Movie CHHAAPK : a Review from a different dimension
কোনও কোনও ছবি দেখে ফেরার পরও এর ছাপ থেকে যায় আমাদের মননে, মগজে। দীর্ঘদিন ধরে। আর যে ছবিকে স্থান কালের গন্ডিতে বাঁধা যায় না সে ছবির কথা তো আলাদাই। আর সেজন্যই বোধহয় কেউ শিলচরে বসেও “ছপাক” দেখার পর এই ছবি নিয়ে দু চার কথা লেখার জন্য কলম তুলে নিতে বাধ্য হয়। আর এখানেই ‘ছপাক’ অন্য সব ছবি থেকে আলাদা হওয়ার দাবি রাখে।ছবিটি সম্পর্কে কী বলছেন দীপক সেনগুপ্ত?
“ছপাক” সিনেমা দেখলাম। প্রায় সব আসনই ফাঁকা, দর্শক বলতে আমরা কয়েকজন। অথচ একই সময়ে তানাজিঃ দি আনসাং ওয়ারিয়র সিনেমায় হল ভর্তি। শুধু শিলচরেই নয় সর্বত্র একই অবস্থা। খবরে প্রকাশ ” ছপাক” যখন ২১ কোটির ব্যবসা করছে তখন ” তানাজিঃ দি ওয়ারিয়র ” ৭৫ কোটির মাত্রা অতিক্রম করে সৌগরবে ১০০ কোটির দিকে এগিয়ে চলছে। একই সময়ে রিলিজ হওয়া দুই সিনেমা ব্যবসায়িক সাফল্যের আকাশ পাতাল পার্থক্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ প্রয়োজন, বিশেষ করে ” ছপাক” সিনেমার মালতী ও যখন যোদ্ধা হিসাবে তানাজিঃ দি আনসাং ওয়ারিয়র ” থেকে কোন অংশেই কম নয়। জনসংখ্যার যে অংশ সিনেমার ব্যবসায়িক সফলতা বিচারে নির্ণায়ক ভুমিকা নেয়, শ্রেণির বিচারে তারা মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত। নিম্ন মধ্যবিত্তদের অবচেতনে একটা রঙ্গিন জগৎ থাকে, তারা তাদের না পাওয়াকে বলা ভাল স্বপ্নকে বাস্তব হতে দেখবে বলেই সিনেমায় যায়। সিনেমার নায়ক নায়িকাদের প্রেম ভালোবাসা নাচ গান ইত্যাদিতে বাস্তবকে ভুলতে চায়। ” ছপাকের” মালতী ভাগ্য বিড়ম্বিত নিজেই নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারের প্রতিনিধি, ভাই অসুস্থ, মদ্যপ বাবা, না আছে ঘরে সুন্দর আসবাব, না নিজে সুশ্রী। মানুষ বাস্তব থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়। গরম কফিতে চুমুক দিয়ে পপকর্ণ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই মুখে দিয়ে কবির সিং, তানাজি কিংবা বাহুবলীদের পৌরুষে উত্তেজিত হতে চায়, তুলনামূলক ভাবে ” ছপাকের” মালতী নিস্প্রভ। না আছে শারীরিক আবেদন, উত্তেজনা, উদ্দাম প্রেম, ভালোবাসা ও মিলন দৃশ্য বা পৌরুষের হুংকার। কিছুই নেই, কিন্তু যা আছে তা দেখতে গেলে তেমন চোখ লাগে যে চোখে অশ্রু বর্ষার মেঘের মত জমাট বাঁধে, তেমন মন লাগে যে মন অন্যের ব্যথায় অনুরণিত হয় অথবা একটি হৃদয় লাগে যেখানে প্রজ্বলিত থাকে প্রেমের হোমাগ্নি। সকলের থাকে না, থাকে না বলেই সংসারে ক্রমবর্ধমান নৈরাশা, প্রেমহীনতার দাবানলে মানুষকে দগ্ধ হতে হয়। নিয়নের চোখ ঝলসানো আলোয় যারা সৌন্দর্যকে খুঁজে পেতে চান তাদের জন্য ” ছপাক” নয়,” ছপাক তাদের জন্যই যারা অন্ধকারে মোমের আলোয় কিংবা জোনাকির ডানায় সৌন্দর্য দেখতে ইচ্ছুক।
পুরুষতন্ত্রের প্রতি যে মোহ ” কবীর সিং”, বাহুবলী, তানাজীদের নায়ক করে সেই পুরুষতন্ত্রই কিন্তু মালতীদের দিকে এসিড ছুঁড়ে মারে। এসিড আক্রান্তদের নিয়ে যে এমন কোন গল্প হতে পারে, সিনেমা হতে পারে আগে হয়তো কেউ ভাবেনি। ধর্ষণ নিয়ে অনেক সিনেমা হয়েছে ” আদালত ও একটি মেয়ে” ” আক্রোশ ইত্যাদি এমনকি শ্লীলতাহানি নিয়েও হাল আমলে ” পিঙ্ক” সিনেমা হয়েছে কিন্তু এসিড আক্রান্তদের নিয়ে! না হয়নি, আমি অন্তত দেখিনি। মেঘনা গুলজার নির্দেশিত, দীপিকা পাড়ুকোন প্রযোজিত এবং অভিনীত এই সিনেমা তথাকথিত অর্থে বানিজ্যিক সিনেমা নয়, ডকুমেন্টারি ফিল্মও নয়, আবার আর্ট ফিল্মের আঁতলামিও নেই, আসলে “ছপাক” সিনেমাকে কোন বিশেষ পর্যায়ভুক্ত না করে বলা ভাল নিজেই একটি ধারার জন্ম দিল, যেখানে বাস্তব আরো বেশি বাস্তব হয়ে চেতনাকে আঘাত করে নান্দনিকতা দিয়ে শৈল্পিক উৎকর্ষতা দিয়ে। সিনেমায় নায়ক নায়িকার অনুচ্চারিত ভালোবাসার আভাস দেহকে অতিক্রম করে মনকে আলিঙ্গন করে। দীপিকা জে এন ইউ তে যাওয়ায় যারা সিনেমা দেখেননি তারা এক অর্থে ভালোই করেছেন কেননা ঐশীর উপর নেমে আসা বর্বর পুরুষতন্ত্র আর সিনেমার মালতী কিংবা বাস্তবের লক্ষী আগরওয়ালের উপর একই পুরুষতন্ত্র আঘাত হানে এবং তিন জনই একই পদ্ধতিতে পুরুষতন্ত্রকে প্রত্যাহ্বান জানান। গোদার, আইজেনস্টাইন, মৃণাল সেন কিংবা চার্লি চ্যাপলিনের জীবন এবং শিল্পবোধ কিন্তু অভিন্ন এবং অবশ্যই প্রতিষ্ঠান বিরোধী। আমরা যদি রাজনীতির বিচারে সিনেমাকে ব্রাত্য করি তবে নিজেদের সংবেদনশীলতাকেই ব্রাত্য করে কফিনে পেড়েক মারব।
Comments are closed.