
Kidnapped girl rescued from Ashram Road
প্রেমিকের নাম করে ভুয়া ফোন, দিনদুপুরে অপহৃত শিলচর আশ্রম রোডের তরুণী, অচেতন অবস্থায় বিকেলে উদ্ধার
“প্রেমিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়েছে, তাকে শিলচর মেডিকেল কলেজে রাখা হয়েছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে,” এমনটা বলে শিলচর আশ্রম রোডের এক তরুণীকে সোমবার দুপুরে অপহরণ করে কিছু দুষ্কৃতী। কিছুক্ষণ পর তরুণী তার তথাকথিত প্রেমিক অভিকে ফোন করে কাঁতর সুরে জানায়, তার খুব যন্ত্রণা হচ্ছে, সে কোথায় আছে জানেনা। অভি একদম বিচলিত না হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে, তুই আমাকে আগে ফোন কেন করলি না? আমি কি পুলিশের কাছে খবর দেবো? এতে তরুনীর জবাব, ‘না একদম যাবিনা, তাহলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।’ সে কোথায় আছে জিজ্ঞেস করলে জানায়, একটা জঙ্গলে আছে, বুঝতেই পারছে না জায়গাটা কোথায়। এরপর পরিবারের সদস্যরা থানায় খবর দেন। পুলিশ ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে একসময় কাঁঠাল বাগানের ভেতরে ফোনের সিগন্যাল পায়। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ আশ্রম রোডের সেতুর কাছে এক টুকটুকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রায় অচেতন অবস্থায় রয়েছে মেয়েটি, তলপেটে ব্যথা রয়েছে, তড়িঘড়ি শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে সন্দেহজনক কিছু লোককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করলেও এব্যাপারে পরিষ্কার কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ। তবে যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তাতে জানা যায়, শিলকুড়ী এলাকার রাহুল নামের এক যুবক মেয়েটিকে অপহরণ করেছিল। মেয়েটির প্রেমিক অভি টুকটুক চালায়, তার বাড়ি আশ্রম রোড সানলিট হাসপাতালের কাছাকাছি। সোমবার দুপুরে মেয়েটিকে ফোন করেছিল রাহুল, অভির নামে মিথ্যে কথা বলে তাকে অটোতে উঠায়, এরপর আরও কয়েকজন মিলে আটকে তাকে বেশ কয়েকবার কিছু একটা ইনজেকশন দেয়। অটোতে যারা ছিল তাদের মুখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকায় মেয়েটি তাদের চিনতে পারেনি।
অপহরণের পর প্রথমেই মোবাইল অফ করে দেওয়া হয়, পরে কোনও একটা অজানা জায়গায় ফোন অন করে অভির নাম্বারে ডায়াল করে তারা। তরুণীকে বলে অভির সঙ্গে কথা বলতে। সে কাতর সুরে অভির কাছে অনুরোধ করে তাকে যেন বাঁচানো হয়। কিন্তু অভি উল্টো মেয়েটিকে দোষারোপ করে, এমনটাই শোনা গেছে তাদের মোবাইলের কথোপকথনের রেকর্ডিংয়ে। কিছুক্ষণ মেয়েটির অনুরোধ করার পর যখন অভি রাজি হয়নি, তখন তার ফোন ছিনিয়ে নিয়ে কড়া ভাষায় এক যুবক বলে, ‘তোকে যে জিনিস আনতে বলেছি সেটা নিয়ে আয় না হলে এই মেয়ের ক্ষতি হবে।’
তখন অভির হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নেন তার মা, তিনি মেয়েটিকে চেনেন। স্পষ্ট গলায় বলেন, তোমাকে তো আমরা সেদিন দেখে এলাম, আজ হঠাৎ কি হল? কোথায় আছো তুমি? মেয়েটি বলে আমি জানিনা একটা জঙ্গলে আছি।
এরপর অভির নম্বরে আবার ফোন করে অপহরণকারী ছেলেটি। বলে আমাকে চিনতে পারছিস? আমি রাহুল, শিলকুড়ির রাহুল। প্রথমে অভি চিনতে অস্বীকার করলেও তার মা বলেন, বাবা আমি তো তোমায় চিনি। সে পাল্টা বলে, মাসিমা আপনি এর মধ্যে ঢুকবেন না, আপনি তো জানেন আপনার ছেলে অভি একটি মেয়েকে ভালোবাসে। তাকে বলুন, যদি এই মেয়েটিকে বাঁচাতে চায় তাহলে এখনই শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আসতে।
দুজনের কথোপকথনের মধ্যে রাহুল জানায়, একসময় অভিকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছিল তার প্রেমিকাকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে এবং তার শ্লীলতাহানি করবে। এর উত্তরে অভি বলেছিল, ‘তুই কর, আমাকেও সুযোগ দিস।’
মহিলা বলেন তুমি এরকম কথা বললে আমি পুলিশে কাছে যাব। রাহুল পাল্টা বলে, যদি মেয়েটির জীবন বরবাদ করতে চান তাহলে পুলিশের কাছে যান।
এভাবে অনেক কথা হওয়ার পর শেষমেষ রাহুল ফোন কেটে দেয়। জানাজানি হওয়ার পর পুলিশের কাছে খবর দেওয়া হয়। বিকেলে মেয়েটিকে উদ্ধারের পর দুই পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। শোনা গেছে অভি সহ আরও কয়েকজনকে সন্দেহ করা হচ্ছে এবং কিছু কিছু লোককে আটকও করা হয়েছে।
এটি অপহরণের পাশাপাশি শ্লীলতাহানীর ঘটনা হতে পারে কিনা, এনিয়ে পুলিশের বয়ান, “মেয়েটি শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলতে পারবেন তার সঙ্গে এমন কোনও ঘটনা হয়েছে কিনা।”
Comments are closed.