Silchar Medical College's 'U' turn on Sayan Das' postmortem; "There was no postmortem," authority
“পোস্টমর্টেম হয়নি সায়ন দাসের,” বলছেন মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ; পাঁচদিন পরও মৃত্যুর কারণ জানায়নি ডেথ অডিট বোর্ড
বিলপাড়ের যুবক সায়ন দাসের মৃত্যুর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও গুয়াহাটির ডেথ অডিট বোর্ড জানায়নি সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছিল কিনা। এদিকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তার মৃতদেহের ময়নাতদন্তই হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদিও আগে ময়না তদন্তের কথা উল্লেখ করেছিলেন, তবে সোমবার রাতে তারা এটি অস্বীকার করেন। এতে নানান প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাহলে আদৌ তার মৃত্যু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই হয়েছিল, না সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় হয়েছিল? যদি হাসপাতালে মৃত্যু হয়ে থাকে তবে মৃত্যুর কারণ কি? কোভিড প্রটোকলে শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার চারদিন পরেও কেন গুয়াহাটির ডেথ অডিট বোর্ড জানালো না তার মৃত্যু করোনায় হয়েছে কিনা?
অনেকেই মনে করেন স্বাস্থ্যবিভাগের অব্যবস্থা এবং উদাসীনতার জন্য অসময়ে প্রাণ হারাতে হয়েছিল তরতাজা যুবক সায়ন দাসকে। তার মৃত্যুর নানান দিক এখনও পরিষ্কার হয়নি। মৃত্যুর পর কোভিড প্রটোকল মেনে তার শেষকৃত্য শিলচর শ্মশানঘাটে সম্পন্ন হয়েছিল। এতে পরিবারের কোনও সদস্যকে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী কোভিড প্রটোকলে কারও শেষকৃত্য করা হলে পরবর্তীতে অডিট বোর্ড ঘোষণা করে, মৃত্যুটি করোনা ভাইরাসের জন্য হয়েছে কিনা। ভাইরাসের জন্য মৃত্যু না হলেও এর একটি তালিকা প্রকাশ করে বোর্ড। সায়ন দাসের মৃত্যুর পর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের শরীরে সংক্রমণ ছিল, তাদের নামের তালিকা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ সায়নের ব্যাপারে এখনও কিছুই স্পষ্ট করে জানায়নি রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন।
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে সায়ন দাসের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে তারা স্পষ্ট কোনও উত্তর দিচ্ছেন না। ৩১ জুলাই তার মৃত্যুর পর শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বলা হয়, যেহেতু বাইরে থেকে মৃতদেহ আনা হয়েছে, তার পোস্টমর্টেম করা বাধ্যতামূলক। সায়নের মৃত্যুর রাতেই পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হচ্ছে। অথচ এর চার দিন পর বলা হচ্ছে, ময়নাতদন্ত হয়নি।
দেশের আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তির অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যু হওয়ার পর মৃতদেহ সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করা বাধ্যতামূলক। তবে করোনায় মৃত্যুর প্রটোকল কিছুটা অন্যরকম হতে পারে। বিশিষ্ট আইনজীবী সৌমেন চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ নিয়ম যদি ধরা যায়, তবে কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুতে যদি কারণ স্পষ্ট না থাকে তাহলে সরকারি হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত বাধ্যতামূলক।’
অসুস্থ অবস্থায় প্রথমে সায়ন দাসকে সিভিল হাসপাতালে এবং পরে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, মেডিক্যালের মতই সিভিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও বলছেন সেখানে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়েছিল। এবার প্রশ্ন হচ্ছে, যদি সিভিল হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়ে থাকে, তবে কেন অ্যাম্বুলেন্সে করে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলো? এর উত্তরে সিভিল সুপার জিতেন সিং বলেন, “তাঁর মৃত্যুর পর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার অধিকার শুধুমাত্র শিলচর মেডিক্যাল কলেজের রয়েছে, তাই তাকে সেখানেই পাঠানো হয়েছে।” এতে আরো প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যেমন সিভিল হাসপাতালে কেউ মারা গেলে তার মৃত্যু হয়েছে ঘোষণার জন্য মেডিক্যালে পাঠানোর কোনও নিয়ম আছে কি? যদি মৃতদেহই পাঠানো হতো তাহলে অ্যাম্বুলেন্স কেন? শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পর তাদের ঘন্টার পর ঘন্টা চিকিৎসার নামে কেন বসিয়ে রাখা হলো?
প্রাক্তন পুরকমিশনার রঞ্জন রায় পুরো ঘটনায় সায়ন দাসের পরিবারের পাশে ছিলেন। এব্যপারে তার প্রশ্ন “সায়নের মৃত্যুর পর সেদিন রাতেই পরিবারের সদস্যদের বলে দেওয়া হয়েছিল ময়নাতদন্ত হচ্ছে। এবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়নি। তাহলে আমরা জানতে চাই, তার মৃত্যু কোথায় হয়েছিল? বাইরে থেকে মৃত অবস্থায় কোনও ব্যক্তিকে নিয়ে গেলে বাধ্যতামূলকভাবে ময়নাতদন্ত হয়। যদি সায়নের মৃতদেহের ময়নাতদন্ত না হয়ে থাকে, তবে কি তার মৃত্যু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হয়েছিল? যদি এমনটা হয় তাহলে, প্রমাণিত হচ্ছে হাসপাতালে তার চিকিৎসা হয়নি এবং এতেই প্রাণ গেছে। এমনটা হলে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য বিভাগকে এই মৃত্যুর দায় নিতে হবে।”
সায়ন দাসের মৃত্যুর পর তার ভাই সম্রাট দাস জানান, ৩০ জুলাই দিনের বেলা খানিকটা জ্বর ছিল। রাত নয়টা নাগাদ হঠাৎ শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং মাথা ঘোরায়। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ তাকে সিভিল হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হয়। সে নিজে থেকে তৈরি হয় এবং অটোতে উঠে হাসপাতাল পর্যন্ত যায়। রাস্তায় তার স্বাস্থ্যের অবস্থা দ্রুত খারাপ হতে থাকে। সিভিলে আধঘন্টা অপেক্ষার পর অ্যাম্বুলেন্সে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে এক গেট থেকে আরেক গেটে চিকিৎসার জন্য ঘুরতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। অনেক ঘুরাঘুরির পর চিকিৎসকদের দেখা মিললেও তারা চিকিৎসা করেননি। একটা ঘরে সায়নের অচেতন দেহটি রেখে দিয়ে পরিবারের সদস্যদের তার কাছাকাছি না যেতে বলা হয়। এর কিছুক্ষণ পর জানানো হয়, সায়ন দাস আর বেঁচে নেই এবং তার শরীরে করোনা সংক্রমণ রয়েছে। পরিবারের প্রত্যেকের পরীক্ষা করতে হবে। মায়ের শরীরের অবস্থা ভালো না থাকায় শেষ রাতে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে জানানো হয় মৃতদেহের পোস্টমর্টেম করা হবে। সন্ধ্যেবেলা কোভিড প্রটোকল মেনে মৃতদেহ শ্মশানঘাটে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে চিকিৎসক প্রসেনজিৎ ঘোষ সোমবার সন্ধ্যে বেলা জানান, শরীরে করোনা থাকা প্রথম কোনও ব্যক্তির ময়নাতদন্ত হয়েছে এদিন। এর আগে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির ময়নাতদন্ত হয়নি। সায়ন দাসের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি স্পষ্টভাবে জানান, “তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।”
সায়ন দাসের মৃত্যু এবং তার পরবর্তী ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগ বা শিলচর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের এক কথার সঙ্গে আরেক কথার অমিল থেকেই যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে নানা প্রশ্ন উঠছে। আগামীতে এই মৃত্যু নিয়ে হয়তো আরও অনেক রহস্য বেরিয়ে আসবে।
Comments are closed.