সম্পর্কে জেনে নেই যারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে সাফল্যের শিখরে চড়ছেন। তবে আমাদের এই সফল নারীদের বাছাইপর্ব কোনও নিয়ম মেনে নয়। ভবিষ্যতে আরো নারীদের সাফল্যের কাহিনী জানার চেষ্টা অবশ্যই থাকবে।
তবে কবিতার অংশটুকু আর পাঁচটা মেয়ের জন্য লেখা হলেও মোটেই এই নারীদের জন্য নয়।
বরং তাদের কথায় আর পাঁচটা নারীর কাছে সাফল্যের পথ স্পষ্ট হবে। প্রতিবন্ধকতার সিঁড়ি পার করে সাফল্যের সিঁড়ি চড়তে অনুপ্রাণিত হবে।
বীথিকা আচার্য, আইনজীবি
যখন আদালত চত্বরে মহিলাদের পা রাখা তো দূরের কথা পোষ্ট অফিসের আশ পাশ মাড়ানোর কথাও ভাবতেন না কেউ তখন আইনজীবি হিসেবে ১৯৮৪ সালে জেলা আদালত, শিলচর এ প্রথম পা রাখলেন বীথিকা আচার্য। বরাকউপত্যকায় প্রথম মহিলা আইনজীবি হিসেবে। তারও আগে ১৯৭৭ সালে গৌহাটি হাইকোর্টে আইনজীবি হিসেবে কাজ শুরু করেন। পুরুষদের ভিড়ে আইনি তর্কে প্রতিপক্ষ পুরুষদের খবরদারিকে পাত্তা না দিয়ে নিজস্ব যুক্তি তর্ক দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে চাট্টিখানি কথা ছিল না। প্রতিপক্ষ পুরুষদের পাশের স্থানটি শুধু সুনিশ্চিত করেননি শিলচর এ কে চন্দ লো কলেজের পার্ট টাইম প্রথম মহিলা লেকচারার সেই সঙ্গে আইনি প্যাচে বহুবার প্রতিপক্ষকে মুস্কিলে ফেলেছেন।
বাবা এবং ভাইরা আইনজীবি হওয়ার দরুন ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে এই পেশার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। আর সেটা অবশ্যই এক্ষেত্রে তাকে মানসিক প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করেছিল। ছোটবেলায় আস্তে কথা বললে বাবা তাকে বলতেন, আস্তে কথা বলছ কেন? আদালতে দাঁড়িয়ে সবাইকে চূপ করাতে গেলে গলারও জোর থাকা চাই! নিজে তো বটেই অন্য নারীদেরও আইনগত সহ বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পথ দেখিয়েছেন।
তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে স্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করলেন এই সফল আইনজীবি, “ আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য লিঙ্গ সমতার জন্যই আমরা এতদিন ধরে পথ হাঁটছি। এখনও অনেক পথ বাকি। তাই আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নির্দিষ্ট দিনেও যদি আমরা নারীদের নিয়ে ভাবি, তাদের সচেতনতার জন্য কাজ করি তা ই বা মন্দ কিসের? শিশু কন্যা থেকে শুরু করে অন্যদের যৌন নির্যাতন ভীষনভাবে বাড়ছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, যে ঘর শিশুর আশ্রয়স্থল, সেখানেই তারা বেশি নির্যাতিত। এসব কথা আগে বেরিয়ে আসছিল না। এখন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বহু প্রতিষ্ঠিত মহিলা কালো পোষাকে বেরিয়ে আসছেন এবং স্লোগান তুলছেন “ মি টু” মানে আমরাও যৌন অত্যাচারের শিকার। এটা তো মস্ত বড় কথা! এ কথাগুলো সামনে উঠে আসছে। এটাইতো নারী দিবস পালনের সফলতা”।
শিলচর জেলা স্থানীয় অভিযোগ কমিটির চেয়ারম্যানের অভিজ্ঞতা থেকে জানা গেল, তথাকথিত শিক্ষিতদের চাইতে সাধারণ মেয়েরা আইনের দিকটা বোঝেনও ভাল আবার প্রতিবাদ করতেও জানেন।গ্রামের মহিলারা অত্যাচারিত হয়ে ন্যায় পেতে এসে বলেন, “ দিদি ৪৯৮ একটা লাগাই দেইন”। অর্থাৎ তারা এই ধারা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। শহুরে শিক্ষিত নারীরা নির্যাতিত হলেও মুখ খুলেন না লোকনিন্দার ভয়ে। তাই যতই আইন কানুন তৈ্রি হোক, যতই মহিলারা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হোন্, আকাশে উড়ুন, যতই এম্পাওয়ারমেন্টের কথা বলা হোক নারী নিজে সচেতন না হলে মানুষ হিসেবে মর্যাদা পাওয়া হবে না, এক্ষেত্রে বিভিন্ন আইনগত তথা নারীকল্যানমূলক কমিটির সঙ্গে জড়িত এই আইনজীবির কন্ঠে স্পষ্টতই আক্ষেপের সুর ছিল।
রূপাঞ্জনা দে, সি এস
মোমবাতি আলো দিতে সমর্থ। কিন্তু আমি যদি মোমবাতি না হই, তাহলে আমি আয়না হব। মোমবাতির আলোকে প্রতিফলিত করে হলেও আলো ছড়াব। এই যে মোমবাতি না হতে পারলেও আয়না হওয়ার কনসেপ্ট সেটা সব মেয়েদের মধ্যে থাকা উচিৎ। আজকের প্রেক্ষাপটে ভীষন অর্থপূর্ণ একটি উদাহরন দিয়ে শুরু করলেন শিলচরের মেয়ে বর্তমানে কলকাতা নিবাসী সি এস রূপাঞ্জনা দে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনে রূপাঞ্জনার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু এই নির্দিষ্ট দিনেই যদি শুধু নারীদের কল্যাণ সাধনের কথা ভাবা হয় তাহলে এ অর্থহীন। নারী দিবসে অনুষ্ঠানে বক্তারা ছেলেদের উদ্দেশ্য করে বলেন, মহিলাদের উৎসাহিত করা উচিৎ, মহিলাদের সমান সুযোগ করে দেওয়া উচিৎ। রূপাঞ্জনার মতে ছেলেদের বোঝানোর কোনও দরকারই নেই। এটা তো মেয়েদেরই বুঝতে হবে। ‘ওয়মেন এম্পাওয়ারমেন্ট’ কথাটা আজ বহুপ্রচলিত, বহুব্যবহৃত। এই শব্দের প্রকৃত অর্থ জানতে হবে। অন্য কারোর পক্ষেই সম্ভব নয় নারীর ভেতরে ক্ষমতা সঞ্চালনের। নারীকেই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে হবে। আর এটা আসবে নিজের ভেতর থেকে। নটি কোম্পানির বোর্ড ডিরেক্টার রূপাঞ্জনা আক্ষেপের সুরে বলেন, মেয়ে হওয়া নিয়ে গর্ব হওয়া উচিৎ। মেয়ে হওয়াটা একটা সত্য মাত্র। নিছক একটা তথ্য। বেস্ট সেলিং লো বই এর লেখিকা মনে করেন ছেলেদের যেমন রোজগার করা একটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা তেমনি মেয়েরাও যদি বেশি সংখ্যায় চাকুরি করত তাহলে রাস্তায় বেরুতো। আর এর ফলে রাস্তাঘাটে মেয়েদের উপরে ক্রাইম কম হত। এখন উল্টো হচ্ছে, ক্রাইম হওয়ার ফলে মেয়েরা আরো ঘরে ঢুকে যাচ্ছে।
নারী হিসেবে পেশার ক্ষেত্রে বা অন্য কোন স্থানে কোনও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন কি না জানার আগ্রহে অন্য ধরনের এক তথ্য উঠে এল। উত্তর পূর্বাঞ্চল থেকে কলকাতায় যাওয়ায় এবং স্বাভাবিক কারণেই উচ্চারণের ক্ষেত্রে সামান্য পার্থক্য থাকায় তিনি বৈষম্য মূলক আচরণের মুখোমুখি হয়েছেন। চশমা পরেন, গায়ের রঙ কালো বলে সবার পেছনে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কাজের দক্ষতা এবং প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসই এগুলোকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে তাকে সাফল্যের সিঁড়িগুলো ভাঙতে সাহায্য করেছে। এতো গেলো স্বদেশের কথা, বিদেশেও অদ্ভুত এক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন রূপাঞ্জনা। ইতিমধ্যে ২৪ টি দেশ ভ্রমণ করে নিলেও সেবার কিন্তু পড়াশুনার জন্যই জার্মানিতে পাড়ি দেন নিজের মেয়েকে শ্বশুর আর শ্বাশুড়ির কাছে রেখে। অথচ জার্মানিতে থাকাকালীন বিদেশিরা তাকে জর্জরিত করে, মেয়েকে দেশে ফেলে রেখে বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য। ‘মায়ের কর্তব্য মেয়েকে দেখাশুনা করা, এভাবে মেয়েকে ফেলে রেখে কেউ আসে?’ বিদেশিরা যখন এই মনোভাব পোষণ করছে তখন দেশে বসে পরম আদরে শিশুকন্যাটির দেখাশুনা করছেন দাদু এবং ঠাকুমা।
নারী দিবসে নারীকে নিয়ে অনেক কিছু ভাবনার ফাঁকে হঠাৎই মনের মধ্যে উঁকি মারল নারীরা কি নিজেদের তুলনায় অন্যদের নিয়ে একটু বেশিই ভাবে না? অন্যদের পরিবেশন করে যা কিছু অবশিষ্ট থাকে তাই দিয়েই তৃপ্ত থাকে নারী। পোষাক আষাক সবকিছুতে নারী আপোস করে বেশি। সবার শেষে কাজ শেষ করে ঘুমানোর রীতিটাও কিন্তু নারীরই। ঘুম পেলেও ঘুমোতে পারবে না নারী। কথাগুলো সত্য বলে মানলেও নিজের জীবনে মোটেই মানেন না রূপাঞ্জনা। তার ১০ বছরের মেয়ে, ভারতের সবচেয়ে কনিষ্ঠ ঔপন্যাসিকদের অন্যতম, তানিস্থা নন্দীকেও ওই শিক্ষাই দিচ্ছেন যে মেয়েদেরও পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন রয়েছে। সবার শেষে খাবার খাওয়া কিংবা শরীরের বিশ্রাম চাইলেও সব শেষ হওয়ার অপেক্ষা করা এগুলো নিছকই কিছু পুরনো রীতি।সেই রীতিকে পেছনে ফেলে যদি নারী নিজের জন্য ভাবে তাতে আখেরে লাভ হবে আমাদেরই সমাজের।
দোলা দেব, সমাজসেবিকা, উজ্জ্বীবন স্পাস্টিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা
নারী যেদিন তার মনের সৌন্দর্য, মনের ভালবাসা দিয়ে নিজের পরিবার সামলাবে সদিন সেই পরিবার সুষ্ঠু সমাজের জন্ম দেবে। সেই সমাজের হাত ধরে জেলা, রাজ্য এবং সবশেষে উন্নত দেশ উপহার পাব আমরা। সমাজসেবিকা তথা উজ্জ্বীবন স্পাস্টিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা দোলা দেব নারী দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আরো বলেন যে নির্দিষ্ট একদিন নারীর কথা ভেবেই শেষ হয়ে যেতে পারে না, কাজ করতে হবে প্রত্যেক দিনই।
নিজেদের প্রতিষ্ঠা কিংবা নিজেদের আনন্দের জন্য আমরা সাধ্যের বাইরে গিয়েও চেষ্টা করি। কিন্তু যিনি অন্যের বিশেষভাবে ওইসব বাচ্চাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টায় ব্রত যারা কোনো না কোনোভাবে অস্বাভাবিকতার শিকার হয়ে এই পৃথিবীতে বাঁচার লড়াই করছে, তাদের জন্য কাজ করছেন দোলা দেব। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল উজ্জ্বীবন স্পাস্টিক সোসাইটি।
সমাজসেবামূলক এই বৃহৎ কাজের পথটা কিন্তু মসৃ্ন ছিল না। চলার পথে ছিল অজস্র কাঁটা। বলা বাহুল্য কাঁটাগুলোকে পায়ে মাড়িয়ে বরাকউপত্যকার আরো অনেকের সহযোগিতায় ১৯৯৩ সালের ৫ মে থেকে কাজ শুরু করে এই সোসাইটি। প্রারম্ভটা ছিল খুবই কঠিন।দোলা দেবের ভাষায় “ সবচেয়ে প্রথমে আমাকে লোকে যখন বলতো, আতুর ল্যাংড়ার জন্য কাজ করছ কেন? তখন মনে খুব কষ্ট হত। সমাজের লোক এদের মানুষ বলে গন্য করে না”। আমাদের সমাজের এই চেহারা সত্যি হৃদয়বিদারক। তবে দোলা দেবকে এগুলো বলে আটকানো যায়নি। ১৯৯৮ সালে পাঁচ কাঠা জমি পায় সংস্থা। তার জন্যও কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। শুধু চা বিস্কুট খেয়ে সারাদিন দৌড়াদৌড়ি করার ফলস্বরূপ দোলা দেব দেড় মাস বিছানায় অসুস্থ ছিলেন। ঘটনাটা উল্লেখের কারণ কোনও মানুষ যদি তার লক্ষ্য স্থির করে নেয় তাকে আটকায় কার সাধ্যি? তবে এই কাজে আরও অনেকের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছিলেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডক্টর সুজিত কুমার নন্দী পুরকায়স্থ, প্রান্তজ্যোতির কালাদা, সাজ্জাদ চৌধুরীর।
প্রসঙ্গ ক্রমে যখন জানতে চাইলাম, এতসব কাজের ফাঁকে কখনও নারী বলে কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে? উত্তরটা কিন্তু মন ছুঁয়ে গেল। “ছেলেদেরও আমাদেরই মত দুই পা, দুই হাত, মস্তিষ্ক- সব এক। ওরাও মানুষ, আমরাও। তাই এ ক্ষেত্রে নিজেকে মানুষ হিসেবেই দেখেছি, নারী বলে নয়”।
কথা প্রসঙ্গে জানালেন, বিভিন্ন সব জায়গায় তাদের যেতে হয়। মা বাবাকে বোঝাতে হয়, সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হয়। ওই স্পেশ্যাল বাচ্চাগুলো যে অক্ষম তাই ওরা যেন সমাজের নীচু স্তরের মানুষ। কিংবা মানুষই নয়।ওদের দ্বারা কিছুই সম্ভব নয়। ওদের জন্য কিছু না করাই ভাল। এমন মনোভাবেরও মোকাবিলা করতে হয়েছে।
Posted by Triparna Chakrabarty on Sunday, December 3, 2017
কাজের সাফল্য নিয়ে ছোট্ট করে বল্লেন, “ এইসব স্পেশ্যাল বাচ্চাদের একটু একটু করে কাজ শিখে নেওয়া, কিছুটা হলেও স্বাবলম্বী হয়ে উঠা, ওদের উন্নতি আমার খুশীর কারণ। ওদের মুখের হাসিই আমার সাফল্য”।
ঝুমুর পান্ডে, লেখিকা
কেউ সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা পালন করেন সমাজ সেবা করে, কেউবা পালন করেন নিজের লেখনীকে হাতিয়ার করে। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই কলম হাতে নিয়েছিলেন বরাকউপত্যকার একজন স্বনামধন্য লেখিকা ঝুমুর পান্ডে। কলমকে মাধ্যম করে যদি মানুষের কথা সমাজের কথা তোলে ধরায় কিছুটা পরিবর্তন আসে, তাতেই তার লেখার সার্থকতা বলে মনে করেন ঝুমুর। চা বাগান এবং খেটে খাওয়া মানুষদের নিয়ে গল্প লেখতে যিনি ভালবাসেন সেই লেখিকার মতে নারীদিবস পালনের প্রাসঙ্গিকতা এখনো নিশ্চয়ই রয়েছে। কারণ মেয়েদের সমানাধিকার নিয়ে লড়াই এখনো শেষ হয়নি। কন্যা ভ্রূণহত্যা, ধর্ষনের সংখ্যা বৃ্দ্ধি পাওয়ায় একটা কথাতো স্পষ্ট নারীরা এখনো নিরাপদ নয়। নারী আন্দোলন এবং সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত লেখিকা মনে করেন মেয়েদের আরো সচেতন, আরো সাহসী হওয়া জরুরী। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে বা রুখে দাঁড়ালে বিপরীত পক্ষকে অবশ্যই ভয় পাইয়ে দিতে পারে নারীও। তবে সেই সঙ্গে ঝুমুর এও মনে করেন নারীদের পক্ষে এখন অনেক আইন হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে সেই আইনের অপব্যবহারও চলছে। বলা বাহুল্য এতে ক্ষতি সমাজেরই হচ্ছে। তাই লেখিকা স্পষ্ট ভাষায় জানান, মেয়েদের সমানাধিকার চাইলেও নারীবাদীর নামে পুরুষবিদ্বেষী নন মোটেই।
তার গল্প তামিল, তেলেগু, ওড়িয়া, ইংরেজি, হিন্দি, অসমিয়া, সাদরি ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।তার ‘মধুরাবতী সাঁতার কাটে’ গল্প নিয়ে দূরদর্শন টেলিফিল্ম তৈ্রি করেছে। সাহিত্যের জন্য পাওয়া বেশ কয়েকটি পুরস্কার এবং সন্মানের অধিকারীনি ঝুমুর উঠতি লেখক লেখিকাদের লেখায় কাউকে অনুকরণ না করে নিজস্বতার ছাপ থাকার আশা রাখেন।
মঞ্জুশ্রী দাস, সঙ্গীতশিল্পী
“মায়ের গান শেখার খুব ইচ্ছে ছিল, কিন্তু পারেননি। মেয়েদের চট করে বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। বাইরে গিয়ে গান শেখা নিষিদ্ধ ছিল। তাই মা আমাকে গান শিখিয়েছেন। শিল্পী করে তোলার চেষ্টা করেছেন”। বরাকউপত্যকার বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী মঞ্জুশ্রী দাস মায়ের কথা টেনে জানান, মুখে বলা হয় নারী পুরুষে ভেদাভেদ নেই। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে সবসময় কথাটা সত্যি নয়। নারী পুরুষ যদিও একে ওপরকে সহযোগিতা করে চলা উচিত, তবে মেয়েরা কিন্তু ততটা সহযোগিতা পাচ্ছে না।
ইন্ডিয়ান আইডল ২ এ থিয়েটার রাউন্ড উত্তীর্ণ হওয়া মঞ্জুশ্রী মনে করেন স্বপ্ন দেখা খুব দরকার। আর তারপরে চাই সেই স্বপ্ন পূরণের প্রচেষ্টা। শিল্পী অকপটে জানালেন, আমার চ্যালেঞ্জ আমি নিজেই। নিজের সঙ্গে চলে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতা।গানের জন্য নিজেকে কতটা উজাড় করে দিতে পারি সেটা আসল। কলকাতার তারা টিভি, রূপসী বাংলা, ডি ডি বাংলায় অনুষ্ঠান করে থাকেন শিল্পী।শিলচরের মঞ্চে নিয়মিত গান করে থাকেন তিনি। বিধান লস্করকে শিল্পী মঞ্চগুরু বলে উল্লেখ করে বলেন, মঞ্চানুষ্ঠানে গান করার ব্যাপারে মঞ্জুশ্রী অনেক সহযোগিতা পেয়েছেন এই লোকসঙ্গীত শিল্পীর কাছ থেকে।
ছোট জায়গায় থাকার জন্য সাফল্য পেতে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ করতে হয়। এখন ইন্টারনেটের যুগ হওয়ায় তবুও কিছুটা সুবিধে হয়েছে। তবে শহীদের দেশে জন্ম নিয়েছেন বলে শিল্পী গর্বিত। সরকারি বিভাগে চাকুরীরত মঞ্জুশ্রীর অফিস, সংসার দেখাশুনা এবং নিয়মিত গানের অনুষ্ঠান, টিভি, রেডিও সব সামলাতে কষ্ট হয়তো বটে কিন্তু সেটা শারীরিক, মানসিক নয়। বরং মানসিক তৃপ্তিটা টনিকের মত কাজ করে আরো সুন্দরভাবে বাঁচার। সবগুলোতে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হলেও শিল্পী মনে করেন মেয়েদের স্বাধীনতার স্বাদ পেতে গেলে স্বনির্ভর হওয়া বা আর্থিক দিক থেকে স্বাধীন হওয়া সবচাইতে প্রয়োজন।
(ওদের কথা আপাতত শেষ , আমাদের গর্ব বরাকের এই অনন্যাদের অনেক অনেক অভিনন্দন। আগামীতে আরও অনেক অনেক অনন্যাকে আপনাদের কাছে নিয়ে আসব এমন আশা রাখছি।)
Comments are closed.