Also read in

NRC: How many can afford to fight such a lengthy and expensive legal battle

অবশেষে রাধারমন গোস্বামীর পালিত কন্যা বিদেশি তকমা মুক্ত, কতজন কতদিন পারবে এই আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে?

‘ডি’ ভোটার তকমা থেকে মুক্তি পেলেন করিমগঞ্জের বারইগ্রাম রাধারমন আশ্রমের বৈষ্ণবী ৮৪ বছর বয়স্কা প্রীতি বালা বৈষ্ণবী। সুদীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর করিমগঞ্জের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল চূড়ান্ত আদেশ জারি করে তাকে ভারতীয় নাগরিক বলে ঘোষণা করেন।

প্রীতিবালা ওরফে প্রমোদিনী রায়ের জন্ম অবিভক্ত ভারতে বর্তমান পূর্বতন পাকিস্থানে। ১৯ বছর বয়সে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে চলে আসেন ভারতে। রাই মোহন রায় ও আনন্দময়ী রায়ের মেয়ে প্রমোদিনীর বিয়ে হয় বিরজা কান্ত রায়ের সঙ্গে, তখন তার বয়স ২৩ বছর। দুর্ভাগ্যক্রমে স্বামী কিছুদিন পরেই স্ত্রীকে ছেড়ে ফিরে যান পূর্বপাকিস্তানে এবং সে দেশে মারা যান তিনি। বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করে হাইলাকান্দির পাঁচ গ্রাম থেকে করিমগঞ্জের পাথারকান্দির শেরপুরে চলে আসেন প্রমোদিনী। সেখানেই প্রীতিবালা নাম ধারণ করে বারইগ্রাম রাধারমন গোস্বামী জিঁউর আশ্রমের বাসিন্দা হয়ে যান তিনি। রাধারমন গোস্বামীর পিতৃপরিচয়ে আশ্রমে দিন কাটে তার‌। ৫০ বছরের অধিক সময় থেকে তিনি বারইগ্রামে প্রভুর মন্দিরে পূজার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। করিমগঞ্জে সীমান্ত পুলিশ তাকে বিদেশি হিসেবে সন্দেহ করে। যদিও ১৯৬৬, ১৯৭০, ১৯৯৭, ২০০১ এবং ২০১১ সাল পর্যন্ত পাঁচগ্রাম এবং বারইগ্রামের ভোটার তালিকায় নাম ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার সময় শুনানির ডাক পেলেও সব তথ্য সঠিকভাবে পেশ করতে না পারায় ২০১৬ সালে পুলিশ তাকে বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে ৪৪৪-২০১৬ নং মামলা দায়ের করে। মামলাটির শুনানি চলাকালে সাক্ষী ইত্যাদির পাশাপাশি ১৯৭০ সালের ভোটার তালিকার প্রতিলিপি পেশ করে নিজের ও নিজের ভাইয়ের নাম থাকার তথ্য-প্রমাণ দাখিল করেছিলেন তিনি। সঙ্গে নাগরিকত্বের অন্যান্য নথি ও পেশ করেন তিনি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ২৪শে জুলাই তাকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করা হলো। তবে, এই সংক্রান্ত কাগজপত্র গতকালই তাদের হাতে এসে পৌঁছায় ।

আইনজীবী হিমাদ্রি শেখর দাশ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “প্রীতি বালা ‘ডি’ ভোটার নন বলে আমরা শুরু থেকে দাবি চালিয়ে আসছি। তবে বিদেশি আদালতের বিচারক দিবস শইকিয়া বিশেষ গুরুত্ব সহকারে মামলাটি দেখেন এবং মামলাটির সুনিষ্পত্তি হয়।” আইনজীবি বলেন, কিছু দিন পরপর প্রীতিবালাকে আদালতে আসতে হয়েছে, আর প্রতিবার আদালত চত্বরে চোখের জল ফেলতে হয়েছে। তবে, প্রতিবার আমরা তাকে সান্ত্বনা দিতাম ; আজ তার জয় হয়েছে। প্রীতিবালাকে ভারতীয় ঘোষণা করায় বিদেশি আদালতের বিচারক, আইনজীবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রীতিবালা সংবাদ মাধ্যমে বলেন, “পুলিশ একটি কাগজ দিয়ে যায়, তখন থেকে সবাই বলছে আমি বিদেশী। কিন্তু আমার প্রশ্ন, আমি পাঁচ গ্রামে ভোট দিয়েছি, তারপর বারই গ্রামে ও দিয়ে আসছি, আমার বয়স ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে তবে আমাকে বিদেশি কেন বলা হল। নোটিশ পাওয়ার পর বাড়ি থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে আমাকে করিমগঞ্জ আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় । আমি নোটিশ পাওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন প্রভুর নিকট প্রার্থনা করেছি, শেষ পর্যন্ত প্রভু আমার ডাক শুনেছেন।” মুক্তি দেওয়ার জন্য আদালতের বিচারক ও আইনজীবীদের সঙ্গে আশ্রমের সম্পাদক অরুণ চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। একই সঙ্গে প্রভুপাদ শ্রী শ্রী রাধারমন গোস্বামীর নিকট প্রার্থনা করেন, “আর কেউ যেন এই ধরনের হয়রানির শিকার না হন।”

রায়ের পর সকল স্তরের জনগন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন । এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই দীর্ঘ আইনি লড়াই কতজন তথাকথিত ‘ডি’ ভোটার কত দিন ধরে চালিয়ে যেতে পারবেন এবং কত জনের ক্ষেত্রে এরকম ‘মধুরেণ সমাপয়েৎ’ হবে।

Comments are closed.