Also read in

Manipur MP in Silchar demands "Mahasadak's" extension upto Myanmar

সার্ভে অব ইন্ডিয়ার নির্ধারিত সীমানা লঙ্ঘন করে অন্যায় করছে মিজোরাম, বললেন মনিপুরের সাংসদ আরকে রঞ্জন সিংহ

দেশের রাজ্যগুলির মধ্যে হোক বা ভারতবর্ষের সঙ্গে অন্যান্য দেশের সীমানা, এগুলো নির্ধারণের ক্ষেত্রে সব থেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সার্ভে অব ইন্ডিয়া। তারা কাল্পনিকভাবে সীমানা নির্ধারণ করে না। ভারতের সঙ্গে চিন বা পাকিস্তানের যে সীমান্ত রয়েছে, সেটা নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ভারতবর্ষের সরকারের হয়ে কাজ করে সার্ভে অব ইন্ডিয়া। তাই মিজোরাম যেভাবে সার্ভে অব ইন্ডিয়ার নির্ধারণ করা সীমানা লঙ্ঘন করে অসমের জমি দখল করেছে, আমরা তার সমর্থন করিনা, এমনটাই বললেন মনিপুরের সাংসদ আরকে রঞ্জন সিংহ। শনিবার তিনি অল আসাম মনিপুর স্টুডেন্টস ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শিলচর আসেন।

এদিন শিলচরের গান্ধী ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, অসম রাজ্যে মণিপুরি ভাষাকে শিক্ষা সহ প্রত্যেক সরকারি স্তরে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জোড়ালো আওয়াজ গড়ে তোলা। মনিপুরের একমাত্র বিজেপি সাংসদ আরকে রঞ্জন সিংহের উপস্থিতিতে শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল সহ অনেকেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আরকে রঞ্জন সিংহ তার বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অবিভক্ত অসমের অংশ ছিল মিজোরাম, শুধুমাত্র ত্রিপুরা এবং মনিপুর স্বাধীন রাজার অধীনে ছিল। আমরা পরবর্তীতে ভারতবর্ষে সঙ্গে যোগ দিই এবং কেন্দ্র সরকারের নির্ধারিত সীমানা মেনেই দেশের অংশ হিসেবে রয়েছে আমাদের রাজ্য। হঠাৎ করে মিজোরাম যেভাবে অসমের জমি দখল করছে, এটা কোনও সঠিক পদ্ধতি নয়। যদি সীমান্ত নিয়ে সমস্যা থাকে তাহলে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে দুই রাজ্যের মধ্যে এভাবে আগ্রাসন এবং এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করা একেবারেই অনুচিত, এমনটাই মনে করি আমরা।’

১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সারা দেশকে একসূত্রে জুড়ে দিতে ইস্ট ওয়েস্ট করিডর নামে চার-লেন রাস্তা ঘোষণা করেছিলেন। অনেক বাধা-বিপত্তির পর শিলচর শহর পর্যন্ত রাস্তাটি আসবে বলে ঠিক করা হয়। পরবর্তীতে মনিপুর রাজ্যের তরফে দাবি উঠে, রাস্তাটি অন্তত ইম্ফল পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়া হোক। এব্যাপারে মনিপুরের সাংসদের বয়ান, ‘শুধুমাত্র ইম্ফল নয় ইস্ট-ওয়েস্ট করিডরকে মনিপুর মায়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়া হোক। এতে এই প্রকল্পটি আন্তর্জাতিক স্তরে গিয়ে পৌঁছবে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমরা সরাসরি যুক্ত হয়ে যাব। অটল বিহারী বাজপেয়ীর মত মনীষী যে চিন্তা করেছিলেন, তাকে শ্রদ্ধা জানানোর সবথেকে বড় পদক্ষেপ হবে এই রাস্তাকে আন্তর্জাতিক রুটের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া। আমরা এব্যাপারে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, আমাদের দাবি জানানো হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামীতে রাস্তাটি মনিপুর মায়ানমার সীমান্ত শহর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হবে।’

নারকটিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ড্রাগস পাচারের একটি আন্তর্জাতিক রুট রয়েছে যা মায়ানমার থেকে মনিপুর হয়ে বরাক উপত্যকায় ঢুকে এবং করিমগঞ্জ ও আগরতলা হয়ে বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এব্যাপারে মনিপুরের সাংসদের স্পষ্ট বয়ান, ‘শুধু মায়ানমার নয়, মনিপুর রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় এখন অবৈধভাবে পোস্ত চাষ হচ্ছে। এই পোস্ত থেকেই ড্রাগস বানানো হয় যা আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক দামে বিক্রি হয়। পাচারের সময় মনিপুর এবং বরাক উপত্যকার যুবকদের মধ্যে ড্রাগস বিতরণ হয় এতে যুবসমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা সরাসরি কেন্দ্র সরকারের কাছে এব্যাপারে জানিয়েছি, তবে এখনও কোনও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রথমে মনিপুরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা পোস্ত চাষ বন্ধ করতে হবে, সেজন্য রাজ্যের নারকটিক বিভাগকে আরও শক্ত করে তুলতে হবে। পাশাপাশি ড্রাগস বিরোধী কঠোর আইন পাশ করতে হবে।’

এব্যাপারে আরকে রঞ্জন সিংয়ের বয়ান, ‘মনিপুরি শুধু উত্তর-পূর্বের একটি রাজ্যের ভাষা নয়, কয়েকশো বছর পুরনো আমাদের ভাষার ইতিহাস। স্বাধীন ভারতের মানচিত্র নির্ধারণের অনেক আগে থেকেই এই অঞ্চলে মণিপুরি ভাষা এবং সংস্কৃতি সমৃদ্ধভাবে রয়েছে। উত্তর-পূর্বের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে মণিপুরি ভাষা ও সংস্কৃতির। পরবর্তীতে ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছে, একসময় অসম রাজ্য বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা রাজ্যে পরিণত হয়েছে। তবে অসমের সংস্কৃতিতে মনিপুরিদের অবদান অনস্বীকার্য। এ রাজ্যে বসবাসকারী মণিপুরিরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের ভাষার স্বীকৃতির দাবি তুলে আসছেন। আমরা চাই অসম সরকার উত্তর-পূর্বের ইতিহাসে মনিপুরি ভাষার সমৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে অন্যান্য ভাষা ও সংস্কৃতির মত মনিপুরিকে স্বীকৃতি দিক। এটা তাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।’

সারা আসাম মনিপুরি ছাত্র সংগঠন সাংসদ আরকে রঞ্জন সিংহের কাছে একটি স্মারকপত্রের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে। ছাত্র সংগঠনের সভাপতি পি নীলকান্ত সিংহ, সম্পাদক ইয়েঙখম ইমোইনু ছাড়াও সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা এতে স্বাক্ষর করেন।

শনিবার গান্ধী ভবনে সারাদিন ব্যাপী একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এতে মনিপুরের সাংসদ সহ বিভিন্ন অতিথিরা যোগ দেন। অনুষ্ঠানে মনিপুরি ভাষার ইতিহাস সংস্কৃতি ইত্যাদির ব্যাপারে আলোকপাত করেন অনেকেই। পাশাপাশি প্রত্যেকেই একমত হয়ে বলেন অসমে মণিপুরি ভাষাকে অন্যান্য ভাষার মতোই সম মর্যাদা দেওয়া উচিত। অনুষ্ঠান আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন লোকনাথ সিংহ, এইচ দেবাসিশ সিংহ, সত্যেন্দ্র সিংহ সহ অন্যান্যরা।

Comments are closed.

error: Content is protected !!