Also read in

Paper Mill: Rasta Roko in two national highways tomorrow in demand of revival

কাগজ কল নিয়ে এবার হেস্তনেস্ত: আগামীকাল বরাকের দুটি জাতীয় সড়কে অবরোধ

এইচপিসি পেপারমিল রিভাইভাল অ্যাকশন কমিটির আহবানে আগামীকাল সকাল ন’টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত বরাক উপত্যকায় দুটি জাতীয় সড়কে অবরোধ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ৩৭ নং জাতীয় সড়কে ধলেশ্বরী অঞ্চলে এই অবরোধ সৃষ্টি করা হবে। এদিকে ৭ নং জাতীয় সড়কে কালাইন বাজার এলাকায় এই অবরোধ কর্মসূচি হবে। অর্থাৎ এই অবরোধের ফলে শিলচর-করিমগঞ্জ এবং বদরপুর-শিলং রাস্তায় যান চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হবে।

এই আন্দোলনের সমর্থনে আয়োজিত বিভিন্ন সভায় রিভেল অ‍্যাকশন কমিটির মুখ্য আহ্বায়ক মানবেন্দ্র চক্রবর্তী জানান যে, রাষ্ট্রীয় শিল্পোদ্যোগ কাছাড় ও নগাওঁ কাগজ কল সরকারের চক্রান্তের শিকার। ব্যক্তি মালিকানায় হস্তান্তর করার কৌশলেই আজ ধংস হয়েছে এই দুই শিল্পোদ্যোগ। মানবেন্দ্র চক্রবর্তী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাটের এক লবি এই কাগজ কল বেসরকারিকরণে কলকাঠি নাড়ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে গত লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বরাক সফরে এসে কাগজ কল পুনরুজ্জীবিত করার ঘোষণা করেছিলেন। একইভাবে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল গত নমামি বরাক উৎসবে জনসভায় কাছাড় কাগজ কল পুনরুজ্জীবিত করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। মন্ত্রী বিধায়করা যে কতবার বিশেষ করে কাছাড় কাগজ কল চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তার কোন হিসাব নেই। দুটি মিলে মোট ৩৬ জন শ্রমিক-কর্মচারী মৃত্যু হয়েছে। যারা বেঁচে রয়েছেন তাদের অবস্থা ও হৃদয়বিদারক। শেষমেশ ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে আত্মহননের অনুমতি পর্যন্ত চাওয়া হয়েছে, কিন্তু মিল চালুর কোন নামগন্ধ নেই। এই আন্দোলন কর্মসূচিতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন মিলবে এমন আভাস বিভিন্ন সভায় পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান।

এই আন্দোলনে বিভিন্ন দল ও সংগঠন সক্রিয়ভাবে সমর্থন জানাচ্ছে। কংগ্রেস দলের এক মুখপাত্র আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, কাছাড় কাগজ কল কোন ব্যক্তি বা কোন রাজনৈতিক দলের সম্পদ নয়, এটা সমগ্র বরাকের সম্পদ। এর সাথে জড়িয়ে রয়েছে গোটা বরাকের অর্থনৈতিক সম্পর্ক। সরকারী গাফিলতি হোক বা অন্য যে কোনো কারণে হোক দীর্ঘদিন থেকে এটি অচল হয়ে থাকায় অর্থনৈতিকভাবে জোর ধাক্কা খেয়েছে বরাক উপত্যকা। গত কয়েক মাসে আর্থিক অনটনে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে অনেক কর্মীর। এই শিল্প ধ্বংস হওয়া অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না। তাই বুধবারে জাতীয় সড়ক অবরোধে তাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।আলগাপুর বাজারে এক বিরাট প্রতিবাদ সভায় প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম রায় বলেন চোখের সামনে এত বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংসের মুখে, এ নিয়ে জনগণের কোন আক্ষেপ নেই । সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, রাজ্যে শাসক দলের সাংসদ বিধায়করা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন, এদের সাংসদ, মন্ত্রী পদে থাকার কোন অধিকার নেই; এরা পদত্যাগ করুন।

আন্দোলনের সমর্থনে এইউডিএফ এর সভাপতি আতাউর রহমান লস্করের সভাপতিত্বে কাটিগড়ায় এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কাছাড় কাগজ কল বাঁচাও আন্দোলনের প্রস্তাবিত কর্মসূচির রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয় এবং আন্দোলন সফল করতে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করা হয়। এইউডিএফ এর কাছাড় জেলার সাধারণ সম্পাদক এনামুল কাগজ কল নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বর্তমান বিজেপি সরকারের উদাসীনতার কড়া সমালোচনা করেন। সরকারের উদাসীনতায় আজ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কাগজ কল ধ্বংসের মুখে। অবিলম্বে কাছাড় কাগজ কল পুনরায় চালু না করলে এইউডিএফ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে পা বাড়াবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।

এসইউসিআই দলের পক্ষ থেকে আন্দোলনের সমর্থন করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে পূর্বতন এনডিএ সরকারের আমল থেকেই কাছাড় কাগজ কল বন্ধের চক্রান্ত শুরু হয় এবং পরবর্তী ইউপিএ সরকারের আমলেও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি। বরং একইভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প গুলোকে বেসরকারিকরণের পথেই হেটেছে বর্তমান সরকারও, কাগজ কল চালু করার ক্ষেত্রে কোন সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করেনি। দলের পক্ষ থেকে এই আন্দোলন কর্মসূচিকে সমর্থন করার সাথে সাথে জেলার সমস্ত জনসাধারণকে এই আন্দোলনে সক্রিয় সমর্থন ও অংশগ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য, প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ হয়ে থাকা কাগজ কল দুটির কর্মচারীরা বেতনহীন রয়েছেন। কিছুদিন আগে তাদের তিন মাসের বেতন দিয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল পর্যায়ক্রমে বাকি বেতন দেওয়া হবে, কিন্তু পরবর্তীতে তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। বেতন না পেয়ে দেড় হাজারেরও অধিক কর্মচারীর অর্ধাহার অনাহার চলছে। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা লাটে উঠেছে ।বর্তমানে কাগজ কল কমপ্লেক্সে শ্মশানের নীরবতা বিরাজ করছে। কাগজ কল দুটি কে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বাজার বন্ধ হয়ে গেছে, কাগজ কল অবলম্বন করে গড়ে ওঠা ছোট ছোট দোকান পাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রকৃত বেকারের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। তাই এবারের আন্দোলন কে নাম দেওয়া হয়েছে ‘নাউ অর নেভার’ অর্থাৎ এখনই হলে হবে, না হলে আর কখনোই হবে না।

Comments are closed.