Also read in

Scam in Silchar Government boys School; Authority, Principal under scanner

কনফিডেনশিয়াল অফিসার মামার স্কুলেই নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিচ্ছে ভাগ্নে! মাধ্যমিকে গভর্নমেন্ট বয়েজে কেলেঙ্কারি, কাঠগড়ায় স্কুল পরিদর্শক, অধ্যক্ষা

গ্রাম কাছাড়ের জিলকদর আলি এইচএস স্কুলের পর মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে অনৈতিক পদক্ষেপ এ বার খোদ শিলচর শহরের বুকে। সরাসরি গভর্নমেন্ট বয়েজ এইচএস স্কুলে। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় পরীক্ষাকে ঘিরে ফের একবার প্রশ্ন উঠল কাছাড়ের স্কুল পরিদর্শক সহ স্কুলের অধ্যক্ষার ভূমিকা নিয়ে। মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর দিন কয়েক আগে অরুণাচলের জিলকদর আলি এইচএস স্কুলে ধরা পড়েছিল, বাবা যে কেন্দ্রের সুপারভাইজিং অফিসার হিসেবে নিযুক্ত সেই কেন্দ্রেই পরীক্ষা দিচ্ছে তাঁর ছেলে। এ বারের ঘটনাও ওই একইরকম। এবার মামা যে কেন্দ্রের ‘অফিসার ইনচার্জ কনফিডেনশিয়াল’, ভাগ্নে দিব্যি পরীক্ষা দিচ্ছে সেই কেন্দ্রেই!

গভর্ণমেন্ট বয়েজ এইচএস স্কুল সেন্টারে প্রতি বছরের মত এ বারও পরীক্ষা দিচ্ছে শিলচর হলিক্রস স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। এরমধ্যে হলিক্রসের পরীক্ষার্থী সৌরদীপ পাল গভর্ণমেন্ট বয়েজ স্কুলের শিক্ষক রূপক পালের ভাগ্নে। যিনি এই পরীক্ষা কেন্দ্রেরই অ্যাসিসটেন্ট অফিসার ইনচার্জ কনফিডেনশিয়াল। প্রশ্ন উঠেছে এ নিয়েই। অভিযোগ পাওয়া গেছে, সরকারি নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে কনফিডেনশিয়াল অফিসার মামার তত্বাবধানে ও ছত্রছায়ায় পরীক্ষা দিয়ে এই কেন্দ্রে অনৈতিক ভাবে বাড়তি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে ভাগ্নে সৌরদীপ। এওসি অর্থাৎ কনফিডেনশিয়াল অফিসার পদে থাকায় ভাগ্নের ওপর নজর রাখা থেকে শুরু করে প্রতিটি পরীক্ষায় ওর উত্তরপত্র গোপনে দেখে নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে মামার হাতে। যা পুরোপুরি বেআইনি। যদিও এ নিয়ে কোনও কলেঙ্কারিতে যুক্ত নন বলে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন রূপক পাল। তবে তিনি স্বীকার করেছেন ভাগ্নে তাঁর স্কুলেই পরীক্ষা দিচ্ছে। কিন্তু ছেলেমেয়ে পরীক্ষার্থী হলে বাবা মা পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকতে পারেন না, এই নিয়ম জানা থাকলেও ভাগ্নের বেলায়ও যে তা খাটবে এমনটা নাকি জানা ছিলনা রূপকবাবুর। নিকটাত্মীয়র ক্ষেত্রেও এই নিয়ম থাকলে পরীক্ষার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াবেন। এ দিকে ঘটনার খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ স্কুল পরিদর্শক সেমিনা ইয়াসমিন আরা রহমান বলেছেন রূপক পালকে কনফিডেনশিয়াল অফিসারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সপ্তাহ খানেক আগে যে ভাবে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে জিলকদর আলি এইচএস স্কুলে নিযুক্ত সুপারভাইজিং অফিসার সিরাজুল ইসলাম লস্করকে। তিনি বলেছেন মাধ্যমিকের বাকি পরীক্ষার সময় রূপকবাবুকে বাইরে রাখা হবে।

অন্যদিকে মামার অধীনে বা ছত্রছায়ায় ভাগ্নের পরীক্ষা দেওয়াকে ঘিরে প্রশ্ন ওঠার কারন হল, মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোনও কেন্দ্রে পরীক্ষা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তির ছেলে মেয়ে বা নিকটাত্মীয় কেউ পরীক্ষার্থী থাকলে ওই ব্যক্তিকে সেই কেন্দ্রের কোনও দায়িত্বে নিযুক্ত করা অনৈতিক ও নিয়ম বহির্ভূত। কিন্তু গভর্ণমেন্ট বয়েজ স্কুলে এই নিয়মের কোনও ধার না ধেরে ভাগ্নে কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী হওয়া সত্বেও কনফিডেনশিয়াল অফিসার করা হয়েছে রূপক পালকে। এবং মামার তদারকিতেই পরীক্ষা দিয়ে চলেছে সৌরদীপ।

সবকিছু জেনেশুনে ভাগ্নে এই কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী হওয়ার পরও এখানে মামা রূপক পালকে কেন পরীক্ষার দায়িত্ব দিলেন গভর্ণমেন্ট বয়েজ স্কুলের অধ্যক্ষা পারভিন সুলতানা লস্কর? কেনইবা সবকিছু জানা সত্বেও নীরবে এই অনৈতিক প্রক্রিয়া মেনে নিলেন কাছাড়ের স্কুল পরিদর্শক সেমিনা ইয়াসমিন আরা রহমান? এর বিরুদ্ধে কেন কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা? এ নিয়ে জোর চর্চা চলছে শহরের শিক্ষক মহলে।

তবে রূপক পালকে বা সিরাজুল ইসলাম লস্করকে কেলেঙ্কারি থেকে সাময়িক সরিয়ে দেওয়া হলেও এই রহস্যের ধোয়াশা কিন্তু সরছেনা। গ্রাম থেকে শহর সব জায়গাতেই কিছু কিছু স্কুলে অবাধে চলছে এমন অনৈতিক পদক্ষেপ। প্রশ্ন হচ্ছে যেখানে ছেলেমেয়ে বা কোনও নিকটাত্মীয় পরীক্ষার্থী হলে সংশ্লিষ্ট সেই ব্যক্তিকে লিখিত আন্ডারটেকিং দিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে হয় সেখানে রূপক পাল কেন তা চেপে গিয়ে কনফিডেনশিয়াল অফিসার হয়ে গেলেন। সব জেনেও কেন তাকে এই দায়িত্ব দিলেন স্কুলের অধ্যক্ষা। স্কুল পরিদর্শকও কেনইবা ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা শাসকের কনফারেন্স হলে মাধ্যমিক পরীক্ষা নিয়ে ডাকা সেন্টার ইনচার্জ এবং এওসিদের মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করে বাতিল করলেন না রূপক পালের দায়িত্ব। এর কোনও যুৎসই জবাব দিতে পারেন নি কেউই। না অধ্যক্ষা, না স্কুল পরিদর্শক।

Comments are closed.